আমার অনেক প্রতীক্ষিত পোস্ট, কিছু প্রিয় ব্লগারদের নিয়ে 'কাব্য-রম্য' নাটিকা- "সামু রাজার দ্যাশে" । পূজো-ঈদ ধামাকায় এক নির্দোষ বিনোদন প্রচেষ্টা । নাটিকার কারেক্টার সবাই বাস্তবের ব্লগার, কিন্ত তাদের সব সংলাপ কাল্পনিক । তাদের কোন সংলাপ বাস্তবের সাথে মিলে যাওয়া নিতান্তই কাকতাল । আশা করি ব্যাপারটাকে আপনারা সবাই নির্মল আনন্দ হিসাবে উপভোগ করবেন ।
ব্লগারস 'স্যাটেয়ার ড্রামা': সামু রাজার দ্যাশে ।
দৃশ্যঃ এক
সামু'ডে উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজন, পাঁচতারা সামুইন বলরুমে । বর্ণিল আলোক সজ্জা আর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রঙিন পানীয় ভর্তি হলরুমে গোল গোল টেবিলে ভাগ হয়ে আড্ডা দিচ্ছে ব্লগাররা । স্টেজে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় ব্লগ মালেকিন 'জানা' আর মডু 'অন্যমনস্ক শরৎ' ।
ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে সামু সংগীত,
"আমরা সামুর ব্লগার
ব্লগাবোই ব্লগাবোই ব্লগাবোই
লুল-সুশীল সব এক সাথে
ব্লগাবোই ব্লগাবোই ব্লগাবোই..."
ব্লগার কৌশিকঃ(মাইক্রোফোন হাতে) হ্যালো হ্যালো টেস্টিং, ওয়ান-টু পোস্টিং । ব্লগারস রেস্টিং, সামু'স বেস্টিং । হ্যালো হ্যালো.., ধুর মাইকের কি হলো ? ডিজগাস্টিং...
হঠাৎ একটা টেবিল ঘিরে উত্তেজনা শুরু হয় এবং সেখানে সবাই ভিড় জমাতে থাকে । ভিড়ের ভিতরে ব্লগার পরিবেশ বন্ধু ব্যাঙের মত ক্রমাগত লাফাচ্ছে, আর কয়েকজন তাকে পেছনদিকে চেপে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে । ঝাটকা মেরে সবাইকে ছাড়িয়ে পরিবেশ বন্ধু এক লাফে টেবিলের উপর উঠে যায় । তারপর স্টেজের দিকে তর্জনি উঁচিয়ে গগন বিদারি চিৎকার দিয়ে বলে,
ম-ডু... সা..ব..ধা..ন....
বন্ধুর ধমক হলরুমের দেয়ালে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, কয়েকটা ঝালরবাতি আচমকা সিলিং থেকে ফ্লোরের উপর ভেঙ্গে পড়ে । তারপর পুরো হলরুম নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়..
স্টেজের দিক থেকে একটা চাপা হই-হুল্লোর ভেসে আসে,
জানাঃ শরৎ! শরৎ! আমাকে ফেলে যাচ্ছ কোথায় একা ?
অন্যমনস্ক শরৎঃ মাথায় যেন বাজ পড়েছে, হার্ট ফেইল পাকা ।
যদি বাইচ্যা থাকি আপা, আবার হবে দেখা ।
কৌশিকঃ কনে! কনে! কনে পালাই! হেতায় না হোতায়!
জানাঃ ও আরিল্ড! ও আরিল্ড! তুমি কোথায়...?
(তিনজন পড়িমরি করে দৌড়ে হলরুম থেকে প্রস্থান করে)
দৃশ্যঃ দুই
মডুবিহীন হলরুম জুড়ে বিশৃঙ্খলা । ক্যাচাল-গালিবাজি-ফ্লাডিং-লুলামি চরম সীমায় ।
কয়েকজন মুটু ব্লগার পরিবেশ বন্ধু'কে পাঁজাকুলো করে তুলে এনে মাইক্রোফোন স্ট্যান্ডের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে শুইয়ে রেখেছে ।
মাইকে জিকির ভেসে আসছে "হক মাওলা, মডু সাবধান.."
স্টেজে সামুর ভবিষ্যত নিয়ে সিনিয়র কয়েকজন ব্লগার আলোচনায় বসেছে ।
আমিনুর রহমানঃ গরু খোঁজা করেও পেলাম না কোন মডু ।
সামু যেন গরুর হাট, মাঠ হা-ডু-ডু ।
আরজুপনিঃ আমায় সবাই মডু বলে করে তিরস্কার ।
আমার কি হবে এখন, বন্ধু যদি পায় ছাড়!
হাসান মাহবুবঃ আফা আপ্নে ডরায়েন না, আমরা সাথে আছি না!
আটিয়া নানান ফন্দি, বন্ধুরে করিয়াছি শিকলবন্দি ।
রেজোওয়ানাঃ মাম্মা পনি! মডু মডু ভাব লও, এখন কেন কাঁদুনি!
হাসান মাহবুবঃ রেজু মাম্মা! পিলিজ, এমন বলে না!
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ বাহ! চমৎকার!
এই দুটো শব্দ আমার অলংকার!
ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাই সর্বজনে
আমায় দিয়েছ স্থান, মডুদের সনে ।
এই মুহূর্তে দরকার, 'হেড মডু' সরকার
চলো নেমে পড়ি 'হেড মডু' নির্বাচনে ।
হাসান মাহবুবঃ ধন্যবাদ কাল্পনিক!
'হেড মডু' হিসাবে পনি আফা ঠিক!
শায়মাঃ ভাইয়ামনি! এ কি কথা বললে শুনি!
আগে ঠিক করা চাই 'হেড মডু'র ক্রাইটেরিয়া
কমেন্ট নাকি হিট গুনবে, ডিসিশন নাও সবে মিলিয়া ।
(হঠাৎ 'একজন আরমানের প্রবেশ)
একজন আরমানঃ রাগছো কেন শায়মামনি?
কে তোমায় কি বলেছে? কার এত সাহসখানি!
একবার শুধু নামটা বল, খোমা সহ তুলে আনি!
কান্ডারী অথর্বঃ তুমি কেন এখানে বাপু! বড়দের মাঝে..
টিনেজ ব্লগার সামলাও, মন দাও নিজের কাজে ।
একজন আরমানঃ এ্যাহ! হইছে নয়া মডু, ভাবের নাহি শেষ,
এইরাম ভাব পুছিনা মুই, বরিশাল মোর দেশ ।
(একজন আরমানের প্রস্থান)
জুনঃ ঘুরিয়াছি পৃথিবীময়, দেখিয়াছি কত দেশ
মঙ্গল গ্রহে যাব এবার, হইয়াছে খায়েশ ।
তোমাদের দুলাভাই, বড়ই বেয়ারা
হয় না রাজি, টাইট দিব কি দ্বারা?
কান্ডারী অথর্বঃ এইডা কুনু বিষয় আপা ?
পরিবেশ বন্ধুরে দেখেন, ভেঙ্গে গেছে চাপা ।
এইভাবে দুলাভাইকেও বাঁধেন শিকল দিয়া
সুড়সুড় করে রাজি হবে, যাবে মঙ্গলে নিয়া ।
রেজোওয়ানাঃ মাম্মারা, আলাপ গুরুতর অতি
আলগা প্যাচালে নাহি সম্মতি ।
ব্লগের পরিবেশ ঠিক যাবে পাল্টে
'হেড মডু' সিলেক্ট কর গোপন ব্যালটে ।
শায়মাঃ রেজুমনি! মনের কথা বলেছ আপুনি ।
হোক গোপন ব্যালটে ভোট এখনি ।
আমিনুর রহমানঃ মডু না হয়েও সয়েছে ম্যালা গঞ্জনা
আরজুপনি ছাড়া হেড-মডু মানি না ।
মামুন রশিদঃ সিদ্ধান্ত হোক ভেবে ধীরে, আমি একটু আসছি ঘুরে..
(মামুন রশিদ উঠে চলে যায় । আলোচনা চলতে থাকে)
দৃশ্যঃ তিন
(হলরুমের কোনায় মামুন রশিদ, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, দলছুট শুভ, জনৈক গণ্ডমূর্খ, নিয়েল হিমু গোপন আলোচনায় ব্যস্ত)
মামুন রশিদঃ মন্ত্রী, দলছুট, গণ্ড, নিয়েল সবাই শোন !
হেড-মডু হবে আরজুপনি, এটা আমরা মানব কেন ?
নিয়েল হিমুঃ কোথায় আরজুপনি ? ওরে ডেকে আনি!
মামুন রশিদঃ আরজুপনি'র খোজ পরে নিব ।
এখন চল, আমরা সামু দখল করব । আমি সামুর রাজা হব ।
মাননীয় মন্ত্রীঃ আমার কোন প্রমোশন হবে?
নাকি মন্ত্রী মন্ত্রীই থেকে যাবে?
দলছুট শুভঃ মন্ত্রী তো আছেই মন্ত্রী! আমার পাতে কিছু পড়বে কি?
নিয়েল হিমুঃ শুরু হয়ে গেছে খাই খাই । আমার শুধু ব্ল্যাকবক্স চাই ।
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ মূর্খ হিমু!
সামু কি উড়োজাহাজ, যে তোরে ব্ল্যাকবক্স দিমু ।
নিয়েল হিমুঃ তুই গণ্ড গণ্ডই থাকবি, ব্ল্যাকবক্সের কাহিনী তুই না বুঝবি!
মামুন রশিদঃ এখন ফ্যাসাদের সময় না ভাই সকল ।
করিতে হবে সামু দখল । সেনাপতি হিমু এগিয়ে চল!
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ সেনাপতির অস্ত্রপাতি কিছু কি আছে?
নাকি বুক পকেটের দাঁত খিলানি সম্বল পাছে!
মাননীয় মন্ত্রীঃ সেনাপতি হিমু এগিয়ে চল! দাঁত খিলান উঁচিয়ে চল!
(এই পাঁচজন হলরুমের কোনা থেকে নিয়েল হিমুর নেতৃত্বে হৈহৈরৈরৈ করে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল)
মামুন রশিদঃ মাননীয় মন্ত্রী, মাইকে ঘোষণা দাও সোজা,
আমি এখন সামুর নতুন রাজা ।
মাননীয় মন্ত্রীঃ মাইক তুলতে পারছি না কেন হিমু দাদা?
একি! মাইকের সাথে দেখি পরিবেশ বন্ধু বাঁধা!
মামুন রশিদঃ সেনাপতি...!
নিয়েল হিমুঃ ঐ গণ্ড, দলছুট তোরা ধর, পরিবেশ বন্ধুরে তুইলা খাড়া কর!
(গণ্ডমূর্খ আর দলছুট মিলে পরিবেশ বন্ধুকে টেনেহেচড়ে তুলে দাঁড় করিয়ে রাখে । পরিবেশ বন্ধুর সাথে সাথে মাইক স্ট্যান্ডও দাঁড়িয়ে যায় । পরিবেশ বন্ধু মুখে ম..ম.. করতেই সেনাপতি নিয়েল হিমু এক হাতে তার মুখ চেপে ধরে, আরেক হাতে দাঁত খিলান উঁচিয়ে ধরে বন্ধুর চোখের সামনে ।)
মাননীয় মন্ত্রীঃ হ্যালো হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং, আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলছি, হ্যালো হ্যালো, আমি মাননীয় মন্ত্রী..
নিয়েল হিমুঃ যেই চান্স পাইলি, অমনি নিজের ঢোল পেটানো শুরু করলি..
মাননীয় মন্ত্রীঃ চুপ সেনাপতি! আমি মাননীয় মন্ত্রী, হ্যালো হ্যালো..
মামুন রশিদঃ মন্ত্রী, এবার আসল কথাটা বলো ।
(মাইকটা নিয়ে) হ্যালো ব্লগারস! আমি মামুন রশিদ । আজ থেকে আমি সামুর মালিক । আমি সামুর রাজা । তোমরা আমার প্রজা ।
মাননীয় মন্ত্রীঃ শুধু নিজের গানই গাইবেন?
আমাদের কথাও কিছু বলেন..
মামুন রশিদঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, মাননীয় মন্ত্রী এখন থেকে সামুর মন্ত্রী..
দলছুট শুভঃ আমরা তাইলে কিছু না? ঐ গণ্ড, মাইক স্ট্যান্ড ছেড়ে দে!
(দলছুট আর গণ্ডমূর্খ মাইক স্ট্যান্ড ছেড়ে দিতেই পরিবেশ বন্ধু সমেত মাইকস্ট্যান্ড ধপাস করে নিচে পড়ে যায়)
দৃশ্যঃ চার
(হলরুমের স্টেজে বসেছে সামু রাজার দরবার)
মামুন রশিদঃ মন্ত্রী, সামু তো দখলে এলো খন ।
তা এখানকার ইনকাম-টিনকাম কেমন?
মাননীয় মন্ত্রীঃ ফুটো হাড়িতে জল ধরে যেমন!
মামুন রশিদঃ মানে কি?
মাননীয় মন্ত্রীঃ ইনকাম নাই; পুরাই ফাঁকি ।
দলছুট শুভঃ বাকি বাকি! বিজ্ঞাপনের সব বিল বাকি!
মামুন রশিদঃ এভাবে চলবে কি?
মাননীয় মন্ত্রীঃ নতুন টেকশো ধরবো কি?
মামুন রশিদঃ হ্যাঁ ধরো নতুন টেকশো, ভরে উঠুক বাকশো!
এখন থেকে পোস্ট পিছু টেকশো চার আনা..
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ সুলতানা বিবিয়ানা সাহেব বিবির বৈঠক খানা
মামুন রশিদঃ কমেন্ট পিছু পাঁচ পাই ।
আর কোন ছাড় নাই..
মাননীয় মন্ত্রীঃ পাঠকের ঠেকা পড়ে নাই!
নিজের গাঁটের পয়সা দিয়ে কোন পাগলে কমেন্টায়?
মামুন রশিদঃ পাঠক খরচ করবে কেন? খরচ করবে তো লেখক!
কারণ তার হিট পাবার হয়েছে শখ ।
নিয়েল হিমুঃ আর আমার ব্ল্যাক বক্স?
মামুন রশিদঃ ওটার ভিতরে কি আছে ফক্স?
দেখা যাবে পরে খন, হিসাবের বেলায় ঠনঠন ।
গণ্ড, নোটিশবোর্ডে পোস্ট দাও জানিয়ে পাই পাই
দিকে দিকে জানুক সবাই টেকশো ছাড়া ব্লগিং নাই
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ পোস্ট করেছি স্টিকি, জানাতে দেরি নাই
মামুন রশিদঃ টেকশো দিতে যদি করে কেউ গড়িমসি একটুক
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ সুলেমানি ব্যানের চাবুক
মামুন রশিদঃ হুম.. আচ্ছা দলছুট, তুমি না বৈজ্ঞানিক?
দলছুট শুভঃ কথা টা নয় কাল্পনিক!
মামুন রশিদঃ দেখাও তোমার কিছু আবিস্কার ।
টেকশো আদায় হয় যেন পরিষ্কার ।
দলছুট শুভঃ একটা কল!
মামুন রশিদঃ কল?
দলছুট শুভঃ ইঁদুর মারার কল!
নিয়েল হিমুঃ সামু ভর্তি ইঁদুরের মল!
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ টেকশো আদায়ের কত ছল!
মামুন রশিদঃ বৈজ্ঞানিক বল! বল! বল! কি এমন গোপন কল?
দলছুট শুভঃ টেকশো দিতে যে হয় না রাজি
এই কল খুঁজে বের করে সেই পাজি ।
এ এমন এক কল,
মডারেশন হয়ে যায় জল..!
মামুন রশিদঃ বাহ্ বাহ্ বাহ্!
কাজ করে কি না, দেখেছো করে পরীক্ষা ?
দলছুট শুভঃ করেছি জনাব, পরিবেশ বন্ধুরে নীরিক্ষা..
মামুন রশিদঃ টেকশো দিতে রাজি হয়েছে বন্ধু?
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ বন্ধুর মুখ চেপে ধরে আছে সেনাপতি, সে এখন বুদ্ধু!
মামুন রশিদঃ যদি করে এই কলে কাজ..
বৈজ্ঞানিক দলছুট, তুমি হবে সামুর টিনেজ রাজ!
দলছুট শুভঃ বলতে লজ্জায় বুক কাঁপে!
আমি আছি টিনেজের শেষ ধাপে!
মামুন রশিদঃ হবে হবে!
এজ থাকতেই সামুতে তুমি টিনেজ জিএফ পাবে!
নিয়েল হিমুঃ সামু রাজার সাথে দেখা করতে চায় দুই জন
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ হরতন রুহিতন ইস্কাপন
নিয়েল হিমুঃ এদের আছে অভিযোগ
মামুন রশিদঃ আনো দেখি! এটা একটা রোগ! অভিযোগ!
(হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় গেন্দু মিয়ার প্রবেশ)
মামুন রশিদঃ গেন্দু মিয়ার হাত-মুখ খুলে দাও মন্ত্রী মহোদয়
গেন্দু মিয়াঃ হোক সামু রাজার জয়
মামুন রশিদঃ বল, কি তোমার অভিযোগ?
গেন্দু মিয়াঃ কবিতা লিখি শত শত ।
টেকশো চায় চার আনা মত
মামুন রশিদঃ লিখতে হলে দিতে হবে টেকশো,
নাইলে কি করে ভরবে আমাদের বাকশো?
তা রোজ লেখা হয় কত টা?
গেন্দু মিয়াঃ তা হবে পাঁচটা সাতটা!
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ গোটা চারেক মাল্টি মিলে এক কুড়ি বারোটা
মামুন রশিদঃ না না না, এটা হতে পারে না ।
বৈজ্ঞানিক, তোমার কাজ শুরু করো দিকি!
গেন্দু মিয়াঃ আমায় ছেড়ে দাও, আমি নিরিহ কবি!
দলছুট শুভঃ ইঁদুর ধরা আমার কলের হবি!
(গেন্দু মিয়াকে যন্তরমন্তর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় । এবার হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় সেলিম আনোয়ারের প্রবেশ)
মামুন রশিদঃ আরে, সেলিম আনোয়ার!
তোমার একি দশা, ঐ ওরে ছাড়!
(মন্ত্রী এসে হাত মুখের বাঁধন খুলে দেয়)
সেলিম আনোয়ারঃ আমি নিরিহ ব্লগার!
মামুন রশিদঃ তা তো জানি! কি যেন লেখ তুমি? রোজ কতটা?
সেলিম আনোয়ারঃ গল্প-রম্য-কবিতা । রোজ মাত্র কয়েকটা ।
মামুন রশিদঃ হুম! তা শোনাও দেখি একটা কবিতা?
সেলিম আনোয়ারঃ শোনাব কবিতা? ঠিক আছে, খুললাম খাতা..
"কতই রঙ্গ দেখি সামুতে, ও ভাইরে..
কতই রঙ্গ দেখি সামুতে..
আমি যেদিকে যাই,
দেখে অবাক বনে যাই
সব ছেলেরই একটা জিএফ আছেরে..
দেখ ভাল জনে একা একা দুর্বা ঘাস ছিড়ে
মন্দ জনে বউ-জিএফ নিয়ে কত মজা করে
ও ভাইরে, ও ভাইরে..
মামুন রশিদঃ (রেগে গিয়ে) মন্ত্রী! ইঁদুর মারার কল ছাড়ো জলদি!
দৃশ্যঃ পাঁচ
(হল রুমে ব্লগারদের আড্ডার মাঝেই গোপনে সামু রাজার বিরুদ্ধে শলা পরামর্শ চলছে)
হাসান মাহবুবঃ স্বৈরাচারি সামু রাজার চাই অবসান ।
কে দিবে এর সমাধান?
আমিনুর রহমানঃ ভাই, রাজনৈতিক ব্লগারদের ডাকান ।
(চারজন রাজনৈতিক ব্লগারের প্রবেশ)
ব্লগার১: সামু রাজা হাম্বা..
ব্লগার২: সামু রাজা ছুপা ছাগু..
ব্লগার৩: সামু রাজা চিন্কু খাশি..
ব্লগার৪: সামু রাজা নাস্তিক..
(তারা পরষ্পরের সাথে ক্যাচালে জড়িয়ে পড়ে)
হাসান মাহবুবঃ হবে না! হবে না! অন্য কেউ আসুক..
আমিনুর রহমানঃ কবিদের ডাকবো কি? তারা তো ভাবুক!
হাসান মাহবুবঃ কবিতায় ঘোর লাগে, আরো লাগে জট..
আমিনুর রহমানঃ ফিচার লেখিয়েরা দিবে সমাধান ফটাফট!
হাসান মাহবুবঃ উইকিপিডিয়ায় সার্চ দিয়ে সমাধান নাহি মিলে..
আমিনুর রহমানঃ আপ্নেতো গল্পকার! আপ্নেই সমাধান দেন তা'লে
হাসান মাহবুবঃ হুম! রাসো রাসো!
গল্প যদি শুনতে চাও আমার কাছে এসো..
আমিনুর রহমানঃ গল্প শুনার টাইম নাই । সামু রাজার উৎখাত চাই
হাসান মাহবুবঃ সেটাইতো চাই!
এজন্য লাগবে দুজন আপন ভায়রা ভাই
আমিনুর রহমানঃ ভায়রা ভাই! কোথায় পাই?
হাসান মাহবুবঃ খোঁজ দা সার্চ, পাঁই পাঁই ।
আমিনুর রহমানঃ কান্ডারী অথর্ব-কাল্পনিক_ভালোবাসা, দুই আপন ভায়রা ভাই খাসা!
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ আমি কেন? আমিতো এখনো বিয়েই করি নাই?
কান্ডারী অথর্বঃ তবু তুমি আমার ভায়রা ভাই
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ এ্যাঁ, আপ্নেরতো কোন শ্যালিকাই নাই!
কান্ডারী অথর্বঃ শ্যালিকার জন্ম হবে, তুমি আমি ভায়রা ভাই
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ না না, আমার ভয় করে,
শুনেছি ওরা ইঁদুর ধরার কল ছাড়ে!
যদি কল খুঁজে পায় ইদুর,
আর বিয়ে করা হবে না মোর!
আমিনুর রহমানঃ বড় ভাই আছি না? কেন যে ভয় পায়!
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ হায় আল্লাহ! একি পড়লাম মাইনকা চিপায়!
কান্ডারী-কাল্পনিকঃ(দুজনে দুজনের গলা জড়িয়ে গান ধরে)-
মোরা খাইদাই ঘুরি ফিরি
সময় পেলেই ব্লগিং করি
মোরা রাতে করি বাবুগিরি
আর দিনে আয়েশে ঘুমাই..
মোরা ভায়রা ভাই, মোরা রাজার জামাই ।
দৃশ্যঃ ছয়
(সামু রাজার দরবার)
মামুন রশিদঃ মন্ত্রী! আজকে আসবে দুজন আরবীয় অতিথী
ওদের মেজবানে করো না কার্পণ্য
ওদের যত্নআত্তি ভাল হয় যেন !
নিয়েল হিমুঃ কয়টা ছাগু ধরে আনি!
আজকে খাব কাচ্চি বিরিয়ানি!
জনৈক গণ্ডমূর্খঃ কাচ্চির কথা শুনে আবেগে ফেনীভূত!
ফেনী হোক সামুর রাজধানী, আমি আপ্লুত!
(হঠাৎ একজন আরমানের প্রবেশ)
একজন আরমানঃ কি শোনলাম কি শোনলাম ফেনী-নোয়াখালি?
বরিশাইল্যা পুলা মুই, মনে রাখবা খালি!
মোর বরিশালানুভুতিতে কেউ দিলে আঘাত
সামুতে আগুন জ্বলবে, ফেনীতে বজ্রাঘাত ।
দলছুট শুভঃ আরে লাগো লাগো বরিশাল-নোয়াখালি
রেফারি হইয়া আমি, দিব হাততালি ।
নিয়েল হিমুঃ বন্দুক-কামান যা লাগে দিব সাপ্লাই
আমি সামুর সেনাপতি, কর তোমরা এপ্লাই ।
মাননীয় মন্ত্রীঃ আছে তো এক দাঁত খিলানি, ওতেই কত ফাল-ফালানি!
নিয়েল হিমুঃ মন্ত্রী খামোশ! এক কোপে হয়ে যাবা বেহুঁশ!
মামুন রশিদঃ আর গোল করো না, বেলা বয়ে যায়
অতিথী আসার সময় হল, আরমান ভাই বিদায়!
(একজন আরমানের প্রস্থান । আরবীয় ছদ্মবেশে দুজনের প্রবেশ)
মামুন রশিদঃ আরে আসেন আসেন ভাইজান! আহলান ওয়া সাহলান
কান্ডারী অথর্বঃ আমরা দুজন ভায়রা ভাই, আরব রাজার মেয়ের জামাই
মামুন রশিদঃ সেতো দেখেই চেনা যায়!
আসেন বসেন, মজেন খানাপিনায়
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ শ্বশুর সাহেব বললেন, যাও!
সামুতে ঘুরে আসো!
জ্ঞান হবে, বিজ্ঞান হবে! কিঞ্চিত শিখে এসো!
মামুন রশিদঃ হবে হবে, সব হবে! আগে রেস্টো নাও
এই কে আছিস! ভদকার বোতলটা দিয়ে যাও ।
দৃশ্যঃ সাত
(পরেরদিন, দুই ভায়রা ভাই সামুর খাশমহলে ঘুরে বেড়াচ্ছে । হঠাৎ বৈজ্ঞানিক দলছুটের সাথে দেখা)
কান্ডারী অথর্বঃ আরে বৈজ্ঞানিক!
আরব দেশে চল, পাবে অনেক পিনিক!
দলছুট শুভঃ এই খানে আছি বেশ! বড়ই সুখের দেশ!
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ তোমার কি জিএফ আছে? টিনেজ..
আমার একটা শ্যালিকা আছে, সেইরাম প্যাকেজ!
দলছুট শুভঃ টিনেজ জিএফ বড় লোভনীয়!
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ আমার শ্যালিকাকে তুমি নিও!
দলছুট শুভঃ বাহ্ বেশ বেশ! বড় খুশি হলাম..
কান্ডারী অথর্বঃ শুধু শালি কেন? শালি'র টিনেজ বান্ধবীও তোমায় দিলাম!
দলছুট শুভঃ এত সুখ কোথায় রাখি!
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ শুধু কল ছাড়ার মন্ত্রটা একবার বল দেখি!
দলছুট শুভঃ কি মন্ত্র চাও? এখনি দিচ্ছি বলে..
আমি হতাশ, সামু রাজার ছলে!
কান্ডারী অথর্বঃ সামু রাজার পতন চাই, একটাই সমাধান!
দলছুট শুভঃ দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান!
দড়ি ধরে মারো টান, সামু রাজা খান খান!
(বৈজ্ঞানিক দলছুট মন্ত্রটা বলতেই ইঁদুর মারার কল হলজুড়ে ছুটতে লাগলো । ইঁদুর মারার কল থেকে বাঁচতে সব ব্লগার সামুর দড়ি ধরে টানতে লাগলো )
সমবেত ব্লগারসঃ দড়ি ধরে মারো টান, সামু রাজা খান খান
দড়ি ধরে মারো টান, সামু রাজা খান খান..
(যন্তরমন্তর ঘর থেকে পরিবেশ বন্ধু, গেন্দু মিয়া আর সেলিম আনোয়ার বেরিয়ে এল)
গেন্দু মিয়াঃ পোস্টের ফ্লাডিং করুম না, পোস্ট প্রতি চার আনা..
সেলিম আনোয়ারঃ ডেইলি পোস্ট নাহি চাই, পোস্টের টেকশো দেয়া চাই
পরিবেশ বন্ধুঃ মডু মডু সাবধান, দড়ি ধরে মারো টান..
সমবেত ব্লগারসঃ দড়ি ধরে মারো টান, সামু রাজা খান খান..
(ইঁদুর মারার কল থেকে বাঁচতে সামু রাজা আর তার সহযোগীরাও দড়ি ধরে টানতে লাগলো)
মামুন রশিদঃ দড়ি ধরে মারো টান, সামু রাজা খান খান..
নিয়েল হিমুঃ ধ্যাত্তেরি! ব্ল্যাক বক্সের চাবি টা পাইলাম না..
মাননীয় মন্ত্রীঃ ব্ল্যাক বক্সে আছে কি এমন সোনাদানা?
নিয়েল হিমুঃ আমার ব্যান হওয়া নিক করতে চাইছিলাম আনব্যান
সমবেত ব্লগারসঃ দড়ি ধরে মারো টান, সামু রাজা খান খান
সমবেত ব্লগারদের সবার সামনে দড়ি ধরে টানছে ব্লগ মালেকিন জানা, মডু শরৎ আর কৌশিক । হঠাৎ জানা চিৎকার করে বলে,
জানাঃ সুপ্রিয় ব্লগারস, কৃতজ্ঞ 'জানা',
ব্লগের মালিক আপনারাই, আমি কেউ না
পিলিজ লাগে, এত জোড়ে দড়ি টানবেন না!
বেশি জোড়ে টানলে সামুর পিলার নড়ে যাবে,
তখন আমি ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালাবো কিভাবে?
*******************সমাপ্ত*****************
অনুপ্রেরণাঃ বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ সত্যজিত রায়ের 'হিরক রাজার দেশে' । আমার দুই মেয়েকে নিয়ে প্রতি মাসেই এই ছবিটা দেখি । যতই দেখি, মুগ্ধতা ফুরোয় না ।
উৎসর্গঃ আমি যাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, ব্লগের সকল কবি বৃন্দের প্রতি এই 'কাব্য-রম্য' নাটিকা উৎসর্গিত ।
ফটোক্রেডিটঃ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০