আজ ২০শে ফেব্রুয়ারী। আজ থেকে ৬২ বছর আগের কথা, ১৯৫২ সাল। ভাষা আন্দোলনের টান টান উত্তেজনা পুর্ন সময়। আমার দাদা “মোঃ সাইফুল ইসলাম” তৎকালীন পুর্বপাকিস্তানের পাবনা জেলার অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ থানার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা ) “ইসলামিয়া সরকারি কলেজ” এর ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সর্বত্রই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কমবেশি জনঘনিষ্ঠতা পেলেও কিছু অঞ্চলে আন্দোলন তেমন গতি পাচ্ছিল না। এমন একটি অঞ্চল ছিল সিরাজগঞ্জ জেলা। ভাষার দাবিতে সিরাজগঞ্জে আন্দোলন সৃষ্টির জন্য এগিয়ে এলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, যিনি পরবর্তী সময়ে 'মজলুম জননেতা' আখ্যা পান।ইতিমধ্যে ভাসানীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। এনায়েতপুরের পীর ওলি হজরত খাজা ইউনুস আলী নকশবন্দী মোজাদ্দেদী (রহ.) তার সমর্থকদের নিয়ে ভাষা আন্দোলনে সমর্থন দেন।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন পলটন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলত জিন্নাহ্'র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তাঁর ভাষণে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে কোনো জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্রসহ নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
তমদ্দুন মজলিশ ও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সেই আহব্বানে সারাদিয়ে, সারাদেশের ছাত্র জনতা ও সাধারন মানুষ মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২১শে ফেব্রুয়ারী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে।সিরাজগঞ্জের সেই বিক্ষোভ মিছিলে যোগদেয়ার জন্য, আমার দাদা ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে ২০শে ফেব্রুয়ারী রাতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান সমৃদ্ধ পোস্টার ও ব্যানার লিখেছেন। শুধু তাই নয়, তাদের অন্যান্য বন্ধুদেরও বিক্ষোভ মিছিলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তারা সারারাত পোস্টার লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন।
পরদিন, ২১শে ফেব্রুয়ারী সকালবেলা সারাদেশে ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য, পুলিশ মিছিলে বাধাদেয় ও কয়েকজন ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে। এরই প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা দুপুরে আবার মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষন করে, এতে ঘটনাস্থলেই আব্দুল জব্বার ও রফিক উদ্দিন আহমেদ শহীদ হন।
ছালাম তোমাদের, তোমরা যারা বুকের রক্তদিয়ে আমাদের মায়ের ভাষা ফিরিয়ে দিয়েছ।
আমার দাদা “মোঃ সাইফুল ইসলাম”, আমি আপনার জন্য গর্বিত।
মোঃ মাইনুল ইসলাম রনী