বিভিন্ন সোর্স থেকে কপি-পেস্ট এর একটি সংকলন।
চাকরি খোঁজার কাল- সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়। বেকার ছেলের কাছে বাবা-মার আকুল প্রশ্ন--‘বাবা, চাকরিটা হলো কি?’ মনের মানুষের অস্ফূটস্বর- ‘তুমি চাকরি পেলেই আমাদের বিয়েটা হয়ে যাবে।’ কিন্তু হায়! যোগ্যতা নেই বলে ভালো চাকরি আর হয় না!! বেকার ছেলেকে দেখে বাবার কষ্টের মৃত্যু। অন্যের হাত ধরে মনের মানুষের নিরব বিদায়।………….
ইতি টানুন এইসব হতাশার গল্পের। যোগ্যতা নেই বলে চাকরি হবে না--এটা ভুলে যান। বরঞ্চ আপনার জীবনের প্রথম ইন্টারভিউতেই হয়ে যেতে পারে কাংক্ষিত চাকরি! তবে হ্যাঁ- এর জন্য আপনাকে কিছু বিষয় শধু খেয়াল রাখতে হবে।
কিছু পরিবর্তন দরকারঃ
পড়াশুনার শেষ সময়টা থেকেই কিছু পরিবর্তন আনা উচিত। অল্প কিছুদিন পরেই যেহেতু প্রফেশনাল জীবন, তাই কিছু বদ অভ্যাস বাদ দেওয়াই উত্তম। যেমন- হঠাৎ কারো কাঁধে হাত দেওয়া, নাক টানা, নাক খুচানো, কান খুচানো, নাকের লোম টানা, বেশী বেশী চুলে হাত দেওয়া, কাঁধ ঝাকানো, জামা টানা, প্যান্ট টানা ইত্যাদি। তাছাড়া ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে আপনার কোনো বদ অভ্যাসের কারণে হঠাৎ দৃষ্টিকটু কিছু করে ফেলাটাও নিশ্চয়ই ভালো হবে না!! অতএব, পূর্ব থেকেই নিজেকে বদলে ফেলুন।
ইন্টারভিউয়ের পূর্বেঃ
১. যেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিন। যেমন-- প্রতিষ্ঠানটি কি প্রাইভেট/ পাবলিক, তাদের কাজ, পণ্য, লোকবল, বিস্তৃতি, কৌশল, ম্যানেজমেন্ট, পুরষ্কার, সুনাম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন।
২.যে বিষয় গুলো নিয়ে তারা কাজ করে সেগুলো সম্পর্কে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্য নিন।
৩.আপনার পরিচিত কেউ সেখানে কাজ করলে তাকে ম্যানেজমেন্ট, কাজের ধরণ, এবং কর্মীদের কাছে কোম্পানীর চাওয়া গুলো জেনে নিন।
৪. কোম্পানীর দূর্বলতা গুলো জানার চেষ্টা করুন।
ইন্টারভিউ বোর্ডেঃ
টিপস ১. হালকা মুডে থাকুন। জ়ীবনে অনেক ভাইভা দিয়েছেন, এ আর ব্যতিক্রম কি? রিল্যাক্স হোন। দরকারে গভীর শ্বাস নিন। দরজায় অনুমতি নিয়ে ঢুকুন। স্পষ্ট সালাম/ অভিবাদন দিন। হাত টেবিলের নিচে রাখুন।
টিপস ২. আগে টাই পড়ার অভ্যাস না থাকলে এখন না পড়াই ভালো। নতুন টাই পড়লে টাই নিয়ে এক ধরনের টেনশন থাকে। টাইতে বারবার হাত চলে যায়। পড়তেই যদি হয়, তবে পূর্বেই অভ্যাসটা তৈরী করে নেওয়া উচিত।
টিপস ৩. আপনার মুখ হাসি হাসি হলে প্লাস পয়েন্ট। না হলেও অমনটা রাখার চেষ্টা করুন।
টিপস ৪. কথা যতটা সম্ভব এক ভাষাতেই বলুন।
টিপস ৫. অতিরিক্ত জ্বি জ্বি, স্যার, জনাব, আসলে...ইত্যাদি বলা পরিহার করুন।
টিপস ৬. আপনি কাজে স্মার্ট--এটি প্রতি মুহুর্তে বুঝিয়ে দিন। যেমন-- আপনার হাতের ফাইলটি চাইলে সাথে সাথে সুন্দর ভাবে দিয়ে দিন। ভালো শ্রোতা হওয়াটাও জরুরী। শিখতেই এসেছেন--এমন মানসিকতা দেখান।
টিপস ৭. প্রশ্ন একবারেই শোনার চেষ্টা করুন। প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন রিপিট না করানোই ভালো।
টিপস ৮. প্রশ্নের সাথে সাথেই উত্তর দেওয়াটা জরুরী না। হালকা সময় নিন। এতে উত্তরের মান ভালো হবে।
টিপস ৯. কোন বিষয় না জানলে জীবনের সবচেয়ে মধুরতম হাসিটি দিয়ে বলুন--স্যার এই বিষয়টি এখন আমার মনে পড়ছে না। দয়া করে অন্য কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন।
তবুও ভয় গেলো না, তাই তো?? খালি মনে হয় কেমনে কি!! ঠিক আছে-- দিলাম একটা নমুনা ইন্টারভিউঃ--
নমুনা ইন্টারভিউঃ
নমুনা প্রশ্ন ১. আপনার সম্পর্কে বলুন--
নমুনা উত্তরঃ- আমি মিঃ ‘ক’। ঢাকাতেই জন্ম। বাবার ব্যবসায়ীক/চাকুরীর সুবিধার্থে ‘খ’ জায়গায় থাকি। ভাই-বোন দের মধ্যে প্রথম। আমার স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সবই এখানে।(না হলে কোথায় সেটা বলুন।) এছাড়াও আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজে যুক্ত ছিলাম (অপ্রফেশনাল গুলাও বলতে পারেন।কাজের অভিজ্ঞতা গুলো অল্পতে শেয়ার করুন।) বর্তমানে আমি আমার মেধার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মের আশায় আপনাদের এখানে এসেছি। (অল্পতেই শেষ করুন। মনে রাখবেন বক্তৃতা কারোরই ভালো লাগে না!!)
নমুনা প্রশ্ন ২. এই কোম্পানী সম্পর্কে কতটুকু জানেন?—
নমুনা উত্তরঃ- আকার, পণ্য, আয়, খ্যাতি, ম্যানেজমেন্ট স্টাইল, জনশক্তি , ইতিহাস, সমস্যা সম্পর্কে বলুন।(যা আগেই জেনে এসেছেন।)
নমুনা প্রশ্ন ৩. আমাদের এখানে কেন কাজ করতে চান?-
নমুনা উত্তরঃ- আমি কোম্পানীর একজন গর্বিত অংশীদার হতে চাই। এছাড়া কোম্পানীতে অবদান রাখার পাশাপাশি এর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও আগ্রহী।
নমুনা প্রশ্ন ৪. এখানে ভালো অবদান রাখতে আপনার কতদিন লাগতে পারে?-
নমুনা উত্তরঃ- বাস্তবিক পক্ষে, আমি বিশ্বাস করি.. ছয় মাস থেকে ১ বছর লাগবে।
নমুনা প্রশ্ন ৫.আপনার শক্তি--
নমুনা উত্তরঃ- আমি টিম ওয়ার্ক ভালোবাসি। মিলে মিশে এবং সবার মতামতের প্রেক্ষিতে কাজ করাকে গুরুত্ব দেই। কাজকে ভালোবাসি। এবং কাজের মধ্যেই যুক্ত থাকাটা পছন্দ করি।
নমুনা প্রশ্ন ৬. আপনার দুর্বলতা--
নমুনা উত্তরঃ-(নেই বলবেন না। বরঞ্চ নেগেটিভ টা পজিটিভ ভাবে বলুন) যেমন- আমি কিছুটা অসহিষ্ণূ।দ্রুতই কাজে নেমে পড়াটা পছন্দ করি। তবে ক্রমেই এটি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।
নমুনা প্রশ্ন ৭. বই পড়া/ মুভি/ খেলাধুলার অভ্যাস প্রসঙ্গে--
নমুনা উত্তরঃ-(অবসরে বই পড়াটাকে হাইলাইট করুন।)
নমুনা প্রশ্ন ৮. কত টাকা বেতন আশা করেন?-
নমুনা উত্তরঃ (বাজার মূল্য অনুযায়ী রেঞ্জ বলুন। নির্দিষ্ট কোন কিছু বলবেন না।)
এছাড়া আপনার সততা পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন হতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে সাবধান!!
যেমনঃ--
নমুনা প্রশ্ন ৯. এখনো পর্যন্ত কোন ভালো কাজ পাননি কেন?-
নমুনা উত্তরঃ- কাজ পাওয়া সহজ, কিন্তু উপযুক্ত কাজ পাওয়া কঠিন।
নমুনা প্রশ্ন ১০. বর্তমান কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন কেন?-
নমুনা উত্তরঃ- (সম্ভব হলে একাধিক উত্তর দিন) যেমন- অফিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে/ আরো ভালো প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে চাই ইত্যাদি।
নমুনা প্রশ্ন ১১. যদি আপনার আগের বসের সাথে কথা বলি তাহলে উনি আপনার সম্পর্কে কি বলতে পারেন?-
নমুনা উত্তরঃ- অসৎ বলবেন না এটুকু নিশ্চিত।
নমুনা প্রশ্ন ১২. আপনার তো অভিজ্ঞতা নাই--
নমুনা উত্তরঃ- আমি জানি একজন দক্ষ কর্মী সম্পদ। দক্ষ কর্মী অল্প সময়েই রেজাল্ট দিতে পারে। কিন্তু, আমি আমার সামর্থ্য সম্পর্কে জানি। এবং আমি যে অল্প সময়েই দক্ষ হয়ে উঠতে পারবো, এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি
নমুনা প্রশ্ন ১৩. সফলতা কি? আপনার সংঙ্গা অনুযায়ী কি আপনি নিজেকে সফল বলবেন?-
নমুনা উত্তরঃ- সফলতা হলো নতুন কিছু করারা প্রেরণা। আমার জীবনে চড়াই-উতরাই থাকলেও, শেষ পর্যন্ত নিজেকে সফলই বলবো।।
মনে রাখবেন, চাকুরীদাতা আপনার পূর্বের রেজাল্ট ধুয়ে পানি খাবে না!চাকুরীদাতার দরকার ভালো কর্মী বা অল্প সময়ে আউটপুট দিতে পারবে এমন কেউ। আপনি যে একজন ভালো পরিশ্রমী এবং অল্প সময়েই দক্ষ হয়ে উঠবেন এটা বুঝাতে পারলেই চাকরি হয়ে যেবে ইনশাহ্আল্লাহ্।
বাংলাদেশের চাকুরীর বাজার: সাম্প্রতিক অবস্থা
* চাকুরী বাজার এর প্রকৃতি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন চাকুরীর ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে।
* সেবা খাতের চাকুরীর বাজার খুব দ্রুত বাড়ছে (যেমন: টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য প্রভৃতি) । সেই সাথে বেতনও খুব দ্রুত বাড়ছে।
* প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে কর্মস্থলের অবস্থানগত (local presence) গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে।
* স্থায়ী চাকুরীর (Permanent Job) সংখ্যা কমে যাচ্ছে . চাকুরীদাতা এবং চাকুরীপ্রার্থী উভয়ের সামনেই এখন অনেক পথ খোলা।
* বৃহ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রতিষ্ঠানে (SME) চাকুরীর সুযোগ বেশী সৃষ্টি হয়েছে।
* চাকুরীজীবিরা এখন এক খাত (Industry / Sector) থেকে অন্য খাতে চাকুরীর পরিবর্তন করছে।
* চাকুরী দাতারা এখন চাকুরীপ্রার্থী কতটুকু মূল্যের (Value) সেবা প্রদানে সক্ষম তার উপর ভিত্তি করে তার বেতন নির্ধারন করছে।
বর্তমানে চাকুরীর বাজারে ডিগ্রির চেয়ে দক্ষতাকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে
* ক্রেতা সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, কারন ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার ফলে ক্রেতাদের সামনে এখন বাছাই করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
* নতুন নতুন যে দক্ষতাগুলো প্রয়োজন:
১. যোগাযোগের দক্ষতা ( Communication Skill )
২. ভাষাগত দক্ষতা ( Language Skill)
৩. তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা ( IT / Computer Skill)
৪. পারষ্পরিক সম্পর্ক রক্ষার দক্ষতা (Interpersonal Skill)
চাকুরীক্ষেত্রে পুরষ্কৃত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গুনাবলী ও দক্ষতা:
* পেশাদারিত্ব (Professionalism)
* নতুন নতুন ব্যবসায়ের ক্ষেত্র উদ্ভাবন ( New Business Development & Innovation Skills )
* উত্সাহ প্রদান দক্ষতা ( Motivation Skills )
* নিজের কাজের উপর সুষ্পষ্ট জ্ঞান (In-depth knowledge on own work area )
* নিজের কাজের দক্ষতা উন্নয়নের আগ্রহ ( Eagerness for self development )
বাস্তবতা
দেশে হাজার হাজার মানুষ বেকার থাকা সত্বে ও চাকুরী দাতারা দক্ষ কর্মী পাচ্ছেন না।
শেষ কিন্তু ম্যূল্যহীন নয় :
§ আশা হারাবেন না।
§ লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে এবং নিজে উত্ফুল্ল থাকতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সহায়তা নিন।
§ মানসিক চাপে থেকে মানুষ চাকুরীর সাক্ষাত্কারে ভাল ফলাফল করতে পারে না।
§ নিজেকে স্বল্প মেয়াদী যে কোন কাজে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন -তা বৈতনিক বা অবৈতনিক যাই হোক না কেন।