কালোবাজারির বাজেট এবং আসন্ন রমজান
বাস্তবিক গত ডিসেম্বর থেকেই শেয়ার কেলেঙ্কারির বেপরোয়া বাজার লুণ্ঠন প্রক্রিয়ার শিকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সরকারের তৃতীয় বর্ষে এসে বেশ কিছুদিন ধরে অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের বিদায় দাবি করে আসছে। আগে যখন এসব পুঁজিহারা বিনিয়োগকারী লাভ করেছিল, তখন অর্থমন্ত্রীকে তারা মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দেয়নি কেন, এ কথা বলে ওইসব হতভাগ্যকে পরিহাস করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তাদের মধ্যে যারা রাজপথে বিক্ষোভ প্রকাশ করছিল, তাদের জেলে পোরার হুমকি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জাঁদরেল অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ওইসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কথা কানে নেওয়ার ফুরসত প্রধানমন্ত্রীর হয়নি। নির্দয় পরিহাস প্রিয় ওই অর্থমন্ত্রীকেই তিনি তার আমলের তৃতীয় বাজেট পেশ করতে বলেছেন। বাজেট পেশ হয়েছে। ৪৫,২০৪ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট। সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর ধরে মূল্যস্ফীতির যাতনায় যাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তারা বাকরুদ্ধ। বাজেট নিয়ে তাদের কিছুই বলার নেই। কারণ মূল্যস্ফীতি রোধের কোনো লক্ষণ নেই, কিছু কেতাবি প্রতিশ্রুতি মাত্র আছে এই বাজেটে। 'হয়তো বেশকিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হতে পারে,' বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তার কিছু প্রভাবশালী দলনেতার জন্য 'অপ্রিয় কিছু সিদ্ধান্ত নিলে শেয়ারবাজারের হাঙ্গাররা জব্দ হয়ে এতদিন স্টক এক্সচেঞ্জে' একটি শৃক্সখলা ফিরতে পারত। সেটা তিনি করেননি। তাই বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর অনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না নিম্নবিত্ত নাগরিক। মধ্যবিত্ত মুখ ফুটেই বলছে, বাজেটে কোনো স্বস্তি এলো না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া গেল না।
শেয়ার কেলেঙ্কারিতে নিঃস্ব-ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এতদিন যেসব প্ল্যাকার্ড খাড়া করে অবস্থান ধর্মঘট করছিল, তার অনেকগুলোতে লেখা ছিল : 'আমাদের গুলি করে মেরে ফেলুন'। বাজেটের আগে প্রতিকারের আশায় তারা প্ল্যাকার্ড ধরেছিল : 'অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হোক', 'পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট চাই'। আবারও তাদের একেবারেই নিরাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী, দণ্ড অব্যাহতি দিয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তিনি বাজেটে রেখেছেন ঠিকই, তবে সেটি সরাসরি সরকারি ট্রেজারি বন্ডে এবং বাংলাদেশ অবকাঠামো অর্থায়ন তহবিল লিমিটেড (বিআইএফএফএল) যা ক্রনি ক্যাপিটালিস্ট বা পেয়ারের পুঁজিবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। ফলে শেয়ারবাজারে ভাসমান বা মেয়াদি বিনিয়োগে ঢালা কালো টাকার একটা বড় অংক এখন সরকারি বন্ডে বা বিআইএফএফএল-এ চলে যাবে। তাতে সরকারের ভেতরে খুঁটি-গেড়ে-বসা ধুরন্ধরদের ফন্দি এড়িয়ে প্রজাপালনের কাজ কতটা হবে বলা কঠিন। তবে শেয়ারবাজারের অস্থিরতা যে আরও বাড়বে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শেয়ারবাজারকারীরা বলছেন, এটা কালোবাজারির বাজেট। তারা ভাবছেন, বাজেট দিয়েই উদ্ধৃত রসরচনার কাল্পনিক অর্থমন্ত্রীর মতো মুহিত সাহেব কেটে পড়তে পারেন, তথা প্রধানমন্ত্রীকে বলে-কয়ে অব্যাহতি নিতে পারেন (পদত্যাগের মুরোদ তার নেই)। কারণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থপনায় অনিবার্যভাবে একটা বিভীষিকাময় রমজান মাসের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি। শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নন, অনেক বড় ব্যবসায়ীও চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। চড়া সুদেও ব্যাংক ঋণ মিলছে না। পুঁজির অভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো অর্থনীতি। শিল্প সম্প্রসারণ তো দূরের কথা বিদ্যমান কারখানা চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ১৩ শতাংশের পরিবর্তে সুদ দাবি করা হচ্ছে ১৮ শতাংশ। তাতেও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক বিশ্লেষক। ব্যাংক ঋণের ওপর সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের বিভিন্ন ফোরাম থেকে দাবি উঠছিল একসুরে। শিল্প সম্প্রসারণ এবং পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে অর্থনীতিবিদরাও জোরালোভাবে এ দাবির প্রতি সমর্থন জুগিয়েছেন। কিন্তু গত ৯ মার্চ এক আদেশে টার্ম লোন ও এক্সপোর্ট ক্রেডিট ব্যতীত অন্যান্য ব্যাংক ঋণের ওপর থেকে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর আগে সর্বোচ্চ সুদের হার ১৩ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
একটি মাত্র খাতের দৃষ্টান্ত দিয়েই পরিস্থিতি বোঝা যায়। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে টেক্সটাইল ফেব্রিক্সের আমদানিমূল্য ছিল ২০৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ৪৪ শতাংশ বেড়ে আমদানিমূল্য হয় ২৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। তুল্য আমদানিমূল্য আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯২ কোটি ৯৭ লাখ ডলার থেকে ১২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। সুতা এবং সিনথেটিক ফাইবার আমদানিমূল্য বাবদ যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ২৭ এবং ১৩৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। সর্বমোট ৭৫ দশমিক ১৮ শতাংশ কাঁচামাল আমদানির বিপরীতে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে মাত্র ৪১ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ও অভ্যন্তরীণ তারল্য সংকট নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানিনির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। ফলে তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে, ঋণপ্রবাহ আরও জটিল হয়ে পড়ছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠেছে। ব্যাংকগুলো এখন ১৮ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই ফান্ড খরচ বেড়েছে এবং বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যথাযথ খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য এমন রক্ষণশীল মুদ্রানীতি অনুসরণের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা বাণিজ্য পরিবেশকে অসহনীয় করে তুলছে। রফতানি কার্যক্রমের পক্ষে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রনি ক্যাপিটেল বা সরকারের পেয়ারের পুঁজিপতিদের অন্যায় সুবিধা দিতে গিয়েই বহুলাংশে এই বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণে মেশিনারিজ ও জ্বালানি তেল আমদানি হচ্ছে। যার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ব্যাপকহারে। এসব মেশিনারির বেশিরভাগই ডেফার্ড পেমেন্টে আমদানি হয়েছে। তথা সেসব আমদানিকে উপলক্ষ করে পেয়ারের পুঁজিপতিদের বিদেশি ব্যাংকে পুঁজিপাচারের আর আগাম কমিশন আদায়ের বিলক্ষণ সুযোগ করে দিয়েছেন সরকার বাহাদুর। ডেফার্ড পেমেন্টের প্রভাব আগামী অর্থবছরেও বাড়বে। প্রচুর আমদানি হওয়া কুইক রেন্টাল পাওয়ারের যন্ত্রপাতিকেও ক্যাপিটেল মেশিনারি দেখানোর ফলে বিনিয়োগের প্রকৃত চিত্র অস্পষ্ট। অনেকেই বলছেন, বিনিয়োগ ও ব্যাংক ঋণের এই ভারসাম্যহীনতা অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার উপায় বের করতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক সভায় বসেছিলেন বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন। ওই সভায় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য অপরাপর কারণের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কথা বলেন। অভিযোগ করেন, ১৮ শতাংশ সুদ দিয়েও ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম উল্লেখ করে তারা বলেন, আগামী দুই মাস ঋণ পাওয়া যাবে না বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ...জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, দেশি-বিদেশী ব্যাংক মিলে বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের তহবিল রয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর ১৭ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। সুতরাং ব্যাংকগুলো যে টাকার সংকটের কথা বলছে তা ঠিক নয়। ব্যাংকগুলো অনুৎপাদনশীল খাতে বেশি বিনিয়োগ করেছিল। এ কারণে তাদের নগদ টাকার সংকট বেশি দেখা যাচ্ছে। অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ব্যংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারল্য সংকট নেই বলে যে মন্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংক করেছে তা আসলে ঠিক নয়। কারণ তারল্য সংকট না থাকলে তারা ১৪ শতাংশ সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছেন কেন। কেনই বা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন ব্যাংকগুলোতে গড়ে সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা ধার দিচ্ছে। আসলে উদ্ধৃত তারল্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে আছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকগুলোতে চলছে তীব্র তারল্য সংকট। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানত সংগ্রহে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তারা ১৪ শতাংশ সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে গিয়ে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৭ শতাংশ। ফলে কম করে হলেও ২০ শতাংশে বিনিয়োগ কেউ নিচ্ছে না। এককথায় অর্থমন্ত্রণালয়ে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি বিভ্রাটে ব্যাংকও ডুবছে, ব্যবসাও ডুবছে।

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....
ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।
আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?
অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার
ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার দিনগুলি আর ফিরবে নারে
কোনো কোনো গল্প, কবিতা কিংবা গান সৃষ্টির পর মনে হয়, এটাই আমার সেরা সৃষ্টি। আমার এ গানটি শেষ করার পরও এমন মনে হলো। এবং মনে হলো, আমি বোধ হয় এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়ের কাছে প্রথম চিঠি
Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন