somewhere in... blog

একজন অলকানন্দার সাংস্কৃতিক সংকট

২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নর্থ আমেরিকার কোন এক শহরে আমার প্রিয় বালিকাটি থাকে।

বালিকাটির সাথে আমার পরিচয় ২০০৬এর মাঝামাঝি। সে সময় আমি থাকতাম লন্ডনে, ভিন্ন এক গোলার্ধে, ভিন্ন এক টাইম জোনে। আমাদের দুই শহর, দুই মহাদেশের মাঝখানে বিশাল বিস্তীর্ন আটলান্টিক, সময়ের ব্যাবধান কখনো পাঁচ ঘন্টা- কখনও ছয় ঘন্টা।

বালিকার সাথে আমার পরিচয়-যোগাযোগ-ঘনিষ্ঠতা কোন কিছুই অবশ্য এর জন্য আটকে থাকেনি।

বিগত কয়েক মাস যাবৎ আমি ঢাকায়। ঢাকার সাথে নর্থ আমেরিকার সময়ের ব্যাবধান আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যায় ফেলে দেয়। আমি যখন ঢাকায় ঘুম থেকে উঠে দিনের কাজ শুরু করতে যাই, তখন নর্থ
আমেরিকায় রাত, প্রায় ঘুমাতে যাওয়ার সময়। আমাদের যখন বিকেল বা সন্ধ্যা, আমার বালিকা তখন ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। আমাদের আন্তঃমহাদেশীয় আলাপ প্রলাপ অবশ্য এতে আটকে থাকে না।

বালিকাটিকে একটা নাম দেওয়া যাক- ধরা যাক তার নাম মোসাম্মত কুশুমকুমারী। আমার বালিকা মোসাম্মত কুশুমকুমারী ঢাকারই মেয়ে। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে আটলান্টিকের ওপারে। বন্ধু (বান্ধবী)র সংখ্যা তার খুব বেশী নয়, খুবই নির্বাচিত গুটি কয়েক। আমাদের নিরন্তর গল্পগুজব আর আড্ডাবাজিতে তার নির্বাচিতা এক খুব কাছের বান্ধবীর (সেও ঢাকার মেয়ে) কথা প্রায়ই আসে। কারন সেই বান্ধবীর মন ভাল থাকলে তারও মন ভাল থাকে এবং মন ভাল না থাকলে...... ইত্যাদি ইত্যাদি...।

আমার ব্যাক্তিগত নি্রাপত্তার জন্য এই বান্ধবীরও একটা নাম দেওয়া যাক! কারন আজকের ঘটনা তার এই বান্ধবীকে নিয়েই। ধরা যাক তার নাম মোসাম্মত অলকানন্দা (বিটল ব্লগারগন দয়া করে নামের অর্থ জানতে চাইবেন না, কইতে পারুম না)।

অলকানন্দাও প্রায় ১৫-১৬ বছর যাবত নর্থ আমেরিকায় থাকে, বয়স ত্রিশের এপাশে বা ওপাশে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে নিয়োজিত অলকানন্দার একটা ব্যার্থ বিয়ের ইতিহাস আছে, আর সেই সংক্ষিপ্ত দাম্পত্য জীবনের নিশানা হিসাবে তার পুচ্চি একটা ছেলেও আছে। তো নর্থ আমেরিকার সেই সমাজে আমাদের অলকানন্দার সামাজিক পরিচয় হলো-সে একজন সিঙ্গল মাদার। (আমার এক ভাষাবিদ বন্ধু সিঙ্গল মাদারের বঙ্গানুবাদ করেছে “একলা মা”)

আটলান্টিকের ওপারের সেই শহরে চলাফেরা করার জন্য ব্যাক্তিগত বাহন থাকলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ফলে আর্থিক একটূ টানাপোড়েন থাকলেও অলকানন্দা একটা গাড়ী কিনেছে। একই শহরে অলকানন্দার এক পরিচিত বাঙ্গালী ভদ্রলোকও থাকেন, পেশায় যিনি ব্যাবসায়ী এবং ততটা শিক্ষিত ও পলিসড্‌ নয়--এই ভদ্রলোকের নাম ধরা যাক মোহাম্মদ চেঙ্গিশ খান।

চেঙ্গিশ খান সাহেবেরও ব্যার্থ বিয়ের এক ইতিহাস আছে তবে সে কাহিনী বেশ কিছুটা করুন। চেঙ্গিশ খান সাহেবের বউ কয়েক বছর আগে জুনিয়ার এক বাংলাদেশী স্টুডেন্ট (তার এক সময়ের ভাড়াটিয়া)এর সাথে ঘর ছেড়ে চলে গেছে। যাওয়ার আগে নিয়ে গেছে জয়েন্ট একাউন্টের কয়েক হাজার ডলার। সাধাসিধে ও সহজ সরল চেঙ্গিশ খান ভাইকে বাঙ্গালী সমাজ তাই সহানুভুতির চোখেই দেখে, অলকানন্দাও দেখে। চেঙ্গিশ খান ভাই অটোমোবাইল ভাল বুঝেন, অলকানন্দার গাড়ীটা পুরানো মালিকের কাছ থেকে উনিই কিনে দিয়েছিলেন এবং আসলেই গাড়ীটা বেশ ভাল কন্ডিশন, তেমন মেজর কোন ট্রাবল দেয় না।

এই গাড়ী কেনা ও তৎপরবর্তী কিছু কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে চেঙ্গিশ খান এবং অলকানন্দা এই দুই বঙ্গসন্তানের মাঝে ঘন ঘন কিছু যোগাযোগ গড়ে উঠতে থাকে। বিভিন্ন দরকারে অলকানন্দা তাকে ফোন করে, সাহায্য চায়। চেঙ্গিশ খান উদার হস্তে সহযোগীতা করতেও থাকেন। টেষ্ট ড্রাইভের অবসরে চেঙ্গিশ খান তার প্রাক্তন বউ এর নির্মম নিষ্ঠুরতার কাহিনী বয়ান করতে থাকে আর নির্যাতিত এক পুরুষ হিসাবে অলকানন্দা তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে। আমার বালিকা নিত্যদিন এইসব কাহিনী আমাকে বয়ান করে আর চেঙ্গিশ খানের মহানুভবতার ভুয়ষী প্রশংসা করে।

একদিন শুনি অলকানন্দা মহা আপসেট। তার ভীষন মন মেজাজ খারাপ। কারন কি? আমার বালিকা কুসুমকুমারী আমাকে জানালো- এর কারন হলো জনাব চেঙ্গিশ খান সাহেব।

সেদিন মাঝরাস্তায় অলকানন্দার টায়ার পাঙ্কচার্ড হয়ে গেছে, সে টায়ার বদলানোর চেষ্টা করছে, কিন্ত একটা নাট এমন শক্ত ভাবে এটে গেছে, কিছুতেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। হাল ছেড়ে দিয়ে অলকানন্দা ফোন করে চেঙ্গিশ খানকে ব্রেকডাউন সার্ভিসের কনট্যাক্ট নাম্বারের জন্য। জবাবে চেঙ্গিশ খান সাহেব জানান তিনি কাছাকাছি আছেন এবং নিজেই আসছেন।

অল্প আয়াসেই চেঙ্গিশ খান সাহেব টায়ারটা বদলে ফেলেন। সব কিছু শেষ হয়ে গেলে অলকানন্দা তাকে স্বাভাবিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জানায়, সাথে অনেক অনেক থ্যাঙ্কস। আর তখনই ঘটে সেই হৃদয় বিদারক আপসেটিং ঘটনাটি।

মোসাম্মত কুসুমকুমারী আমাকে জানালো- অলকানন্দার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জবাবে সেদিন নাকি চেঙ্গিশ খান সাহেব কয়েক পা এগিয়ে আসে, তারপর অলকানন্দার গালে টোকা দিয়ে তাকে আদর করে...।

কি শয়তান, কি নচ্ছাড়- কত বড় পাজি!!!

এখন সকাল থেকে আমি পুরা ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করছি। সমস্যাটা কোথায়?

আচ্ছা চেঙ্গিশ খান ভাই যদি সাদা চামড়া হইতো—অলকানন্দা কি একই রকম আপসেট হতো?
প্রায় ১৫-১৬ বছর যিনি নর্থ আমেরিকায় থাকেন- যিনি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেন- তার কি কোন পুরুষকে হাগ (hug) দেওয়ার কোন অভিজ্ঞতা নাই? গালে গাল ছুইয়ে কাউকে শুভেচ্ছা জানান নাই??

যত দোষ আমাদের বাঙ্গালী চেঙ্গিশ খান ভাই সাহেবের?

১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এক ঝাঁক শূন্যতা=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩


আপনজনেরা অপেক্ষার প্রহর গুনে
কার্ডিয়াক হাসপাতালের চেয়ারে বসে,
সব থেকেও যেন কী নেই
এক ঝাঁক শূন্যতা বুকে মানুষগুলো কী উদাস।

কেউ বা সিসিইউতে, কেউ আইসিইউয়ে
হাতে গাঁথা সেলাইনের মালা,
সাদা চাদর গায়ে শুয়ে অপেক্ষায় অনন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×