মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন
কল্পনা চাকমা অপহরণ ছিলো একটা ষড়যন্ত্রমুলক অপহরণ নাটক। যে অপহরণের দায় ষড়যন্ত্রমুলকভাবে সশস্ত্রবাহিনীর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ। ১৯৯৬ সালের ১০ জুন কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই অপহরণের অভিযোগ আনা অপপ্রচারকারীরা দাবি করে, এই দিন লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসের নেতৃত্বে সশস্ত্রবাহিনীর একদল সদস্য মাঝরাতে গোলাগুলি চালিয়ে কল্পনা চাকমা, তার ভাই কালিন্দী চাকমা এবং লালবিহার চাকমাকে অপহরণ করেছিলো। কিন্তু, কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী চাকমা যে অপহরণ মামলাটি করেছিলেন, তাতে তিনি গোলাগুলি বা সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি। লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস কল্পনা চাকমার বাড়ির নিকটবর্তী উগলছড়ি ক্যাম্পে আসেন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে। উগলছড়ি ক্যাম্পে একজন আর্মির মেজর, একজন ক্যাপ্টেন, ২ জন লেফটেন্যান্টসহ প্রায় ৯০ জনের মত সৈনিক ছিলেন। এইসকল সামরিক কর্মকর্তা, সামরিক সদস্য এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা সেই রাতে উগলছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত্রি যাপন করে। তারা সেখানে শুধুমাত্র নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে অবস্থান করেন। সেখানে সশস্ত্রবাহিনীর এই অবস্থানকে পুঁজি করে একটি দেশাদ্রোহী চক্র কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে এবং এর দায় সশস্ত্রবাহিনীর ঘাড়ে দেয়ার সর্বোচ্ছ অপচেষ্টা চেষ্টা করা হয়। যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। অপপ্রচারকারীদের অভিযোগে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি আসে, তা হলো, যদি গোলাগুলি হয়েই থাকে। তাহলে কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী চাকমা তার মামলায় গোলাগুলির কথা উল্লেখ করেননি কেন? এর পরে যে প্রশ্নটি উঠে, তা হলো, কল্পনা চাকমার ভাই যেখানে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে মামলায় কোন প্রকার ইঙ্গিত দেননি। সেখানে ঐ বিশেষ চক্রটি কিসের উপর ভিত্তি করে লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসকে এই অপহরণ কার্যক্রমের জড়িয়ে প্রচার চালিয়েছে। তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, এমন দুর্গম জায়গায় সশস্ত্রবাহিনীর মাঝরাতে কাউকে অপহরণ করার প্রয়োজন আছে কি? যেখানে দিনে দুপুরে খুন করে ফেললে কেউ দেখতে পাবে না। প্রকৃত ঘটনা ছিলো ভিন্ন ধরনের। সেই সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদি সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তিবাহিনীর পুর্ণাঙ্গ অস্তিত্ব ছিলো। কেননা, তখনো শান্তিবাহিনীর সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়নি। যে কারনে শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। কিন্তু, তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যে কারনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কঠিন চেষ্টা চলছিলো। যেহেতু কল্পনা চাকমা হিল উইমেনসের সাধারন সম্পাদক এবং সেই সময়ের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রভাবশালী নারী। তাই বিচ্ছিন্নতাবাদিরা তাকেই বেছে নিয়েছিলো। আর যখন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা তার বাড়ির নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান করেছিলো। তখন ষড়যন্ত্রকারীরা সে সুযোগ লুফে নিয়েছিলো। তারা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করলো। অপহরণের পর এর দায়টা সেনাবাহিনীর ঘাড়ে চাপালো সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমুলকভাবে। এই অপহরণের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত ছিলো। এমনকি এই অপহরণের প্রতিবাদী কর্মসূচিতে পুলিশ কতৃক অনেকে হতাহত হয়েছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা এই জায়গায় অবশ্যই সফল ছিলো। আজ বিশ বছর ধরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কল্পনা চাকমা অপহরণের এই মিথ্যে নাটক খাওয়ানো হচ্ছে জনগণকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৩৬