somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল কুরআনে মুমিনের পরিচয়

২৩ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন মানুষ যখন ঈমাম আনে, তখন তার ভেতর সুপ্ত মানবীয় গুণাবলি নতুন রূপ ধারণ করে মানুষটাকে সুন্দর করে। একজন মুসলমান যখন ঈমান পোষণ করে মুমিন হয়, তখন তার পুরাতন বৈশিষ্ট্যাবলি পরিবর্তন হয়ে একটি উন্নতমানের গুণাবলি তার ভেতরে পয়দা হয়। তাই বলা চলে, ঈমান মুমিন জীবনের উজ্জীবনী শক্তি। একজন মুমিনের চরিত্রে, তার চিন্তা ও কর্মে কী ধরনের গুণাবলি পয়দা হওয়া উচিত তা আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। এ সব গুণাবলি আমাদের জীবনে বর্তমান কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন প্রতি মুহূর্তে। আল কুরআনে বর্ণিত মুমিনের কিছু গুণাবলি নিম্নরূপ :
১. মুমিন সন্দেহ ছাড়াই আল্লাহর পথে জানমাল দিয়ে সংগ্রাম করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং তারা জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’ (সূরা হুজরাত : ১৫)
আরো এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করতে গিয়ে মরেও যাবে।’ (সূরা আত তাওবা ১১১)
মুমিন জিহাদের ব্যাপারে ওজর পেশ থেকে বিরত থাকে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে, তারা কখনো আল্লাহর পথে জানমাল জিহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি চাবে না।’ (সূরা আত তওবা : ৪৪)
‘মুমিন তো প্রকৃতপক্ষে তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূল সা:-কে অন্তর থেকে মানে। আর যখনই কোনো সামষ্টিক কাজ উপলক্ষে রাসূলের সাথে থাকে তখন অনুমতি না নিয়ে কোথাও যায় না। হে নবী, এভাবে যারা আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ ও রাসূলকে মেনে চলে।’ (সূরা আন-নূর : ৬২)
যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তারা নিজ জান ও মাল দিয়ে সংগ্রাম থেকে অব্যাহতি চায় না। আল্লাহ মুত্তাকিদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। কিন্তু যারা এই সংগ্রাম থেকে অব্যাহতি চায়, তারা প্রকৃতপক্ষে ফেতনায় নিমজ্জিত। এদের ব্যাপারে কুরআনের ঘোষণা ‘এবং তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে ফেতনায় ফেলো না। সাবধান ওরাই ফেতনায় নিমজ্জিত রয়েছে।’ সূরা আত-তাওবা ৪৯।
বিপদ-মুছিবতকে মুমিন পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ও নির্দেশ ব্যতীত কোনো বিপদ-মুছিবত আসতেই পারে না। যারা মুমিন আল্লাহ তাদের দিলে সঠিক হেদায়াত দান করেন।’ (সূরা আত তাগাবুন : ১১)
মুমিনরা সংবাদকে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করে। এরশাদ হচ্ছে, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও। এরপরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা হুজরাত : ৬)
অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে মুমিনরা এড়িয়ে চলে। এরশাদ হচ্ছে, ‘এবং দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না, তথা মিথ্যা কাজে শরিক হয় না। আর অহেতুক বিষয়ের পাশ দিয়ে যখন তারা গমন করে তখন তারা নিতান্ত ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যায়।’ সূরা ফুরকান : ৭২।
মুমিন ব্যক্তি, কাফের ও মুনাফিকদের সামনে নতি স্বীকার করে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘মুমিন লোকদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট অনুগ্রহ রয়েছে এবং কাফের ও মুনাফিকদের সামনে আদৌ দমে যেও না। তাদের নিপীড়ন মাত্রই পরোয়া করো না। আল্লাহই যথেষ্ট যে, মানুষ সব ব্যাপারে তারই ওপরে সোপর্দ করে।’ (সূরা আল আহজাব : ৪৭-৪৮)
মুমিন চোখ কান খোলা রেখে আল্লাহর কথা শোনে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যখন তাদেরকে তাদের পরওয়ারদিগারের কথা বুঝানো হয়, তখন তারা তাতে বধির ও অন্ধ হয়ে থাকে না। আর যারা বলে, হে পরওয়ারদিগার! আমাদেরকে দান করো কমনীয় স্ত্রী এবং সন্তানসন্ততি আর আমাদেরকে পরহেজগার লোকদের ইমাম (অগ্রদূত) বানাও।’ (সূরা আল-ফুরকান : ৭৩-৭৪)
মুমিনরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নেক কাজ করে থাকে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তারা আল্লাহর ওয়াস্তে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে : কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদেরকে সাহায্য দান করি, তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সূরা দাহর : ৮-৯)
মুমিনরা হয় কাফিরদের প্রতি কঠোর আর পরস্পর দয়াশীল। এরশাদ হচ্ছে, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা কাফেরদের প্রতি অতিশয় কঠোর এবং পরস্পর দয়াশীল। তোমরা তাদেরকে রুকু সেজদায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির সন্ধানে আত্মনিমগ্ন দেখতে পাবে। খোদানুগত জীবনযাপনের ফলে তাদের মুখাবয়ব উজ্জ্বল ও ভাস্বর থাকে।’ সূরা আল ফাতহ : ২৯।
মুমিন আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধীদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাসী লোকদের এমন কখনো দেখতে পাবে না যে, আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধীদের প্রতি তারা ভালোবাসা পোষণ করে না। যদিও (বিরোধীরা) তাদের পিতা-মাতা হোক, সন্তানাদি হোক, ভাই-বেরাদর কিংবা বংশ পরিবারের লোক হোক।’ (সূরা মুজাদালা : ২২
কুরআনে মুমিনে গুণাবলি বর্ণনা করে বহু আয়াত রয়েছে। কুরআনে বর্ণিত সেসব গুণাবলি অর্জনের জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×