somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ভাই, বিদ্যানন্দকে নিয়ে কিছু বলেন।"

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ভাই, বিদ্যানন্দকে নিয়ে কিছু বলেন।"
- যেহেতু ফেসবুকে এখন হট টপিক, এবং সবাই সবার পয়েন্ট অফ ভিউ শেয়ার করছেন, তাই কেউ কেউ আমার দৃষ্টিকোণও জানতে আগ্রহী।
সমস্যা হচ্ছে, আমি ওদের কাউকেই পার্সোনালি চিনিনা, কাজেই গলা ফাটায়ে বলতে পারবো না ওরা দোষী, কিংবা নির্দোষ। এইসব ব্যাপারে আমি ট্র্যাডিশনাল। আপনার অভিযোগ আছে? বিচার দিন। তদন্ত হোক। তথ্য প্রমান নিয়ে ঘাটাঘাটি হোক। বিচারক বলুক দোষী কিংবা নির্দোষী। তারপরে দোষী সাব্যস্ত হলে তখন আমি বলবো দোষী, নির্দোষ প্রমাণিত হলে বলবো নির্দোষ। ফেসবুক কোন বিচারালয় না।

আমি জানি, এই দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই মাল মশলাহীন। পাবলিক চায় উত্তেজনা, ইমোশন, অ্যাকশন, ড্রামা, সাসপেন্স ইত্যাদি। তা ওটা যারা পছন্দ করে, ওদের মোবারক!
আমি বরং ওভারঅল বিষয়টা নিয়ে কিছু বলি। এই কথাগুলো আপনাদের সবারই জানা জরুরি।

বেশ কিছু চ্যারিটি প্রোগ্রামের সাথে আমি জড়িত আছি। নর্থ আফ্রিকার আমুদ ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়ায় নওয়াবস কিচেন বা বাংলাদেশের স্পৃহা এগুলির মধ্যে প্রধানতম। আমুদ মূলত ফোকাস করে আফ্রিকার হর্ন নামে পরিচিত সোমালিয়া ও আশেপাশের এলাকাগুলিকে, যেখানে হয় দুর্ভিক্ষ হয়, নাহয় বন্যা হয়, নাহয় কিছু না কিছু হবেই যে ঘটনাগুলো দেখলে ভাবি আমরা জীবনে কি নিয়ে কমপ্লেন করি? সিরিয়াসলি, আপনি জানেন, আফ্রিকার অনেক গ্রামে বাচ্চারা খুদা মেটাবার জন্য মাটির তৈরী বিস্কিট খায়? হাসিমুখে ওদের মাটির বিস্কিট খাওয়া দেখলে জীবন সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায়।
আমরা চৌদ্দ পনেরো ঘন্টা রোজা রাখতে গেলেই হৈচৈ শুরু করে দেই, ওদের লোকজন জানতে চায় "যদি সেহরিতে কিছু না খাই, এবং ইফতারেও কিছু না খাই, এবং এমনটা এক দুইদিন টানা চলে, তাহলে কি আমাদের রোজা হবে?"
নওয়াবস কিচেনের নওয়াব একজন বাবুর্চি। সে বিশালাকৃতির ডেকচিতে ম্যাসিভ এমাউন্টে রান্না করে ইউটিউবে দেয়। যারা রেসিপি দেখার তারা দেখলো। এবং রান্না করা খাবার এরপরে এতিম বাচ্চাদের খাওয়ায়। আপনি ইচ্ছা করলেই প্যাট্রন হতে পারেন, কিংবা স্পন্সর হতে পারেন। ওদের মোটো হচ্ছে "ক্ষুধার কোন ধর্ম নেই।"
স্পৃহার কথাটাও বলা যাক। স্পৃহার মূল উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই। বস্তির লোকজনকে স্কিলফুল লেবার বানিয়ে বস্তি থেকে বের করা - যাতে ওরা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে। এ নিয়ে কাজ করতে করতে খেয়াল হলো ওদের চিকিৎসারও প্রয়োজন। কারন সবাই খাদ্য বস্ত্র দান করে, কেউ কেউ চ্যারিটি স্কুলও খুলে বসে, চিকিৎসায় ওরা সেভাবে সেবা পায় না। স্পৃহা ফোকাস করলো চিকিৎসায়।

এখন সব ক্ষেত্রেই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সাহায্য করা। টার্কির অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে হবে? সিরিয়ার রিফিউজিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে? ফিলিস্তিনি ভাইদের পাশে দাঁড়াতে হবে? মানুষের সমস্যা ও অসুবিধার অভাব নেই। সাহায্য পেলেই হলো, আমার মাধ্যমেই যে পেতে হবে, তা কিন্তু না। এইটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
ডালাসের শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে হোমলেসরা। ওদেরকে গরম কাপড় দিতে হবে। সাথে উষ্ণ খাবারের সংকটতো আছেই। বাজেট শর্ট। গেলাম আরেকটু বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেখানকার চ্যাংড়া পোলা বলল, "আমরা সাহায্য করতে পারি, কিন্তু আমাদের লোগো সেখানে যেতে হবে।"
খুবই বিরক্ত হলাম। এই ব্যানার ফ্যাস্টুন টাঙিয়ে দান খয়রাত করা বিষয়টাই আমি দুইচোখে দেখতে পারি না। ওসব তৈরির টাকায় আরও কিছু মানুষের উপকার হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মিস্টার শিন্ডলার জার্মান সেনাদের ঘুষ দিয়ে দিয়ে নির্যাতিত ইহুদিদের মৃত্যুর মুখে থেকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচাতেন। অবশেষে যখন বার্লিনের পতন ঘটে, এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ উদ্ধার হয়, একদম ক্লাইমেক্সে এসে তিনি ভেঙ্গে পড়েন। "এই যে আমার গাড়িটা, এর বিনিময়েতো আরও চার পাঁচজনের প্রাণ রক্ষা হতো! এই যে এটা, এর বিনিময়ে আরও কিছু!"
আমার ব্যক্তিগত ফিলোসফিও সেটাই। দানের প্রতিটা পাই পয়সা যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে আজাইরা অ্যাকশনে টাকা নষ্ট খুবই বিরক্তিকর।
তবে হ্যা, এইসব অ্যাকশন না করলে লোকে আবার বিশ্বাস করতে চায়না ওদের টাকা আসলেই দুস্থদের দান করা হয়েছে কিনা। সবাই প্রমান চায়। এবং অবশ্যই প্রমানের দরকার আছে। মানুষকে বিশ্বাস নেই।

তো যা বলছিলাম। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ডালাসের অসহায় গৃহহীনদের শীতবস্ত্র এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করো। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আফ্রিকার শিশুরা যেন মাটির বিস্কিট না খেয়ে বড় হয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এতিম খানার শিশুরা ভাল খাবার খাক, বাংলাদেশের বস্তিবাসী যেন বস্তিতে না থাকে, তাঁরা যেন অতি দ্রুত উন্নত জীবনের ছোঁয়া পায়। কে দিল, কিভাবে দিল সেটাতে আমার কি আসে যায়? ওরা উপকার পেলেই হলো। এই দুনিয়ার মানুষ বিনিময় হিসেবে আমাকে কি ঘোড়ার আণ্ডাটা দিবে? আমিতো আমার মালিকের কাছ থেকে বিনিময় নিব। তোরা লোগো নিয়েই খুশি থাক।

ঠিক এই বিষয়টাই মিসিং দেখি। আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন চালায় আহমদ উল্লাহ হুজুর। ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, তবে ওনার কিছু কথাবার্তা শুনেছি। লোকটাকে শ্রদ্ধা করি, এবং বাংলাদেশের অনেক ভন্ডের ভিড়ে উনাকেই আমি "আলেম" হিসেবে মানি। ড আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ভাবশিষ্য বলে শুনেছি, সেটা বুঝা যায়।
তা আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ফিলোসফি আছে, নিঃসন্দেহে তাঁরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে এবং আমাকে কি কোথাও কেউ দেখাতে পারবেন যে ওরা কোথাও অভিযোগ করেছে যে লোকে ওদের টাকা দিচ্ছে না কেন? সবাই কেন বিদ্যানন্দকে দিয়ে দিচ্ছে? না। ওরা কোন পলিটিক্যাল দল না যে "আমরা জনতার সেবা করতে চাই" - বলে হরতাল ডাকবে, জনতারই সম্পদ ভাংচুর করবে।
যেহেতু একজন জেনুইন আলেম এই ফাউন্ডেশন চালান, তিনি জানেন, এইসবের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ। আপনার পাতে ততটুকুই খাবার আসবে যেটুকু আপনার ভাগ্যে লেখা আছে। অমুকের ষড়যন্ত্র, তমুকের ষড়যন্ত্র, অমুক তমুক না থাকলে আমি বড়লোক হয়ে যেতাম ইত্যাদি সব ফালতু ধারণা। আমি লিখে দিতে পারি, আহমাদুল্লাহ হুজুরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় অমুক জায়গায় অমুক মানুষকে বিদ্যানন্দ সাহায্য করেছে, আপনি কি খুশি? তিনি জবাবে আলহামদুলিল্লাহ বলে অন্যান্য আরও একশজন, যাদেরকে বিদ্যানন্দ, স্পৃহা বা কোন প্রতিষ্ঠান সাহায্য করেনি, ওদের দিকে ফোকাস করবেন।
হ্যা, আধ্যাত্মিক জেলাসি একটা অবশ্যই কাজ করবে, "আমি কেন করতে পারলাম না! ওর পুণ্যের ভাগটা নিয়ে গেল।"

কাজেই আস সুন্নাহকে বিদ্যানন্দের প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করিয়ে বেহুদা একটা কাল্পনিক রাইভালরি তৈরী করেছে ফেসবুকের উৎসুক জনতা। এবং দুই পার্টি একে অন্যকে গালাগালি করছে।
এখন ধরা যাক বিদ্যানন্দ দোষী সাব্যস্ত হলো। যারা বিদ্যানন্দের ফ্যান, ওরাতো মর্মাহত হবেই। কিন্তু যেহেতু আস সুন্নাহকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, কাজেই ওখানেও ওরা সাহায্য পাঠাবে না। মাঝে দিয়ে লসটা কাদের হলো বলেনতো?
আমাদের প্রব্লেমটা হচ্ছে আমাদের মাইন্ড, ফোকাস ইত্যাদি অতি narrow. বৃহত্তর স্বার্থ বিষয়টা আমাদের মাথাতেই ঢুকে না। চ্যারিটি অর্গানাইজেশনগুলো একে অপরের হাতে হাত রেখে চলতে হয়।
কোন বন্যা দুর্গত এলাকায় দৃশ্যপট এমন হবার কথা যে এক সংগঠন আরেকটাকে বলছে, "ভাই, আমি আমার নৌকা নিয়ে ওখানে যেতে পারছি না, তোর হেলিকপ্টার আছে, তুই যাবার সময়ে আমার ত্রাণটাও পৌঁছে দিস।"
ভাল লাগে না? সেটাই কিন্তু হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এদিকে ড্রয়িংরুমে বসে ফেসবুক চালানো ফ্যানরা কামরা কামড়ি করে মরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:১০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০

একজন লেখক যখন কোন কিছু লিখেন, তিনি কিছু বলতে চান বলেই লিখেন। বলাটা সব সময় সহজ হয় না, আবার একই কথা জনে জনে বলাও যায় না। তাই লেখক কাগজ কলমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওয়াকফ: আল্লাহর আমানত নাকি রাজনীতির হাতিয়ার?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


"একদিকে আমানতের আলো, অন্যদিকে লোভের অন্ধকার—ওয়াকফ কি এখনও পবিত্র আছে?"

আমি ইকবাল হোসেন। ভোপালে বাস করি। আমার বয়স প্রায় পঁইত্রিশ। জন্ম থেকে এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই আমাদের চার পুরুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×