somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুখে দেই জরায়ু মুখের ক্যানসার

০২ রা মে, ২০১০ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ অঞ্চলে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ক্যানসার দেখা যায় তা হলো জরায়ুগ্রীবার ক্যানসার। সম্প্রতি ভারতের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সে দেশে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় জরায়ুগ্রীবার ক্যানসার। আর এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নতুন সব উপায় উদ্ভাবিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই ক্যানসারটি প্রতিরোধযোগ্য আর তাই বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি শুরু করা দরকার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে নারীদের দ্বিতীয় প্রধান ক্যানসার হলো জরায়ুমুখের ক্যানসার। আরও পরিসংখ্যান আছে।
বাংলাদেশে মহিলাদের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার ২৪ শতাংশ (হাসপাতালভিত্তিক তথ্য)। জরায়ুগ্রীবার ক্যানসার বড় রকমের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ইস্যু, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে। বছরে এই ক্যানসারে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা হলো পাঁচ লাখ এবং মৃত্যু হচ্ছে এ কারণে আড়াই লাখ লোকের। শীর্ষে রয়েছে ভারত। বিশ্বের মোট জরায়ুগ্রীবা ক্যানসার রোগীর শতকরা ২৫ ভাগ রয়েছে ভারতে। তাই জরায়ুগ্রীবার ক্যানসার থেকে নারীদের জীবন রক্ষা হয়েছে এখন বৈশ্বিক হেলথ এজেন্ডার একটি উঁচুমানের অগ্রাধিকার। ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে এই ক্যানসার বেশি দেখা যায়, আর এ জন্য বিপর্যয় নামে অনেক পরিবারে।
চিরাচরিত প্যাপ টেস্ট
সৌভাগ্যবশত অন্যান্য ক্যানসার থেকে এর ব্যাপারটি একটু আলাদা। এ ক্যানসারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে অনেক সহজে। এর কারণ আমরা জেনেছি। এর মূলে রয়েছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। এর বিস্তার যৌনপথে কেবল নয়, অন্য পথেও ঘটতে পারে। এই রোগে স্ক্রিনিং সহজ, সহজ প্যাপ টেস্ট। একে চিকিৎসা করাও কঠিন নয়, বিশেষ করে আগাম শনাক্ত হলে এর রয়েছে নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা।
প্যাপ টেস্ট দিয়ে জরায়ুগ্রীবায় ক্যানসারপূর্ব পরিবর্তন ধরা পড়ে। জরায়ুগ্রীবাকে জরায়ুমুখও বলা যেতে পারে। তাই ক্যানসার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আগেই ধরা পড়ে যায়। একজন চিকিৎসক একটি ব্রাশের সাহায্যে জরায়ুমুখ থেকে কোষ সংগ্রহ করেন। এরপর তা ল্যাবরেটরিতে নিয়ে পরীক্ষা করেন হিস্টোপ্যাথলজিস্ট।
চিকিৎসক ফল দেখে রোগীর জন্য বিধিব্যবস্থা করেন। ভবিষ্যতের ফলোআপের কথাও বলেন।
যেসব স্থানে প্যাপ টেস্ট সহজলভ্য এবং তা করাও হয় যত্ন করে, সেসব স্থানে কেবল এই টেস্টের কল্যাণে জরায়ুমুখের ক্যানসার কমে এসেছে ৭৫ শতাংশ। তবে ভারত, যেখানে ৭০ শতাংশ মানুষ বাস করে গ্রামে, সেখানে এমন একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য মনে করেন অভিজ্ঞজনেরা। বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল ও পল্লিনির্ভর দেশের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। সে জন্যই নানা ধরনের সংস্থা ও স্বাস্থ্য সংঘ আরও নতুন ও বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবনে নিয়োজিত রয়েছে, যাতে এই পদ্ধতি পৌঁছে যায় এই ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর কাছে, আর এই প্রচেষ্টা হয় সফল।
বিকল্প টেস্ট পদ্ধতি
এসেটিক এসিড প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ: জরায়ুমুখকে ভিনেগার দিয়ে রজিত করা হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে অস্বাভাবিক টিস্যু সাদা বর্ণের হয়ে যায়। চিকিৎসক নয় এমন লোক, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, যেমন দাই, ধাত্রী, নার্সও এ কাজ করতে পারেন।
চলমান বাহন বা অস্থায়ী ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা যায় গ্রামে এবং ‘স্ক্রিন করা ও চিকিৎসা করা’ এই কর্মসূচি চালু করা যায়। যেসব নারীর টেস্ট পজিটিভ পাওয়া যাবে তাদের ক্রায়োথেরাপি করা যায় তত্ক্ষণাত্, অর্থাৎ এই কোষগুলো সন্ধানী শলাকা দিয়ে হিমায়িত করা যায়—সে স্থানেই। এই ‘ওয়ান স্পট’ বা ‘একক ভিজিট’ কর্মসূচি অনেক সাশ্রয়ী: পরিবহন ব্যয় ও কাজ থেকে ছুটি নেওয়া থেকে রেহাই দেয় মেয়েদের।
এইচপিভি ডিএনএ টেস্টিং
চিকিৎসক নয় এমন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, ভিআইএ পরীক্ষার সাহায্যে অস্বাভাবিক কোষে এই ঈষত্ পরিবর্তন চিহ্নিত করা তেমন সহজ নাও হতে পারে। এই ভুল এড়ানোর জন্য নতুন একটি পদ্ধতি কাজে লাগানো যেতে পারে, যার মাধ্যমে ভাইরাসের জিন সরাসরি চিহ্নিত করা সম্ভব। পদ্ধতিটি অনেক বেশি নির্ভুল, আর এ জন্য অত প্রশিক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। এই টেস্টের জন্য বিদ্যুৎ বা ধারাজলের প্রয়োজন হয় না।
এ ছাড়া একজন মহিলা তার ঘরে নিজের যোনিদেশের সোয়াব নিজেই সংগ্রহ করতে পারেন এবং এরপর টেস্টের জন্য দিতে পারেন ল্যাবরেটরিতে।
টিকা
বর্তমানে এইচপিভির দুটি টিকা রয়েছে, যা দিলে জরায়ুমুখ ক্যানসার ৭০-৮০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। দুই ধরনের টিকাই প্রতিষেধক টিকা এবং ১০-১২ বছরের মধ্যে মেয়েদের দেখা যায়। চার থেকে ছয় মাসে তিনটি পরপর টিকা দিতে হয় সুফল পাওয়ার জন্য। গবেষণায় দেখা যায়, টিকাদান ও স্প্রিনিং দুটির সমন্বয়ে জরায়ুমুখ ক্যানসারে মৃত্যু অর্ধেক হ্রাস করা সম্ভব। তবে টিকা ব্যয়বহুল হওয়াতে এর ব্যবহার বাড়ছে না। একে সাশ্রয়ী করার জন্য লোকসমাজ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে জোরালো সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।
এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি দুটি পর্যায়েই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে অবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা থাকলে ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে টিকা আরও সাশ্রয়ী করা সম্ভব। জরায়ুমুখের ক্যানসার আরও কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে হলে ভবিষ্যতে নতুন টিকা আবিষ্কারের কর্ণধাররা যেন লক্ষ রাখেন, যাতে আরও বেশি মানুষ এর আওতায় আসে। তিনটি শট যেন একটি শটে আনা যায়, অন্য পথে প্রয়োগ করা যায় কি না তা দেখা, টিকাটি রেফ্রিজারেটরে না রেখেও ঠিক রাখা যায় কি না। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এর প্রচারে আরও উদ্যোগী হবে, নতুন উপায় এবং আরও কার্যকর উপায় খুঁজবে। তথ্য সরবরাহের জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নজর রাখতে হবে নগরের চেয়ে পল্লির মহিলাদের পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টিভি, রেডিও ইত্যাদির আওতা বেশ কম।
বেশির ভাগ গ্রামের মহিলা দিনে কাজ করেন মাঠে। তাই বিকেলে ও সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি আরও বেশি চালানো প্রয়োজন। জরায়ুগ্রীবা ক্যানসারের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি কেবল যে মহিলাদের মধ্যে করতে হবে তা নয়, পুরুষেরাও পড়বেন এর আওতায়। কারণ রোগ সম্প্রচারে এবং স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষায় তাঁদের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। জরায়ুগ্রীবার ক্যানসারের ব্যাপারে মূল কথা হলো: রোগটি প্রায় সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। নারীদের টেস্ট করালে ও কন্যাদের টিকা দিলে তার পরিবারের জন্য ও নিজের জন্য তা বেশ স্বস্তির ব্যাপার হবে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×