সালঃ ১৯৫০
পরিচালকঃ জ্যাক লি
অভিনয়ঃ লিও জিন, এ্যান্থনি ষ্টিল, ডেভিড টমিলসন
কিছু কথাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এরিক উইলিয়ামস ছিলেন রয়্যাল এয়ারফোর্সের পাইলট। জার্মান প্রিজন ক্যাম্প ‘ষ্ট্যালাগ লাফট ৩’ থেকে তার পালিয়ে যাবার কাহিনী নিয়ে ১৯৪৯ সালে তিনি লেখেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্যা উডেন হর্স’। এই বইয়ের কাহিনীর উপর নির্ভর করেই নির্মিত হয়েছে এই মুভিটি।
‘ষ্ট্যালাগ লাফট ৩’ এমনভাবে তৈরী করা হয়েছিল যেন সেখান থেকে পালানো সম্ভব না হয়। ক্যাম্পের সীমানা ছিল ঘরগুলো থেকে বেশ দূরত্বে যেন পালানোর জন্য লম্বা টানেলের দরকার হয়। আবার ঐ এলাকার শুকনো আর ভিজা মাটি দেখতে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তাই টানেল খুঁড়ে সেই মাটি অন্য জায়গায় মিশিয়ে ফেলা কঠিন ছিল। এছাড়াও টানেল খোঁড়ার ফলে যে কম্পন সৃষ্টি হয় সেটা টের পাবার জন্য জার্মানরা সিসমোগ্রাফ ব্যাবহার করত। সেজন্য টানেল খোঁড়া ছিল প্রায় অসম্ভব।
পিটার এবং জন পরিকল্পনা করে একটা কাঠের ঘোড়া বানানোর, যেটা দিয়ে সবাই শরীরচর্চা করবে, আর তার ভেতর লুকিয়ে থাকা একজন টানেল খুঁড়তে থাকবে। এটা করার সময় তারা ঘোড়াটাকে বসাবে সীমানার কাছাকাছি কোথাও এবং সেটাই হবে তাদের টানেলের মুখ। এতে করে টানেল বেশী লম্বা করতে হবে না আর সবার লাফালাফিতে ঢাকা পড়ে যাবে তাদের টানেল খোঁড়ার কম্পন। এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন। টানেল খোঁড়ার শেষের দিকে এসে তাদের সাথে যোগ দেয় আরেকজন বন্দী।
এই মুভিটা একটা ব্রিটিশ মুভি। আসল ঘটনার মাত্র ছয় বছর পরেই এই কাহিনী লেখেন উইলিয়ামস আর তার এক বছর পরেই তৈরী হয় মুভিটি। জার্মান ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাবার কাহিনী নিয়ে এটাই প্রথম মুভি কিনা আমি নিশ্চিত নই কিন্তু প্রথম কয়েকটির মধ্যে যে এটি একটি এটা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায়। আরেকটি বিষয় হল ‘দ্যা গ্রেট এস্কেপ’ মুভিতে যে ক্যাম্প দেখান হয়েছে এটা এই একই ক্যাম্পের কাহিনী। এই ঘটনার দুই বছর পরেই সংঘটিত হয়েছিল সেই গ্রেট এস্কেপ।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট
ষ্ট্যালাগ সেভেনটিন
সালঃ ১৯৫৩
পরিচালকঃ বিলি ওয়াইল্ডার
অভিনয়ঃ উইলিয়াম হোল্ডেন, ডন টেইলর
কিছু কথাঃ জার্মান ভাষায় ‘ষ্ট্যালাগ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘ক্যাম্প’ বা ‘বেস ক্যাম্প’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘ষ্ট্যালাগ’ বলতে মূলতঃ ‘যুদ্ধবন্দী ক্যাম্প’ বুঝান হত । এই মুভিটির কাহিনী নেয়া হয়েছে ব্রডওয়ে থিয়েটারের একটা নাটক থেকে।
প্রিজন ব্রেক হিসেবে এই মুভির কাহিনীটা কিছুটা ভিন্ন জাতের। মুভিটির চিত্রনাট্য লেখেন ডোনাল্ড এবং এডমন্ড নামের দুই জন যারা অষ্ট্রিয়ার ষ্ট্যালাগ ১৭’বি’ ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন। যে ব্যারাকের বন্দীদের নিয়ে কাহিনী, তারা সবাই আমেরিকান এয়ার ফোর্সের সদস্য।
মুভির শুরুতে দেখা যায় টানেল দিয়ে একটা পালানোর চেষ্টা চলছে। পালাচ্ছে একসাথে দুইজন – ম্যানফ্রেডি এবং জনসন। তারা বের হয়ে যাবার পরই সেফটন তাদের পালানোর সফলতার বিপক্ষে বেট রাখতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণ পরে বাইরে গুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনাক্রমে দেখা যায় যে তাদের এই পালানোর পরিকল্পনার কথা আর সেই টানেলের কথা জার্মানরা আগে থেকেই জানত। তাদের নিজেদের মধ্য থেকে কেউ তথ্য পাচার করে এমন সন্দেহ হতে থাকে সবার। ক্যাম্পের ভেতরেও বিলাসবহুল জীবনের কারণে সন্দেহের শুরুতে থাকে সেফটন এর নাম। এরপর তাদের গোপন রেডিওর কথাও জার্মানরা জেনে ফেলার পর আর সেদিনই সেফটন রাশিয়ান ফিমেল ক্যাম্পে পার্টি করে আসলে তাদের সন্দেহ সম্পূর্ণতা পায়। উত্তম-মধ্যম খাওয়ার পর সেফটন প্রতিজ্ঞা করে এই তথ্য পাচারকারীকে খুঁজে বের করার।
এই মুভির ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমে আসবে উইলিয়াম হোল্ডেন এর অসাধারণ অভিনয়ের কথা। এই মুভিতে অভিনয়ের জন্য তিনি অস্কার পুরষ্কার জিতে নেন। আর এই মুভিটার মধ্যে অনেক মজার জিনিস আছে, একবার দেখতে বসে গেলে না দেখে উঠে যাওয়া মুশকিল। পুরোটা সময় সমান আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে মুভিটা।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট
কুল হ্যান্ড লুক
সালঃ ১৯৬৭
পরিচালকঃ ষ্টুয়ার্ট রোসেনবার্গ
অভিনয়ঃ পল নিউম্যান, জর্জ কেনেডি
ট্যাগলাইনঃ The man…and the motion picture that simply do not conform.
কিছু কথাঃ ডন পিয়ার্সের ১৯৬৫ সালের নভেল ‘কুল হ্যান্ড লুক’ হচ্ছে এই মুভিটির কাহিনীর মূল ভিত্তি। পার্কিং মিটারের পাইপ কাটার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় লুকাস জ্যাকসনকে। দেওয়া হয় ফ্লোরিডা প্রিজন ক্যাম্পে দুই বছরের কারাদন্ড। ক্যাম্পের অঘোষিত হিরো ড্রাগলাইনের সাথে কথা-কাটাকাটির ফলে তাদের মধ্যে একটা বক্সিং ম্যাচ হয়। যেটাতে লুক জিততে না পারলেও ড্রাগলাইন তাকে নক-আউট করতে পারে না। এরপরে পোকার খেলার সময় লুক কোন ভাল কার্ড ছাড়াই সেটা জিতে নেয়। এভাবে লুক সবার মধ্যে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করে। এর ফলে তার নাম হয়ে যায় ‘কুল হ্যান্ড লুক’। এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছিল কিন্তু মা’র মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে লুক পালানোর চেষ্টা করতে থাকে, আর প্রতি চেষ্টার সাথে বাড়তে থাকে শাস্তির প্রকোপ।
এই মুভির ব্যাপারে যেটা বলার সেটা হল, এই মুভিটার ব্যাপারে লিখে প্রকাশ করতে আমি বেশী যুৎ পাচ্ছিনা। পুরো মুভিটা ফিল করার ব্যাপার, ভাষায় প্রকাশ করাটা কঠিন বলে মনে হচ্ছে আমার। মুভিতে পল নিউম্যান এর অভিনয় অসাধারণ, পুরষ্কার হিসেবে অস্কারও জিতে নিয়েছিলেন সেবার। আর মিউজিকগুলোও খুব বেশীরকম ভাল লেগেছে আমার।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট এবং ষ্টেজভ্যু
মিডনাইট এক্সপ্রেস
সালঃ ১৯৭৮
পরিচালকঃ অ্যালেন পার্কার
অভিনয়ঃ ব্র্যাড ডেভিস, পাওলো বোনাকেল্লি
ট্যাগলাইনঃ The Story of Triumph!
কিছু কথাঃ এই মুভিটা একটি সত্য ঘটনা নিয়ে তৈরী। বিলি হায়েস এর ১৯৭৭ সালে লেখা বই ‘মিডনাইট এক্সপ্রেস’ অনুসারে এটি নির্মিত। চিত্রনাট্য লিখেছেন বিখ্যাত পরিচালক অলিভার ষ্টোন এবং তিনি এজন্য অস্কারও জেতেন।
ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে দুই কেজি ‘হাশিস’ সহ ধরা পড়ল আমেরিকান ছাত্র বিলি হায়েস। এজন্য তাকে জেলে পাঠানো হল দুই বছরের জন্য। জেলের ভেতর বিভিন্ন অত্যাচার সহ্য করে সে দিন গুনতে লাগল তার মুক্তির দিনের। কিন্তু মুক্তির আর মাস দুয়েক বাকী থাকতে তাকে আবার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল, এবার তার শাস্তির সময়কাল বদলিয়ে ৩০ বছর করা হল। সে প্রথমে অনেকের সাথে পরিকল্পনা করে পালানোর চেষ্টা করতে লাগল। নানানভাবে ব্যার্থ হয়ে শেষে কিছুটা পাগলের মত হয়ে গেল। অবশেষে পাচঁ বছর কারাভোগ করার পর সে পালাতে সমর্থ হয়।
এই মুভিটি ভয়ানকভাবে বিতর্কিত একটি মুভি। অনেকের মতে এই মুভিতে তুর্কীদের খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিলি হায়েসেরও একই মত। তিনি আবার ২০০৪ সালে তুরস্ক গিয়ে এজন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন। এই মুভি রিলিজ হওয়ার পর তুরস্কতে ট্যুরিষ্টের সংখ্যা ভয়ানকভাবে কমে গিয়েছিল সেইসময়। মুভিটা দেখে এইসব ঘটনা জানার আগ্রহ সৃষ্টি হলে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন, অনেক আর্টিকেল আছে এইসব ঘটনা নিয়ে।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট এবং ষ্টেজভ্যু
দ্যা কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিষ্টো
সালঃ ২০০২
পরিচালকঃ কেভিন রেনল্ডস
অভিনয়ঃ জেমস্ কেভিজেল, গাই পিয়ার্স, রিচার্ড হ্যারিস
ট্যাগলাইনঃ Prepare for adventure. Count on revenge.
কিছু কথাঃ এই মুভিটি তৈরী হয়েছে আলেকজান্ডার ডুমা’র ১৮৪৪ সালের বিখ্যাত নভেল ‘দ্যা কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিস্টো’ অনুসরণে।
এডমন্ড দান্টেস্ আর ফারনার্ড মন্ডেগো দুই নাবিক ছিল ঘনিষ্ট বন্ধু। কিন্তু এডমন্ডের প্রেমিকাকে না পাওয়ার ব্যর্থতা আর তার জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়ে যাওয়ার সাফল্যে ফারনার্ডের ঈর্ষান্বিত হওয়ার মধ্য দিয়েই চলতে শুরু করে এই মুভিটি। ছোট্ট একটি সুযোগ পেয়েই বিভিন্ন কলা-কৌশলে এবং এক উচ্চভিলাষী বিচারক ভিলেফোর্টের সাহায্যে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ এনে এডমন্ডকে একটি দূর দ্বীপের জেলখানায় পাঠিয়ে দিতে সমর্থ হয় সে। সাথে সাহায্য পায় সেই জাহাজের ফার্স্ট মেট ড্যাংলার্সের। পরে সে এডমন্ডের প্রেমিকা মার্সেডেসকে বলে যে তার প্রেমিকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
এই গল্পকে মুভির রূপ দেওয়া এটাই প্রথম নয়। প্রথম মুভিটি তৈরী হয় ১৯০৮ সালে যেটা ছিল নির্বাক চলচিত্র। এরপর একই নামে এই ফিল্মটি তৈরী হয় মোট দশবার। ২০০২ সালেরটি হল এর দশমতম সংস্করণ।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট
মুভিগুলো আপনাদের ভাল লাগলে আমার কষ্ট সার্থক হবে।
১ম কিস্তি দেখতে চাইলেঃ ভাললাগা ৫টা প্রিজন ব্রেক মুভিঃ ব্রেসো থেকে বর্তমান
২য় কিস্তি দেখতে চাইলেঃ ভাললাগা ৫টা প্রিজন ব্রেক মুভিঃ ষ্টুর্গেস থেকে বর্তমান (২য় কিস্তি)
৩রা ডিসেম্বর, ২০১১, ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪১