আজ বৃষ্টির জন্মদিন। বৃষ্টি আর রবিন সামনাসামনি বসে আছে শহরের অন্যতম নামি এক রেস্টুরেন্টের টপ ফ্লোরে। দুইজন দুইজনের দিয়ে এমন অপলক ভাবে চেয়ে আছে যে দুইজন দুইজনকে কতদিন ধরে চিনে।কিন্তু ওদের সম্পর্ক মাত্র দুই মাসের। হঠাৎ করে রেস্টুরেন্টের সব আলো নিভে গেল, রেস্টুরেন্টের সাউন্ডবক্সে একটা ছেলের কন্ঠে বাজতে লাগল ‘টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার’।ভয়ে বৃষ্টির শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম ঝরে পড়ল। এই কন্ঠস্বর অমি ছাড়া আর কারো না। বৃষ্টি নিজেকে ভুলে গেলেও কখনও এই কন্ঠস্বর কখনও ভুলতে পারবে না। হঠাৎ ওর বামপাশে একটা মোমবাতি জ্বলে উঠল। এইবার বাস্তবকন্ঠে কেউ গেয়ে উঠল ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,হ্যাপি বার্থডে টু মাই ডিয়ার বৃষ্টি,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ......’ এইবার বৃষ্টির সারা শরীর যেন ৪৪০ ভোল্টের কারেন্টের শক খেল। যে ছেলেটা মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে, তার মাথায় একটা ছোট কাল হ্যাট এঙ্গেল করে পরা,গালে হাল্কা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, চশমা পরে থাকায় মোমবাতির আলো প্রতিফলিত হয়ে মনে হচ্ছে ছেলেটার চোখ দুটো জ্বলছে,ছেলেটার ঠোটের এক কোণে রহস্যের হাসি। ছেলেটা আর কেউ নয়, স্বয়ং অমি।
রেস্টুরেন্টের সব আলো আবার জ্বলে উঠল। বৃষ্টির মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না, ও শুধু এই ভেবে পাচ্ছে না এই সময়ে এই রেস্টুরেন্টে অমি কিভাবে আসল।অমি বৃষ্টির পাশে বসল আর কথা বলা শুরু করল
- কেমন আছ জান? অনেক দিন পর দেখা তাই না? তোমার সামনে এই ছেলেটা কে? নিশ্চয়ই কোন ফ্রেন্ড? তা তোমার জন্মদিনে শুধু একটা ফ্রেন্ডকে দাওয়াত দিলা কেন? আর সবাই কই?
রবিন কিছু বলতে চাইল কিন্তু অমি এমন ভাবে ওর দিকে চাইল যেন খুন করে ফেলবে, তাই রবিন চুপ করে বসে রইল।
- ওহ আচ্ছা আপনার সাথে তো আমার পরিচয় হয় নাই, আমি অমি, ওর বয়ফ্রেন্ড, আপনি?
- আমি রবিন, আমিওতো ওর বয়ফ্রেন্ড
- কি বলেন! আপনাদের সম্পর্ক কত দিনের?
- এইতো দুই মাস
এইবার অমি বৃষ্টির দিকে ফিরল
- আমি না বলছিলাম আমি পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি না কেন, এই দিন তোমাকে বিয়ে করতে ঠিকি চলে আসব
বৃষ্টি চুপ করে বসে আছে, ও বাকরুদ্ধ।
অমি আবার শুরু করলঃ
- আচ্ছা তুমি না প্রমিস করছিলা আমাদের যদি ব্রেকাপ হয় তাহলে তুমি আর কারো সাথে রিলেশনে যাবা না,আমাকেও তো প্রমিস করাইছিলা এইটা, আমিতো প্রমিস ভাঙি নাই তাইলে তুমি ভাংলা কেন!কি মনে করছিলা তুমি? তুমি এত কিছু করবা বাট আমি জানব না?
বৃষ্টির তখনো নির্বাক বসে আছে।
অমি মুচকি হেসে রবিনকে বলল
- দোস্ত অনেকক্ষণ ধরে বকবক করছি, কিছু খাবারের অর্ডার দে
বৃষ্টি আবাক নয়নে একবার অমি আরএকবার রবিনের দিকে তাকাল। দুইজন তখন হাসছে। অমি হাসি বন্ধ করে কথা শুরু করলঃ
- আমাদের ব্রেকাপ এর পরও আমি তোমার খোঁজখবর ঠিকি রাখছিলাম, ব্রেকাপের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় তুমি তোমার এক ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশনে জড়ালা, তখনি আমার মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল। চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে তোমাকে আঘাত করা যায়।
বৃষ্টি আর কিছু না শুনেই উঠে যেতে চাইল,অমি বৃষ্টির হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললঃ
- নিচের তলায় তোমার ভাইয়া আমার বন্ধুদের সাথে বসে বসে মুরগির রান চিবাচ্ছে, তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে বাসায় যেয়ে কি হবে বুঝতেই পারছ, আর আমার ইশারা ছাড়া আমার ফ্রেন্ডরাও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হবে না।
বৃষ্টি ওর বড় ভাইকে যমের মত ভয় পায়,বুঝতে পারল ও আজ ভালভাবেই ফেঁসে গেছে।অমি তার কথা চালাতে লাগলঃ
- তোমার সাথে আমার দেড় বছরের রিলেশন। তোমার দুর্বলতা সম্পর্কে খুব ভালোই ধারনা আছে আমার। আর তোমার মত লোভী মেয়েদের দুর্বলতা কি থাকতে পারে তা বের করা কঠিন কিছু নয়। তাই আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে কার বাড়ি গাড়ি আছে আর কাকে তুমি চিন না তা ফিল্টার করে কয়েকজন বের করলাম। চরিত্রগত দিক থেকে রবিন সবথেকে ভাল। আমার প্রেমিকাকেতো আর যার তার হাতে তুলে দিতে পারি না। তার পর থেকেই আমার প্ল্যান মত রবিন তোমাকে পটাল।তার আগে তোমার ওই ফ্রেন্ড যে কিনা পরবর্তীতে তোমার প্রেমিক হয়েছিল তাকে আমি টেকনিক্যাল ভাবে তোমার সাথে ব্রেকাপ করালাম।আমার প্ল্যানের বাইরে রবিন শুধু একটা কাজই করছে, তোমার হাত দুটো ধরছে। সুন্দরী মেয়েদের প্রতি ছেলেদের একটা দুর্বলতা থাকে এইটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও রবিন কাজটা ভাল করে নাই।
- সরি দোস্ত। রবিনও মাথা নিচু করে নিজের ভুল স্বীকার করল।
- একবার ভাবলাম রবিনের সাথেই প্রেম ভালবাসা বিয়ে হোক,তুমি সুখে থাক, পরে ভাবলাম নাহ, সম্ভব না। কারণ আমার পর আরেক জন তারপর রবিন, রবিনের পর হয়ত আরও অনেকে আসতে পারে তোমার জীবনে। তাই আজকের এই সারপ্রাইজ।
বৃষ্টি আঝরে কেঁদে চলছে
- তাই বলে আমার জন্মদিনে আমাকে এইভাবে আঘাত করবা!
- কাওকে যদি আঘাত করতে হয় তাহলে বিশেষ দিনে বা বিশেষ জায়গায় করতে হয়। আর প্রত্যেকটা মানুষের মত এইদিনটা তোমার জীবনে বিশেষ দিন।
অমি এই কথা বলে মুচকি হাসল। এই মুচকি হাসিটা যেকোন হিংস্র হাসি থেকেও ভয়ংকর দেখাল।
- এতো কিছুর পর অন্য কোন মেয়ে হলে আত্বহত্যা করত। তুমি তাও করতে পারবা না। সেই সাহস তোমার নেই।কিন্তু কয়দিন পর ঠিকই আরেকটা ছেলের হাত ধরে হাটবা। চল অনেক রাত হইছে, তোমাকে তোমার বাসার পৌছাই দেই, আমার ফ্রেন্ডরা এস এম এস পাঠাইছে, তোমার ভাইয়াকে নিয়ে ওরা কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে গেছে।
অমি রিক্সায় করে বৃষ্টিকে বাসায় সামনে নামিয়ে দিয়ে আসল, পুরো রাস্তায় তারা কেউ কোন কথা বলেনি, বৃষ্টি শুধু কেঁদেই গেছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে অমি শুধু বললঃ
- বৃষ্টি, কেন জানি এখন তোমায় অনেক ভালবাসি, কিন্তু এও জানি তুমি আমার ভালবাসার যোগ্য নও। বিদায়,ভাল থেকো। আর কারো জীবন নিয়ে খেলার আগে একটাবার চিন্তা কোরো।
এই কথা বলে ‘টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার’ জিঙ্গেলে শিস বাজাতে বাজাতে অমি হেঁটে চলে যেতে লাগল।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৫ দিন পর অমির মোবাইলে রবিনের কল
-দোস্ত জানিস বৃষ্টি না গতকাল রাতে আত্বহত্যা করছে
-খুব ভাল
- খুব ভাল মানে?
- মেয়েটার ভিতরে অপরাধ বোধ আছে দেখেই তো আত্বহত্যা করল, নাহলে ঠিকি আরেকটা ছেলের সাথে প্রেম করে বেরাত
- ছিঃ তুই এমন কথা বলতে পারলি
এটা বলেই রবিন হুট করে কল কেটে দিল।
বারান্দায় রোলিং চেয়ারে বসে বসে অমি আবার ‘টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার’ জিঙ্গেলে শিস বাজাতে লাগল।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৮ দিন পর স্থানীয় পত্রিকায় বড় করে একটা আত্বহত্যার নিউজ ছাপা হল। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ির একমাত্র ছেলের বিষ পানে আত্বহত্যা। অমি পত্রিকার নিউজটি পড়ছে আর মুচকি হাসছে, ওই একমাত্র জানে এইটা কোন আত্বহত্যা না, ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যা।অমিকে না জানিয়ে বৃষ্টির হাত ধরেছিল রবিন, এতবড় সাহস। আজ হোক কাল হোক রবিনকে এর জন্য শাস্থি পেতেই হত। অমি খুব ঠাণ্ডা মাথায় সব এলিবাই ঠিক করে রেখেছে,যেন পুলিশ ওকে সন্দেহ না করে, আর করলেও কোন প্রমান নেই যে ওই খুনটা করেছে।
বারান্দায় রোলিং চেয়ারে বসে বসে অমি আবার ‘টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার’ জিঙ্গেলে শিস বাজাতে লাগল।
-----(সমাপ্ত)-----
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩৭