মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেক ইতিহাস। এই দেশ এবং জাতীর জন্যে তাদের অহরহ ত্যাগের ইতিহাস। স্বাধিনতার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সুশৃঙ্খল এবং সফল সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেল তথা বিডিআর। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একদল বিপদগামী সৈনিক বিদ্রোহ করে বসে। সেইদিন পিলখানায় রক্ত বন্যা বয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক সামরিক কর্মকর্তাকে খুন করা হয় নির্মমভাবে। অনেকে মনে করেন এই ষড়যন্ত্র ভারতের মদদে হয়েছে। যাইহোক, এটি আমার আলোচনার বিষয় নয়। মুলত, এই বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের পতনের ঘন্টা বাজতে শুরু করে। এই বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে ভেঙ্গে দেয়া হয় বিডিআর। নতুন করে গঠন করা হয় বিজিবি নামক নতুন একটি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। কিন্তু, বিডিআর যে ইতিহাস গড়ে গেছে, বিজিবি সেই ইতিহাস ধ্বংশ করে গেছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যখন বিডিআর ছিলো, তখন মায়ানমার কখনো বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহসও করতো না। আর যখন বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করেছিলো। তখন তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে বিডিআর মায়ানমারকে পরাস্ত করে। সেই যুদ্ধে সরাসরি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করেনি। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর একাই এই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলো। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কোন সদস্য নিহত হয়নি। অন্যদিকে এই যুদ্ধে মায়ানমারের সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করেছিলো। মায়ানমারের একাধিক সামরিক কর্মকর্তা হতাহত হয়েছে। এই যুদ্ধের পর থেকে মায়ানমার নিশ্চুপ ছিলো। এইছাড়াও, বিডিআর থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের সাথে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে বহু যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু, বিডিআর ভেঙ্গে বিজিবি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার থেকে আজ পর্যন্ত সেরকম অর্থে বিজিবির কোন প্রকার সাফল্য নেই। সীমান্তে বিজিবি নিজেদের নিরাপত্তা পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছে। কতটা ব্যার্থ বাহিনী হলে একটা সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যার্থ হয়। ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্যদের ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। এটা এখন অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অথচ, বিডিআর থাকাকালীন সময়ে এমন ঘটনা আকাশ কুসুম ব্যাপার ছিলো। আর ২০১৫ সালে এসে মায়ানমারও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাড়ায়। যে মায়ানমার বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করতেই মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলো বিডিআর। সে মায়ানমার বিডিআর ধ্বংশের কয়েকবছর পর বাংলাদেশের দিকে মাথা তুলে তাকিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির এক কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। এর পরেও একাধিকবার বাংলাদেশের সীমান্তে আক্রমণ করে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। এমনকি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্যদের পর্যন্ত ধরে নিয়ে যায় মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, মায়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের এমন বাড়াবাড়ির পরেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার একশনে যাচ্ছে না। সর্বশেষ মায়ানমার বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্গন করে বিজিবি ক্যাম্পগুলোর উপর টহল দিয়ে গেছে। যেটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর আগেও মায়ানমারের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার আকাশ সীমা লঙ্গন করে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। মায়ানমারের এমন বাড়াবাড়ির পরেও বাংলাদেশ থেকে সেই রকম কড়াকড়ি করে কোন প্রকার প্রতিবাদ করা হচ্ছে না। যে ধরনের প্রতিবাদ করা হচ্ছে, সেটা নামমাত্র প্রতিবাদ শুধু। যে কারনে মায়ানমারের মত একটা তৃতীয় শ্রেণীর দেশ বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি যদি বিডিআর এর মত গর্জে উঠে। তাহলে মায়ানমার আবার আগের মত মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে যাবে।
পরিচালক
এনাইলাইসিস এণ্ড রিসার্চ সেন্টার
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৬