বালকদিগের সর্দার ইশতিয়াক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, সে তাহার সমমনা সারথিদিগকে লইয়া এক খানা ফুটবল টীম গঠন করিবে। ফুটবলে লাথি দিয়া তাহার পিছনে দৌড়াইতে কি পরিমান আনন্দ বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া সে বিমলানন্দ উপভোগ করিতে লাগিল।
এই লক্ষে সে FaceBook নামক অদ্ভুত বইয়ের Bangbros পৃষ্ঠার দেয়ালে, কাঠপেন্সিল দ্বারা একখানি লেখা লিখিল। সে লিখিল, “Dear Bangbros and sis, I’m going to setup a Football Team, Who wants to join just raise your hand”. যা Google Translator এ বাংলা অনুবাদ করিলে দ্বারায়, “প্রিয় Bangbros এবং sis, আমি শুধু আপনার হাত বাড়াতে সেটআপ যোগ দিতে চায় একটি ফুটবল দলের, যাচ্ছি”।
লেখাখানি লেখিবার অর্ধ ঘন্টার মধ্যে ১২ খানা Like এবং ১৩ খানা Comment পরিল। ঠিক যেন ১২ হাত আকুরের ১৩ হাত বিচি (আকুর কি বস্তু, সে সম্পর্কে লেখক অবগত নয়)। ইশতিয়াক চক্রবর্তী Bangbros এর বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের অন্যতম, Senior বলে কথা। তাহার লেখায় Like , Comment পরিবেনা তো কি “জসীম উদ্দিন” এর লেখায় পরিবে? Comment গুলোর মধ্যে একটি Comment ছিল এরকম, “BooRoo, Your উদ্যোগ Sottie প্রশংসনীয়”। যে ব্যাক্তি এই Comment খানা প্রসব করিয়াছেন, তিনি সকলের মাঝে, “Minul Islam Rony” নামে পরিচিত।
যাহা হউক, ইশতিয়াক চক্রবর্তী তাহার সারথিদিগকে লইয়া একখানি সভার আহব্বান করিল। সভায় সর্ব সম্মত ভাবে, দলের প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক, সভাপতি ও দলের অধিনায়ক হিসেবে ইশতিয়াক কেই নির্বাচিত করিল। এবং সকাল-বিকাল দুইবেলা Swinburne University’র Multi Purpuse Field এ Football অনুশীলন চলিতে লাগিল।
একদিন ইশতিয়াক তাহার বাটির দাওয়ায় বসিয়া, তাহার দলের কাহাকে মাঠের কোথায় নিযুক্ত করিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাইবে তাহাই ভাবিতেছিল,
মিশুঃ ছেলেটি খেলোয়াড় হিসেবে Swinburne এর ললনাদের নিকট সুপরিচিত। কিন্তু তাহার ভুঁড়ির যে আকৃতি, তাহাতে তার দৌড়াইবার সামর্থ নাই। অতএব, তাহাকে গোল রক্ষক পদে বহাল করা হউক।
চৌধুরী মইন উদ্দিনঃ ছেলে ভাল, কিন্তু মাঝে মাঝে কিঞ্চিৎ কদাচিৎ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তবে তাহাকে দিয়া কাজ চালানো যাইতে পারে।
আল-আমিনঃ ছেলেটি দেখিতে আবালের মত হইলে কি হইবে, ঘটে তাহার প্রচুর বুদ্ধি। তাহাকে নির্দ্বিধায় প্রতিরক্ষা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া যায়।
ইশতিয়াক যখন এইরূপ ভাবিতেছিল, তখন তাহার বাটির একমাত্র গৃহভৃত্য “সানি মনির” আসিয়া বলিল, “আজ্ঞে কর্তা বাবু, আজ সারা দিনমান বাটিতেই বসিয়া রহিলেন যে বড়, আপনার কি কোথাও যাইবার নাই”। ইশতিয়াক বলিল, “না সানি, আমার শরীরটা তেমন ভাল ঠেকিতেছে না, আজ সারাদিন গৃহেই থাকিব”। “কর্তা বাবু আপনার খেদমতের জন্য কিছু কি প্রেরণ করিব?”, “না, আমাকে নিয়া তোমাকে ব্যাস্ত হইতে হইবে না”,। “আজ্ঞে কর্তা বাবু আমি ব্যাস্ত হইতেছি না, আমাকে ক্ষণ কালের জন্য প্রস্থান করিতে হইবে, পাঠশালায় আমার একখানি যন্তরমন্তর পাঠ (Lab Class) বাকী রহিয়াছে, সেইখানে আমাকে হাজীরা দিতে হইবে”। “তা কখন ফিরিবে”। “আজ্ঞে কর্তা বাবু, এই এলুম বলে”। এই বলিয়া গৃহভৃত্য “সানি মনির” হাটি হাটি পা পা করিয়া Swinburne এর দিকে যাত্রা করিল।
বর্ষা কাল শেষ, ইতিমধ্যে শরৎ কালের শরৎ শশী তাহার পুর্ন রূপ নিয়া আকাশে আনাগোনা করিতেছে। নদীর দুই তীর ছাপিয়া সাদা কাশ ফুল তাহার শোভা বর্ধন করিতেছে। এমন দিনে, রেন্ডিস্থান (রেন্ডিয়া+ফাকিস্তান) দলের অধিনায়ক আসিয়া বলিল, তাহারা Bangbros দলের সহিত একখানি প্রিতি ফুটবল ম্যাচ খেলিতে ইচ্ছুক। এই উপলক্ষে Swinburne এর সকল দেশি-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রিদের মাঝে সাজ সাজ রব পরে গেল।
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত, Swinburne Multi Purpose Field এর দুই পাশে, দুই দলকে তাহাদের নিজ নিজ উর্দি পরিধান করিয়া, খেলোয়াড় বিন্দ্রকে সমবেত হইতে দেখা গেল। রেফারীর বাঁশির সাথে সাথে খেলা শুরু হইয়া গেল। দুই দল তাহাদের সমস্ত শক্তি দিয়া বল লইয়া কাড়াকাড়ি শুরু করিয়া দিল। দুই দলই খেলায় সমান পারদর্শী, “কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান”। হঠাৎ বাংলাদেশী দলের দুর্ধর্ষ খেলোয়াড় “সামিন হাসনাত” প্রতিপক্ষ দলের প্রবল বাধা অতিক্রম করিয়া, বল সরাসরি বিপক্ষ দলের গোল পোস্টে পাঠাইয়া দিল। তাহা দেখিয়া, বাংলাদেশী সকল আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা হর্ষধ্বনি করিয়া উঠিল। সমবেত জনতা তারস্বরে চিৎকার করিয়া বলিতে লাগিল, “সামিন ভাই, সামিন ভাই”, “বাঘের বাবা, বাঘের বাবা”।
বাংলাদেশী চিত্রগ্রাহক “Hesham Qasem” তাহার DSLR ক্যামেরা নামক অদ্ভুত যন্ত্রের দ্বারা সকলের চিত্র ধারণ করিতেছিল। বাংলাদেশীদের এমন উৎসাসে পূলকিত হইয়া, সে চাইনিজ রমণীদের চিত্র গ্রহণে ইস্তফা দিয়া, প্রবল উৎসাহে বাংলাদেশীদের চিত্র গ্রহণে মননিবেশ করিল।
যাহা হউক, প্রথম আর্ধের খেলা শেষে ফলাফল, Bangbros-১ , রেন্ডিস্থান-০। রেফারীর বাঁশির শব্দে পূনরায় তুমুল উত্তেজনাপূর্ন খেলা শুরু হইয়া গেল। খেলা এমন মজিয়া গেল যে Swinburne বাসী তাহা অনেকদিন ধরিয়া মনে রাখিবে। ক্রমেই খেলা সমাপ্তির দিকে অগ্রসর হইতেছিল। এমতাবস্থায়, দলের অধিনায়ক ইশতিয়াক চক্রবর্তী, দলের আসন্ন বীজয় এর কথা ভাবিয়া প্রসন্ন হইয়া উঠিল। এমন সময় সে দেখিতে পাইল, বলটি গরাইয়া তাহার দিকেই আসিতেছে। সে ক্ষণকাল না দাঁড়াইয়া বলেই দিকে দৌড়াইয়া গেল। বলটি তাহার পাদুকায় বাধা প্রাপ্ত হইয়া, কিঞ্চিৎ বিমর্ষতার সহিত উপরের দিকে উঠিলে, সে সজোরে স্বীয় মস্তক দ্বারা বলে আঘাত করিল। এতে বল সরাসরি প্রতিপক্ষের গোল পোস্টে ঢুকিয়া গেল এবং গোল। ইশতিয়াক কিছু বুঝিয়া উঠিবার পুর্বেই, বাংলাদেশী সকলে চিৎকার দিয়া উঠিল, আর সেই সাথেই রেফারী তার বাঁশি বাজাইয়া খেলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করিল। খেলার ফলাফল Bangbros-২, রেন্ডিস্থান-০।
বীজয়ের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হইতেই, ইশতিয়াক চক্রবর্তী লক্ষ করিল, মাঠের অনতি দূরে, এক রূপসী, অষ্টাদশী বঙ্গ ললনা হাতে ডায়েরী এবং কলম লইয়া দাঁড়াইয়া আছে। চক্ষে তাহার তৃষ্ণা, ওষ্ঠে তাহার লাজুক হাসি। ইশতিয়াক দূরদূরু বক্ষে, ললনাটির দিকে আগাইয়া গেল। এবং কিছু না বুঝিয়াই বলিয়া উঠিল, “ছেলের মা, তোমার জন্য বাজার থেকে কই মাছ লিয়ে আসিছি, ইলিশ মাছের প্রচুর দাম তেত্তিরিশ হাজার টাকা কেজি”। ললনাটি লাজুক হেসে, ডায়েরী আর কলম ইশতিয়াক এর দিকে আগাইয়া দিয়া বলিল “আমার ইলিশ মাছ লাগিবে না, ইলিশ মাছের সেন্ট হইলেই চলিবে, আর এখনকার মত Autograph Please. ইশতিয়াক মনের আনন্দে লিখিল, “ইশতিয়াক চক্রবর্তী, From রংপুর With LOVE”.
ইহা একটি কল্পনা আশ্রিত লেখা, সকল চরিত্র কাল্পনিক। যদি কোন কারনে, জীবিত অথবা মৃত কোন ব্যাক্তি অথবা গোষ্ঠীর সাথে, কোন কথা বা ঘটনা মিলে যায়। তার জন্য লেখক কে কোন মতেই দায়ি করা যাবে না।