আমরা এক একজন এক একরকম খারাপ কাজে আসক্ত হয়ে পড়ি। কেউ ধুমপান করছি তো কেউ মদ্যপানে জড়িয়ে পড়ছি। কেউ মাদক ধুকছি, আবার কেউ হয়তো অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ছি। আমরা যেন কেউ মনে না করি, আমরা এতটাই খারাপ হয়ে গেছি যে, আমাদের কোনই আশা নেই। নামাজ তো ভাল মানুষের জন্য। আমরা তো পাপী বান্দাহ। আমাদের নামাজ কি আল্লাহ কবুল করবেন? আমাদের শয়তানের একটি অপকৌশল মনে রাখতে হবে, সে আমাদের কাছে এসে বলবে, ছি! তুমি এইমাত্র ধুমপান করেছো, গাজা খেয়েছো, মদ্যপান করেছো, নেশা করেছো, তোমার মোবাইল ঘাটলে এখনো আপত্তিকর দৃশ্য বেড়িয়ে আসবে। তোমার কি লজ্জা করে না! তুমি এখন অযু করে নামাজ পড়বে?
এর সাথে তুলনা করে রাসূল স. কী বলেছেন? খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো। কারণ, সেটা খারাপ কাজটিকে মুছে ফেলবে। আমরা দুর্বল হয়ে শয়তানের ফাদেঁ পা ফেলে দিয়েছি। আমাদের মনটা ভারী হয়ে এসেছে। তখনই আমাদের ঘুরে দাড়ানোর উত্তম সময়। তখনই আমাদের বলা উচিৎ, শয়তান আমাকে একবার হারিয়ে দিয়েছেতো কি হয়েছে? আমি শয়তানকে তিনবার হারিয়ে দিবো।
প্রথমবার, আমি গিয়ে অযু করবো। কারণ, অযু করলে পাপ ঝড়ে পড়ে। অযুতে মুখ ধোয়ার সময় সেই চোখ এবং মুখ যা কিছু খারাপ দৃশ্য দেখেছিলো, সেই পাপ গুলো মুছে যাবে। হাত ধোয়ার সময় সেই হাত যেই খারাপ কাজের দিকে বাড়ানো হয়েছিলো সেই পাপগুলো মুছে যাবে। অযু করার সময় অন্তরে বিশ্বাস রাখতে হবে, মনে মনে কল্পনা করতে হবে, আমরা শারীরিকভাবে যেই যেই অঙ্গগুলি ধুচ্ছি, সেই সেই অঙ্গ থেকে পাপগুলো ঝড়ে যাচ্ছে। আমরা পবিত্র হয়ে যাচ্ছি।
দ্বিতীয়বার, আমরা শয়তানকে হারাবো নামাজে দাড়িয়ে। কারণ, রাসূল স. বলেন, যেই ব্যক্তি সুন্দরভাবে অযু করে দুইরাকাত নামাজ পড়বে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
এবং তৃতীয়বার, আমরা শয়তানকে হারবো আরো ভালো কোন কাজ করে। হয়তো কুরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করে বা কিছু সাদাকাহ করে। যেন শয়তান ভবিষ্যতে আমাদের ফাদেঁ ফেলার পূর্বে দু’বার চিন্তা করে, একে দিয়ে খারাপ কাজ করালে তো এ আরো তিনগুন ভালোকাজ করে ফেলবে।
ভেবে দেখুন, যারা পাপ কাজে লিপ্ত হয়, তারাই যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চায়, তাহলে ক্ষমা চাইবে কে? যদি আল্লাহ তায়ালা তার নিষ্পাপ বান্দাহদেরই ভালোবাসতেন, তাহলে কি তিনি ফেরেশতা সৃষ্টি করার পর মানুষকে সৃষ্টি করতেন?
ভেবে দেখুন, আমরা যখন আল্লাহর সামনে তার অমান্য করছি, তারপর যখন আমাদের খারাপ লাগছে, সেই খারাপ লাগার অনুভূতিটা কোথা থেকে আসলো? বাস্তবে এটি আল্লাহর তরফ থেকে একটি উপহার। তার কাছে ফিরে যাবার একটি আমন্ত্রণ।
ভেবে দেখুন, কত মানুষ আছে, যারা কোন না কোন পাপ কাজে আসক্ত। কিন্তু মনটা পাথর হয়ে গিয়েছে। সেখানে কোন অনুশোচনাবোধ কাজ করে না, কোন হাহাকার জন্মায় না। তাই আমাদের অন্তরে যখন কোন বিন্দু পরিমাণ অনুশোচনা জেগে ওঠে। তাহলে আমাদের বোঝা উচিৎ এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ আমাদের উপর নিরাশ হননি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করার জন্য এখনো আমাদের দিকে চেয়ে আছেন। তিনি শুধুমাত্র একটি সুযোগ খুঁজছেন, একটি কারণ খূঁজছেন আমাদের ক্ষমা করার জন্য। আমরা শুধু একটি ধাপ এগিয়ে গেলেই তার রহমাত এবং মাগফিরাতের ঝর্ণা আমাদের ভাসিয়ে দিবে।
প্রশ্ন হলো, আমরা কি সেই একটি ধাপ নেব?
আমরা কি আল্লাহর আমন্ত্রণে সাড়া দেব?
(শায়খ হাসান আলীর একটি বক্তব্য থেকে নেয়া)