[[ বর্তমান সময়ে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে অনেকেই ঝুকি(!!) নিতে চান না। সময়ের আগেই তারা চান নিরাপদ ডেলিভারি। সেজন্যে এখন অনেকেরই পছন্দের তালিকায় আছে সিজারিয়ান ডেলিভারি। কিন্তু এ পদ্ধতিটি আসলেই কতটা যৌক্তিক। কেমন প্রভাব ফেলে মা ও শিশুর প্রতি? জানেন কি? আসুন নরমাল ডেলিভারির সাথে সিজারিয়ান ডেলিভারির কিছু গবেষণালব্ধ ফলাফল তুলনা করে দেখি, কোনটা, কেন যৌক্তিক?]]
শিশু জন্মদানের তিন পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে থাকে—
১. নরমাল,
২. অ্যাসিসট্যাড নরমাল যেমন ফরসেপ
৩. সিজারিয়ান।
সিজারিয়ান ডেলিভারি ধাত্রীবিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। সম্রাট জুলিয়াস সিজার নাকি এভাবে জন্মেছিলেন। ধারণাটি সঠিক নয়। সম্ভবত লাতিন শব্দ থেকে এ নামের উৎপত্তি। রোমান সাম্রাজ্যে কোনো গর্ভবতী মারা গেলে তাঁর পেট কেটে মৃত বাচ্চাটি বের করে আনা হতো এবং আলাদা দাফন করা হতো। দলিল ঘেঁটে দেখা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে সর্বপ্রথম জীবিত একজন মায়ের শরীরে এ ধরনের অপারেশন করা হয়।
সিজারিয়ান ডেলিভারি করার নির্দেশনাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এক. যখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভবই নয় (গর্ভফুল দিয়ে জরায়ুমুখ ঢেকে থাকা, মায়ের কোমর ও বাচ্চার মাথার আকারের বড় ধরনের অসামঞ্জস্য, তলপেটের বড় টিউমার ইত্যাদি)।
দুই. নরমাল ডেলিভারি সম্ভব, কিন্তু মা-বাচ্চার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বিতীয়টির নির্দেশনা তালিকা বেশ দীর্ঘ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
*একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট চেষ্টার পরও যদি স্বাভাবিক প্রসব না হয়।
*প্রসবব্যথা চলাকালে যদি মা ও বাচ্চার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়।
*বাচ্চা যদি উল্টোভাবে অথবা আড়াআড়িভাবে গর্ভে অবস্থান করে।
*একলাম্পশিয়া বা খিঁচুনি।
*মায়ের হূদেরাগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ।
*যদি পূর্ববর্তী দুই বা ততোধিক সিজারিয়ান ডেলিভারির ইতিহাস থাকে, ইত্যাদি।
অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) বর্তমান সভাপতি অধ্যাপিকা কোহিনূর বেগম বলেন,
স্বাভাবিক প্রসব সব নিবেদিতপ্রাণ ধাত্রীবিদেরই প্রথম পছন্দ; সিজারিয়ান ডেলিভারি অবশ্যই দ্বিতীয় ও বিকল্প পদ্ধতি।
নানান বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সন্তান জন্মদানের এ কৃত্রিম পদ্ধতিটি আজ অনেক আধুনিক ও নিরাপদ। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বের লাখ লাখ মা ও শিশুর জীবন রক্ষা হয়েছে।
নরমাল ডেলিভারিতে কি পাচ্ছিঃ
*চাপশূন্য ধরণিতে আগমন। যদিও স্ট্রেস ফ্রি ভূমিষ্ঠক্ষণ নবজাতক শিশুর জন্য বাঞ্ছনীয় বলে শিশু চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন, তথাপি নরমাল জরায়ুমুখ প্রসবকালীন চাপ গ্রহণ করে যে নবজাতক জন্ম নেয়, তা তাকে পরবর্তী সময়ে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে ভিত এনে দেয় এমন ধারণা অনেকে পোষণ করেন।
*নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে শিশু মা থেকে কিছু অণুজীবাণু পেয়ে থাকে, তা তার রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম গঠনে সুফল এনে দেয়।
*নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেওয়া শিশুতে প্রাইমারি পালমোনারি উচ্চ রক্তচাপ অনেক কম। ফলে সন্তান ঝুকিতে অনেক কম থাকে।
সিজারিয়ান ডেলিভারিতে কি পাচ্ছিঃ
*সফলভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর সংগঠন বৈজ্ঞানিক তথ্যে জানাচ্ছে, নরমাল জরায়ুমুখ প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ান শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান শুরু বেশি সমস্যাঘন থাকে।
*সিজারিয়ান অপারেশনে মাকে অস্ত্রোপচারের জন্য যেসব অ্যানেসথেটিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তা নবজাতক শিশুতে প্রভাব ফেলতে পারে। সফল বুকের দুধ পানে বাধা হয়ে উঠতে পারে।
*সিজারিয়ান ডেলিভারির ফলে মাকে বাকি জীবনে মানতে হয় বিভিন্ন বিধিনিষেধ। যা বলতে গেলে তার স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
*সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া নবজাতক শিশুর হাসপাতালে থাকার সময়কাল বেশি বলে বেশি ইনফেকশন ঝুঁকিতে থাকে এসব শিশু।
*সিজারিয়ান শিশুতে ব্লাড ইনফেকশন হার বেশি। জন্ডিস দেখা দেওয়ার পাল্লাটা খানিক হেলানো। ফরসেপের তুলনায় মাথায় আঘাতের আশংকা ৬০ শতাংশ কম কিন্তু সিজারিয়ান বেবিতে ইনটেনসিভ কেয়ার পরিচর্যার সংখ্যা ফরসেপের তুলনায় ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি।
*২৫ শতাংশ সি-সেকশনে সময়ের দুই-তিন সপ্তাহ আগে সন্তান জন্মদান হয়ে যায়। শিশু ইনফেকশনে পড়ার এটিও এক কারণ হয়ে থাকতে পারে।
*সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া শিশু অণুজীবাণু পায় হাসপাতালের পরিবেশ থেকে, যা অত্যন্ত ভয়ংকর জীবাণু। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয় খর্ব।
*মিউনিখ, জার্মানিতে ৮৬৫ জন বেবি, যারা প্রথম চার মাস শুধু বুকের দুধে নির্ভরশীল ছিল, পরবর্তী সময়ে ১২ মাস বয়সে এসে দেখা যায় সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া শিশুতে ডায়রিয়া হওয়ার ৪৬ গুণ বেশি ঝুঁকি মিলছে।
*কিডস অ্যালার্জি রিস্ক ডাটা দেখাচ্ছে সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া শিশুতে অ্যালার্জির প্রবণতা বেশি। গরুর দুধে অ্যালার্জি প্রায় দুই গুণ বেশি। অন্য পাঁচটা উপাদানেও অ্যালার্জিরভাব বেশি।
*২০০১ সালে প্রকাশিত জার্নাল অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি দেখাচ্ছে, সিজারিয়ান বাচ্চাদের মধ্যে অ্যাজমার প্রবণতা বেশি থাকে। এই গবেষণা হয়েছে ফিনল্যান্ডে
*শিকাগোর ডা. এলিউট এম লেভিন ও সহযোগী গবেষকদের মতে, সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া শিশুতে প্রাইমারি পালমোনারি উচ্চ রক্তচাপ পাঁচ গুণ বেশি। প্রতি হাজারে প্রায় চারজনে ঘটে। নরমাল ডেলিভারির শিশুতে এই হার ০.৮ প্রতি ১০০০ শিশু জন্মে।
*নিউরোসায়েন্সের বিজ্ঞানীরা ইঁদুরে ওপর গবেষণা করে পেয়েছেন, সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া শিশু পরবর্তী সময়ে সিজোফ্রেনিয়ার মতো গুরুতর মানসিক রোগে ভোগার ঝুঁকিতে থাকে বেশি।
*যেসব মা সিজারিয়ান অপারেশনে বাচ্চা জন্মদানে বেশি আগ্রহী থাকেন, সেসব নবজাতক সন্তানের প্রথম ২৮ দিনে মৃত্যুহার তিন গুণ বেশি থাকে।
অতএব আপনিই এবার সিদ্ধান্ত নিন, কোনটা, কেন যৌক্তিক?
ফেসবুকে আমি
আমার সকল পোস্ট গুলো একসাথে দেখতে চাইলে :-
আমি নষ্টা নই, আমি মা রহিমা আক্তার
তুমি কি এখন বুঝতে পারছ , তোমার মা কত টা কষ্ট করে তোমাকে জন্ম দিয়েছেন !!!
আলোচিত ৩টি প্রশ্ন ও তার জবাব
ছেলে মেয়ের সমান অধিকা্র চাই
Facebook এর সত্যি কারের ঘটনা
“সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” – এই প্রশ্নের সরল উত্তর
ঢাকার সব ব্লাড ব্যাংকের লিস্ট
ছড়ায় ছড়ায় ''Tense'' শিখি
এক নজরে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর মহান জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩২