প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে গেল রনীর, সে দুই হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে। কালো রঙের প্রকান্ড BMW গাড়িটা প্রচণ্ড বেগে ছুটে যাচ্ছে। পাশের প্যাসেঞ্জার ছিটে মধ্য বয়স্ক এক অপরিচিত চাইনিজ লোক চোখ বন্ধ করে বসে আছে। কে লোকটি? হঠাত রনীর মনে হল, সে গাড়ি চালাচ্ছে কি ভাবে, তার তো ড্রাইভিং লাইসেন্সে নেই, তাছাড়া গাড়িটাই বা কার। রাস্তাটা পরিচিত, ঐত বড় ইউক্যালিপটাস গাছ, তার পাশেই WISMA BETEX এর তিন তলা ভবন। কিন্তু রাস্তাটি এত এবড়ো খেবড়ো কেন, এই শহরের রাস্তা গুল তো ভাল। হঠাত লকটি ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বলে উঠল, সাবধানে গাড়ি চালাও সামনে ইউ টার্ন নিতে হবে। রনী জানে চংলিন পার্কে যেতে হলে জালান তাবুয়ান হতে ইউ টার্ন নিয়ে ফিরতি পথ ধরতে হয়। কিন্তু আশ্চর্য, লোকটি চোখ বন্ধ করে বলছে কি ভাবে। কে লোক টি?
চংলিন পার্কের P2 বিল্ডিং এ রনীর পরিচিত কিছু গুন্ডা পান্ডা বাস করে। এর আগেও সে প্রয়োজনে তাদের ব্যাবহার করেছে। কিন্তু P2 বিন্ডিং টা কোথায়, সেখানে মস্ত বড় একটি শপিং মল দারিয়ে আছে, নাম “ইয়াছির আব্বাস শপিং সেন্টার”।
রনীর কাছে সব কিছু কেমন যেন গোলমেলে ঠেকছে, পরিচিত যায়গা এমন অপরিচিত লাগছে কেন। আশেপাশের লোকগুলো এমন সন্দেহের দৃষ্টিতে গাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে কেন? তারা কি এর আগে BMW গাড়ি দেখেনি? তাছারা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন পাশের লকটি কে?
হঠাত রনীর চোখে যা পড়ল, তা দেখে তার অন্তর আত্মা কেপে উঠল, “ইয়াছির আব্বাস শপিং সেন্টার” এর ছাদে বসান মনিটরে বড় বড় অক্ষরে লেখা “WANTED” নিচে রনী আর লোকটির ছবি। হঠাত ছাইরেন বাজিয়ে একটি পুলিশের গাড়ি আসতে দেখা গেল। পাশের লোকটি বলে উঠল, মরভিন বাঁচতে চাইলে পালাও। রনী অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকাল, তার নাম তো মরভিন নয়, তাহলে লোকটি তাকে ঐ নামে ডাকছে কেন। কিন্তু এখন এত সব ভাবার সময় নেই, পিছনে মুর্তিমান আতংকের মত পুলিশের গাড়ি ছুটে আসছে। রনী আরকিছু না ভেবে গাড়ির এক্সিলারেটরে পা দাবিয়ে দিল। সাথে সাথে গর্জন করে উঠল BMW এর শক্তিশালী ইঞ্জিন। গাড়ি ঘোরাবার মত সামনে প্রয়োজনীয় যায়গা নেই, পার্ক করে রাখা মোটর বাইক গুলোকে গাড়ির বাম্পার এর ধাক্কায় সরিয়ে সে পথ করে নিল। সেই মুহুর্তে সামনে থেকে আরও একটি পুলিশের গাড়িকে আসতে দেখা গেল। রনী সরাসরি সামনের গাড়ির মাঝামাঝি স্থানে BMW দিয়ে আঘাত করল, এতে পুলিশের গাড়িটি উল্টে গেল। কিন্তু দেখার সময় নেই, সে প্রবল বেগে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে রাস্তায় নেমে পরল। হঠাত একটি বুলেট এসে BMW এর রিয়ার ভিউ মিরর টা চুরমার করে দিল। পিছনের পুলিশের গাড়ি থেকে গুলি করা হচ্ছে। হঠাত রনী খেয়াল করল পাশে বসা লোকটির হাতে একটি সেমি অটোমেটিক এস এম জি, সে পিছনের দিকে ঘুরে গাড়ির জানালা দিয়ে পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে গুলি করতে শুরু করল। এতে পুলিশের গাড়ির সামনের হেড লাইট ও সামনের চাকা পাংচার হয়ে গেল। সে অনুভব করতে পারল, পুলিশের গাড়ি হতে সাহায্যের জন্য আহব্বান করা হচ্ছে। কথায় আছে বাঘে ধরলে এক ঘা, আর পুলিশে ধরলে আঠার ঘা। রনী বুঝতে পারছে, নিশ্চিত সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে, এখন উপায়। পাশ থেকে লোকটি বলে উঠল, মরভিন পাশের সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দাও। এখান থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে আমাদের একটি সেফ হাউস আছে। রনী লোকটির কথা মত গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকল। এক সময় লোকটি একটি পুরোন ডিটাচড বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি রাখতে বলল। সে গাড়িটি বাড়ির ড্রাইভ ওয়েতে দার করাল। এমন সময়, বাড়ির দরজা খুলে একটি সুন্দরী চাইনিজ তরুণী বেরিয়ে এলো। সে রনীর কাছে এসে জানতে চাইল কোথাও লাগেনিতো, যেন বহু দিনের পরিচিত কেউ।
রনী এখনও বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে, সে তো গত রাত্রে Atomosphera থেকে ডিনার করে, বাসায় গিয়ে প্রতিদিনের অভ্যাস মত সিভাস রিগাল এর এক পেগ খেয়ে ঘুমুতে গিয়েছিল, এসব কি হচ্ছে। সবাই তাকে মরভিন বলে ডাকছে কেন। লোকটি কে? আর এই তম্বী সুন্দরী চাইনিজ তরুণীটাই বা কে? সব কিছু তার কাছে কেমন জানি উলট পালট লাগছে। অনেক প্রশ্ন, কিন্তু কোন উত্তর জানা নেই, সে কি পারবে এই প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর পেতে।
চলবে…………….
মোহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম রনী
১৭/১২/২০১৩