somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘপঞ্জিকা - সিনেমাকথন ৩০

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ঘুম ভেঙ্গে প্রভাতের রুপ দেখতে দেখতে যে গানটা মনের মাঝে গুণগুণিয়ে গেল সেটি হচ্ছে -

"ধিতাং ধিতাং বোলে
কে মাদলে তান তোলে
কার আনন্দ উচ্ছ্বলে আকাশ ভরে জোছনায়।।"

মনটা কোন এক কারণে খুশীতে নাচছে, তাইতো শব্দগুলো ধিতাং ধিতাং বোল ধরেছে :-)

লিখতে বসেছি সিনেমাকথন। বেশ কবার পণ করেছিলাম এই সিনেমাকথন লেখা থেকে কিছুদিন বিরতি নিই। অনেকের ধারণা আমার ব্লগটা শুধু সিনেমা নিয়েই :@। যেন আমি আর কিছু নিয়ে লিখিনা। এইটা সহ সিনেমাকথনের পোষ্ট হবে ৩০, আর এছাড়া আর কয়েকটা এদিক ওদিক পোষ্ট মিলিয়ে ধরা যাক ৩৫ হল, কিন্তু তাও তো ১৬৫ পড়ে থাকে। হুম এই পোষ্টটা দিয়ে আমার ২০০ তম পোষ্ট হবে। মনে করেছিলাম ২০০ তম পোষ্টে অন্য কিছু লিখব। যাক, মনের আকাশে যে শব্দগুলো এখন ধরা দিচ্ছে আগে তাদের তো বন্দী করি। বাকী কথা পরে দেখা যাবে ক্ষন। হুম তাই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে আবারো লিখতে বসেছি সিনেমাকথন। আমার এই কাজটা করতে দারুণ মজা লাগে। এই যে, একটা প্রতিজ্ঞা করেছি, ধনুক ভাঙা পণ, কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যায় পণ ভাঙার জন্য ভেতরটা উঠেপড়ে লেগেছে। আর কারো পণতো ভাঙছি না, ভাঙছি নিজের পণ। কি বা এসে গেল :P

যাক, শুরু করি সিনেমাকথন। এই কদিনে বেশ কটা মুভি দেখা হল। Ballad of a
Soldier
(ধন্যবাদ পাবেন কাঊসার রুশো), The lady with the little dog, Destiny of a Man, Hayat Var, The stoning of Soraya M, The Adventures of Sherlock Holmes and Dr. Watson

প্রথম তিনটা এবং শেষেরটা রাশিয়ান। অন্য দুটোর প্রথমটা তুর্কিশ এবং পরেরটা ইরানিয়ান।



Ballad of a Soldier এর নামটা যদিও বেশ অনেককাল থেকে শুনে আসছি কিন্তু দেখা হয়ে উঠেনি। আমি ভেবেছি হয়তো আমেরিকান যুদ্ধের মুভি হবে। এদের এই মুভিগুলোর প্রতি আমার এক ধরণের এলার্জি আছে। বদহজম হয়। তাই চেষ্টা করি এড়িয়ে চলতে। আমার ধারণা ভাঙলো সেদিন কাঊসার রুশোর রিভিউ পড়ে। জানতে পারি এটি রাশিয়ান মুভি। খুঁজে দেখতে বসে গেলুম। এবং দেখা শেষ করে উনাকে জানিয়েও দিলুম যে, বেশ ভালো লেগেছে মুভিটা। উনার রিভিউটা পড়লেই মুভিটা সম্পর্কে বিশদ জানা যাবে। যুদ্ধের সময় যুদ্ধ ছাড়াও যে আরো অনেক কিছু থাকে সেটি এই মুভিতে বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে।

মুভিটা দেখা যাবে এইখান থেকে।



বাকী রাশিয়ান মুভিগুলোর সন্ধান পাই এই Ballad of a Soldier খুজতে যেয়ে। The lady with the little dog আমার মতে একটা মাস্টারপিস। নিভৃতে ছুটি কাটাতে এসে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকার Dimitri Gurov-এর সাথে পরিচয় হয় Anna Sergeyovna-এর। দুজনেই বিবাহিত কিন্তু ছুটি কাটাতে এসেছে নিজের নিজের সঙ্গীবিহীন। দুজনেই অসুখী নিজেদের দাম্পত্য জীবনে। আলাপ-পরিচয়ের এক পর্যায়ে দুজনে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে। দারুণ কাটতে থাকে দুজনার সময়গুলো। কিন্তু একসময় সময় হয় নিজের নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার। দুজনেই ভাবে এই পরিচয় শুধু কিছু সময়ের ভালোলাগা মাত্র। কিন্তু তাদের ভুল ভাঙে যখন তারা স্বস্থানে ফিরে যায়। নিজেদের প্রাণের হাসি আনন্দ সব তারা যেন ভুলে একে অপরের কাছে ফেলে আসে। তাদের জীবন আর আগের মত থাকে না। এক সময় Gurov সিদ্ধান্ত নেয় Anna-র সাথে দেখা করে বিষয়টার একটা বিহিত করবার। এবং এর পরেই বাকী কাহিনী।

আর যে দুটো বিষয় আমার মনে দাগ কেটেছে তার একটি এই মুভির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর ছুটির লোকেশনটা। অদ্ভুত রকমের সুন্দর! IMDB-র রেটিং ৭.৪

মুভিটা দেখা যাবে এইখান থেকে।



Destiny of a Man রাশিয়ান যুদ্ধের মুভি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার পটভূমি নিয়ে নির্মিত। জার্মানদের বিভীষিকাময় অত্যাচার-নির্যাতন, রাশিয়ানদের পরিবার-পরিজন ফেলে যুদ্ধে যোগ দেওয়া, বন্দী অবস্থা, মুক্তি, বিজয় এই সব উঠে এসেছে মুভিতে। যার বর্ণনায় এই চিত্রগুলো উঠে এসেছে তাকে ঘিরেই আসলে মুভিটা। কেন্দ্রীয় চরিত্র Andrey Sokolov, যুদ্ধের কারণে পরিবারের সবাইকে একে একে হারায়। যুদ্ধের সময় তার নিজের নানা দুর্বিষহ পরিণতির ভেতর দিয়ে যাওয়া এবং একটি অবলম্বনকে আখরে ধরে তার বেচে থাকার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা এই নিয়েই মুভিটা। দেখতে দেখতে আমার রাইসুল ইসলাম আসাদ অভিনীত "দুখাই" সিনেমাটার কথা মনে পড়ছিল। একজন যুদ্ধ করে জার্মানদের সাথে অন্যজন প্রকৃতির সাথে। দুজনেই পরিবার পরিজন সবাইকে একে একে হারিয়ে একটা অবলম্বন ধরে বেচে থাকবার চেষ্টা করে। এইখানেই তাদের দুজনের মাঝে মিল। আসলে পৃথিবীর যে কোণাতেই থাকুক না কেন মানুষের অনুভূতিগুলো বুঝি কথা বলে একি ভাষাতেই।

IMDB-র রেটিং ৮.২

মুভিটা দেখা যাবে এইখান থেকে।



তুর্কিশ পরিচালক Reha Erdem-এর আরেকটা উরাধুরা মুভি হচ্ছে Hayat Var। Reha Erdem-এর মুভি এর আগে একটা দেখা ছিল (Times and Winds), সে কারণেই "আরেকটা" বলা। হায়াত, তার বাবা এবং অসুস্থ দাদা নদীর ধারে এক নড়বড়ে কুড়েঘরে থাকে। তাদের সংসার চলে তার বাবার নৌকার মাধ্যমে নানা পন্থায় অর্জিত টাকার মাধ্যমে। হায়াতের বাবা আর্মিতে দায়িত্ব পালনের সময় তার মা অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে ফেলে। জীবনযাপন হায়াতের জন্য সহজ হয় না। তাকে একা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। মুভিটা দেখানো হয়েছে হায়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে। তার নৈরাশ্য, একাকী জীবন, বেদনা, সংগ্রাম এবং মুক্তির আনন্দ এসব নিয়েই মুভিটা।

IMDB-র রেটিং ৭.৬

ট্রেইলারঃ


মুভিটা দেখা যাবে এইখান থেকে।



The stoning of Soraya M- একটি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত ইরানি মুভি। নাম থেকেই হয়তো আন্দাজ করে নিতে পারেন কি নিয়ে মুভিটা। তবে কিছু কিছু বিষয়ে আমার মনে হয়েছে সত্যকে রঙ লাগিয়ে সেটাকে বিদঘুটে করে তোলা হয়েছে। যাই হোক Soraya M-এর শেষ পরিণতিটায় হলো গিয়ে আসল কথা। এবং কি বীভৎস এই পরিণতি। জানিয়ে রাখি এই মুভির কিছু কিছু দৃশ্য হয়তো সহ্য নাও হতে পারে। আমার নিজেরই হচ্ছিলনা। বেশ অনেক কসরত করে, অনেকবার থামিয়ে, সময় নিয়ে তবেই দেখেছি। এমন ডিস্টার্বিং ফুটেজ সহ্য করারও একটা সীমা থাকে। শুধু মুভি হিসেবে বিচার করলে হয়তো আমি এতগুলো শব্দ খরচ করতাম না এইটা নিয়ে। হয়তো লিখতামই না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে কাহিনীটা জেনে রাখবার মতোন। একটা অভিজ্ঞতা হয়েই না হয় থাকুক।

IMDB-র রেটিং ৭.৯

ট্রেইলারঃ


মুভিটা দেখা যাবে এইখান থেকে।



সব শেষে রাখলেও এইটি নিয়েই লেখার জন্য সেই কখন থেকেই আমার হাত নিশপিশ করছে :)। এইটি অবশ্য দেখা এখনো শেষ হয়নি। বলছি The Adventures of Sherlock Holmes and Dr. Watson এর কথা। এটি যদিও মুভি নয় কিন্তু মুভির চাইতে কোন অংশে কম নয়। Sherlock Holmes এবং Dr. Watson এর বেশ কিছু অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে রাশিয়ান টিভিতে দেখানো সাত পর্বের টিভি সিরিজ। মুভির মতোনই মেকিং। টিভি সিরিজ দেখছেন বলে ভুল হবে না :)। তিনটা পর্ব দেখে উঠে এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বলিহারি এক কথায়! শার্লক হোমস পড়ে যদ্দুর জানি তার সম্পর্কে তাতে এই চরিত্র রূপদান যিনি করেছেন তার প্রতি অন্যরকম একটা ভালোলাগা তৈরী হয়ে গিয়েছে আমার। দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছে এর মতো করে আর কেও শার্লক হোমসকে এমন করে পর্দায় তোলে আনতে পারতো না এবং হয়তো পারবেও না। যে পর্বগুলো আছে এই সিরিজে সেগুলো হচ্ছে - Red on White, The King of Blackmail, Deadly Fight, Hunt for the Tiger, The Hound of the Baskervilles, The Treasures of Agra এবং The XXth Century Approaches।

IMDB-র রেটিং ৯

সবকয়টা পর্ব দেখা যাবে এইখান থেকে।



আমার দেখা ভালোলাগা কিছু মুভির তালিকা
আমার দেখা ভালোলাগা কিছু মুভির তালিকা - ২
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৫২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আহত আততায়ী

লিখেছেন রাজীব নুর, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩০



সভ্য নগরের মানুষ যেনবা বনমানুষ।
মানুষকে মানে না মানুষ;
আর মানুষের হানাহানি দেখে হাসে বনের মানুষ।

পথে না বেরোলে জানতামই না-
কতটা রপ্ত করেছি আমরা অবজ্ঞা অবহেলা ও পরচর্চা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ টাকার চাল ইতিহাসের সেরা দাম (এখন ৮৫), এই দামে ওনাদের চোখে পানি আসেনা৷

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

আমার বাবা সরকারি চাকরী করছে, একাই বিশাল যৌথ ফ্যামিলি চালাইসে৷ যার ফলে প্রচুর ঋণ হইসে৷ কিন্তু কোনোদিন চুরি করেন নাই৷ গ্রামীন ব্যাংক থেকে বাবা ১০ হাজার টাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ওয়ান ম্যান আর্মি!!!!!

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

ইন্টারিম সরকারে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এর চমক দিয়ে যাচ্ছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। ভঙ্গুর, মেরুদন্ডহীন শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু, গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া একটি দেশের দায়িত্ব কাঁধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

পেপ্যাল লোগোটি বিবিসি ওয়েব পেইজ থেকে সংগৃহিত।

ভূমিকা

বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখন এক অনস্বীকার্য শক্তি। আপওয়ার্ক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় সার্কাস দল!!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

আওয়ামিলীগ আমলে আওয়ামি মন্ত্রী এম্পিরা বিনোদনবঞ্চিত :( এই দেশের জনগনকে বিনোদিত করত তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের দ্বারা। এখন এই স্থান একছত্রভাবে দখল করেছে বিএনপি !! দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×