কম বাজেটে শর্ট ফিল্ম বানানোর টিপস নিয়ে আগেও একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম। সেটা লেখার আগে পড়ে দ্বিতীয় পর্ব লেখার কোন প্ল্যান না থাকলেও কিছুদিন আগে মনে হলো আরেকটা লেখা প্রয়োজন। কেনো যেনো মনে হচ্ছিল – অনেক কিছু কাভার হয়নি। আমি আসলে কাজে নেমে অনেক কিছু গুছিয়ে আনতে পারলেও লেখার সময় সেগুলো মনে থাকেনা। তাই মিস করি অনেক পয়েন্ট। এই জন্য কেউ প্রশ্ন করলে আমার জন্য সুবিধা হয়।
কম বাজেটে শর্ট ফিল্ম বানানোর জন্য প্রথম শর্ট হলো – স্ক্রিপ্ট লেখার সময় চিন্তা করুন। কোন স্ক্রিপ্ট রাইটার যদি আপনার জন্য স্ক্রিপ্ট লিখে দেয় তাহলে তাকে বলুন আপনার আনুমানিক বাজেটের কথা। তাকে ধারনা দিন কি কি থাকবেনা (উদাহরনঃ গাড়ি/বাড়ি ধ্বংস, অনেক মানুষ, বিশাল এলাকা জুড়ে হরতাল ইত্যাদী ইত্যাদী)… যদি আপনি লিখেন তাহলে এগুল মাথায় রেখে স্ক্রিপ্ট লিখুন। স্ক্রিপ্ট লেখার সময় আপনার বাজেট কে আটকে ফেলুন। লেখার সময় মাথায় রাখুন আপনি কি কি করতে সক্ষম হবেন না। ‘পড়ে দেখবো এখন লেখার কাজ লিখি’ – এই নীতিতে কাজ করলে পরে সমস্যা পড়বেন।
প্ল্যানিং
প্ল্যান প্ল্যান প্ল্যান। প্রচুর কথা হবে, সিগারেট পুড়বে (সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ সিগারেট টানলে পয়সা খরচ

খরচ কতো কমলো!

স্ক্রিপ্ট
স্ক্রিপ্ট নিয়ে কিছু কথা শুরুতেই বলে ফেলেছি। স্ক্রিপ্ট লেখার সময় আপনি যতোটা সম্ভব লো বাজেটে বানানো যায় এমন পরিবেশ/প্রপ্স রাখার ব্যবস্থা করবেন। চরিত্র কমান। আগেও মনে হয় বলছিলাম – এক অ্যাক্টর দিয়েই দুই চরিত্রের কাজ করানো যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবুন। স্পেশাল ইফেক্ট এড়িয়ে চলুন যদি আপনার চেনা জানা কেউ এই কাজ না করতে পারে। স্ক্রিপ্টে এমন কিছু লিখে ফেলেছেন যেটা কিনা এখন ভাবছেন বাদ দিবেন? দ্রুত বাদ দিয়ে নতুন করে স্ক্রিপ্ট লিখুন
লোকেশন
লোকেশন কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করুন। লোকেশন আপনার শহরেই রাখার চেষ্টা করুন। ভ্যাজাল টাইপের লোকেশন এড়িয়ে চলুন। ক্যামেরা দিয়ে দেখাতে পারলে সাধারন লোকেশন ও অসাধারন হয়ে উঠে। কাছাকাছি লোকেশন হলে আপনার যাতায়াত ভাড়া ও সময় দুটোই বাঁচবে।
কাস্টিং
শর্ট ফিল্মের জন্য হয়তো জনপ্রিয় কোন আর্টিস্ট কে ভাবছেন। আবার চিন্তা করুন – তাকে কি সত্যিই দরকার আছে? মঞ্চের কিছু ছেলেপেলে আছে, ভালো অভিনয় করে। খোঁজ লাগান, তাদের ফ্রীতে কাজ করে দেয়ার অফার করুন। অনেকেই রাজী হবেন।
প্রপ্স
কিছুটা ধারনা তো পেয়েছেন! দ্যা লস্ট ড্রীমে আমি কিন্তু আমার হাতে পিস্তল দেখাই নি। ২০০ টাকা দিয়ে পিস্তল কেনার চেয়ে হাত দুবার নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি আমার হাতে পিস্তল ছিলো। গল্প/মেকিং যতোই বাজে হোকনা কেনো, এটা নিয়ে কিন্তু কেউ অবজেকশন তুলেনি সো, আবার ভাবুন কোন কোন প্রপস না দেখালেও চলে। না দেখিয়ে কিভাবে বুঝানো যায় প্রপ্স এর অস্তিত্ব সেটা নিয়ে আরেক দফা ভাবুন।
ক্যামেরা
আল্লাহ’র দোহাই লাগে dSLR dSLR কইরেন না। ক্যামেরা জিনিসটা এমন না যে একটা dSLR বা RED camera বা ARRI এর ল্যাটেস্ট মডেল এর ক্যামেরা আপনার হাতে থাকলেই আপনি দূর্দান্ত শট নেয়া শুরু করে দিবেন। আচ্ছা, একটা উদাহরন দেই – মনে করেন আপনাকে ল্যাটেস্ট মডেলের একটা ৫ লাখ টাকা দামের পিসি দেয়া হইলো। কিন্তু আপনি পিসি চালাতে পারেন না। এই পিসি দিয়ে আপনার কি লাভ? আপনি হয়তো বলতে পারেন – কিছুদিন নাড়াচাড়া করে শিখে নেবো। খুব ভালো কথা শোনাইলেন মশাই। সেই নাড়াচাড়া করলে আপনি হয়তো উইন্ডোজ শিখতে পারবেন, কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয় এইবার আমাকে ফটোশপে এই ছবিটা এডিট করে দাও। আপনি কি করবেন? জাস্ট *ল ছিড়বেন কথাটা খারাপ লাগতে পারে। আরো বেশী খারাপ লাগার জন্য অন্যভাবে আবার বলি – ভালো ক্যামেরা হাতে থাকা মানেই আপনি আমার *লের ফিল্মমেকার এই ধারনা ভুল
তো, আপনার হাতে কি আছে? মোবাইল ক্যামেরা? হ্যান্ডিক্যাম? কম্প্যাক্ট ক্যামেরা? কুল্পিক্স? যা আছে তাই নিয়া লাফ দেন। ঘরে বইসা থাকলে ডিএসএলআর দিয়া ধুইয়া চা ও পান করা যাবেনা। ঘর থেকে বের হোন, শুট করেন। কিছু বলতে চাচ্ছেন? দুই মিনিট শুট করে এখানে জমা দিয়া এরপর কথা বলেন। নাইলে অফ যান।
যেই ক্যামেরা হাতে আছে সেই ক্যামেরা দিয়েই শুট করেন; ক্যামেরা ভাড়া নেয়ার খরচ কমান।
লাইট
লাইট নিয়া চিন্তিত থাকেন অনেকেই। লাইট ভাড়া নেয়া খরচান্ত ব্যাপার। খরচ কমাতে চান? দিনের আলোকে পরিপূর্নভাবে কাজে লাগান। এদিক সেদিক করে অনেকভাবে দিনের আলোকে কাজে লাগানো যায়। একটা শট দেখাই।
সলিড দিনের আলোকে বাম পাশের জানালা দিয়ে আসতে দিছি। ডান পাশের জানালার পর্দা অর্ধেক টেনে দিছি। আরেকটা জানালা ছিলো – সাব্জেক্টের পিছনে – ওটা দিয়েও আলো ঢুকতে দিছি। মামলা ডিসমিস। হ্যাঁ, দেখতে হয়তো একেবারে প্রফেশন্যাল হয়নাই, কিন্তু বিনা পয়সায় আর কী চান আপ্নে?
আপনিও ট্রাই করুন কিভাবে দিনের আলোকে কাজে লাগিয়ে কাজ করা যায়। ভাবুন, লিখুন, প্র্যাক্টিস করুন। ‘হয়না ভাই’ বলে বসে থাকলে আপনার লস। ফিল্মমেকার হতে চান? ক্রিয়েটিভিটি বাড়ান। বলদ ফিল্মমেকার হইতে চাইলে কিছু বলার নাই। আস্তে করে এই পোস্ট এখানেই পড়া বন্ধ করে রাস্তা মাপেন। কোয়ান্টিটি চাইনা, কোয়ালিটি চাই।
স্টান্ট আর অ্যাকশন সীন
এমন কোন সীন ভাবতেছেন নাকী যেটায় স্টান্ট লাগবে? বাদ দেন ভাই বাদ দেন। সিম্পল গল্প বলে যান। সিম্পল ইজ বেস্ট। হুদাই লাফ ঝাপ দিয়া বেড়াইলেন, আদতে বানাইলেন আবাল ফিল্ম – আপনার কপালে গালি ছাড়া কিছু জুটবে কিনা সন্দেহ। দুই পয়সার সিনেমায় চাইর পয়সার স্টান্টবাজী দেখানো মানে মামদোবাজী।
সম্পাদনা
কতো এডিটর আছে!! অনেকগুলা। যে কোন একটা বেছে নিন। কোন টা ভালো! গুগল ম্যান, গুগল। মনে রাখবেন – অনলাইনে আপনার সবচেয়ে বর বন্ধু গুগল। ফেসবুকের বন্ধুরা সব ফেইক (যেগুলার সাথে শুধু ফেসবুকেই পরিচয়), ব্লগের বন্ধুরা ধান্দাবাজ, চ্যাটরুমের বন্ধুরা টাইম পাস। আসল বন্ধু কে? গুগল। কিভাবে মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে সোনা সাপ্লাই করা যায় এটা কেউ না জানলেও গুগল ঠিক জানে
বলতে চাচ্ছি – কোন সমস্যায় পড়লে শুরুতেই গুগল করবেন। সম্পাদনা নিজে নিজে করা যায় কিনা দেখুন। কিভাবে শিখবেন? গুগল ম্যান, গুগল। ও হ্যাঁ, আমার এই পোস্ট টা পড়তে পারেন। কাজে লাগতে পারে, নাও লাগতে পারে। প্রফেশন্যাল এডিটর দিয়ে এডিট করলে টাকা খরচ – খরচ কমান; সেই টাকায় হাজীর বিরিয়ানী খান। কষ্ট করে অন্তত বেসিক এডিটিং শিখে ফেলুন।
এক্সট্রা টিপস
* ক্যামেরা যেহেতু ডিজিটাল, যতো পারেন শুট করেন। যতো শুট করার প্ল্যান করছেন তারচেয়ে কয়েকগুন বেশী শুট করেন। প্রথম দিকে এটা কোন ব্যাপার না। অনেক সময় দেখবেন ১০ মিনিটের শর্ট ফিল্ম এর জন্য ১০০ মিনিট শুট করে বসে আছেন। নো চিন্তা, ম্যান। হতেই পারে। আপনি জাস্ট লক্ষ্য রাখবেন এটা যেনো আপনার হ্যাবিটে পরিনত না হয়। ধীরে ধীরে শুটিং ক্লিপ্সের ডিউরেশন আর ফাইনাল আউটপুট এর ডিউরেশন এর রেশিও কমাতে থাকবেন। কিন্তু এখন প্রচুর শুট করুন। একই শট ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে নিন। হয়তো আপনি প্ল্যান করে রাখছেন – মিড শট। সেটাই ওভার দ্যা শোল্ডার শট নিয়ে রাখুন। আর্টিস্ট রা একটু কষ্ট করবে, ক্যামেরাম্যান একটু বিরক্ত হবে। আপনি ডোন্ট কেয়ার মুডে শুট করে যাবেন। শুট শুট শুট… এবং শুট মোর।
* পারলে শোল্ডার রীগ ব্যবহার করুন। প্রচুর প্র্যাক্টিস করুন অথবা এমন কাউকে টিমে নিন যার অভিজ্ঞতা আছে। ক্যামেরা দিয়েই মোশন আনার চেষ্টা করবেন সবসময়। কিন্তু আপনার শট হতে হবে ধীর ও স্থির।
* গল্প সাধারন কিন্তু অর্থবহ রাখার চেষ্টা করুন। গল্প ভালো না হলে শুরুতেই মার খেয়ে যাবেন।
* প্রচুর মিউজিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। আমি নিজে আন্ডার দ্যা ক্লাউডস অফ লাভে খুব বেশী মিউজিক ইউজ করে ফেলেছি। সামনে থেকে এটা আর হবেনা আশা করি।
* সাউন্ড নেয়ার জন্য হেডফোন-মাইক্রোফোন দিয়ে ডাবিং করা যায় কিনা দেখুন। যতোটা সম্ভব কম নয়েজ রাখা যায় কিভাবে সেটা নিয়ে ভাবুন।
* কালার কারেকশন করুন। ব্রাইটনেস প্রায় সময়েই একটু বাড়তির দিকে দেখবেন, এটা হালকা কমিয়ে দিন। ন্যাচারাল কালার করার চেষ্টা করুন। রঙ বেরং এর শট শুধু বিরক্তির কারন করবে যদি অর্থ না থাকে।
অনেক কথা হইছে। কথা আমরা বাংগালিরা বেশীই বলি। আগামী ৪৮ ঘন্টায় আপনি একটা শর্ট বানাতে পারবেন? ২ মিনিটের? ৪ মিনিটের? বানাইতে পারলে বুঝবো আপনি একটা মাল। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি থাকলে এটা কোন ব্যাপার না আপনার কাছে যখন আপনার আছে সিনেমা পিপলস
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:১০