যোগ্যতাই বড় শক্তি
গামা পাহলোয়ান আর কবি আল্লামা ইকবাল ছিলেন এক জায়গার মানুষ; সেই সূত্রে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বও ছিল । খিলাফত আন্দোলনের এক সভায় উভয়েই উপস্থিত। হঠাৎ কবি দাঁড়িয়ে বললেন , এইবার গামা সাহেব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে কিছু বলবেন । সকলে হৈ চৈ করে উঠলো ‘ হ্যাঁ ’, ‘হ্যাঁ’ শুনব, আমরা গামা সাহেবের বক্তৃতা শুনবো । গামা সাহেবের না-না আর্তচিৎকার সকলের উৎসাহের বন্যায় ভেসে গেল। অগত্যা তিনি উঠলেন ; অতি কষ্টে বললেন , “ভাই সকল, আপনারা দেহের শক্তি বাড়ানোর জন্য হামেশা সকাল সন্ধ্যা কুস্তি করবেন। কাপা গলায় এ কয়টি কথা বলতে বলতে তিনি বসে পড়লেন । রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, রোজ সকালে আমি একহাজার বৈঠক দেই এক জররা ঘাম দেখা যায়না , আর এই শ্বশুরের পুত কবি আমাকে কি মুশকিলে ফেলেছেন যে আমার শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে ।” ওপরের কৌতুকটি থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই ? আমরা শিক্ষা পাই শারীরিক শক্তিতে একজন যতই বলীয়ান হোক না কেন জ্ঞানের শক্তিতে যদি সে দক্ষ না হয় , তবে কত অসহায় হয়ে যেতে পারে । এবার নিচের উদাহরণ থেকে শিখবো শারীরিক শক্তিতে দুর্বল হয়েও কেমন করে মানুষ ইচ্ছাশক্তি বলে বলীয়ান হয়ে বড় হতে পারে ।
১৯৭৪ সালের কথা। ২১ বছর বয়সী এক কোরিয়ান তরুনী তার প্রথম সন্তান প্রসব করলেন । মায়োবানি মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছিল , একজন ইন্টার্নী ডাক্তার তার চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিল। অবশেষে ৯ পাউন্ড ওজনের এক পুত্রসন্তান ভুমিষ্ট হল । কিন্তু একি , নবজাতকের কন্ঠে কোন সাড়া নেই । আঁৎকে উঠলো ডাক্তার , কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও বিশেষ ফল হলনা । শিশুটির শরীর নীল হয়ে গেল । “আমি দুঃখিত ও আর বেঁচে নেই ” ডাক্তার শিশুটির পিতামাতাকে সমবেদনা জানিয়ে , একটি কাপড়ে মৃত শিশুকে জড়িয়ে তাকে তুলে দিয়ে বিদায় নিলেন । ব্যথিত পিতা ইয়ং জাং চুং নিজের প্রথম সন্তানের কবর খুঁড়তে বাইরে যাওয়ার পরই মায়োবানি পাগলের মত কাপড়ে জড়ানো দেহটি বুকে জড়িয়ে ধরে পরম প্রশান্তিতে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল । প্রায় দু ’ঘন্টা পর মায়োবানি জেগে উঠল , তার কোলে সন্তান হঠাৎ নড়ে উঠেছে। শিশুর গায়ের চামড়া এখন গোলাপী বর্ণ ধারণ করেছে । ক্রমে তার নিঃশ্বাসের শব্দও পাওয়া গেল এবং হঠাৎ কাঁদতে শুরু করল শিশুটি । চিৎকার করে উঠল মায়োবানি , আমার সন্তান বেঁচে আছে! এই অলৌকিক শিশুটির নাম হান-কী। জন্মমুহূর্তে ডাক্তারের ভুলের কারণে হানÑকীর সেনের গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ কেটে যাওয়ায় সে সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত হয়েছিল । ওর বয়স দুই বছর হওয়ার পরও সে হাঁটতে বা ভালমত কথা বলতে পারে না । উদ্বিগ্ন মা ১৯৭৮ সালে চার বছর বয়সী হান-কীকে বড় ডাক্তার দেখালেন । ডাক্তার সেরেব্রাল পালসি শনাক্ত করে বললেন, এ রোগ কখনো ভাল হয় না। কিন্তু মায়োবনি তার সন্তানকে উপযুক্ত মানুষ করে গড়ে তুলতে আবারো সংকল্পবদ্ধ হলেন ।তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে হান-কীকে ভর্তি করার জন্য খোঁজখবর নিতে গেলেন। দেখলেন শিশুদের চেয়ারের সাথে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। না হান -কীকে এ অবস্থার দিকে তিনি ভাবতেও পারেন না। মায়োবানি হান-কীকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে তার আইকিউ টেষ্ট করলেন, ডাক্তার দেখলেন শিশুটির আইকিউ গড় সাধারণ শিশুদের চাইতে অনেক ওপরে এবং সে খুব বুদ্ধিমান । মায়ের আত্মবিশ্বাস গেল বেড়ে । এরপর তিনি ডাক্তারের দেয়া আইকিউ রিপোর্টসহ হান-কীকে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করাতে সক্ষম হলেন। পরের দিন মায়োবানি তার ৬৫ পাউন্ড ওজনের পুত্রকে কাঁধে নিয়ে স্কুলে আনা-নেয়া করতে লাগলেন। দেখে লোকজন হাসাহাসি করে কিন্তু মায়োবনি অটল অবিচল। হান-কী অতিকষ্টে পাখির থাবার মত পেন্সিল ধরতে পারত এবং প্রচন্ড অধ্যবসায়ের সাথে সে কাগজে আঁচড় কেটে সঠিক উত্তরটি লিখত । স্কুলে ওর চার বছর পার হওয়ার পর এবং একসময় নিজের পায়ে হাঁটতে চেষ্টা করেও সফল হল সে । মায়োবনি ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী বন্ধু । এ ছাড়া আর সবাই হান-কীকে এড়িয়ে চলে ওর অদ্ভুত আচরণের জন্য। এভাবে বছরের পর বছর গড়িয়ে একসময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে উচ্চ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করে সে। মায়োবানির স্বপ্নের পালে জোর হাওয়া লাগে এবার । সিউল ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কোরিয়ার সবচে ’ মর্যাদাশীল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ৫ হাজার সীটের জন্য পাঁচ লক্ষাধিক ছাত্র পরীক্ষা দেয় । অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য একশ জন। এখানে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারে অনুত্তীর্ণ হয়েও দমল না হান-কী। পরের বছর ১৯৯৩ সালে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল হান-কী । প্রথমবারের মত একজন সেরেব্রাল পালসি রোগী সিউল ন্যাশনাল বিম্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে নিলে। হান-কী জাতীয় বীরের মত মর্যাদা পেল। কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম য়ং সাম নিজে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানালেন তাকে । ১৯৯৪ সালের মে মাসে সিউলের সেজং কালচারাল সেন্টারে এক জমকালো অনুষ্ঠানে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লী ইয়ং ডাক মঞ্চ থেকে মাইকে মায়োবানির নাম ঘোষণা করলেন এবং হল ভর্তি হর্ষোৎফুল্ল দর্শকরা অভিনন্দিত করল তাকে । প্রধানমন্ত্রী তার হাতে ‘প্যারেন্ট অব দি ইয়ার ’ সার্টিফিকেট তুলে দিলেন । ১৯৯৫ সালে ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বছরে হান-কী সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে একাডেমিক স্কলারশিপ লাভ করে ।
চলো এবার , ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান নিয়ে কিছু বলি । ভূগোল শাস্ত্রে তাদের অনন্য অবদানের পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে হজ্জ পালন। প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের জন্য হজ্জ ফরয ,আর তাই সারাবিশ্বের মুসলিমদের কাছে মক্কা তথা আরব ভৌগোলিকভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । প্রথমত: মক্কাকে কেন্দ্র করে নানা প্রকার ভুল-চিত্র অঙ্কিত হতে থাকে । অবশেষে, খলিফা আল মামুনের প্রচেষ্টায় আল খারেজিমী ঊনসত্তরজন ভূতত্ত্ববিদসহ কঠোর সাধনা করে একখানি ‘সুরাত আল আরদ ’ বা দুনিয়ার বাস্তব রূপ দাঁড় করান । এটাই পরবর্তীকালে পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কনে মডেল হিসাবে কাজ করে । তাতে পৃথিবীর আবহাওয়ার তারতম্য অনুসারে সাতটি ইকলিম বা মন্ডলে ভাগ করা হয়েছিল । আজ আমরা সাগরবেষ্টিত সপ্ত-মহাদেশে বিভক্ত যে পৃথিবীর বাস্তব রূপের সাথে পরিচিত , তার নির্ভুল পরিকল্পনা মুসলিম ভুতত্ত্ববিদদের হাতেই রচিত হয়েছিল এগারো –শ’ বৎসর আগে ।
বিশ্ব মাঝে শীর্ষ হব
You will glad to know that my group score H.D (Higher distinction, that means above 85%) with marks of 97% and mine was the best and highest score project in Grifith University's History of 47 years. I was crying when they announced my name as a Bangladeshi student and my national song playing at that time & I had my flag in my hand. That was the most memorable day in my life & they selected my project in National Australian Universities Software Compititon. উপরোক্ত ই-মেইলটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশী ছাত্র সাজ্জাদুল ইসলাম অস্ট্রেলিয়ার নামকরা গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিষয়ক লেখক জনাব শামিম তুষারের কাছে । ই-মেইলের হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যে ফুটে উঠেছে তার ব্যক্তিগত সাফল্য ও দেশপ্রেমের এক অনবদ্য চিত্র। বাংলাদেশী ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম সেখানে মাস্টার অব ইনফরমেশন টেকনোলজিতে এম এস করেছেন। ডাটাবেজ ডেভলপমেন্ট ইন ওরাকল বিষয়ে এখন তিনি ডক্টরেট করছেন। তার ই-মেইলে ডে প্রজেক্ট আর সফটওয়ার কমপিটিশনের কথা বলা হয়েছে তা ঘটেছে তার এম এস এর শেষ সেমিস্টারে । অস্ট্রেলিয়ান বন্ধুদের সাথে নিয়ে তিনমাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রজেক্টটি শেষ করেন সাজ্জাদ। গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির হলরুমে সমস্ত শিক্ষক আর সিলেকশন বোর্ডের সামনে একে একে উপস্থাপন করা হয় সকল গ্রুপের প্রজেক্টসমূহ । সাজ্জাদের গ্রুপ অর্জন করে হায়ার ডিস্টিংসন মার্কস। অর্থাৎ ৮৫% এর উপরে নাম্বার। তাদের তৈরি সফটওয়্যারটি এতই ভাল হয়েছিল যে সিলেকশন কমিটি তাদের গ্রুপকে মোট ৯৭% নাম্বার দান করেন । আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করা হয় বাংলাদেশী ছেলে সাজ্জাদের তৈরি প্রজেক্টের প্রাপ্ত নম্বর গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ৪৭ বৎসরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমে বাজানো হলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। হাতে লাল সবুজ পতাকা আর বুকে সমগ্র সবুজ বাংলাকে ধারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো গর্বিত সাজ্জাদ। নিজের সাফল্য নয় বরং সে কান্নার পিছনে ছিল দেশকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার এক অপার্থিব আনন্দ । এখানেই শেষ নয় অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের বিজয়গাঁথা । এর কয়েকদিন পরেই একটি চিঠি পান সাজ্জাদ । তার তৈরি প্রজেক্ট গোটা অস্ট্রেলিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কর্তৃপক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য । সে অনুষ্ঠানে গিয়ে আরেক চোখ ভিজানো দৃশ্যের সাক্ষী হন তিনি। উপস্থিত হাজার হাজার সফটওয়্যার নির্মাতা, আর বিশেষজ্ঞের সামনে বাংলাদেশী ছাত্র হিসাবে পুরস্কার গ্রহনের সময় অস্ট্রেলিয়ান পতাকার ওপরে উড়ানো হয় বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা । চলো বন্ধুরা , আমরা সবাই আমাদের গর্ব সেই সাজ্জাদের জন্য হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা একত্র করে উচ্চারণ করি মারহাবা, মারহাবা! আর আমাদের এই ধ্বনি ক্যাঙ্গারুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাক সবুজ স্বদেশ থেকে সেই সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় , প্রিয় ভাই সাজ্জাদের কাছে ।
চোখের আলো নয় .মনের আলোতে বিশ্ব জয়
চলো এবার তোমাদের নিয়ে উড়াল দেই দেশের মায়া কাটিয়ে বিদেশে। চলো পরিচিত হই দৈহিকভাবে অপূর্ণাঙ্গ কিন্তু মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী কিছু ভাইয়ার সাথে এবং নভোচারিণী এক বোনের সাথে । তোমাদের মতোই ফিলিপাইনের এক ছেলে নাম বেয়েনভেনিডো ক্যানোডিজাডো সংক্ষেপে বিয়েন । বয়স কিন্তু মাত্র ষোল । ম্যানিলার ইউনির্ভসিটি অফ সান্টোথমাসে পলেটিক্যাল সায়েন্সে সে এই কেবল অনার্স শুরু করেছে । বলা যায় আমাদের তুলনায় একটু আগেভাগেই , তাইনা? পড়াশোনার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ । তার ইচ্ছা আছে এখানকার পড়াশোনা শেষ করেই অ্যাটিনিও ল স্কুলে সে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেবে। তোমরা কি জান অ্যাটিনিও ল স্কুল খুব নামকরা প্রতিষ্ঠান? এখানে চান্স পাওয়া কিন্তু মোটেই সহজ ব্যাপার নয় । তারপরও বিয়েন সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাসী, স্কুলের ক্লাসগুলিতে সে বরাবরই ভালো গ্রেড পেয়ে এসেছে । তার বিশ্বাস এসব গ্রেডের জোরেই সে কোন একটি স্কলারশীপ জুটিয়ে ঠিকই ঢুকে পড়বে অ্যাটিনিওতে । নিজের বয়েসি আর দশটা ছেলের মতোই হাসিখুশি আর ব্যস্ত সময় কাটায় বিয়েন। নিয়মিত ক্লাস করে । বাসা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে। অবসরে আড্ডা দেয় ইন্টারনেটের চ্যাটরুম গুলোতে ঢুকে । পড়াশুনা , পরিশ্রম , জীবনযাত্রা , স্বপ্ন, বিনোদন সবদিক হতেই বিয়েনের সঙ্গে নানা মিল তার সহপাঠীদের । অমিল কেবল একটাই । ইস ! সে অন্যদের মতো চোখে দেখে না। পৃথিবীর রং রূপ সে আস্বাদন করতে পারেনা । বিয়েন দেখে তার মনের চোখ দিয়ে তার গাঢ় অনুভূতি দিয়ে । হায় ! গোটা দুনিয়ার পনের কোটি দৃষ্টিহীন মানুষের মধ্যে সেও একজন । মনের চোখ মেলে সাদা ছড়ি হাত এগিয়ে চলা ব্যতিক্রম একজন । অসাধারন মনের জোরই বিয়েনকে এমন ব্যতিক্রমী করে তুলেছে । দূরারোগ্য এক নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের কারণে জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন সে। এমনকি সমস্যা হয় বাম কানে শুনতে । তারপরও থেমে থাকেনি বিয়েন । স্কিন রিডিং সফটওয়্যার , স্পিচ সিনথেসাইজার এর মতো অ্যসিসটিভ টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে চমৎকার দক্ষতা অর্জন করেছে সে কম্পিউটার ব্যবহারে। ফিলিপটাইন্স ব্লাইন্ড ইউনিয়ন পরিচালিত কম্পিউটার লিটারেসি কোর্স শেষ করেছে সে সাফল্যের সাথে।
সুপ্রিয় ভাইবোনেরা , চলো এবার আরেক বন্ধুর সাথে পরিচয় হই । ফিলিপাইন থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এক্কেবারে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকার ওহিও নগরীতে ছেলেটির বাস । নাম সুলেমান গকিইট । কি পরিচিত লাগছে নামটা ? হ্যাঁ ,তার জন্ম তুরস্কে ,জাতিতে সে মুসলিম। পাঁচ বৎসর বয়সের সময় তার পরিবার স্থায়ীভাবে আমেরিকায় চলে আসে। এখন তার বয়স একুশ । ওহিরও ইউনিভার্সিটি অব টলেডোতে গ্রাজুয়েশন করছে সুলেমান । পাশাপশি কাজ করছে কম্পিউটার ফার্ম ইন্টোলিডাটা টেকনোলজিতে । দুই বৎসর বয়স হতেই সে দৃষ্টিহীন । কিন্তু ইন্টেলিডাটা কর্পোরেশনে বার্ষিক ১৪ হাজার ডলারের চাকুরীটা বাগাতে এই অন্ধত্ব তার কোন সমস্যাই করেনি । বরং ৭০ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে কম্পিউটার টেকনিশিয়ান এবং প্রোগ্রামার হিসাবে তাকে রাজকীয় সম্মান দেখানো হয় ।
দুই বৎসর বয়সের সময়েই রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা নামক জটিল একটা অসুখে চোখের জ্যোতি হারাতে শুরু করে সুলেমান। উন্নত চিকিৎসার খোঁজে সুলেমানকে বুকে নিয়ে খোদ আমেরিকার মায়ো ক্লিনিকে ছুটে আসেন তার বাবা। কিন্তু হায়! বিশ্ববিখ্যাত মেডিক্যাল সেন্টারটিও ব্যর্থ হয় তাদের স্বপ্ন পূরণে । তবে ডাক্তার বাবাকে পরামর্শ দেন , সুলেমানকে সাধারণ ছেলেমেয়ের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে মানুষ করতে কোন প্রকার হেলাফেলা না করতে। সে কথা শুনেই এক্কেবারে টার্কি থেকে সপরিবারে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন তার বাবা। ছেলেকে ভর্তি করে দেন স্কুলে । স্কুল পর্যায়েই সুলেমানের অসামান্য স্মৃতিশক্তির কথা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। দুইবার শুনেই যে কোন কিছু মুখস্থ করে ফেলতে পারে সে । দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে সে অসামান্য কৃতিত্বের সাথে স্কুলের গন্ডি ডিঙ্গিয়ে ভর্তি হয় কলেজে। একদিন কলেজের বুলেটিন বোর্ডে ঝুলানো ইন্টেলিডাটার রিক্রুটিং এডের কথা কানে আসে তার। অ্যাপ্লাই করে সুলেমান। পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের কাজ দারুণভাবে শিখেছে সে। একজন ফুলটাইম প্রোগ্রামার এবং কম্পিউটার টেকনিশিয়ানকে রীতিমত ছাঁটাই করে পুরো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাকে। অবশ্য সুলেমান সে বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছে। ছোট বড় অসংখ্য প্রজেক্টে তার কোম্পানির টেকনিক্যাল নেতৃত্ব দিয়েছে সে। এখনও কাজ করছে সে সমান তালে। সে ছাড়াও আরও প্রায় সাড়ে তিনশত কর্মচারী কর্মকর্তা আছেন ইন্টেলডাটা কর্পোরেশন । কিন্তু সেই হলো একমাত্র কর্মকর্তা যে চব্বিশ ঘন্টা অনকলে থাকে। অর্থাৎ দিনরাত যখনই ডাকা হোক অফিসে এসে কাজে বসে যায় সে । দৃষ্টিহীন সুলেমানই এখন ৭০ মিলিয়ন ডলার কোম্পানিটির টপ ট্রাবলশুটার। হয়তো ভবিষ্যতে নতুন আমেরিকা গঠনে সে হবে একজন পথিকৃৎ। বন্ধুরা, এ সকল উদাহরণের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম দৈহিক অপূর্ণতা এমনকি অন্ধত্বও মানুষের জীবনে কোন বাধা নয় বরং এগুলিকেই শক্তি হিসাবে কাজে লাগিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়া যায় সম্মুখপানে।
এই ফাঁকে ছোট্ট বোনদের উদ্দেশ্যেও বলতে চাই , শুধু মেয়ে হয়ে জন্মাবার কারণেই কি জ্ঞান বিজ্ঞান আর উন্নয়নে তোমাদের পিছিয়ে থাকা ঠিক হবে ? এটা এক ধরনের হীনমন্যতা নয় কি? রাসূল (সা) এর সময়ও আল হাদিস স্মরণ ও সংরক্ষনে আয়েশা (রা) এর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বর্তমান সময়ে ইরানে একজন পর্দানশীন মহিলাই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজকে তোমাদের দু-তিনজন জগদ্বিখ্যাত মহিলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।
১৯৬৩ সাল, রাশান নভোচারী ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা মহাশূন্য পরিভ্রমন করেন। মহাশূন্যে তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা নভোচারী । ১৯৮৩ সালের আগ পর্যন্ত আমেরিকায় মহাশুন্যযানে নভোচারী হিসেবে কোন নারী নির্বাচিত হননি। আমেরিকায় প্রথমবারের মত ১৯৮৩ সালে মহাশূন্যযানের জন্য একজন নারী নভোচারী হিসেবে নির্বাচিত হন । ৩২ বৎসরের স্যালি রাইড স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার মহাশূন্যে পরিভ্রমন করেন । স্যালির পরে অনেক মেয়েই নভোযাত্রী হয়েছেন কিন্তু নভোযানের নেতা হয়েছেন মাত্র একজন । তিনি হলেন এপোলো ১১ মিশনে স্পেস শাটল কলাম্বিয়ার কমান্ডার এলিন কলিন্স । আমেরিকার স্পেস শাটল কলাম্বিয়ার মহাকাশযাত্রাকে নাসা কর্মকর্তারা স্মরনীয় করে রাখতে চাইলেন এপোলো-১১ র উড্ডয়নের ত্রিশতম বার্ষিকী পালনের মাধ্যমে । কর্মকর্তারা চাইলেন এই বিশেষ দিনটিতেই কলাম্বিয়া মহাশূন্যে যাত্রা করুক। কলাম্বিয়া স্পেস ফ্লাইটটির পাইলট সিটে বসে আছেন এলিন কলিন্স-আমেরিকার কোন স্পেস ফ্লাইটের প্রথম মহিলা কমান্ডার । তার মহাকাশযানটি আকাশে উড়াল দিল আর নারীদের ইতিহাসের তৈরী করলো এক গৌরবোজ্জ্বল বিজয়গাঁথা।
ছোট থাকবো না মোরা চিরদিন
চলো একটু বেড়িয়ে আসি সেই ১৯৪৫/৪৬ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হল সলিমুল্লাহ হলে। সেখানে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হচ্ছে । ডায়াসে আছেন হল ছাত্র সংসদের সভাপতি ,পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন। কি আশ্চর্য ব্যাপার দেখ, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে প্রায় প্রতিটি বিষয়েই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বাংলা রচনা, বাংলা বিতর্ক , বাংলা বক্তৃতা , বাংলা উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিটি বিষয়ে সে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। শুধু কি তাই ! সর্বাধিক আইটেমে প্রথম হওয়ার সুবাদে আবার একটি বিশেষ পুরস্কার । দেখ কেমন পাতলা ছিপছিপে চেহারা . চোখে চশমা , মাথায় তুর্কী টুপি , শেরওয়ানী ও চোস্ত পাজামা পরিহিত ছেলেটি । ডায়াস থেকে একটি বিষয়ে প্রথম হওয়ার জন্য তার নাম ঘোষিত হচ্ছে, সেই পুরস্কার নিয়ে নিজ আসনে বসতে বসতে আবার তার নাম ঘোষিত হচ্ছে । সবকটি বিষয়ের প্রথম শুধুমাত্র আজকে যেন সেই ছেলেটির জন্যই উৎসর্গীকৃত। ডায়াস - টু -নিজ চেয়ার বারংবার ওঠানামা করতে সেই ছেলেটি খুবই কর্মক্লান্ত । অথচ বিজয়ের ভাস্বরজ্যোতি তার মুখে দেদীপ্যমান ছেলেটির কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে। পারঙ্গমতা দেখে মনে হয়, এ নিয়েই বুঝি কাটে তার সারা দিনরাত। কিন্তু না, পড়ালেখাতে সে সমানতালে কৃতিত্বপূর্ন -মেট্রিকে সে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ৫ম এবং আই,এ পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে। শুধু কি তাই , ইংরেজি অনার্সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট আর মাস্টার্সেও ফার্স্টক্লাস। অতঃপর চল্লিশ বৎসর বয়সে একজন নামকরা কৃতিছাত্র হিসাবে তিনি ক্যামব্রীজ থেকে পি এইচ ডি করেন। নাহ! তোমাদের বোধহয় আর তর সইছেনা। কে এই ছেলেটি ? তিনি হলেন সৈয়দ আলী আশরাফ । হ্যাঁ - হ্যাঁ তিনিই হলেন মরহুম ডক্টর সৈয়দ আলী আশরাফ , বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি লেভেলের বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসানের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি। ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট তিনি এই নশ্বর দুনিয়া চেড়ে চলে গেছেন চিরদিনের তরে । তিনি এক রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান , তারা পাঁচ ভাই পাঁচ বোন ছিলেন । বড় ভাই অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান –জাতীয় অধ্যাপক ও সাবেক রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (মরহুম), দ্বিতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী রেজা প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ,অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকী দারুল ইহসানের বর্তমান প্রোভিসি , সৈয়দ আলী তকী এক সময়কার বাংলার শিক্ষক । এসো আমরাও এই মহাপুরুষের মতো হওয়ার জন্য চেষ্টা করি ।
ইন্টারনেট বদলে দিয়েছে পশ্চিমা কিশোরদের জীবনযাত্রা । বেসবল, বাস্কেটবল , টেনিস নিয়ে মেতে থাকা কিশোর কিশোরীরা এখন মেতে থাকছে কম্পিউটার নিয়ে। যারা একটু সৃজনশীল তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ওয়েবপেজ ডিজাইন , ওয়েব হোস্টিং নিয়ে। রিসার্চ কম্পিউটার ইকোনমিক্স নামের একটি সংস্থার হিসাবে গোটা আমেরিকার প্রায় লক্ষাধিক কিশোর কিশোরী এখন ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে কিছু না কিছু উপার্জন করছে। ইন্টারনেট থেকে আয় করে রীতিমত ধনকুবের হওয়ার উদাহরনটা কিন্তু অন্যদিকে। ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১০০ জন ইন্টাপ্রেনউয়ার এর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে ইয়ং বিজ ম্যাগাজিন। শীর্ষস্থানীয় ৪ জন কিশোর উদ্যোক্তার গড় আয় প্রায় চার লক্ষ ৩৩ হাজার ডলার। এরা সবাই ইন্টারনেট থেকে লাখপতি হয়েছে ই-কমার্স আর ওয়েব ডিজাইনের কাজ করে । অবশ্য লাখপতিদের সবাই যে খুব ভেবেচিন্তে কাজ শুরু করেছে তা নয়। সামান্য মেধা, সামান্য আলাপ, সামান্য এডভেঞ্চার থেকেই শুরু অনেক সময় অসামান্য ঘটনার নায়ক হয়ে গেছে তারা। অন্তত মাইকেল ফারডিকের ক্ষেত্রে তো এক্সিডেন্টই ছিল সমস্ত ঘটনার উৎস । ১৯৯৭ সালে সে সময় মাইকেল ফারডিকের বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর । কানাডার টরেন্টোতে বাবা-মায়ের সাথে থাকতো সে। স্রেফ মজা করার জন্য বাড়ির গ্যারেজে বসে বসে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সে।
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে কিছু লেখা আর ছবি ছিল সে সাইটে । এ সাইটেই একবার ভিজিট করতে আসে ১৬ বছরের অষ্ট্রেলিয়ান কিশোর মাইকেল হেম্যান । চ্যাট রুম থেকে ধীরে ধীরে আলাপ জমে ওঠে পনের ষোল বছরের দুই সমমনা কিশোরের মধ্যে । এ আকস্মিক আলাপ থেকেই এক সময় বেরিয়ে আসে হেল্প সাইট তৈরির আইডিয়া।
১০০ ডলার খরচ করে মাই ডেস্কটপ ডট কম নামের একটি ডোমেইনে নেম কেনে ফারডিক আর হেম্যান মিলে। ওয়েবসাইটে দেয়ার জন্য উইন্ডোজ সংক্রান্ত টিপস , গেমস আর অন্য ইনফরমেশনের গুলো নিজেরাই জোগাড় করে এখান -ওখান থেকে। ওয়েব সাইট হোস্ট করার জন্য যে সার্ভার স্পেস দরকার তাও ম্যানেজ করা হয় একটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে । কোম্পানি বিনা পয়সায় তাদের ওয়েবসাইটের জন্য জায়গা করে দেবে, বিনিময়ে সাইটে দেখাতে হবে ওই কোম্পানির বিজ্ঞাপন । একমত হয়ে কাজ শুরু করে দেয় দুই কিশোর । তাদের চোখে তখন এডভেঞ্চারের নেশা ।
অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো , পৃথিবীর দুই প্রান্তের এ দুজন কিশোর কিন্তু এতো বড় একটা কাজের আগে সামনাসামনি একবার দেখাও করেনি। এমনকি টেলিফোনেও মাত্র দুই একবার কথা হয়েছে তাদের । ইমেইলে তাদের পরিচয় , ই-মেইলে আলাপ ই-মেইলেই সখ্যতা। আজ থেকে পাচঁ বছর আগেও এমন কিছু কারো ভাবনাতেই আসতোনা । ১৯৯৮ তেই মাই ডেস্কটপ ডট কমে দর্শনার্থীও সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় মাসে ১০ হাজার। বুদ্ধি করে একটা এডভার্টাইজিং ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে তারা। ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখানো বাবদ মাসে আয় করতে থাকে হাজার হাজার ডলার। মাইক্রোসফট উইনজিপের মতো কোম্পানিও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে। এ সময়ই তাদের সুবিধার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ছেড়ে কানাডায় চলে আসে হেম্যান। কানাডায় আসার পর দুই কিশোর মিলে আরো বড়সড়ো করে তোলে সাইটের কার্যক্রম। তাদের সাইটে দর্শক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় মাসে ১০ লাখ। মাসিক উপার্জন হয়ে দাড়ায় ৩০ হাজার ডলার । ইন্টারনেট ডট-কম নামের একটা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকে এ সময় প্রস্তাব আসে মাই ডেস্কটপ ডট-কম কিনে নেয়ার। অনেক আলাপ আলোচনার পর নিজেদের শখের কোম্পানিকে অন্যের হাতে তুলে ফারডিক -হেম্যান। বিনিময় মূল্যটা অবশ্য ঠিকই বুঝে নেয় তারা । প্রাথমিকভাবে দুজনের ভাগে পড়ে ৪ মিলিয়ন ডলার করে। সঙ্গে ইন্টারনেট ডট-কম কোম্পানির কিছু শেয়ার। কোম্পানির লাভ যাতো বাড়বে , সারা জীবন ধরে তার একটা লভ্যাংশ পেতেই থাকবে এ দুই কিশোর ।
চড়া দামে মাই ডেস্কটপ ডট-কম বিক্রির পরে স্বাভাবিকভাবে মিডিয়ার কাছে হট আইটেমে পরিণত হয় ফারডিক হেম্যান । নিজেদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় পয়সার বিনিময়ে লেকচার দিতে শুরু করে তারা। সঙ্গে যোগ দেয় ফারডিকের গার্লফ্রেন্ড ক্যারোইরো। মেয়েদেরকে কি করে আরো প্রযুক্তিমুখী করা যায় সে বিষয়ে কাজ করতো ক্যরোইরো । এভাবেই এক সময় মাইক্রোসফটের এক কর্তাব্যাক্তির নজরে পড়ে যায় তারা। ফারডিক আর ক্যারোইরোর চাকুরির ব্যবস্থা করা হয় মাইক্রোসফটে। কিশোর-কিশোরীরা কি ধরনের সফটওয়্যার পছন্দ করে, কি ধরনের গেমস খেলে, কোন ধরনের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে সে বিষয়ে নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি মাইক্রোসফটকে জানানো হবে তাদের কাজ । তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মাইক্রোসফট তাদের পরবর্তী সফটওয়্যার গেমস বা ওয়েব সার্ভিসগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তুলবে। তবে মাইক্রোসফটের চাকরি নিয়েই কিন্তু শুধু মেতে নেই ফারডিক। বাইবাডি ডট-কম নামের আরেকটা ওয়েবসাইট খুলেছে সে । আলাদা একটা অফিস ভাড়া করেছে । ২০ জন কর্মচারী এখন কাজ করছে ১৮ বছর বয়সী এই কিশোরের কোম্পানিতে । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো , ছেলের প্রজেক্ট অংশ নেয়ার জন্য এনসিআর কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনারের কাজ ছেড়ে বাইবাডি ডট- কমের প্রধান নির্বাহী হিসাবে যোগ দিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী মাইকেলের বাবা।
তারপরও সবচেয়ে দামি হলো পড়াশোনা
ইন্টারনেটের কল্যানে পশ্চিমের কিশোরদের অনেকেই আজ বাড়িগাড়ি অফিসের মালিক। রাতভর কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে অত্যন্ত চড়া দামে নিজেদের এই অসময়ের সাফল্য কিনছে তারা। অধিকাংশই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। দুই একজন তো ঘোষণাই করে দিয়েছে, পড়াশোনা শেষ করার কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। তবে এদের মধ্যে কয়েকজন আছে আত্ম উপলব্ধি ছুঁয়েছে যাদের। হার্ভাডে পড়ার সময় চিপলট ডট-কম তৈরি করেছিল ২৩ বছরের অমর গোয়েল। চিপলট থেকে থেকে মিলিয়ন ডলার এসেছে তার পকেটে । কিন্তু হার্ভাডের গ্রাজুয়েশন নেয়া হয়নি তার । তাই তো বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সুযোগ পেলেই পড়াশোনা শেষ করার কথা বলে অমর এবং বলে পড়াশোনা শেষ করে তারপর ইন্টারনেট ব্যবসায়ে ঢোকার কথা । লাখপতি মাইকেল ফারডেকেরও সেই একই মত । হয়তো ১৮ বছর বয়সেই তার একাউন্টে আছে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা , আছে মাইক্রোসফটের চাবি , ঝকঝকে অফিস । তারপর শিগগিরই গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার জন্য স্কুলে ফিরে যাবে সে। এর কারণ অবশ্য তার বাবার উপদেশ। তিনিই বোঝাতে পেরেছেন ফারডিককে, যতো কিছুই থাকুক তোমার সবচেয়ে দামি হলো পড়াশোনা । ঢাকার বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র ১১ বছরের অমিত । অমিত খুব মেধাবী , প্রাণবন্ত আর সিরিয়াস আত্মবিশ্বাসী । ১১ মাস সে শুয়ে শুয়ে রয়েছে হাসপাতালে দুরারোগ্য ওয়াইল্ড পোলিও রোগে । তার বাবা জানিয়েছে, এসময়ে তার হাত-পা কার্যক্ষম ছিলনা । তার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে যান্ত্রিক উপায়ে । এমতাবস্থাতেও সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে পড়া শেষ করেছে। অনেক বই, পত্র-পত্রিকা । অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছেলে সে ।স্বাধীন ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য দরকার তার কৃত্রিম পেসমেকার । যা আমেরিকা থেকে আনতে হবে , দাম তেতাল্লিশ লক্ষ টাকা । বাবার অসঙ্গতির কথা বুঝতে পেরে বাবাকে সান্তনা দিয়ে সে বলে, ঢাকা শহরে এত লোক সবাই একটি করে টাকা দিলেই তো হয়ে যায় । মিডিয়ার বদৌলতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এ খবর। গত অক্টোবর পর্যন্ত ৮০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়েছে । তোমাদের মত স্কুল -কলেজ ছাত্র-ছাত্রীরা, সাধারণ মানুষ , শ্রমিক এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেকার পর্যন্ত তাকে ৬শত টাকা দিয়েছেন। তার ঘটনায় আমাদের জন্য শিক্ষা হলো আত্মবিশ্বাস দিয়ে কিভাবে বিশ্বজয় করা যায়। আর মানবিক কারণে কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়। আমরা অমিতের মতো অমিত আত্মবিশ্বাসী হতে চাই ।
কালের শপথ ,মানুষ মূলতঃই বড় ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত ;
সেই লোকদের ছাড়া, যাহারা ঈমান আনিয়াছে ও নেক আমল করিয়াছে
এবং একজন অপরজনকে হক উপদেশ দিয়াছে ও ধৈর্য ধারণে উৎসাহ দিয়াছে ।
-সূরা আল আসর
স্বপ্নঃ
তোমরা যদি সত্যিই সুন্দর ক্যরিয়ার গঠন করতে চাও তাহলে কিন্তু তোমাদের স্বপ্ন দেখা শিখতে হবে । স্বপ্নের কথা শুনে তোমরা ভয় পেয়ে গেলে কি ? স্যরি তোমরাতো সে রকমটি অর্থাৎ ভীতুর ডিম নও । আর আমিও কিন্তু তোমাদের কে সেই ভূত -প্রেতের স্বপ্নের কথা বলিনি । এবার আসা যাক আসল কথায় । এ স্বপ্ন হচ্ছে বড় হওয়ার । অনেক অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন । আর নিজের উপর সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাসের চমৎকার সব কথা । চলো কিছূ উদাহরন জেনে নিই ।
এক .হাজার বছর ধরে দৌড়বিদরা ৪ মিনিটে এক মাইল দৌড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, এটা অসম্ভব । দৈহিক গঠনের কারণেই তা মানুষের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। মানুষের হাড়ের কাঠামো ও ফুসফুসের
গঠন দুটোই এ সাফল্যের পথে অন্তরায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন। দ’হাজার বছর পার হয়ে গেল এভাবেই ।তারপরই এল এক শুভদিন । একজন মানুষ প্রমাণ করলেন যে বিশেষজ্ঞদের এ ধারনা ভুল । তারপর ঘটলো আরো অলৌকিক ঘটনা । রজার ব্যানিস্টার প্রথম ৪ মিনিটে এক মাইল দৌড়ের রেকর্ড স্থাপন করে ও ৬ সপ্তাহের মধ্যেই জন ল্যান্ডি পুরো ২ সেকেন্ডের ব্যবধানে ব্যানিস্টারের রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন । আর তারপর এ পর্যন্ত হাজারের বেশি দৌড়বিদ ৪ মিনিটের রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। যখন অসম্ভব মনে করা হতো, তখন কেউই পারেননি। আর একবার করা সম্ভব বিশ্বাস করার পর রেকর্ড ভাঙ্গার হিড়িক পড়ে যায় ।
দুই . বিজ্ঞানী টমাস এডিসন বিশ্বাস করতেন যে ,তিনি একটি সঠিক বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করতে পারবেন ।এই বিশ্বাসই তাকে গবেষণার ক্ষেত্রে দশ হাজার বার ব্যর্থতার পরও এগিয়ে নিয়ে গেছে । তিনি সক্ষম হয়েছিলেন সঠিক ধাতু প্রয়োগ করে যথার্থ বৈদ্যুতিক বাতি নির্মাণ করতে । বিমান আবিস্কারক রাইট ভ্রাতৃদ্বয়, বিজ্ঞানী জগদিশ চন্দ্র বসু সহ অসংখ্য বিজ্ঞানীর সাফল্য তাদের আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ের ফলেই অর্জিত হয়েছে ।
তিন. নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নাডশ মাত্র ৫ বছর স্কুলে লেখাপড়া করেছেন । দারিদ্র্রতার কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মাসে আমাদের টাকায় ৪০ টাকা বেতনে কেরানীর কাজ নেন। কিন্তু তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন একদিন তিনি একজন বড় লেখক হবেন । এমনকি শেক্সপিয়ারকেও তিনি অতিক্রম করবেন । তাই তিনি প্রতিদিন নিয়মিত লেখাপড়া শুরু করেন। বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা , কোনদিন না পারলে পরের দিন বিশ পৃষ্ঠা । লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে তার ৯ বছর সময় লেগেছিল । লেখক জীবনের প্রথম ৯ বছরে তার লেখা থেকে আয় হয়েছিল আমাদের টাকায় মাত্র ৩০০ টাকা । কিন্তু তার বিশ্বাসই তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে । লেখক হিসেবেই পরবর্তী জীবনে উপার্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। তার চাইতেও বড় কথা, বিশ্বব্যাপী শাশ্বত কালের খ্যাতি তার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ।
চার .মার্কিন ধনকুবের এন্ড্রু কার্নেগীর কথাই ধর। তিনি তার সময়ের সবচেয়ে বড় ধনকুবের ছিলেন । শুধু কি তাই ! তার প্রেরণায় আমেরিকাতে হাজার হাজার বিলিওনিয়ার তৈরি হয়েছে। কিন্তু একসময় তিনি ছিলেন বস্তির ছেলে । ১২বছর যখন তার বয়স ,তার পোশাক এত মলিন ও নোংরা ছিল যে , দারোয়ান তাকে পাবলিক পার্কে প্রবেশ করতে দেয়নি । তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, একদিন তার টাকা হবে সেদিন তিনি পার্কটি কিনে ফেলবেন । তিনি সে পার্কটি কিনেছিলেন । পার্কে নতুন একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন । তাতে লিখা ছিল, আজ থেকে দিনে বা রাতে যে কোন সময়ে যে কোন মানুষ যে কোন পোশাকে এই পার্কে প্রবেশ করতে পারবে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার সকল সম্পদ জনহিতকার কাজে দান করে যান।
পাচঁ. মনের মুক্তিদিয়ে মানুষ যে রোগ ও দৈহিক পঙ্গুত্বকে ও অস্বীকার করতে পারে তার প্রমাণ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং । লিখতে পারেন না,কথা বলতে পারেন না, দুরারোগ্য মোটর নিউরোন ব্যাধিতে ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে যেতেও তিনি বিশেষভাবে তৈরি কম্পিউটারের সহযোগিতায় রচনা করেছেন বর্তমান যুগের বিজ্ঞান জগতের সবচেয়ে আলোড়ন সষ্টিকারী গ্রন্থ ‘এ ব্রীফ হিস্ট্রি অব টাইম ’। যেটি বেস্টসেলারের আখ্যা পেয়ে ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ কপি। হুইল চেয়ার থেকে তুলে যাকে বিছানায় নিতে হয় ,তিনি অবলীলায় মহাবিশ্ব পভ্রিমণ করে উপহার দিয়েছেন বিশ্ব সৃষ্টির নতুন তত্ব। আইনস্টাইনের পর তাকেই মনে করা হচ্ছে বিশ্বের প্রধান বিজ্ঞানী ।
ছয় . কাফেরদের অত্যাচারে তখন মুসলমানেরা পবিত্র কাবার পাশে দাড়াঁতে পারে না। এত অত্যাচার আর কতদিন সহ্য করা যায় । রাসূল (সা) কে গিয়ে এক সাহাবী কাতর কন্ঠে বললেন “আল্লার সাহায্য কখন আসবে ” বিশ্বাসে বলীয়ান রাসূল (সা) রাগান্বিত হয়ে হলেন অনেক কথার পর বললেন অবশ্যই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে এবং সমগ্র আরব ভূভাগে মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার মতো কেউ থাকবে না । মাত্র পনের বছর পরেই তার ইন্তিকাল