somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - দায়

০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ - ( গল্প - কবিতা ত বটেই , যার ফেসবুক স্ট্যাটাস এ প্রায়ই মুগ্ধ
হই , ভাবি এত চমৎকার করে কিভাবে ভাবতে পারে লোকটা !
প্রিয় ব্লগার নোমান নমিকে । )

এই রিক্সাওলা শুয়োরের বাচ্চারা রোদ একটু বাড়লেই দাম চড়িয়ে দেবে ! ডেকচির চাইতে ডাকনির তেজ বেশি , রোদের চাইতে ভাড়ার টাকার তেজ হুদা সাহেবের হৃদপিণ্ড সিদ্ধ করে ফেলল । ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা ! কি ডাকাত! আসমান ফেটে চামড়া পোড়া গরম নেমে না আসলে , আশেপাশে রিকসা - সিএনজির আনাগোনা থাকলে , হুদা সাহেবের বিবাহ - বার্ষিকী আজ না হলে এবং এ উপলক্ষে তার হস্তিনী অর্ধাঙ্গিনীর
পরিবারের সবাই মিলে দুপুরে খাওয়ার হুকুমত জারি না করলে - ব্যাটার গালে ৮০ সিক্কার থাবড়া লাগিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যেত ভাড়া বলে কাকে !

ঠেকায় পড়ে রিক্সায় উঠলেও ভাড়ার অঙ্কটা হুদা সাহেবের হৃদপ্রকোষ্ঠে মাছের কাটা হয়ে অবিরাম খচখচ করতে থাকে । হুদা সাহেব বলে উঠেন , এ জুলুম , এ টাকা হারাম ! তোর পেটে এমন টাকা সইবে না ! রিক্সাওলাও কম কি , গণতন্ত্রের জামানা - হুদা সাহেব ও রিক্সাওলা উভয়ে সমান সমান এক ভোট , প্যাসাঞ্জার যদু , মধু , রাম সাম বলে যাবে আর রিক্সাওলা হুক্কা - হুয়া রবে সায় দিতে যাবে কোন দুঃখে ! হুদা সাহেবের বাউন্সারে রিক্সাওলার সপাটে পুল চালাতেও তাই দেরি হয় না , ''আপনেরে ত আমি জোর কইরা উঠাইনাই , নিজ থিকাই উঠছেন , আর হারাম যদি হজম না অয়ত , তাইলে এত বিল্লিং উডে ক্যামনে , এত গাড়ি চলে ক্যামনে !

এভাবে মুখের উপর জব্দ হয়ে হুদা সাহেবের মন কিছুটা খারাপ হলেও রিক্সাওলার মুখের দিকে তাকিয়ে তা দ্রুত কাটিয়ে উঠলেন । গাল টা খুব ভাঙ্গা , যেন ট্রেন্স , এমনি ট্রেন্স যে নির্ঘাত দেড় সের চাল গালের পরিখায় এটে দেয়া যাবে । শুধু কি তাই ? চোখের মণি দুটো কেমন কুয়োর তল , নোংরা - কালো ময়লা , ভাঙ্গাচুরা ।
এমন চেহারার উৎস কোথায় হুদা সাহেবের তা জানা থাকলেও পুলিশি কায়দায় তা উদঘাটনে তিনি দেরি করেন না , '' তুই নিশ্চয়ই গাজা খাস '' ?
হ । - প্যাডেলের চাকার বেগের সাথে ' হ ' শদটাও ফুস করে বেরিয়ে আসে ।
রহস্যভেদের আনন্দে হুদা সাহেব রিক্সাওলাকে আরো চেপে ধরেন ,'' তা ত দেখেই বুঝা যায়! তোর বউ কিছু বলে না ?
রিকশাওলার দাত বেড়িয়ে আসে । '' বউ কইব কি , মাইরা ভাগাই দিছি ! গাজা লইয়া কতা কইছিল একদিন , দিছি এক্কেরে ! গাজার কাছে বউ কি !
- তোর ছেলেমেয়ে কয়টা ?
আবারো রিকশাওলার হাসি । পোলা কয়ডা নিজেও কইতারি না । বিয়া ত করছিলাম ৫ ডা , অহন এক বউ ও নাই । পোলা রা আছে মনে অয় যার যার মার লগে ।


এরপর এমন বদখত থার্ডক্লাস রিকশাওলার সাথে হুদা সাহেব কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন । বলবেনই বা কি ! '' এই জাত খারাপের শেষ ! তোরা কি করস তা আমি জানি না ! - হুদা সাহেব
মনে মনে বলেন । '' শালারা এক দিন রিকশা চালাবি ত দশ দিন মটকা মেরে ঘরে পড়ে থাকবি , বউয়ের কামানি খাবি । মদ খাবি , জুয়া খেলবি , সুযোগ পেলেই পাবলিকের গলা কাটবি , হারামির বাচ্চারা ! ''

কবে এরা মানুষ হবে ? অথচ তার তার ছোট ছেলের কিডনি নষ্ট হলে , উত্তর - দক্ষিণ , পূর্ব - পশ্চিম দৌড়িয়েও কারো কিডনি ম্যাচিং হচ্ছিল না , তিনি নিজেই টেস্ট করালেন ।আল্লাহর অসীম দয়ায় কিডনি ম্যাচিং হলে , তিনি দেরি করেন নি । কিডনি দিতে হুদা সাহেবের মা মানাও করেছিলেন । '' আল্লাহর নামে কসম কর , তুই কিডনি দিতে পারবি না , তোর ত আর ও ২ টা ছেলে আছে , ১ টা গেলে যাক , পোলা যখন - তখন হওয়ানো যায় । '' জীবনে সেই প্রথম তিনি মার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলেছিলেন । বিয়ের পরের দিনগুলো ও কি ভুলবার ! শাদীর ৬ মাসের মাথায় ব্যবসায় লস খেয়ে বউ শিরিন কে নিয়ে কত বেলা তিনি না খেয়ে থেকেছেন । মুখে আলুর ভর্তা গুজে দিয়ে চলেছেন সপ্তাহের পর সপ্তাহ । কই তিনি ত বলেন নি , যা তোর বাপ থেকে টাকা আন ! এর পর যখন খোদার ফজলে চাকরি হল , টাকা - টুকা অনেক হল , তিনি কি চাইলে আরো বিয়ে করতে পারতেন না ? হারামখোর রিকশাওলার মত ? তার চেহারার জৌলুস কি কম ছিল তখন ? শিরিনের মত দামড়া ধুমসী কে পাছায় লাথি মেরে বের করে দিলে কে কি বলত ! কি আশ্চর্য ! রিকশাওলার সাথে এতক্ষণ নিজেকে তুলনা করছেন বলে হুদা সাহেব লজ্জিত হলেন । কই কলার কান্দি , কই ইন্দিরা গান্ধী !
এইসব লোক খারাপের একশেষ ! আজীবন বদমাশ থেকে যাবে , জীবনে ও ভালো হবে না । আসলে ভালই বা কে আছে ! এই দেশে সব চোর - চাটটা , দেশটাকে খেয়ে খেয়ে সব ছিঁড়ে -ছোবড়া করে ফেলল ! এই হারামখোর রিকশাওলা কি জানে রাস্তায় বাহাদুরি করা অমন দশটা মার্সিডিজ তিনি চাইলেই নামাতে পারেন ।
সরকারী চাকরির এমনি বদনসিব যে , তাকে ফকিরের মত রিকশায় চড়তে হয় ,আরাম করব খালি শালার বসেরা ! একেকটা খেয়ে খেয়ে দেশের থালা কানা করে ফেলল !
ভাগ্য ভাল বড় ছেলেটাকে আগেই আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছি্‌ , রিটায়ার করা মাত্রই হোল ফ্যামেলি আমেরিকায় চলে যেতে হবে , এ দেশে থাকা মানে ভবিষ্যৎ নেই । কিভাবেই বা হবে ? আলো বাতাস পর্যন্ত ঠিক নাই দেশটার । তার বড় ছেলে ঠিকই বলে , বাঙ্গালীর সভ্য হতে আরো ৫০০০ বছর লাগবে !

এসব সাত - পাঁচ ভাবতে ভাবতে হটাত ৭ হাত দূরে থাকা রাস্তার কিনারার একটা জটলার দিকে হুদা সাহেবের দৃষ্টি গেল । আরো কাছে আসতেই তিনি দেখতে পেলেন ,
হাটু ভাজ করে রাস্তায় শুয়ে আছে একজন লোক , সম্ভবত অজ্ঞান , নাকি মারা গেছে ? । তার মাথা হতে রক্তের একটা ক্ষীণ ধারা কিছুদুর পর্যন্ত গিয়ে পিচডালা রাস্তা নোংরা , চটচটে করে রেখেছে ।
লোকটাকে গোল করে ঘিরে আছে একদল মানুষ , এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এই লোকটাই একমাত্র দর্শনীয় বস্তু । জটলার কাছাকাছি গিয়ে রিকশাওলা রিকশা থামিয়ে ফেলল ।

কি হল ? ঘটনা কি ? লোকটা কে ? - রিকশাওলাকে পুলিশ কনস্টেবলের সুরে জিজ্ঞেস করলেন হুদা সাহেব , যেন রিকশাওলাই সব জানে !
ক্যামনে কমু আমি! - রিকশাওলার কণ্ঠে বিরক্তি , রিকশাটা রাস্তার কিনারায় আরেকটু সরিয়ে রেখে - দেহি , আপনে খারান একটু - এ কথা বলেই রিক্সাওলা জটলার ভিতর চটপট ঢুকে গেল ।
হুদা সাহেব কিছু বলার ও সুযোগ পেলেন না ।
কি অবস্থা! একজন লোক রাস্তায় এভাবে শুয়ে আছে কেউ দেখার নেই ! আর লোকগুলো বা কেমন ! হাভাতের মত তাকিয়ে আছে । এতগুলো লোক , একজনও কি লোকটাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারল না ? দেশ থেকে কি মানবতা উঠে গেল ?কই যাচ্ছে দেশ!
হুদা সাহেবের আক্ষেপে রাস্তার বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা কাকেরাও কা কা করে উঠল ।

একটু পর রিকশাওলা ফিরে এল । তার চোখটা চক চক করছে দেখেই কিনা হুদা সাহেবের হাতের চকমকে ঘড়ির দিকে চোখ গেল এবং সেই সাথে সময় দেখে হোক অথবা অর্ধাঙ্গিনীর আগাম শাসনকম্পের ভয়ে হোক হৃদযন্ত্রটা এক লাফে গলার কাছে এসে যেন আটকে গেল । হুদা সাহেবকে আরো বিব্রত করার আয়োজন সম্পন্ন করতে তার নোকিয়া মোবাইলে মিসেস হুদার কর্কশ মিসকল জুড়ে বসল । ঢোক গিলতে চেয়েও পারলেন না তিনি ।

-তাড়াতাড়ি চল । - হুদা সাহেব তাগাদা দেন ।
লোকটা বাইচা আছে ! হাত দেখছি ! - রিকশাওলার কণ্ঠে উল্লাস ।
-আরে তাড়াতাড়ি যাও , পা চালাও ! -
- আপনে নামেন , বেডারে হাসপাতালে নেওন লাগব ।
- মানে ? আমি কই যাব ?
-আপনে আরেক রিকশা লইয়া যান , অহন নামেন ।
- কি না কি আকাম - কুকাম করছে এই লোক তুমি জান ? এসব নিয়া থানা পুলিশ হইতে পারে , তোমাকে জেলেও ঢুকিয়ে দিতে পারে , একবার হাঙ্গামায় পড়লে তোমার কোন বাপ - ভাই তোমারে নিয়া দৌড়াবে ?

- যা অইব আমার অইব । আপনের কি ? আপনে নামেন ।

আমি কিন্তু ভাড়া দিব না , এখানে নামলে ।
আমি কি আপনের কাছে ভাড়া খুজছি ? তাড়াতাড়ি নামেন দেহি -

তারপর বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আজমল হুদা সাহেবের অবয়ব রাস্তায় ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল । হারামখোর রিকশাওলাকে দেখা গেল ডানাওলা বরাহের মত করে
উড়ে যেতে ।











সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৮
৫৬টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×