যে কোন ধর্মে- একটা জিনিষ কমন দেখতে পাওয়া যায়।
সেটা হল- ধর্মের প্রচার ও প্রসার। হোক সেটা আদেশ নির্দেশ দিয়ে, কিংবা তলোয়ার বা বন্দুকের নলের মাধ্যমে কিংবা ব্রেইন ওয়াশ করে।
ধর্ম কায়েম কেন করতে হয় এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে বার বার করে আমাদের সামনে চলে আসে ধর্মের এক্সিস্টেন্স এর কথা।
আজকে যদি কাউকে বলা হয়- গ্রাভিটি এক্সিস্ট করে না এবং সে এটা বিলিভ করা শুরু করে এবং তার সাথে যদি পুরা দুনিয়ার সকল মানুষ সেইম কথা বিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে কি কালকে থেকে এই জিনিষ আর কাজ করবেনা?? নাকি নীচের দিকে পরার পরিবর্তে সকল জিনিষ উপরের দিকে উঠা শুরু করবে ??
যদি আজকে থেকে দুনিয়ার সকল মানুষ বিশ্বাস করা শুরু করে- রেডিওএক্টিবিটি বলতে কিছু নেই, এবং মাইক্রোওয়েব নামক জিনিষ টি ও ভুয়া যেহেতু আমরা দেখতে পাইনা। সো- কালকে থেকে কি এই জিনিষ গুলোর অস্তিত্ব নাই হয়ে যাবে? মাদাম কুরি সারা জীবন রেডিওএক্টিভ জিনিষ পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন, এবং রেডিওএক্টিভিটির এফেক্ট এর ফলেই মারা গিয়েছিলেন যদিও উনি জানতেন না এর প্রভাব বা কুফল। আপনি জানেন আর না জানেন, মানেন আর না মানেন, এই জিনিষ আছে, ছিল এবং থাকবে।
যদি আমরা আজকে থেকে বিলিভ করা শুরু করি- অক্সিজেন বলতে আসলে কিছুই নেই যা আছে তা হল জাস্ট হোয়াক্স, কালকে থেকে কি অক্সিজেন নামক জিনীষ টার উপযোগিতা শেষ হয়ে যাবে? নাকি এটা দুনিয়া থেকে হারায় যাবে?
যদি আমরা আজকে থেকে দুনিয়ার সকল মানুষ বিলিভ করা শুরু করি- আমাদের আসলে এই দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য সরকার ব্যবস্থার দরকার নেই, কালকে থেকে কি সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে? হ্যা! ধ্বংস হয়ে যাবে।
ঠিক একই ভাবে, আমরা যদি আজকে থেকে সকল মানুষ বিশ্বাস করি, ধর্ম বলতে আসলে কিছু নেই- আগামি কাল থেকে এই জিনিষ এর উপযোগীতা শেষ হয়ে যাবে এবং পরশু দিন থেকে আর ধর্মের নাম গন্ধ ও থাকবে না এই দুনিয়ায়।
এই কারনে দুনিয়ার সকল দেশের সরকার যাতে মানুষ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে এই কারনে আইন, কানুন আর বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ কে ব্যতিব্যস্ত রাখে এবং তার উপযোগীতা ও গুরুত্ব প্রতিদিন মানুষের সামনে তুলে ধরে,
ঠিক একই ভাবে,
আমাদের ধর্ম গুলো ও একই ভাবে আমাদের কে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয় ধর্ম প্রচার বা কায়েম করার জন্য।
প্রতিটি ধর্ম ই জানে - পুশ না করলে তাদের পতন অনিবার্য্য। এই কারনে - আমাদের সকল ধর্মেই বলা আছে- ধর্ম প্রচার করার জন্য।
হিউমান এক্সিস্টেন্স এর জন্য বর্তমানে ধর্মের কোন ধরনের দরকার ও প্রয়োজন না থাক্লেও আমাদের ধার্মিক মন বাচ্চাদের কে ধর্ম শিখাই, ছোট বেলা থেকেই তাদের মনে গেথে দেই ধর্ম, যাতে করে বড় হবার সাথে সাথে তারা বুঝে না যায় এটা আসলেও অপ্রয়োজনীয় জিনিষ।
হোমো সেপিয়েন্সস এর ইভালুশান এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই- মানুষ দৌড়ানোর জন্য তাদের পা ইউজ করতে শিখেছে যাতে শিকার কে তাড়া করতে সুবিধা হয়, কিংবা হাতের ব্যবহার শিখেছে আত্মরক্ষার জন্য কিংবা পেনিস এর ব্যবহার শিখেছে প্রজননের জন্য-এসব আসলে হোমো সেপিয়েন্স এর ডি এন এ তে কোডিং হয়ে রয়েছে এবং সেটা কপি হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
যদি ধর্ম জিনিষ টা আমাদের মানব জীবনের অপরিহার্য হত, এটাও আমাদের জিনে বা ডি এন এ তে কোডীং হয়ে আসত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আমাদের কে জোর করে বন্দুকের মুখে বা তলোয়ার এর ডগার ভয় দেখিয়ে কিংবা পরকালে আগুনে কাবাব বানানোর ভয় দেখিয়ে কিংবা আন লিমিটেড নারী সম্ভোগ আর লালসার লোভ দেখিয়ে ধর্ম কায়েম করতে হত না।
রিলিজিয়ন ইজ এ ইলুশান।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এত কিচ্ছুর পরেও এত হাজার হাজার শতাব্দী ধরে রিলিজিয়ন টিকে আছে কিভাবে? উত্তর এক্টাই- ধর্মই আজকের এই সভ্যতা বিনির্মানের মূল কারিগর।
প্রিমিটিভ রা যখন আদিম কালে একা একা শিকার করত, তখন তারা আবিস্কার করলো, একা শিকার করার চেয়ে দল বেধে শিকার করলে অল্প পরিশ্রমে বেশি শিকার পাওয়া যায়। এখান থেকেই দলবদ্ধতার সূচনা।
কিন্তু, দলবদ্ধ হলে শুরু হয় কন্ট্রোল ও পরিচালনা ইস্যু। ছোট একটা দল্কে পরিচালনা করতে এক জন বা কয়েকজন লিডার দিয়ে পসিবল। কিন্তু হাজার হাজার বা লাখ লাখ লোককে পরিচালনা ও সভ্যতা বিনির্মানের জন্য দরকার ছিল এমন কোন এক গল্প যাতে দিয়ে সবাইকে একই সূতায় গেথে রাখা যেত। কিংবা , যখন মানুষ ঝড়, বন্যা বা ন্যাচারাল ক্যালামিটি গুলো এক্সপ্লেইন করতে পারত না তখন দরকার হয়েছিল, এমন কোন সত্ত্বার আবিস্কার করা যাতে এগুলাকে তার কাজ বলে এক্সপ্লেইন করা যায় এবং বিশাল মাস পিপল কে নিয়ন্ত্রন করা যায়। এছাড়াও বিশাল মাস পপুলেশান কে ভয় দেখানো এবং কন্ট্রোল করার জন্য দরকার ছিল আলাদা রকমের এক শক্তি। সেখান থেকেই শুরু হয় কমন মিথ বা অলৌকিক সত্ত্বার গল্প যেখান থেকে পরিপুষ্ট হয়ে আজকের ধর্ম এবং এখান থেকে আজকের এই সভ্যতা। গ্রাম, সিটি বা দেশ বিনির্মানে তথা এই সভ্যতার আজকের এই অবস্থার পেছনে ধর্মের প্রভাব অনঃস্বীকার্য ।
তাহলে প্রশ্ন উঠে আসে- ধর্ম কি হারিয়ে যাবে? বা মানুষ কি ক্রমাগত এই যে ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে- তাহলে কি সভ্যতার আরো অগ্রগতির সাথে সাথে ধর্মের ও বিনাশ হবে??
উত্তর হলঃ না
আমাদের সাইকোলজিকাল, নিউরোলজিকাল, হিস্টোরিকাল এবং কালচারাল সিস্টেম এর প্রভাবে আমরা কখনোই ধর্ম থেকে দূরে সরতে পারব না।
আজকের দুনিয়ার ধর্ম থেকে দূরে সরা দেশ গুলার দিলে তাকালে আমরা একটা জিনিষ ক্লিয়ারলি দেখতে পাই- জাপান, ইউকে, কানাডা, সাউথ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, চেক রিপাব্লিক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, উরুগুয়ে, চায়না- এই দেশ গুলো মাত্র ১০০ বছর আগেও চরম ধার্মিক ছিল। কিন্তু তাদের উন্নতির সাথে সাথে তারা এখন এই মুহুর্তে দুনিয়ার সব চেয়ে কম অবিশ্বাসী জাতিগুলোর একটা।
তাহলে কি ধরে নেয়া যায়- একসময় কোন এক দৈব উপায়ে যদি সব দেশের সব জাতির মানুষ উন্নত হয়ে যায় তাহলে তারা ধর্ম বিমুখ হয়ে যাবে? উত্তরঃ তাও , না।
আসলে, ধর্ম জিনিষ টার সাথে আমাদের এখন যতটা না আত্মার যোগাযোগ তার চেয়ে বেশি যোগাযোগ- সাইকোলজিকাল। নিউজিল্যান্ড একটা সেকুলার কান্ট্রি। ২০১১ সালে এক মারাত্মক ভূমিকম্প হয় নিউজিল্যান্ড এর ক্রাইস্টচার্চে। এবং অদ্ভুত হলেও সত্য- সেখান মানুষ দের মাঝে হুট করে ধর্ম চর্চা বেড়ে যায় । যদিও বাকি দেশে সেটা বাড়ে নাই।
সো, ধরে নেয়া যায়, আমাদের এই পৃথিবী যেহেতু হুট করে একদিনে ধবংস হবেনা, সো ধর্মের ও একদিনেই বিনাশ হবার পসিবিলিটি অনেক কম।
বরং, ধীরে ধীরে মানব সভ্যতার মত ধর্ম ও বিবর্তিত হবে। আজকের ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম হয়ত থাকবে না আজকের এই অবস্থায় কিন্তু স্পিরিয়ালিটি বা সুপারস্টিশান থেকেই যাবে মানুষের সাইকোলজিকাল মাইন্ডে।
হয়ত, আরেকটা অলাউট নিউক্লিয়ার এটাক বা কোন একটা এস্ট্রোয়েড এর আঘাতে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়ে আবার ফিনিক্স পাখির মত উঠে দাড়ালেও - সেখানেও হয়ত কোন না কোন ভাবে, কোন না কোন ফর্মে ধর্ম আসবেই।
দুর্দশা ও ব্যাথার মাঝে মানুষ কম্ফোর্ট এর খোজ করে, তখন তাদের অবচেতন মন তাদের কে এই বলে সাইকোলজিকাল ভাবে সান্তনা দেয়- হয়ত মৃত্যুর পরে আরো একটা জগত আছে, যেখানে এই কস্ট সইতে হবেনা এবং সেখানে শুধু সুখ আর সুখ।
এটাই মানুষ কে চালিত করবে একদম শেষ দিন পর্যন্ত। এটাই ধর্মের সফলতা। এক রুপে বা এক রুপে ফিরে আসবেই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:৩২