সর্বকনিষ্ঠ বৈমানিক
এ পর্যায়ে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমাদেরই এক নতুন বন্ধু বাংলার দামাল কিশোর ,যার কৃতিত্বে সবার বুক ভরে যায়। আর চোখে আসে আনন্দের অশ্রু। ছেলেটির নাম আলী রাকিব । ১৯৯৯ সালের ২২শে এপ্রিল, তখন তার বয়স সবে মাত্র তের বছর পাঁচ মাস। ঐ দিনেই রোদ ঝলমল সকালে জীবনে প্রথমবার বিমানে চড়ে নয়, এক্কেবারে নিজে বিমান চালিয়ে আকাশে উঠেছিল সে। আমেরিকার ফ্লোরিডার অর্মন্ডবিচ ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট। ছোট্ট রাকীব, গ্রাউন্ডচেকিং শেষে, কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্লিয়ারেন্স পেয়ে রানওয়ের ওপর দিয়ে ৯৯ নট বেগে সা-সা ছুটে চলা সেসনা-১৭২ কে এক ইঞ্চি পরিমাণ থ্রটল টেনে ভূমির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তুলে এনেছিল ঊর্ধ্বপানে । হয়তো তখন তার পেটটা চিনচিন করছিল , রক্তিম গালদুটি ফ্যাকাশে হয়েছিল , চোখ দুটোও হয়েছিল স্থির- আর একটু একটু ভয় লেগেছিল বৈকি। কিন্তু তার পরই দুরন্ত ঈগলের ডানা মেলে ওড়ার অপার আনন্দ। বিক্ষুব্ধ ভয়াল আটলান্টিকের দু’হাজার ফিট ওপর দিয়ে (এর ওপরে ওঠার অনুমতি তার ছিল না) । সে উড়েছিল প্রায় পৌনে দু’ঘন্টা । (ওহ! গা ছমছম করে ওঠার মতো ঘটনা; তাই না?) সাথে সাথে সেই পিচ্চি দস্যি ছেলেটি সৃষ্টি করলো এক নতুন রেকর্ড, সে হলো আটলান্টিকের ওপর দিয়ে ওড়া সর্বকণিষ্ঠ বাংলাদেশী বৈমানিক । এর পরের দু’সপ্তাহের মোট ষাট ঘন্টা ওড়ে, সে নানা করসৎ রপ্ত করে । মনে হয় চিৎকার করে আটলান্টিকের ওপারে খোদ আমেরিকায় পৌঁছে দেই আমাদের বুলন্দ আওয়াজ সাবাস! রাকিব,সাবাস!!
মাকে নিয়ে ওরা চার ভাইবোন থাকে আমেরিকায় । বাবা আলীমুল্লাহ কুয়েত এয়ারলাইন্সের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার , মামা সেখানেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, বড়ভাই আলীরেজা আমেরিকান এয়ারলাইন্সে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত। কিশোর বন্ধুরা তোমরা কি ভাবছো এতকিছুর সুবাদেই কি সে পেয়েছিল বর্ণাঢ্য সুযোগ ? কিন্তু না, আসল ঘটনা অন্য রকম । কেম্বারল্যান্ড স্কুলের জুনিয়র লেভেল পরীক্ষায় সে কৃতিত্বপূর্ণ জিপি এ ৪.০ পয়েন্ট অর্জন করে। প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষাতেই ৯৪ থেকে ১০০ নম্বর পেলেই কেবল তা অর্জন করা সম্ভব। তার মূল কৃতিত্ব এখানেই, সে এই জিপিএ পয়েন্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মার্কসধারী প্রথম বাংলাদেশী । শুধু কি তাই? কাউন্টি বোর্ড অব এডুকেশনের পক্ষ থেকে তাকে দেয়া হয় ন্যাশনাল জুনিয়ার অনার্স সোসাইটির পদক। আরো আছে, আমেরিকার সেরা তিনশ মেধাবী ছাত্রের সাথে ওয়াশিংটন ডিসি সফরের আমন্ত্রণ, এমনকি খোদ হোয়াইট হাউসেও ভ্রমন। কিন্তু রাকিবের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার ছিল এমব্রেরিডাল এরোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইয়ং ঈগল প্রোগ্রামের আমন্ত্রণটি। এ প্রোগ্রামে প্রতি বছর আমেরিকার স্কুল পর্যায়ের মেধাবী ছাত্রদের ভিতর থেকে সেরা পাঁচজনকে বাছাই করা হয় বিনা খরচায় বিমান চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে। আমাদের আলী রাকীব হলো, এ বছর সমগ্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেই সেরা পাঁচজনের একজন। আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য চলো আমরা সবাই তাকে জানাই বুকভরা ভালবাসা আর অভিনন্দন। রাকিবদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলা রুপগঞ্জ থানার মুড়াপাড়া গ্রামে। ইস ভুমিকাতেই কত্তো কথা হলো, জানি না তোমাদের এত্তো প্যাচাল ভাল লাগে কিনা ? নাকি রেগেমেগে , আমার কল্পিত আকৃতি বেচারার প্রতি বারবার চোখ রাঙ্গাও ! যাক্ চলো আর দেরি নয়। ঝটপট শুরু করি কিছু কাজের কাজ।
চব্বিশ ঘন্টা পড়া
হেডিং দেখেই তোমরা হৈচৈ করো না কিন্তু। আমাকে আগেভাগে একটু খোলাসা করতে দাও। আচ্ছা বলোতো, প্রতিদিন আমাদের কত ঘন্টা সময়? সবাই বলবে ক্যানো, চব্বিশ ঘন্টা! এটা কি ইলাস্টিকের মতো টেনেটুনে এক-আধটু বড় করা যায়? হয়তো হেসে কুটিকুটি হয়ে বলছো নাহ “এক্কেবারে না। এটা অসম্ভব ব্যাপার। আসলেও ঠিক তাই। তাহলে উপায় ? চলোই না চেষ্টা করে দেখা যাক , কোন সমাধান বের করা যায় কিনা? আমরা চব্বিশ ঘন্টায় অর্থাৎ সারাদিনে মোটামুটি প্রধান প্রধান কি কি কাজ করি? পড়া লেখা, গোসল, খাওয়া, নামাজ, ঘুম, খেলাধুলা ইত্যাদি ...তাই না? এবার এসো , আমরা একটু বিশ্লেষণ করি ...গান্ধিজী যেখানে গোসল করতেন সেখানে প্রতিদিন একটি করে গীতার শ্লোক লিখে রাখতেন। অতঃপর গোসলের সময় তা গানের সুরে সুরে মুখস্ত করে ফেলতেন। আমরাও এভাবে প্রতিদিন একটি করে মহামনীষীদের বাণী শিখতে পারি। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট অন্য লোকদের সাথে কথোপকথনের সময়ও ফাঁক দিয়ে বই পড়তেন এবং গ্রামে ভ্রমণের সময় প্রতিদিন প্রায় তিনটি করে বই পড়তেন। আর নেপোলিয়ান যুদ্ধে গেলেও তার সাথে থাকতো একটি চলমান লাইব্রেরি এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি বই পড়তেন। রাসূল (সা) এর ওপর প্রচন্ড রণাঙ্গনেও নাজিল হতো মহাগ্রন্থ আল-কুরআন; আর তিনি তা যথাযথভাবে আত্মস্থ করতেন। হযরত আলী (রা) এর ব্যক্তিগত হাদিস সংকলন ‘সহীফা ’ সংরক্ষিত থাকতো সর্বদা তার তলোয়ারের খাপের ভিতর । ক্যাডম্যান বার বৎসর বয়সে খনির মজুর হিসাবে জীবন আরম্ভ করেন। ঝুড়ি থেকে কয়লা খালাসের পর প্রতি দুই মিনিট অবকাশে খনির অন্ধকারে মৃদু আলোতে দাঁড়িয়ে একটু বই পড়ে নিতেন। আহারের সময়ও তিনি পড়া চালিয়ে যেতেন। (আমরা অন্তত বড় ভাই বা আব্বা, আম্মার সাথে এ সময় কঠিন বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতে পারি)। এভাবেই তিনি নিজকে স্বশিক্ষিত করে যশ ও খ্যাতি অর্জন করেন। সোহরাওয়ার্দির কোষ্ঠকাঠিন্য ছিল, টয়লেটে বেশি সময় লাগতো তাই কমোডে বসেই তিনি সেদিনের পত্রিকাগুলি পড়ে শেষ করতেন । মহাকবি শেখ সাদী ঘুমের ঘোরেই স্বপ্নযোগে পেয়েছিলেন তার জগৎ বিখ্যাত নাতে রাসূল (সা) এর সর্বশেষ শ্লোক “সাল্লু আলাইহি ওয়া আ’লিহি”। অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী ঘুমের ঘোরেই তাদের বিখ্যাত আবিষ্কারের তত্ত্ব পেয়েছেন। সুতরাং প্রমাণ হলো, বই সাথে না থাকলেও চব্বিশ ঘন্টা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পড়ালেখায় থাকা যায়। তাহলে আমরা কি সারাদিন শুধুমাত্র পাঠ্যবই নিয়ে পড়ে থাকবো? ভাবছো ওহ! এটাতো কুইনাইনের চেয়েও তেতো। আসলে আমি কিন্তু তোমাদের সর্বক্ষণ বইয়ের পোকা বা গোবরেপোকার মত পাঠ্যবই নিয়ে পড়ে থাকতে বলবোনা। খোঁজ নিয়ে দেখ , এবার যারা এস.এস.সি ও এইচ .এস .সি পরীক্ষায় জিপিএ 5 পেয়েছে তারা সর্বোচ্চ ১০/১২ ঘন্টা করে পাঠ্যবই পড়েছে। আর বাকি সময় পত্রিকা বা অন্যান্য বই পড়েছে। সারাদিন যারা শুধু পাঠ্যবই নিয়েই থাকে তাদের চিন্তার জগৎ হয়ে যায় সংকীর্ণ। তারা কখনো খুব ভাল রেজাল্ট করতে পারেনা। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মায়ের কোলের শিশুটিই থেকে যায়। সময় নষ্ট হবে বলে সাঁতার কাটতে জানে না, সাইকেল চালাতে জানে না। এমন কি অনেকে বলতে পারবেনা চেচনিয়া ,কসোভো এগুলি কি? কোন ব্যক্তির নাম ? কোন ট্যাবলেটের নাম? নাকি কোনো দেশের নাম? তাই অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবনটা হয়ে যায় সেই নৌযাত্রীর মতো “ষোল আনাই মিছে ” সুতরাং আমাদের পাঠ্যবইয়ের ফাঁকে ফাঁকে কিছু সময় চরিত্রগঠনের জন্যে ধর্মীয় গ্রন্থ ,সাধারণ জ্ঞানের জন্য পত্রিকা ,অনুপ্রেরণার জন্য মহামনীষীদের জীবনী পড়ার সময় রাখতে হবে। এতে করে পাঠ্যবিষয়টি ভাল করে রপ্ত হবে । যেমন শুধু গোশত রান্না করলে খাওয়া যায় না, তার সাথে দিতে হয় তেল, মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, গরম মশলা ইত্যাদি । তবেই তা হয় মুখরোচক আর হজমকারক। স্পিনোজা বলেছেন ,“ভালো খাদ্যবস্তুতে পেট ভরে, কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে ।” দেকার্তে বলেছেন ,“ভালো বই পড়াটা যেন গত শতকগুলির সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা।” ইউরোপ কাঁপানো নেপোলিয়ান কি বলেছেন জান?
তিনি বলেছেন ,“অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল ।” ভারতে বৃটিশ শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তক জন মেকলে বলেছেন আরও মজার কথা, বরং প্রচুর বই নিয়ে গরীব হয়ে চিলোকোঠায় থাকবো,তবু এমন রাজা হতে চাইনা যে বই পড়তে ভালোবাসে না ।” আর সবচাইতে চরম কথাটি বলেছেন নর্মান মেলর, “আমি চাই বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয় ।” আর রাসূল (সা) বলেছেন সবচাইতে মূল্যবান কথাটি,“জ্ঞান হচ্ছে তোমাদের হারানো সম্পদ, সুতরাং যেখানে তা পাও কুড়িয়ে নাও।’’
পড়ার সুন্দর পদ্ধতি (SQ3R system)
মানুষের দেহের ওজনের চল্লিশ ভাগের একভাগ হলো তার মস্তিষ্কের ওজন । আর মৌমাছির দেহের ওজনের একশত সাতচল্লিশ ভাগের একভাগ হলো মস্কিষ্কের ওজন । ক্ষুদ্র এই পতঙ্গগুলি মস্তিষ্ককে পূর্ণভাবে ব্যবহার করে । তাদের বানানো কারুকার্যময় মৌচাক আর তাদের শাসনব্যবস্থা দেখলেই তা বুঝা যায় । হাজার মানুষের ভেতর একজনও তার মস্তিষ্কের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারে না বরং সর্বদা মাথাকে একটি বোঝা হিসেবেই নিয়ে বেড়ায়। কিন্তু বেড়ানোর জন্য তো আর মাথার দরকার নেই একটি মেরুদন্ড হলেই চলে। যাক বন্ধুরা,একটু বোধহয় কড়া কথা বলে ফেললাম। ডোন্ট মাইন্ড, আসলে কথাটা কিন্তু তোমাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়নি। বরং আমি সহ সর্বসাধারণের জন্যেই এটি প্রযোজ্য। এবার এসো, আমরা দেখি কিভাবে আমাদের মাথাকে পূর্ণভাবে কাজে লাগানো যায়। অন্তত পড়ার কাজে । আমেরিকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্যে একটি সুন্দর সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। সংক্ষেপে এটাকে বলা হয় SQ3R system; The SQ3R stands for;
Survey (সামগ্রিকভাবে দেখা, জরিপ বা পরিদর্শন করা, পরীক্ষা করা, সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করা):
অর্থাৎ পঠিতব্য বই বা অধ্যায়কে সামগ্রিকভাবে এক নজর দেখা। এজন্যে ভূমিকা, সূচিপত্র, অধ্যায়সমূহের সংক্ষিপ্তসার দেখে নেয়া । যাতে করে সামগ্রিক বই সম্পর্কেই একটি প্রাথমিক ধারনা হয় এবং এতে সকল অধ্যায়েই অপেক্ষাকৃত সহজ ও পরিচিত লাগবে।
Question (প্রশ্ন, প্রশ্ন বোধক বাক্য):
শুধুমাত্র অধ্যায়ে দেয়া প্রশ্ন বা স্যারদের সাজেশনের প্রস্তুতি নিলেই হবে না। পঠিত বিষয়ের দশদিক থেকে যত প্রকার প্রশ্ন হতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে। অতঃপর শিক্ষক, অভিজ্ঞজন, সহায়ক, অন্যান্য বই থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে । এতে করে, সে অধ্যায় সম্পর্কে সামগ্রিক ধারনা হবে। যেখান থেকেই প্রশ্ন আসুক তা হবে ‘জলবৎ তরলং’।
Read (পড়, পড়তে পারা, অর্থ উদ্ধার করা):
অতঃপর উদ্ধারকৃত উত্তর সহকারে অধ্যায়টি ভালভাবে পড়া। প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝে বুঝে পড়া। মনের ভিতর পঠিত বিষয়ের একটি চিত্র তৈরী করা। প্রতিটি প্যারার কি-ওয়ার্ড সমূহ (যে শব্দ দেখলে সমগ্র প্যারাটিই মনে আসে) পাশে রঙ্গিন পেন্সিল দিয়ে লিখে রাখা। মূল্যবান বাক্য বা উদ্ধৃতির নিচে রঙ্গিন পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে রাখা। এতে করে পরবর্তীতে দশভাগের একভাগ সময়ে তা রিভিশন দেয়া যাবে ।
Recite (আবৃত্তি করা, ফিরিস্তি দেওয়া, তেলাওয়াত করা) :
একটি বিষয়কে খুব ভালভাবে আত্মস্থ করার জন্য বারবার আবৃত্তির কোন বিকল্প নেই। সূরা আর-রাহমানের সবচেয়ে মৌলিক বক্তব্য “অতএব মানুষদের রবের কোন নিয়ামতকে তোমরা অস্বীকার করবে ” আয়াতটি মানুষদের ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করানোর জন্যে ৭৮ আয়াতের এ সূরায় বাক্যটি ৩১ বার ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানেও পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ লক্ষ কুরআনে হাফেজ আছেন । তারা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের প্রায় ৬৬৬৬ টা আয়াত জের, জবর, পেশ, নোক্তা সহকারে মুখস্থ করেছেন। যদিও এটা আল্লাহর কালামের একটা মুজিজা আর তার পরেই আছে হাফেজদের বারংবার আবৃত্তি। সুতরাং মৌলিক বিষয়সমূহ বারবার আবৃত্তি করা দরকার।
Revise(পুনর্বিবেচনা করা, সংশোধন ও মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে পুনর্বার পড়া):
একটি বিষয় আত্মস্থ হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন কয়েক বার হেঁটে হেঁটে, সকালে মর্নিংওয়ার্কের ফাঁকে ফাঁকে বা পড়ার টেবিলে বসে চোখ বন্ধ করে, বই না দেখে রিভিশন দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর পরবর্তীতে তা আরো ভালভাবে ঝালাই করার জন্যই সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার অথবা কমপক্ষে মাসে একবার রিভিশন দিয়ে তারপর না দেখে লেখা উচিত। দৈনিক কিছু কিছু আর রমজান মাসে তারাবিহ নামাজে সমগ্র কুরআনকে রিভিশন দিয়ে হাফেজরা এই বিশাল কুরআন মজীদকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মুখস্থ রাখছেন।
আজকে শুধুমাত্র আমেরিকায় চালু একটি আদর্শ সিস্টেমকে তোমাদের সামনে বিশ্লেষণ করলাম। এটিকে বাস্তবায়ন করা শুরু করো। দেখ তোমাদের কোন উন্নতি হচ্ছে কিনা?
এ পর্যায়ে একটি মজার কথা বলছি, যেটি বলেছেন ফ্রান্সিস বেকন, কতগুলি বইকে শুধু চাখতে হবে , কতগুলিকে গিলতে হবে এবং কিছুসংখ্যক বইকে চিবুতে ও হজম করতে হবে।” এখন দায়িত্বটা তোমাদের ঘাড়েই থাকলো, মগজ,বিবেক আর বড়দের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে হবে কোনটি কোন ধরনের বই। কারণ একটি ইটালীয় প্রবাদ হলো, “খারাপ বইয়ের চাইতে নিকৃষ্টতম তস্কর আর নেই ” সুতরাং সাবধান!
এবার একটা দু:খের কাহিনী বলতে চাই। কারণ সোনার চামচ মুখে দেওয়া মানুষ বেশি বড় হতে পারেনা। বরং যারা ব্যক্তি ও সমাজের দু:খ বুকে ধারণ করে তা প্রতিরোধে এক দুর্দমনীয় শক্তি নিজের ভিতর সৃষ্টি করতে পারে, ইতিহাস সাক্ষী তারাই হয় মহামানব।
এস এম আশিকুর রহমান। সে যশোর বোর্ডের অধীনে গত ‘৯৯ সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। সে লোহাগাড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিন বিষয়ে লেটারসহ ৮৭০ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু হায় দুর্ভাগ্য! তার পিতা শেখ ফিরোজ আহমদ (বাদশা মিয়া ) সহায় সম্পদহীন, কপর্দকশূন্য এবং দিন এনে দিন খাওয়া এক সামান্য বর্গা চাষী। মা 'নুন আনতে পানতা ফুরায়’ এমন সংসারের গৃহিনী। গত পরীক্ষায় সে কোন প্রাইভেটও পড়তে পারেনি। আর এবার কোথাও ভর্তি হওয়াও সমস্যা। একটি প্রতিভা কি এমনি করেই ঝরে যাবে? আশপাশে ছড়িয়ে আছে এমন হাজারো আশিকুর। তাদের খোঁজ কর। তাদের হাত ধর ! সম্ভাব্য সহযোগিতা কর।
কেন ইংরেজি শিখবো
একটি গল্প বলছি শোন, আর ও হ্যাঁ, এটা একদম সত্যি গল্প কিন্তু! শোনই তাহলে ওহ ! কি, ভয়্ঙ্কর দাঁতালো ডাইনোসর ! মনে হয় যেন হঠাৎ কোন ভুতুড়ে গ্রহ থেকে লাফিয়ে পড়েছে। কিন্তু একি! ওর বিশাল পেটের নিচে একঝাক রং-বেরংয়ের শিশু দেখা যাচ্ছে। ওরা কারা? কি ওদের পরিচয়? সোনাঝরা রোদ্দুরের এক সুন্দর সকাল। সেদিন ছিল ক্যালেন্ডারের শেষ মাথায় ’৯৯ সালের বারোই অক্টোবর। তখন আগারগাঁওয়ের জাতীয় বিজ্ঞান যাদুঘরের সূর্যঘড়িতে সকাল নয়টা ছুইঁছুই করছে। হঠাৎ ক্যাচক্যাচ ব্রেক কষে প্রধান ফটকের সামনে থমকে দাড়ালো একটি ক্রীম কালারের টয়োটা হায়েছ। আর তার দরজাটি খুলতেই যেন টর্ণেডোর বেগে বেরিয়ে এলো একঝাক রঙ্গিন প্রজাপতি। আর উড়ে বেড়াতে লাগলো বিজ্ঞান যাদুঘরের প্রজেক্টসমুহের এ মাথা থেকে ও মাথা। মুখে তাদের খৈ ফোটার মতই বাংলা ইংরেজি প্রশ্ন। তাদের উত্তর দিয়ে শান্ত করতে রীতিমত গলদঘর্ম হচ্ছে যাদুঘরের কর্মকর্তারা। হয়তো কর্মকর্তাদের ঠোঁটের কাছে কান পাতলেই শোনা যেত বিড়বিড়ে উচ্চারন ‘উফ কি বিচ্ছুদের পাল্লায় পড়েছিরে বাবা ! হ্যাঁ ,এটা হলফ করে বলা যায় , তাদের ইংরেজি প্রশ্নবানে জর্জরিত কোন সাধারণ ব্যক্তিই এ কথা বলতে বাধ্য। এরা সাধারণের কাছে ঐ বিজ্ঞান যাদুঘরের ডাইনোসরের চাইতেও শক্তিশালী। এর কারণ একটিই , বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজির ওপর এদের দক্ষতা। ওরা কারা ?
কি ওদের পরিচয়? ওরা হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজ (ইংলিশ মিডিয়াম) এর প্লে গ্রুপ থেকে কেজি পর্যায়ের ছাত্রছাত্রী। যাদের বয়স মাত্র চার থেকে সাত সাত বছরের ভিতরে। ওরা ইংরেজি শুধু পড়তেই পারে তাই নয়, বরং বলতে পারে, লিখতে পারে, আরেকজনের কথা বুঝতে পারে এমন কি আবৃত্তি কিংবা গানও গাইতে পারে। অনেকেই বলেন ইংরেজি শিখলে মানুষ বিদেশীদের মতোই চরিত্র শূন্য হয়ে যায়। এমনকি তাদের ধর্মও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এরা এদের অবস্থা কি? এরা নামাজ পড়ে , গজল গায় আর সত্যিই সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। এরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি শেখার পাশাপাশি শিখছে মহাবিশ্বের আদর্শ ইসলাম ।
তোমরা হয়তো ভাবতে পারো হঠাৎ বৃটিশ -ভারতের শিক্ষা উপদেষ্টা জন ম্যাকলের মতো আমিও কেন ইংরেজির পক্ষে ওকালতি করছি। আসলে কারন দুটি সম্পূর্ন ভিন্ন। জন ম্যাকলে চেয়েছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষকে শাসন করার জন্য এমন একদল ইংরেজি শিক্ষিত লোক তৈরী করতে যারা রক্তে বর্ণে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তায় কর্মে হবে বৃটিশ। এককথায় বৃটিশদের দালাল। আর আমরা চাই মানুষের জ্ঞান, যোগ্যতা আর অভিব্যক্তি প্রকাশে যেহেতু ভাষার কোনই বিকল্প নেই সুতরাং শক্তিশালী ভাষাসমুহ আমাদের আয়ত্তে থাকা দরকার। আচ্ছা বন্ধুরা, তোমরা কি জান বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক মানুষ কোন ভাষায় কাথা বলে ? চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করেই দেখনা। কি খুঁজে পেলে মনের বিশাল ভুবনে এর উত্তর? আচ্ছা বলছি তাহলে শোন, সেটি হচ্ছে মান্দারিন (চাইনিজ ) ভাষা। উহ্! আবার নাক সিটকে বলো না “কি এক বিদঘুটে ভাষার নাম বল্লেন জীবনে শুনিনি।”
আসলে জাতি হিসাবে সংখ্যায় চাইনিজরা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় সোয়া’শ কোটি ) হওয়ায় এ ভাষার অবস্থা এমন। কিন্তু জাতি হিসেবে দেখলে দেখা যাবে পৃথিবীতে ইংরেজ ভাষাভাষীর সংখ্যা সর্বাধিক। অপরদিকে বিশ্বের প্রায় সকল জাতিই তাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজির ব্যবহার করে থাকে। সে হিসাবেই ইংরেজি এখন আর শুধুমাত্র ইংরেজদের ভাষা নয় বরং বিশ্বজনীন ভাষা। অপরদিকে যে মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি আজ নিয়ন্ত্রণ করছে সারা পৃথিবী তার পঁচানব্বই ভাগই ইংরেজিতে। শুধু কি তাই, ব্যবসা বলো, উচ্চশিক্ষা বলো, যোগাযোগ বলো, বিজ্ঞান বলো, সাহিত্য বলো সব কিছুর সিংহভাগ ইংরেজি ভাষার করায়ত্তে। এমনকি এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গীতাঞ্জলীর জন্যে নোবেল পুরষ্কার পেতেন না যদি না তা অনূদিত হতো ইংরেজি ভাষায়। এক কথায় ইংরেজি ছাড়া বর্তমান বিশ্ব অচল। আমি বলছি না তোমাদের প্রত্যেকেই ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো বহুভাষাবিদ হতে হবে। তবে বাংলার পাশাপাশি একজন যোগ্য মানুষ হিসেবে তোমাদের ইংরেজি জানা দরকার। ঠিক তেমনি একজন মুসলিম হিসেবে জানা দরকার কুরআনের ও জান্নাতের ভাষা আরবি। আর তোমাদের আরবি শেখার সবচেয়ে উপযুক্ত মাস হচ্ছে রমজান মাস। যেহেতু রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস , রহমত ও বরকতের মাস সুতরাং এ মাসে আরবি এবং সহীহ কুরআন তেলাওয়াত শেখা সবচেয়ে সহজতর। তবে আজকে আমরা ইংরেজির গুরুত্বের বিষয়েই কথা বলবো। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ভাষা শিক্ষার গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন “আল্লামাহুল বায়ান ’ অর্থাৎ তিনি মানুষকে কথা বলার (ভাষা ব্যবহারের ) শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূল (সা) তাঁর নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী যায়েদ ইবনে সাবেত আনসারীকে ইহুদীদের ভিতর দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে তাদের ভাষা হিব্রু শিখতে বলেন। যায়েদ (রা) মাত্র তেরদিনে হিব্রু ভাষা আত্মস্থ করেন। তিনি অপরাপর চারটি ভাষায়ও কথা বলতে পারতেন । সুতরাং বর্তমান সময়ে ইসলামকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইংরেজি ভাষা জানা দরকার। বিশ্ববিখ্যাত , জ্যামিতির জনক পিথাগোরাস বলতেন, ‘মানুষের জীবন অলিম্পিক গেমসের মতো। কিছু লোক পুরস্কার নেয়ার জন্যে মাঠে খেলতে নামে, অন্যরা দর্শকের কাছে ছোটখাট রঙচঙে জিনিস বিক্রি করে সামান্য লাভের আশায়। আর এক ধরনের লোক আছে যারা কিছু চায় না , কেবল তামাশা দেখে ’কিশোর বন্ধুরা , তোমাদের ভাবতে হবে তোমরা কোন দলে থাকতে চাও!
১. চ্যাম্পিয়ান হওয়া প্রত্যাশী খেলোয়াড়দের দলে ?
২. সামান্য লাভ প্রত্যাশী বিক্রেতাদের দলে ?
৩. শুধু হাততালি দেয়া দর্শকদের দলে ?
যদি, চ্যাম্পিয়ান হওয়া প্রত্যাশী খেলোয়াড়দের দলে যেতে চাও তাহলে কষ্ট করতে হবে, সাধনা করতে হবে। একটি করুণ ঘটনার কথা তোমাদের বলছি, তোমাদের কি মনে আছে ১২ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে ভারতের মাটিতে দুটি সৌদি ও কাজাখস্তানের বিমান মুখোমুখি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়? এতে উভয় বিমানের প্রায় ৩৪৯ যাত্রীর সবাই মারা যায়। তোমরা কি জান এ সংঘর্ষের কারণ কি? কাজাকাস্তানের পাইলটকে কন্ট্রোলরুম থেকে বলা হয়েছিল সে যেন তার বিমানকে আরও ওপরে না তুলে, কারণ সেই সমান্তরালে একটি সৌদি বিমান আসছে। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য! কাজাখ পাইলট ইংরেজি সেই নির্দেশটি বুঝতে পারেনি। যার ফলে এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ।
করুণতম ঘটনা বলছি , তোমরা তো জানই ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে আমেরিকা ছুড়ে মারে বিশ্বের সর্বপ্রথম এটমবোমা 'লিটলবয়'। কিন্তু তার পিছনে কারণ ছিল কয়েকদিন আগে মার্কিন নৌবন্দর পার্লহারবারে জাপানের ধ্বংসযজ্ঞ। আর তার পিছনে কারণ ছিল ঐ ইংরেজি না বুঝা। মিত্রবাহিনীর একটি গোপন বেতারবার্তা জাপানীরা ধরতে পেরেছিল। কিন্তু তার কয়েকটি শব্দের (ইংরেজি অর্থ) তারা ভুলভাবে বুঝেছিল। ফলে তারা ধরে নেয় আমেরিকা পার্লহারবার থেকে জাপান আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এই ইংরেজি না বুঝে, ভুল ধারণার ভিত্তিতেই তারা আগেভাগে পার্লহারবারে হামলা করে। যার ফলশ্রুতিতেই সংঘটিত হয় স্মরণকালের ভয়াবহতম হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা হামলা। সুতরাং বুঝতেই পারছো বর্তমান সময়ে ইংরেজি না জানাটা শুধু উন্নতি থেকে পিছিয়ে থাকাই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যারও শামিল। গুরুত্ব নিয়ে এত আলোচনার পর হয়তো তোমরা রাগ করে বলছো ঢের হয়েছে আর দরকার নেই । এখন মনে হয় তোমাদের প্রশ্ন থাকবে বরং বলুন কিভাবে শুরু করা যায়। আসলে এ শুরু করার বিষয়টিই কিন্তু কঠিন । কয়েক বছর আগে ইতালীতে দুই বন্ধুর ভিতর ‘ডিম আগে না মুরগী আগে ’ এ নিয়ে প্রথমে বিতর্ক , অতঃপর ঝগড়া তারপর একজন কর্তৃক আরেক প্রিয় বন্ধুকে গুলি করে হত্যা ..। সুতরাং এখানেও ইংরেজি বিশেষজ্ঞদের ভিতরে বিতর্ক , গ্রামার আগে না স্পোকেন আগে ? আমি গরীব মানুষ (ইংরেজিতে) তাই এ ধরনের উচ্চাঙ্গের বিতর্কে জড়াতে চাই না। তবে সব কিছুরই একটি প্রাকৃতিক দিক আছে যেমন একটু চিন্তা করলেই আমরাই খুঁজে পাব কিভাবে আমরা ছোট্টবেলায় ভাষা শিখেছি। যেমন আমরা যখন কথা বলি তখন ছোট্ট শিশুরা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তার মানে মনোযোগ দিয়ে শোনে। তারপর ধীরে ধীরে মা- আ, মামা ,আল্লা-হ ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তার কথা বলা শুরু করে। এর অনেক পরে সে পড়তে শিখে, ধীরে ধীরে লিখতে এবং সবশেষে গ্রামার অর্থাৎ নিয়মকানুন । একথাটি প্রমাণের দরকার নেই, একটি ছোট্ট শিশুর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। আমরা সকলেই, মাতৃভাষা শিক্ষার এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। সুতরাং আমরা ইংরেজিও শিখবো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে।
১. বেশি বেশি শোনা : (বিটিভি নিউজ ,বিবিসি, সিএনএন, স্পোকেন ক্যাসেট )
২. ভুল হোক শুদ্ধ হোক বেশি বেশি বলা : এজন্যে নির্দিষ্ট পার্টনার থাকলে এবং সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন পর্যালোচনা বা বিতর্কের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়।
৩. না বুঝলেও পড়া: পাঠ্যবই , প্রতিদিনই নিউজ পেপার , বিশ্বের সেরা সেরা লেখকদের লেখা গল্পের বই ইত্যাদি পড়া।
৪. বেশি বেশি লেখা : বন্ধু –বান্ধবদের কাছে চিঠিপত্র , পত্রিকায় চিঠিপত্রের কলামে নিয়মিত লেখা।
৫. শব্দভান্ডার বাড়ানো : প্রতিদিন কমপক্ষে ১০টি শব্দ মুখস্থ করা এবং নিয়মিত সেগুলির ব্যবহার করা ।
৬. মাঝে মাঝেই গ্রামার দেখা : লেখনী , কথাবার্তাকে সঠিক রাখার জন্যে মাঝে মাঝেই গ্রামার বই দেখা জরুরি।
নিজের নামটি পর্যন্ত আমাদের বলেনি। তবু আমাদের বন্ধুত্বের হাত ওর দিকে প্রসারিত থাকবে। কেননা, আমরা যে ভালবাসা দিয়ে বিশ্বটাকে জয় করতে চাই। ওর একটি মৌলিক গুণ আছে- ও মারাত্মক সাহসী , এক্কেবারে দুর্ধর্ষ সাহসী।
দেখই না সুমোকুস্তির দীর্ঘদিনব্যাপী বিশ্বচ্যাম্পিয়ান দানবাকৃতির কোনিশিকিকে সে কেমন করে মুখ ভেংচে চ্যালেঞ্জ করেছে। ভাবখানা এই “ব্যাটা তোমাকে আমি কুচ পরওয়ানেহি করি ।” তোমাদের কিন্তু আমি বলবো না তোমরাও এই বিচ্ছুটির মতো রাস্তা ঘাটে বড়দের এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারো। বরং তোমাদের আজ বলবো তার চাইতেও একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য। কি বলো , পারবে ? কারণ আমি যাদের নিয়ে লিখছি, তাদের ভিতর থেকেই বেরিয়ে আসবে নতুন সহস্রাব্দের আলী ,খালিদ , তারেক , মোহাম্মদ ইবনে কাসেম এবং সুমাইয়া , জয়নব , আয়েশা ও ফাতেমা। সুতরাং তাদের অভিধানে অসম্ভব বলতে খুব কম বিষয়ই আছে। যাদের চিঠিতে নীল নদের শুকিয়ে যাওয়া পানি প্রবাহিত হতো, যাদের তাকবীরে পারস্যের অপ্রতিহত স্রোতস্বিনী পরাজিত হতো। যাদের ঘোড়ার খুরের দাপটে পৃথিবী প্রকম্পিত হতো, তারা কি এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন কিছুকে ভয় পেতে পারে? অসম্ভব - এটি হতেই পারে না। তো ,থাক এত্তোসব কথা। তোমাদেরকে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আহবান আমি জানাতে চাই সেটি হলো –একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ।
অবশ্য ,এ কথাটি বুঝে না বুঝে অনেকেই বলে। এর অর্থ কি? এর অর্থ সংক্ষেপে বলা খুবই কঠিন । তবু চেষ্টা করা যাক, কেমন? সেটি হলো এই আজকে যারা বিশ্বকে শাসন করছে সেই পাশ্চাত্য, তাদের হাতে কোন শক্তিশালী বা সুন্দর আদর্শ নেই। তবু কেন তারা বিশ্বকে শাসন করতে পারছে ? কারণ তাদের আছে;
১. মানবীয় যোগ্যতা (যেমন ঐক্য , দেশপ্রেম , জ্ঞানস্পৃহা , সাধনা ,পর্যালোচনা করা এবং সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা ইত্যাদি )
২. কর্মের দক্ষতা (যেমন পরিশ্রমপ্রিয়তা , নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা ,দায়িত্ববোধ ইত্যাদি)
৩. প্রযুক্তির শক্তি (যেমন কম্পিউটার , মিডিয়া , কমিউনিকেশন ইত্যাদি )
আর আমাদের হাতে আছে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী আর সুন্দরতম আদর্শ আল ইসলাম । তবু কেন আমরা পাশ্চাত্যের দ্বারা নির্যাতিত , পর্যুদস্ত -কিংবা কমপক্ষে তাদের মুখাপেক্ষী এর কারণ,
১. আমাদের মানবীয় যোগ্যতা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বিকশিত হয়নি।
২. আলস্য বা দায়িত্বানুভূতির অভাবে কর্মের দক্ষতা সৃষ্টি হয়নি।
৩. প্রযুক্তির শক্তি যেমন কম্পিউটার , মিডিয়া , কমিউনিকেশন ইত্যাদি নেই বললেই চলে।
ভাইবোনেরা , তোমরা তো জানো আজ প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে রকেটের গতিতে, আর মানবীয় চরিত্র আর ভালোবাসার পতন হচ্ছে উল্কার গতিতে। আজ আকাশছোঁয়া অট্টালিকা হচ্ছে কিন্তু কোন ঘরেই মানসিক প্রশান্তি নেই। মঙ্গলগ্রহের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে কিন্ত , নিজের প্রতিবেশী এমনকি নিজের স্বজনদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। তাই যেমন প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে ব্যাপকভাবে ঠিক তেমনি পাল্লা দিয়ে হতাশা , অশান্তি আর হত্যা আত্মহত্যার হারও বেড়েছে। এর কারণ একটিই, বর্তমান পৃথিবীর শাসকরা বস্তুগত ও প্রযুক্তিতগত উন্নয়নের প্রতি নজর দিলেও মন ও আত্মার উন্নয়নের দিকে তারা কোনই নজর দেয়নি। তাই অনেকে আক্ষেপ করে বলেন “বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ ।” আসলে দোষটা বিজ্ঞান ব্যাটার নয়। বরং যারা বিজ্ঞান চর্চা করেছে তাদের । কারণ তারা বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের যোগ করতে পারেনি অথবা দোষটা আমাদের যারা ধর্ম পেয়েছি কিন্তু এর সাথে বিজ্ঞানকে যুক্ত করিনি।
সুতরাং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হলো এই-
১. হয় ,বিশ্ব প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও হতাশা , মারামারি , হানাহানিতে ধ্বংস হয়ে যাবে।
২. অথবা , আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে - যাদের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আদর্শ ইসলাম আছে। যাতে করে আমরা এর সাথে বিজ্ঞানের সমন্বয় এবং তা প্রয়োগ করতে পারি।
সুতরাং আমাদের জন্য একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হলো ইসলামের শক্তিকে আরো সতেজ করার পাশাপাশি , বিশ্বমানের যোগ্যতা , দক্ষতা আর প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন। যাতে করে আর ধ্বংসোন্মুখ পাশ্চাত্যের মুখাপেক্ষী নয় - বরং আমরাই দিতে পারি বিশ্বে আবার নেতৃত্ব। শুধু নেতৃত্ব লাভের জন্যই কি এটা দরকার ? না, বরং বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও অনাবিল শান্তির জন্যই এটা দরকার। কি, প্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা কি পারবে আজকের বিশ্বেও শাসক পাশ্চাত্যের মোকাবেলায় যোগ্যতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ? হ্যাঁ তোমাদের পারতেই হবে এবং তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। কারন বিশ্ব আজ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। প্যারাডাইজ লস্টের কবি, মহাকবি মিল্টন বলেছেন : The childhood shows the man as morning as morning shows the day.
এসো আবার তাকাই এই ক্ষুদে সুমো কুস্তিগীর দিকে, সে যেমন সাহস নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কোনিশিকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে; চ্যালেঞ্জ করেছে; আমরাও ঠিক তেমনি যোগ্যতা অর্জনের যুদ্ধে শক্তিশালী পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করবো না , বরং
তাকে হারিয়ে দেব , তাকে চ্যালেঞ্জ করবো। সবাই বলো , ইনশাআল্লাহ।
অধিকাংশ সময় একটা সত্য-কৌতুক দিয়ে শুরু করা আমার বদ অভ্যাস। আজকেও তার ব্যতিক্রম করার ইচ্ছে নেই। তবু; একটু ব্যতিক্রম , কৌতুকটা হবে সবার শেষে। আটটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা জাপানের দক্ষিণের দ্বীপ ওকিনাওয়ার নাগো শহরে মিলিত হন। এই আটটি দেশকে বলা হয় জি এইট (জি-৮)। তোমাদের মনে রাখার সুবিধার্থে দেশগুলির নাম বলছি আমেরিকা, জাপান, কানাডা , বৃটেন , ফ্রান্স , ইটালী , জার্মানী ও রাশিয়া। যদিও গত পাঁচ বছর জাপানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তবুও সামিটের আয়োজনে রেকর্ড পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়। বৃটেনের টেলিগ্রাফ লিখেছে, এর আগে জি এইট সামিটে অন্যান্য দেশে যত টাকা ব্যয় করা হয়েছিল জাপান এবার তার পঞ্চাশ গুন বেশি খরচ করেছে। এ ব্যয়ের পরমাণ হলো ৮০ বিলিয়ন ইয়েন অর্থাৎ ৫০০মিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ড। তোমরা জানতে চাও বাংলাদেশী টাকায় কত হতে পারে ? প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির প্রায় সোয়া কোটি শিশুর শিক্ষার খরচ চালানো যেত । এটাও এক ধরনের কৌতুক বটে! যে একেকজন রাষ্ট্রপ্রধানের পিছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ দরিদ্রশিশুর সার্বিক শিক্ষার ব্যয় । এবার চলো ধনাঢ্যতায় হিমালয় সমান সেই জাপানের আরেকটা চিত্র দেখি। সামিটের মাস খানেক আগে জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মি. মোরি গিয়েছিলেন জি এইটের লিডারদের ফর্মাল দাওয়াত দিতে এবং যে সব বিষয়ে আলোচনা হবে তার আইডিয়া দিতে। তখন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটাই ছিল তার ক্লিন্টনের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ। সাক্ষাৎকারের আগে মোরিকে তার সহযোগীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রথম সাক্ষাতে মোরি যেন দু ’একটি কথা ইংরেজিতে বলেন। উল্লেখ্য, জাপানের প্রধানমন্ত্রী অন্য কোন দেশের নেতাদের সাথে কথা বলার সময় সর্বদা দোভাষীর সাহায্য নেন। যাই হোক , মোরিকে কয়েকটি ইংরেজি বাক্য শেখানো হয়। আমেরিকায় গিয়ে ক্লিনটনের সাথে দেখা করার সময় মোরি প্রথম ইংরেজি বাক্যটিই শুদ্ধ করে বলতে পারেন। তাকে শেখানো হয়েছিল হ্যান্ডশেক করার সময় How are you বলতে। উত্তরে ক্লিনটন বলবেন , I am fine and you? মোরি সংক্ষেপে বলবেন Me too, এ পর্যন্তই। তারপর দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলবেন। তিনি যখন ক্লিনটনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছিলেন তখন মোরি বলেন, Who are you ? ( তিনি How ভুলে গিয়ে Who বলে ফেলেন ) বিচক্ষণ ক্লিনটন হেসে উত্তর দেন, I am husbend of Hillary (আমি হিলারীর হাসব্যান্ড) . মোরিও না বুঝে তোতাপাখির মতো তার শিখানো Me too! বলেন। (আমিও হিলারীর হাসব্যান্ড ) বলাই বাহুল্য , উল্লেখিত দুই নেতার এ আলোচনার কথা হাসতে হাসতে জাপান রেডিও -র একটি ন্যারেটর কৌতুক করে ২২ জুলাই ২০০০ তারিখ সকালে প্রচার করে। মোরির অবস্থা দেখে আমরাও মরি ! মরি ! তবে তার একটি গুণ স্বীকার করতেই হবে , সেই বেরসিক ন্যারেটরের চাকুরী খেয়ে তাকে তিনি জেলে পুরেননি। আমাদের দেশে হলে বেচারার কি যে হতো আল্লাহ মালুম । ভুল সবারই হতে পারে কিন্তু এখানেই হলো উন্নত দেশের সাথে আমাদের পার্থক্য।
যে কোন ভাষা ভালভাবে আয়ত্ত করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ভোকাবুলারী বা শব্দ ভান্ডার। তারপর শব্দ সাজিয়ে বাক্য তৈরি সে তো তোমাদের জন্যে নস্যি ! তাই না ? তোমরা তো জান কোন কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে তাতে বরকত হয় । আর সেই বিসমিল্লাহর প্রতীক হচেছ ১৯। এবার এসো, আমরাও ইংরেজিতে ভাল কথাবার্তা বলা বাড়ানোর জন্য ১৯টি ম্যাজিক ফর্মূলাই আলোচনা করি :
১. ভোকাবুলারী বাড়ানোর জন্য “জুনিয়র ওয়ার্ড মাস্টার গেম” খেলা যা ঢাকার নীলক্ষেতে পাওয়া যায় ।
২. ইংরেজি পত্রিকা পড়ে তার অপরিচিত শব্দগ