প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা! আজ ২৯শে রামাদান। কাল হয়তো ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দের আয়োজনে প্রায় সবাই সুসজ্জিত। অনেকে আবার ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য রামাদানে তাকওয়া ছাড়তে বসেছেন। একবার হযরত উমার (রা) ঈদের দিনে কাদতেঁ ছিলেন, সাহাবায়ে আজমাইন কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, "কিভাবে আমি ঈদের দিনে আনন্দ উল্লাস করতে পারি? অথচ আমাকে এখনো জানানো হয়নি যে আমাকে ক্ষমা করা হয়েছে"। এ হলো জান্নাতে সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর একজন। তার যদি হয় এই অবস্থা তাহলে আপনি-আমি কোন অবস্থানে আছি তার হিসেবটা এখন জরুরী। পবিত্র মাহে রামাদান আমাদের কাছে যে, রহমাত, মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছিলো আমরা তার কতটুকু অজর্ন করতে পেরেছি, সেসবের হিসেব করার সময় বুঝি আজ একেবারেই সমুপস্থিত। রমাদান মাস মূলত একটা ব্যবসায়ের মাস। এখানে সবার জন্য কম বেশি ব্যবসা রয়েছে। তবে এক একজনের ব্যবসার ধরণ আলাদা।
** একজন নাট্যকার সারা বছর ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন কবে রামাদান মাস আসবে এ জন্য তিনি বিভিন্ন নাটক, সিনেমা, গান তৈরি করেন রামাদানের শেষে ঈদে ব্যবসা করার জন্য। এটা পাপের ব্যবসা, ঘৃণিত ব্যবসা। পরকালে কঠিন জবাবদিহী করতে হবে।
** একজন দোকানদার সারা বছর প্রতিক্ষায় থাকেন ঈদের জন্য সেখানে বেচাকেনা করে প্রচুর আয়ের জন্য। যদিও এটা মুবাহ ব্যবসা। এতে দ্বীনের কোন উপকার নেই। আমার একজন বন্ধু ঈদে ব্যবসার ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে কথায় কথায় বলে ফেলেছেন, সেই বছর ঈদে যে তার ইনকাম হয়েছে সেটা দিয়ে সে তার একটা নতুন বাড়ি তৈরি করেছেন। বাড়িটি অনেক সুন্দর করেই তৈরি করা হয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম, রামাদান মাস আসছিলো তোমার জান্নাতে বাড়ি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে, সেটা কি তুমি করতে পারছিলে। সে উত্তর দিলো, সে সময় পেলাম কোথায়? এত ব্যস্ত ছিলাম যে, তারাবীহের নামাজটুকুও আদায় করার সময় পাইনি।
** একজন মুমিন পবিত্র রামাদান মাসে করে থাকেন সওয়াবের ব্যবসা। তার টার্গেট থাকে কিভাবে অল্প পূজিতেঁ বেশি ব্যবসা করা যায়। যেহেতু রাসুল স. বলেছেন, পবিত্র রামাদান মাসে কেউ যদি একটা নফল আদায় করে তবে সে অন্য মাসে একটা ফরজ আদায় করার সওয়া অর্জন করবে। আর যদি কেউ একটা ফরজ আদায় করে তবে সে অন্য মাসের সত্তরটা ফরজ আদায় করার সওয়াব অর্জন করবে। তাই সে ফরজ, নফল ইবাদাতের পাশাপশি কুরআন তেলাওয়াত, দান-সাদকাহ, হাদিয়া, দ্বীনি কল্যাণমুলক কাজে কোমরে কাপড় বেধেঁ নেমে পড়ে। এটাই প্রকৃত ব্যবসা। এটাই হলো পবিত্র রামাদানকে কাজে লাগানোর উৎকৃষ্ট পন্থা।
..
পবিত্র রামাদান মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। একজন মুমিনের তাকওয়া অর্জনের জন্য নিজেকে সিয়াম সাধনার কাজে নিয়োজিত রাখবে এটাই ছিলো সিয়ামের চাহিদা। বর্তমানে রামাদান মাসে না খেয়ে থাকতে অনেককেই দেখা যায় কিন্তু তাকওয়া অর্জনের জন্য খুব কম মানুষকেই আগ্রহী হতে লক্ষ্য করা যায়।
..
আশ্চর্য হয়ে যাই তখন যখন দেখি একজন সিয়াম পালনকারী, সিয়াম রত অবস্থায় আছেন অথচ তার কাছে ইয়াতিমদের ঠকানো সম্পদ আছে, বোনকে ঠাকানো সম্পদ আছে, অন্যায় ভাবে মানুষের কাছে থেকে নেয়া সম্পদের পাহাড় গড়েছে, নারী-পুরুষ বেপর্দায় চলাফেরা করছে, যেনা ব্যভিচারে রীতিমত লিপ্ত হচ্ছে। সুদ-ঘুষের সম্পদের উপর দাড়িয়ে সে নিজেকে সওম পালনকারী দাবী করছে। সিয়াম তো এসেছেই মানুষকে এসব কলুষতা পাপাচার থেকে মুক্ত করবার জন্য, সিয়ামকে সামনে রেখে সে নিজেকে গুনাহ মুক্ত করবে। বিশ্বাস করেন, একজন মানুষের না খেয়ে থাকাতে আল্লাহ ও তার রাসূলে পক্ষ থেকে কোন সু-বার্তা নেই যদি সে নিজেকে পাপ মুক্ত না করতে পারে।
..
একজন সিয়াম পালনকারী সিয়ামের তাকওয়ায় উদ্ধুব্ধ হয়ে হয়ে সে, যার গিবত করেছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে না, যার সম্পদ অন্যায় ভাবে ছিনতাই করছে তা তার কাছে ফিরিয়ে দিবে না, যার বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়েছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে না, নিজের পরিবার পরিজনকে দ্বীনের পথে চলার জন্য শিক্ষা দিবে না, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে বিনীত সিজদা, তাওবা করবে না তা তো হতে পারে না!
..
এই সিয়ামের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থান করা। বাতিলকে নির্মুলের জন্য নিজেকে আত্ম নিয়োগ করা। যার কঠিনতম উদাহরণ হলো বদর যুদ্ধ, মক্কা বিজয়। ইসলামী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, রাসূল স. এর যুগে অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার পরিসংখ্যান মাসের দিক দিয়ে হিসেব করলে তার সর্বোচ্চ সংখ্যা পবিত্র রামাদান মাসে। এই মাসটাকেই তারা বেছে নিয়েছিলেন দ্বীন প্রচার, প্রতিষ্ঠার জন্য এক মৌসুম সময় হিসেবে।
আর আমরা এই রামাদানে কি শিখতে পেরেছি? কি অর্জন করতে পেরেছি সেটা আজ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ। হে আল্লাহ তায়ালা! পবিত্র রামাদান মাসকে কাজে লাগিয়ে আমরা আপনার সন্তুষ্টি করতে পারি তার তৌফিক দান করুন। আমিন......