একজন অলকানন্দার সাংস্কৃতিক সংকট
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
নর্থ আমেরিকার কোন এক শহরে আমার প্রিয় বালিকাটি থাকে।
বালিকাটির সাথে আমার পরিচয় ২০০৬এর মাঝামাঝি। সে সময় আমি থাকতাম লন্ডনে, ভিন্ন এক গোলার্ধে, ভিন্ন এক টাইম জোনে। আমাদের দুই শহর, দুই মহাদেশের মাঝখানে বিশাল বিস্তীর্ন আটলান্টিক, সময়ের ব্যাবধান কখনো পাঁচ ঘন্টা- কখনও ছয় ঘন্টা।
বালিকার সাথে আমার পরিচয়-যোগাযোগ-ঘনিষ্ঠতা কোন কিছুই অবশ্য এর জন্য আটকে থাকেনি।
বিগত কয়েক মাস যাবৎ আমি ঢাকায়। ঢাকার সাথে নর্থ আমেরিকার সময়ের ব্যাবধান আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যায় ফেলে দেয়। আমি যখন ঢাকায় ঘুম থেকে উঠে দিনের কাজ শুরু করতে যাই, তখন নর্থ
আমেরিকায় রাত, প্রায় ঘুমাতে যাওয়ার সময়। আমাদের যখন বিকেল বা সন্ধ্যা, আমার বালিকা তখন ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। আমাদের আন্তঃমহাদেশীয় আলাপ প্রলাপ অবশ্য এতে আটকে থাকে না।
বালিকাটিকে একটা নাম দেওয়া যাক- ধরা যাক তার নাম মোসাম্মত কুশুমকুমারী। আমার বালিকা মোসাম্মত কুশুমকুমারী ঢাকারই মেয়ে। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে আটলান্টিকের ওপারে। বন্ধু (বান্ধবী)র সংখ্যা তার খুব বেশী নয়, খুবই নির্বাচিত গুটি কয়েক। আমাদের নিরন্তর গল্পগুজব আর আড্ডাবাজিতে তার নির্বাচিতা এক খুব কাছের বান্ধবীর (সেও ঢাকার মেয়ে) কথা প্রায়ই আসে। কারন সেই বান্ধবীর মন ভাল থাকলে তারও মন ভাল থাকে এবং মন ভাল না থাকলে...... ইত্যাদি ইত্যাদি...।
আমার ব্যাক্তিগত নি্রাপত্তার জন্য এই বান্ধবীরও একটা নাম দেওয়া যাক! কারন আজকের ঘটনা তার এই বান্ধবীকে নিয়েই। ধরা যাক তার নাম মোসাম্মত অলকানন্দা (বিটল ব্লগারগন দয়া করে নামের অর্থ জানতে চাইবেন না, কইতে পারুম না)।
অলকানন্দাও প্রায় ১৫-১৬ বছর যাবত নর্থ আমেরিকায় থাকে, বয়স ত্রিশের এপাশে বা ওপাশে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে নিয়োজিত অলকানন্দার একটা ব্যার্থ বিয়ের ইতিহাস আছে, আর সেই সংক্ষিপ্ত দাম্পত্য জীবনের নিশানা হিসাবে তার পুচ্চি একটা ছেলেও আছে। তো নর্থ আমেরিকার সেই সমাজে আমাদের অলকানন্দার সামাজিক পরিচয় হলো-সে একজন সিঙ্গল মাদার। (আমার এক ভাষাবিদ বন্ধু সিঙ্গল মাদারের বঙ্গানুবাদ করেছে “একলা মা”)
আটলান্টিকের ওপারের সেই শহরে চলাফেরা করার জন্য ব্যাক্তিগত বাহন থাকলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ফলে আর্থিক একটূ টানাপোড়েন থাকলেও অলকানন্দা একটা গাড়ী কিনেছে। একই শহরে অলকানন্দার এক পরিচিত বাঙ্গালী ভদ্রলোকও থাকেন, পেশায় যিনি ব্যাবসায়ী এবং ততটা শিক্ষিত ও পলিসড্ নয়--এই ভদ্রলোকের নাম ধরা যাক মোহাম্মদ চেঙ্গিশ খান।
চেঙ্গিশ খান সাহেবেরও ব্যার্থ বিয়ের এক ইতিহাস আছে তবে সে কাহিনী বেশ কিছুটা করুন। চেঙ্গিশ খান সাহেবের বউ কয়েক বছর আগে জুনিয়ার এক বাংলাদেশী স্টুডেন্ট (তার এক সময়ের ভাড়াটিয়া)এর সাথে ঘর ছেড়ে চলে গেছে। যাওয়ার আগে নিয়ে গেছে জয়েন্ট একাউন্টের কয়েক হাজার ডলার। সাধাসিধে ও সহজ সরল চেঙ্গিশ খান ভাইকে বাঙ্গালী সমাজ তাই সহানুভুতির চোখেই দেখে, অলকানন্দাও দেখে। চেঙ্গিশ খান ভাই অটোমোবাইল ভাল বুঝেন, অলকানন্দার গাড়ীটা পুরানো মালিকের কাছ থেকে উনিই কিনে দিয়েছিলেন এবং আসলেই গাড়ীটা বেশ ভাল কন্ডিশন, তেমন মেজর কোন ট্রাবল দেয় না।
এই গাড়ী কেনা ও তৎপরবর্তী কিছু কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে চেঙ্গিশ খান এবং অলকানন্দা এই দুই বঙ্গসন্তানের মাঝে ঘন ঘন কিছু যোগাযোগ গড়ে উঠতে থাকে। বিভিন্ন দরকারে অলকানন্দা তাকে ফোন করে, সাহায্য চায়। চেঙ্গিশ খান উদার হস্তে সহযোগীতা করতেও থাকেন। টেষ্ট ড্রাইভের অবসরে চেঙ্গিশ খান তার প্রাক্তন বউ এর নির্মম নিষ্ঠুরতার কাহিনী বয়ান করতে থাকে আর নির্যাতিত এক পুরুষ হিসাবে অলকানন্দা তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে। আমার বালিকা নিত্যদিন এইসব কাহিনী আমাকে বয়ান করে আর চেঙ্গিশ খানের মহানুভবতার ভুয়ষী প্রশংসা করে।
একদিন শুনি অলকানন্দা মহা আপসেট। তার ভীষন মন মেজাজ খারাপ। কারন কি? আমার বালিকা কুসুমকুমারী আমাকে জানালো- এর কারন হলো জনাব চেঙ্গিশ খান সাহেব।
সেদিন মাঝরাস্তায় অলকানন্দার টায়ার পাঙ্কচার্ড হয়ে গেছে, সে টায়ার বদলানোর চেষ্টা করছে, কিন্ত একটা নাট এমন শক্ত ভাবে এটে গেছে, কিছুতেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। হাল ছেড়ে দিয়ে অলকানন্দা ফোন করে চেঙ্গিশ খানকে ব্রেকডাউন সার্ভিসের কনট্যাক্ট নাম্বারের জন্য। জবাবে চেঙ্গিশ খান সাহেব জানান তিনি কাছাকাছি আছেন এবং নিজেই আসছেন।
অল্প আয়াসেই চেঙ্গিশ খান সাহেব টায়ারটা বদলে ফেলেন। সব কিছু শেষ হয়ে গেলে অলকানন্দা তাকে স্বাভাবিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জানায়, সাথে অনেক অনেক থ্যাঙ্কস। আর তখনই ঘটে সেই হৃদয় বিদারক আপসেটিং ঘটনাটি।
মোসাম্মত কুসুমকুমারী আমাকে জানালো- অলকানন্দার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জবাবে সেদিন নাকি চেঙ্গিশ খান সাহেব কয়েক পা এগিয়ে আসে, তারপর অলকানন্দার গালে টোকা দিয়ে তাকে আদর করে...।
কি শয়তান, কি নচ্ছাড়- কত বড় পাজি!!!
এখন সকাল থেকে আমি পুরা ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করছি। সমস্যাটা কোথায়?
আচ্ছা চেঙ্গিশ খান ভাই যদি সাদা চামড়া হইতো—অলকানন্দা কি একই রকম আপসেট হতো?
প্রায় ১৫-১৬ বছর যিনি নর্থ আমেরিকায় থাকেন- যিনি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেন- তার কি কোন পুরুষকে হাগ (hug) দেওয়ার কোন অভিজ্ঞতা নাই? গালে গাল ছুইয়ে কাউকে শুভেচ্ছা জানান নাই??
যত দোষ আমাদের বাঙ্গালী চেঙ্গিশ খান ভাই সাহেবের?
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন