
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট হিসেবে ফেসবুক এখনও তার আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। দিনদিন বেড়েই চলেছে তার জনপ্রিয়তা। প্রায় ১৫০ মিলিয়ন সক্রিয় সদস্যের এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ফেসবুক ৫ বছর পার করেছে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মকান্ড সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফেসবুকের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এর সাথেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফেসবুক গেমস এবং এপ্লিকেশনের সংখ্যা। এখন ফেসবুক খুললে যতটা না কারও স্ট্যাটাস, ওয়াল বা ফটো কমেন্ট চোখে পরে, তার চাইতে অনেক বেশী চোখে পরে এপ্লিকেশন আর গেমসের নিউজ। এ থেকে বোঝা যায়, সময়ের সাথে সাথে আগের ফেসবুক ব্যবহারের ধারনা পাল্টেছে।
আমি প্রথম ২০০৬ সালে Hi5 ছেড়ে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করি। ফেসবুকের অসাধারন মেকিং এবং নতুন নতুন এপ্লিকেশন দেখে মুগ্ধ হই। বন্ধুদের সাথে যুক্ত হওয়ার পরই শুরু হয়ে যায় এপ্লিকেশন রিকোয়েস্টের ধুম। সেখান থেকেই প্রথম পরিচিত হই মাল্টিপ্লেয়ার ব্রাউজার গেমস “মব ওয়ার’স” এর সাথে। যদিও প্রথমে গেমসগুলো খুবই হাস্যকর মনে হত, পরে একসময় আমিও বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগীতায় নেমে পরলাম। অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলত মব ওয়ার’স খেলা। কে কার চাইতে আগে লেভেল কম্প্লিট করতে পারে, কার মব সাইজ সবচেয়ে বেশী, কার একাউন্টে টাকার পরিমান বেশী ইত্যাদি। মজা লাগল, একদিন এক বানিজ্যিক ব্যাংকের কম্পিউটার সেকশনে অফ টাইমে গিয়ে দেখি সেখানের অফিসারও “মব ওয়ার’স” খেলায় ব্যাস্ত।

সময়ের সাথে সাথে মব ওয়ার’সকে বিদায় করে দিয়ে শুরু করলাম “মাফিয়া ওয়ার’স” খেলা। মব ওয়ার’স থেকে মাফিয়া ওয়ার’স অনেক আধুনিক এবং গেমস প্ল্যানিং এ অনেক বৈচিত্র আছে। নিত্য নতুন আপডেট’স এবং দীর্ঘ গেম প্ল্যানিং এর জন্য মাফিয়া ওয়ার’স এখনও খেলে চলেছি। বর্তমানে ২৫০ এর উপর লেভেল কম্প্লিট করেছি। নিজের কাছেই অবাক লাগে এত এত গেমস থাকতে কি এমন আছে এর ভেতরে যে এর পিছনে সময় নষ্ট করছি!! উত্তর জানা নেই।

ইদানিং ফেসবুকের নিউজ ফিডে ভর্তি হয়ে থাকে “ফার্ম ভিলি” নামে আর একটি গেমস। এটি অনেকটা খামারবাড়ী পরিচালনার এবং রক্ষনাবেক্ষনের গেমস, যা দেখেছি মেয়েরাই বেশী পছন্দ করে। “ফার্ম ভিলি” এবং “মাফিয়া ওয়ার’স” দুটোই “জিংগা (Zynga)” নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরী। তারা মূলত স্যোসাল নেটওয়াকিং সাইটগুলোর জন্য গেমস তৈরী করে, যেমন : ফেসবুক, মাইস্পেস, হাই ফাইভ, ট্যাগড ইত্যাদি।
জিংগা কর্পোরেশনের বর্তমানে মোট গেমসের সংখ্যা ৩২ টি এবং এসব গেমসে ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাদের ৪৬ মিলিয়ন এ্যাকটিভ গেমার’স এবং ৭১ মিলিয়নেরও বেশী রেজিস্টার্ড গেমার’স আছে। বোঝাই যাচ্ছে আমার মত অসংখ্য পাগল পৃথিবীতে আছে। শুনে অবাক হবেন, জিংগা কর্পোরেশনের বর্তমানে টোটাল ইনভেস্টমেন্টের পরিমান ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার !!

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এত ডলার ইনভেস্ট করে মানুষকে বিনে পয়সায় গেমস খেলতে দিয়ে তাদের লাভ হয় কিভাবে? এখানেই মার্কিনিদের বিজনেস প্ল্যান। আমরা যেখানে ব্যবসা খুজে পাইনা, ওরা সেখান থেকেই ব্যবসা করে নেয়। মাফিয়া ওয়ার’স বা অন্যান্য ব্রাউজার গেমসগুলোতে এনার্জি, স্টেমিনা, হেলথ ইত্যাদির একটি নির্দিষ্ট লিমিট থাকে। নির্দিষ্ট সংখ্যক বার জব এবং ফাইট শেষ করার পর এসব শেষ হয়ে যায়। তখন এনার্জি, স্টেমিনা, হেলথ ফুল করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। পাগল গেমাররা এই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে মোটেই রাজি নয়। তাই জিংগা তাদের “গডফাদার” নামের একটি অপশনের মাধ্যমে ৫ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ২১ টি রিওয়ার্ড পয়েন্ট দেয়। পে-প্যাল, ভিসা, মাস্টার কার্ড ইত্যাদি দিয়ে এই টাকা পরিশোধ করলেই তাদের গডফাদার রিওয়ার্ড পয়েন্ট দেয়া হয়। এটাই তাদের প্রধান বিজনেস স্ট্রাটেজি। সাথে ফেসবুকও এই গেমসের সুযোগে এডভার্টাইজ চালু রাখছে এবং সবাইকে বাধ্য করছে ফেসবুক নিয়মিত ভিজিট করার জন্য।
আমি হিসাব করে দেখেছি, প্রতিদিন একটি লেভেল কম্প্লিট করার জন্য মিনিমাম ৮-১০ বার ফেসবুক ভিজিট করতে হয় এবং গেমস খেলার পেছনে ব্যায় হয় ২ ঘন্টারও বেশী সময়। অনেকের জন্যই এটা এখন একপ্রকার আসক্তিতে পরিনত হয়েছে। নিচে একটি পরিসংখ্যানে দেখুন ফেসবুকের টপ ২৫ টি গেমসের বর্তমান অবস্থা :

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪০