somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ও কবিতার সাথে

২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো সাথে দেখা হলে সবাই সাধারণ প্রশ্ন করে - কেমন আছি। উত্তর দিতে অসস্তি বোধ করি। দিনযাপনের জন্য ভাল বা মন্দ থাকার দরকার পড়ে না। আগে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় বলতাম, আমি সবসময় ভাল থাকি। হাসির মধ্যে নিষ্পাপ উদ্দীপনা থাকত তাই প্রশ্নকর্তাগণ নিশ্চিত থাকতেন আমার ভাল থাকা নিয়ে। পরবর্তী দিন আজকের দিনের চেয়ে আরো খারাপ যেতে পারে তাই বর্তমানই আমার সবচেয়ে প্রিয় সময়। কিন্তু আগত দিনেরা বর্তমান থেকে দূর্বিষহ হতে থাকলো। সন্দেহ করতে থাকলাম নিজের ভাল থাকা নিয়ে। যেখানে সন্দেহ সেখানে সত্য মিথ্যার দোলাচল। সত্য বলি পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে। মিথ্যে বলতে পারি না। কষ্ট হয় কেমন আছোর উত্তর দিতে। অসস্তি হয় এড়িয়ে যেতে। আমি কিছু এড়িয়ে যেতে পারি না। সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আবার এমনি এমনি যেতে পারি না। ঘ্রানেন্দ্রিয় প্রখর থাকায় বস্তু বা বিষয়ের সুক্ষ্ম ঘ্রানগুলো তীব্রভাবে পাই। চোখ বাহ্যিক গঠন ভেদ করে রঞ্জন রশ্মির মত ভেতরের গড়নটা দেখে। শ্রবনেন্দ্রিয় শোনে কথার ভেতরকার কথা, রূপকথা, গাঁথা। এ সব দেখাদেখি বোঝাবুঝি নিয়ে চলি। বড় বেশি বোঝার বড় বেশি কষ্ট। দেখতে না চাইলেও আমাকে দেখতে হবে, বুঝতে না চাইলেও আমাকে বুঝতে হবে। এটাই আমার গড়ন।

ছোটবেলায় রচনা লিখতে হত আমার জীবনের লক্ষ্য। পড়ার কাজ পড়তাম। কোনদিন পরীক্ষার খাতায় লিখিনি। বড় হয়ে কোনকিছু হতে হবে তখন সে বোধ হয়নি। প্রথম সে বোধ হল এক কবির কবিতা দেখে। তার কবিতায় আমার প্রতিচ্ছবি। আমি মোনালিসাকে দেখলাম আমার ভেতর। আমার সামনে চলে এল লিওনার্দো। তাঁর অপরূপ তুলিতে এক সাধারণ নারীকে মহিমান্বিত করেছেন। তার বিপুল প্রতিভায় খ্যাত হলেন আর নিশ্চিতভাবে এক সামান্য নারীকে করলেন তার মতন চিরজীবী। যেখানে লিওনার্দো সেখানে মোনালিসা। একজন প্রতিভাধরকে ধরলাম পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে। যিনি মানুষ হয়েও সব মানুষ থেকে আলাদা। যার উপলব্ধির জগত আলাদা। একজন প্রতিভাধরের স্বতন্ত্রতায় আমি মুগ্ধ, বিস্মিত। আমি মোনালিসা হতে চাইলাম ঐ কবির লেখায়। স্বার্থপরের মত চাইতাম কবি যেন শুধু আমাকে লেখে। আমি ভালবাসলাম কবিকে। এক বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়ে। সে অনেক বড় কবি হবে, যখন সে বা আমি থাকব না, কবির লেখা নিয়ে আলাপচারিতা হবে, কবিতার ভেতরকার মানুষটি কে সবাই জানতে চেষ্টা করবে, গবেষণা করবে। গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। কবির কবিতার মধ্য দিয়ে বিখ্যাত হবার সাধ। কবির কবিতা যেন কবির নয়, আমার অমরত্বের নাক উঁচু অহংকার।

আমার লেখা নিয়ে কবি যখন বলে ভাল হয়েছে, লজ্জা পেতাম। তার লেখার পাশে আমার লেখা নাঁকি নাঁকি ঠেকত। তার একটানা দম্যহীন ধাক্কাতে এক রকম ঠ্যাকায় পড়ে লিখতে বসি। তার উৎসাহ উদ্দীপনার নিপীড়নে প্রেম দেখি। এবার কবির প্রেমে পড়ি। খুব, খুব, খুব সামান্য সময়ের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রেম। হয়তো । আমার সন্দেহ আছে। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন বড় হয়ে উঠি আমার কাছে। বড় হয়ে উঠি বাহিরে ও ভেতরে। অন্তর্জগতে অন্য এক আমির উপস্থিতি টের পাই। আমার আমিত্ব আমাকে অন্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র সত্ত্বায় শক্তভাবে দাঁড়াতে বলে। আমাকে অহংকারী হতে উজ্জ্বীবিত করে। পারিপার্শ্বিক মানুষের আচরণে বুঝতাম আমি কোথাও না কোথাও তাদের চেয়ে আলাদা। কিন্তু স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে তখনও আগ্রহী হইনি।

কবির লেখালেখি দেখাদেখি দেখে আমার কবিতায় আসা। লিখতে শুরু করি ও আগ্রহ পাই। লেখা শুরু করবার পর মনে হল ইচ্ছে করলে আমি লিখতে পারি, লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারি। আমাকে লেখায় নিয়ে আসে আমার কবি। আমার লেখনীতে আমি তাকে লিখি, তার সঙ্গ লিখি, কথা লিখি। লোকে আমার লেখা দেখে যদি প্রশংসা করে সেটা আসলে তাকে বলে। সে তাড়িত করে, ক্ষুধার্ত করে লিখতে। আমার বিষয়, আমার শব্দ, আমার উপস্থাপন, আমার দেখা শোনা জানা বোঝা, সোজা হয়ে দেখা, বাঁকা করে দেখা, আমার শব্দগুলোকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেয়া সবকিছু সে টেনে নিয়ে চলে। আমি শুনতে পাই কবি যেন বলছে তুমি এগিয়ে চলো, তুমি পারবে। তার কথায় ছুটি। সে আমাকে জাগিয়ে তোলে ভিতর থেকে যা মানুষ প্রায়শই জানতে পারে না তার মধ্যে অন্য এক মানুষ আছে। একক ব্যক্তিত্বরূপে। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি আমার অর্ন্তজগতে যা কিছু আছে সেটা একমাত্র সেই জাগিয়ে তুলতে পারে। আমার প্রজ্জ্বলনের দীপকাঠি কবির হাতে।

আমার অন্তঃস্থ সত্ত্বা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হবার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমি জানি আমার সর্ম্পূণতার জন্য কবির সম্পূর্ণরূপ দরকার। অথচ পূর্ণতা প্রাপ্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার অপূর্ণতায় আমি অপূর্ণই থেকে যাই। সে এখন আর কবিতা লেখে না। বড় কষ্ট পাই। যে বিশাল জগতের সন্ধান আমি পেয়েছি তার জানালাটা শুধু কবি খুলে দিয়েছে। দরজার চাবি তার হাতে। জানি, সে দরজা বন্ধ থাকবে। কারণ আমার পাওয়া জগতকে কবি দেখছে না। ব্যক্তি কবিকে যে কোন মুহূর্তে ফেলে চলে আসতে পারি কিন্তু কবি এবং যে আমাকে দীক্ষিত করেছে, আমার আমিত্বে ও প্রয়োজনে আমি তাকে ভালবাসি। ভালবাসি যে কোন প্রতিভাকে। একজন শিল্পির চিত্রের প্রয়োজনে উলঙ্গ হতে পারি। একজন ভাস্কর্যকারের জন্য যে কোন ভঙ্গিতে দাঁড়াতে পারি। একজন কবির একটা কবিতার জন্য আমি তার প্রেম হতে পারি। একটা সৃষ্টির জন্য যা দরকার তার সবকিছু পারি।

আমি কবির কাছে ঠিক এটাই চেয়েছিলাম। কবির কাছে এই চাওয়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংসারজীবন মনে হয়েছে। কিন্তু সে সব ছাড়িয়ে আরো উপরের কিছু যেখানে পৌঁছালে মানুষ মহৎ হয়, চিরজীবী হয় সেখানে। একজন পূর্ণাঙ্গিনী হিসেবে কেউ আমাকে নিয়ে যাবে ঊর্ধ্বলোকে সমসাময়িক সময়কে ছাড়িয়ে। আমার ভাস্কর্য হবার ইচ্ছে ছিল। যে কোন প্রতিভার কাছে যাতে আমি সম্পূর্ণ বিলীন হতে পারি। আমি কবির কাছে তাই আশা করেছিলাম। সে আকাঙ্খা পূর্ণতা লাভ করেনি। মানুষ হিসেবে আমার কবি অত্যন্ত দুর্বল চিত্তের। এই ভীরু মানুষটি আমাকে সময়ের স্রোত ঠেলে নিয়ে যাবে তা আশা করা যায় না। অর্থাৎ আমি যা চাই তা কখনও হবে না। একজন ভীরু মানুষকে দিয়ে কিছু হয়ও না। আমি সাধারণ হতে চাইনি কিন্তু আমি সাধারণ হয়ে থাকব।

আমি জানি কোন জায়গায় নাড়া দিলে আমি কি হব। অজানা কোন উপায়ে কবি তা জানে। আমি আমার সামনে আমার পৃথিবীকে সম্পূর্ণ লুন্ঠিত হতে দেখি। কষ্ট পাই যার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা তা সে বোঝে না। আত্মার মুক্তির জন্য সাহসী মানুষ দরকার। আমার অর্ন্তলোক প্রজ্জ্বলনের জন্য আমি একজন ভীরু মানুষকে বেছেছি। হয়তো কবি বলবে তুমি তা একাই করতে পার। কিন্তু মানুষের মানবিক জগৎ সম্পূর্ণ অদ্ভুত জগৎ। আমার মনোজগতকে কারো দ্বারা তাড়িত করে তুলতে হয়। আমি পিপাসার্ত হয়ে ছুটতে থাকি সাধারণ চোখের চেয়ে আলাদাভাবে দেখা অপূর্ব জগতে। কবি আমাকে সে চোখে দেখে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:১৭
১৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×