
এলজিআরডি মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ গতকাল বলেছেন, ‘ব্লগ এখন অনেকটা পর্নোগ্রাফিতে পরিণত হয়েছে’ তার উদ্দেশ্য জানাতে চাই, ব্লগে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আসে আপনাদেরই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবিদার লোকজন।
বাংলা ব্লগে পর্নোগ্রাফির শুরু যেভাবে...
সৈয়দ আশরাফের বক্ত্যব্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, ধান্দাবাজ ব্লগাররা পর্নোগ্রাফি, অশালীনতা ও কুৎসা চর্চার জন্য এতদিন যে যে ঢাল ব্যবহার করত তা নাকচ হয়ে গেছে। সৈয়দ সাহেব নিশ্চিত করেছেন তার দল এবং সরকার ধান্দাবাজদের বাহানাকে প্রশ্রয় দেবে না। ফলে এদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লগারদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ বেগবান হওয়ার সুযোগ পেল।
কিন্তু ধান্দাবাজ ব্লগ ও ব্লগারদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হলে জানতে হবে তারা কোন ঢাল ব্যবহার করে। কখন থেকে করে।
সেই ঢালের নাম হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। প্রগতিশীলতা ও নাস্তিকতার চেতনা।
যদিও অমি রহমান পিয়াল তার মুষ্টিমেয় সঙ্গীকে নিয়ে বাংলা ব্লগিংয় ইতিহাসে সবার আগে পোন্দানো, চোদা, হোগামারাসহ নানা অশ্লীল গালির প্রচলনের কৃতিত্ব অর্জন করেন। কিন্তু তিনি সবচেয়ে বেশি সফলতার পরিচয় দেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা পর্নোগ্রাফির চর্চাকে বাংলা ব্লগে নিয়ে আসার ঘটনায় । ২০০৮ সালে বিজয় দিবসের পরের দিন তিনি সামহোয়ইনব্লগডটনেটে ‘অপূর্ব এক পরিবর্তন’ শিরোনামের একটি পোস্ট দিয়ে তিনি এ কাজ করেন।
ওই পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানান পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট যৌবনজ্বালা কিভাবে যৌবনযাত্রা হয়ে গেল। যৌবনযাত্রার পক্ষে নামার জন্য তিনি পর্নোগ্রাফি সাইটটির সদস্যদের যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে সক্রিয় হওয়ার কীর্তির (!) কথাও বয়ান করেন। তার তথ্যমতে পর্নোগ্রাফি সাইটটি যৌবনজ্বালা থেকে যৌবনযাত্রা হয়েছে ওই বছরের বিজয় দিবসে। ইন্টারনেটে বাংলাদেশী নারী ও বালিকাদের যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার দৃশ্য ও ভিডিও প্রচারকারীদের হোতা সাইটির দুই এডমিন কানাডা প্রবাসী ভুত মামা ও কুয়াশা মামাকে পিয়াল ব্যাপারে ‘প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক’ বলে প্রচারণা চালান। অপর হোতা ও এডমিন বাঘমামা ওরফে অপূর্বের সাথে পিয়াল তার সখ্যতার কথাও জানান পোস্টে।
পিয়াল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে সোচ্চার থাকার গল্প ফেঁদে যৌবনযাত্রার প্রচারণা চালালেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লগাররা তার কথায় পাত্তা দেন নি। উল্টো পিয়াল নিজেই যে পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটটির অন্যতম এডমিন এবং যৌবনযাত্রা হয়েও যে সাইটটি পর্নোগ্রাফি প্রচারের সাথে যুক্ত তা ফাঁস করে দেন ব্লগাররা।
তাদের মধ্যে ব্লগার জাতেমাতাল ২০ ডিসেম্বর ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী এবং একজন স্বঘোষিত পর্নোষ্টার’ শিরোনামের একটি পোস্ট দিয়ে পিয়ালের যুক্তি নাকচ করে দেন। তিনি পোষ্ট করেই বলেন…
যৌবন জ্বালা(যাত্রা)সাইটের পুরোটা জুড়ে নারীর প্রতি যে অবমাননাকর দৃষ্টি ভঙ্গী—তা মেয়েদের ধর্ষনযোগ্য বস্তু হিসাবে দেখার মনোজাগতিক কাঠামোর ভিতটা তৈরি করে দেয়।
তিনি পিয়ালের ব্যাপারে পোস্টে মন্তব্য করেন…
অমি রহমান পিয়ালের মনোজগতে মেয়েরা হলো সবসময়ই সেই বিশেষ পন্য—যারা খোলামেলা ছবি দিয়ে পুরুষদের মনোরঞ্জনে বাধ্য। পুরুষদেরও বুঝি এটা খুব স্বাভাবিক পাওনা, নগ্ন নারী শরীর দেখে তৃপ্ত হওয়া। একজন ধর্ষনকারী তার সম্ভাব্য ধর্ষনের শিকার মেয়েদেরকে এর চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন চোখে কি দেখে? তার কাছে ধর্ষন যোগ্য প্রতিটি মেয়েই কি তাকে তৃপ্ত করার জন্য বাধ্য নয়? মেয়েটা এতে সম্মত কিনা তাতে কি তার কিছু আসে যায়? জোর খাটালেই, চাপ দিলেই মেয়েরা কত কিছুতে রাজী হয়ে যায়। সাধ্য কি তাদের– আশ্রমের কেশাগ্র তারা স্পর্শ করতে পারে? দেশ জুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটি যখন ক্রমশঃ একটি জনপ্রিয় দাবীতে পরিনত হচ্ছে—তখন মেয়েদের জন্য অপমানজনক মনোভাব ধারন করে- অমি রহমান পিয়ালের দিনের পর দিন ধরে ঘটিয়ে যাওয়া এই ভার্চুয়াল ধর্ষনের বিচারের দাবী কে তুলবে??
মজার ব্যাপার হল পিয়ালের কোন বিচার হয়নি। বরং যৌবনযাত্রা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো অবারিতই থাকে। তিনি পৌছতে পৌছতে হাজির হন মহান ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশে বইমেলাতেও। যেখানে সেখানে জায়গা হয়নি পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটটির স্টলের। খোদ মুক্তিযুদ্ধের কর্নারে জায়গা হয়েছে যৌবনযাত্রার। এ নিয়ে ২০১০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে ,আজ থেকে নামবে ঢল, পর্নোগ্রাফির স্টল! একাডেমীর লজ্জা শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সৈয়দ সোহরাবের করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়…
বাংলা একাডেমীর চার দেয়ালের ভেতরেই তারা স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। যৌবনযাত্রা শিরোনামে ৩০৬ নম্বর স্টলটি থেকে তারা পর্নোগ্রাফির সিডি বিক্রি করছে। ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’ এই শিরোনাম ব্যবহার করে তারা টিনএজ সদস্য সংগ্রহ করছে, যৌবনযাত্রার ওয়েব সাইট নম্বরটি দিয়ে দিচ্ছে। যৌবনযাত্রার ওয়েব সাইটে ঢুকে দেখা গেছে বাঙালী টিনএজ ও তরম্নণী মেয়েদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন হাজার হাজার স্টিল ছবি এবং কুরম্নচিপূর্ণ মনত্মব্যে ঠাসা। দেশের কোটি কোটি মানুষ ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা হাজার হাজার যুবকের জীবনবৃত্তানত্ম সংগ্রহ করেছে। যুব সমাজের ধ্বংস তো অবশ্যই, এ ছাড়া আর কি কি উদ্দেশ্যে তারা এ কাজটি করছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
বাংলা ব্লগে পর্নোগ্রাফির পক্ষে এই যে প্রচারণা শুরু হল তার লাগাম আর কখনোই টানা হয়নি। সামহোয়ারইনব্লগের সাথে পাল্লা দিয়ে অন্য কমিউনিটি ব্লগগুলোতে শুরু হয়ে গেল পর্নোগ্রাফির ডাইরেক্ট একশন। পিয়াল তো পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের প্রচারণা চালাইছিলেন। কিন্তু কিছু ধান্দাবাজ ব্লগারের মধ্যে শুরু হল পর্নো ভিডিও, ছবি ও চটি গল্পের লিঙ্ক পোস্ট করার প্রবণতা। এক পর্যায়ে ব্যাপারটি এমন দাড়াল যে বাংলা ব্লগগুলো হয়ে দাড়াল পর্নো ভিডিওর বাজারজাত করার মাধ্যমে। জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী প্রভা, চৈতিসহ জানা অজানা অনেক প্রতারিত নারীর যৌনদৃশ্য সম্বলিত পর্নো ভিডিওর কথা প্রথমে প্রচার করা হয়েছে ব্লগে। সবার আগে ব্লগেই পোস্ট দিয়ে ইমেইল আইডি যোগোর করে পর্নো ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পরে ভিডিওগুলো সহজলভ্য করতে নানা পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে আপলোড করে লিঙ্ক সম্বলিত পোস্ট দেয়া হয়েছে ব্লগগুলোতে।
আশ্চর্য হওয়ার ব্যাপার হল এক পর্যায়ে দেখা গেল কিছু ব্লগার নানা নামে পর্নোগ্রাফির ব্লগ পর্যন্ত খুলে বসেছে। কমিউনিটি ব্লগগুলোতে রাত ১২টার পরে ১৮+ পোস্ট নামে যার লিঙ্ক পোস্ট করা হয়। এসব পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে ক্লিক ভিত্তিক টাকা রোজগারের ব্যবস্থা আছে।যার মাধ্যমে কেউ কেউ নাকি ২০-২৫ হাজার টাকা করে মাসিক আয়ও করে থাকে!
যদি কুত্তার পেটে ঘি না সয়…
বাংলা ব্লগ মাধ্যমকে পর্নোগ্রাফি, অশালীনতা, কুৎসা চর্চা ও আর্থিক প্রতারণার জন্য ব্যবহার করায় এখন কেউ কেউ দাবি জানাতেই পারেন যে সব ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হোক। যেভাবে জাতীয় নেতৃবৃন্দের অশ্লীল ছবি প্রচারের অভিযোগ তুলে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামে ব্লগের অধোপাতে যাওয়ার ব্যাপারে সোচ্চার হলেও হুঁশ হারান নি। তিনি দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্বশীল আহ্বানই জানিয়েছেন…