..
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আলেমদের তথা ইসলামী দলসমূহের ঐক্য খুব খুবই জরুরী। সব ভেদাভেদ ভুলে যদি আপনারা একমত না হতে পারেন তবে আপনাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। আজকে যেই ইসলামকে প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা করতে আপনারা নিরলস চেষ্টা, পরিশ্রম ও ত্যাগ করে যাচ্ছেন সেই ইসলামকে ব্যবহার করে, ধর্মকে কলঙ্কিত করতে, প্রশ্নবিদ্ধ করতে, সার্বজনীন অগ্রহণযোগ্য করতে ইয়াহুদি, খ্রিষ্টানদের প্ররচোনায় সারা দিচ্ছে একদল বিপথগামীরা।
..
আপনারা যখন একজন আরেকজনকে, একদল আরেকদলকে কাফির, মুশরিক, বিদয়াতী, লোভী, স্বার্থান্বেসী, ভন্ড, প্রতারক প্রমাণ করতে কুরআন-হাদিসের দলিল অন্বেষনে ব্যস্ত তখন এসকল বিপদগামীরা আপনাদের দুর্বলতার সুযোগে নিজেদের মত করে কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সমাজে জঙ্গি নাম করে ইসলামের বারোটা বাঝাচ্ছে। আপনারা কি এটা বুঝতে চাচ্ছেন না? আজকে আপনাদের পাওয়া যায় কেবলমাত্র ফতোয়া আর মসজিদ, মাদ্রাসা ও জানাযার সময়। সমাজের অন্যান্য অপরিহার্য জায়গাগুলিতে আপনাদের উপস্থিতি একেবারেই শূন্যর কোঠায়। দেশের অর্থনীতি, শিল্পনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতির মাঠ আপনাদের অনুপস্থিতিতে বিপথগামীরা দখল করে নিচ্ছে যা আপনারা রঙিন চশমা পরে উপলোব্দি করতে চাচ্ছেন না। রাসূল স. কি এমন ইসলামের শিক্ষা দিয়েছিলেন? তিনি কি শুধু ফতোয়াবাজি করতেন? মসজিদেই কি তিনি তার কার্যাদি সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন? বরং আল্লাহর ঘোষণা ছিলো, “যখন তোমারা নামাজ শেষ করবে তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো” নামাজের মাঝে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করো সমাজে।
..
রাসূল স. এর কাছে যদি কেউ প্রশ্ন করতো অর্থনীতি, শিল্পনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি সম্পর্কে তাহলে কি তিনি বলতেন আমি এসবের কি জানি, আমি আল্লাহর রাসূল তোমরা আমাকে পরকাল, আখিরাত, বেহেশত, দোজখ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। বরং রাসূল স. কুরআনের বাস্তবতায় জাহিলিয়াতের সেই সমাজকে হক্বে নুরের সমাজে পরিণত করেছিলেন, একটা কুসংস্কারাছন্ন সমাজকে সভ্যতায় রুপ দিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মৃত প্রায় একটা সমাজকে তিনি করেছিলেন স্বচ্ছল ও স্বনির্ভরশীল। মানুষের মাঝে অর্থনৈতিকভাবে সমতা আনয়নের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বায়তুল মাল। একটা সময় পরে সেই সমাজের অবস্থা এমন হয়েছিল যে, বায়তুল মাল থেকে অর্থ নেয়ার মত মানুষ খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ এই মানুষেরা সামান্য উপায়ে জিবন ধারণের জন্য তাদের নিজেদের জিবন বাজি রেখে অন্যায়ে পর্যন্ত লিপ্ত হয়েছিল।
..
আজকে রাসূল স. এর সেই উত্তরসূরি আলেম সাহেবদের ফতোয়া, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিবাহ, জানাযা, মিলাদ, কিয়াম ছাড়া অন্য কোথাও দূরবীন দিয়ে খুজেঁ পাওয়া মুশকিল। দেশের কয়টি ব্যাংক-বীমা, শিল্প-কারখানা, অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রতিষ্ঠান আলেমদের দখলে আছে? হিসেব করলে দু’একটির বেশি না। সাধারণ মানুষ এখন আর আলেমদের কথা শুনতে চায় না। কারণ তাদের ফতোয়া শুনলে পেটে ভাত জুটবে না, তাদের দাওয়াতে অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হবে না। যেখানে পবিত্র কুরআনে যত জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নামাজের কথা বলেছেন সেখানেই তিনি সাথে সাথে যাকাতের কথাও বলেছেন। কারণ কি? একজন মানুষের ইমানের সাথে বেচেঁ থাকতে হলে দরকার ক্ষুধা ও ভয় থেকে নিরাপত্তা সেটার ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা সূরায় কুরাইশের মধ্যে বলেছেন, তোমরা এই ঘরের রবের (আল্লাহ’র) ইবাদাত করো, তাহলে তিনি তোমাদের ক্ষুধা ও ভয় থেকে নিরাপত্তা দিবেন (সরাসরি আয়াতের অনুবাদ নয়)। আর আলেম সাহেবরা শুধু নামাজের দাওয়াত দিচ্ছেন, মানুষের অর্থনীতির, সুস্থ সাংস্কৃতির, সামাজনীতির, রাজনীতির কোন গ্যারান্টি দিচ্ছেন না। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। আপনারা কি লক্ষ্য করছেন না যে, ইয়াহুদি-খৃষ্টানরা অর্থনীতি, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লোভ দেখিয়ে কত মুসলিমদেরকে ধর্মান্তরিত করছে?
..
জামায়াত ইসলাম থাকুক না মওদূদীকে নিয়ে, চরমোনইরা থাকুক না পীরের ছায়াতলে, ছারছীনারা থাকুক না দরবার নিয়ে, দেওবন্দি-তাবলীগরা থাকনা তাদের দাওয়াতী মিশন নিয়ে কিন্তু এদের কারোরই কিন্তু ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্বিমত নেই। অন্তত আমরা এই জায়গাটায় একত্রিত হয়ে ইসলামকে, প্রিয় মাতৃভুমিকে ইয়াহুদি-খৃষ্টান, নাস্তিক, মুরতাদ, ধর্মের নামে জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। মতভেদ পূর্ণ বিষয়কে নিয়ে কাদাছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে সকলে একত্রিত হয়ে এদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। বিশ্বাস করুন, এই দেশের এই দু:সময়ে এখনো সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে আলেম সমাজের দিকে। আপনারা যদি একযোগ হয়ে একসল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তবে সবাই এ ডাকে সাড়া দিয়ে সমস্ত চক্রান্তকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিবে। আল্লাহর শফত করে বলছি, আজো সকল আলেম সমাজ যদি ইসলামের প্রকৃত ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজে ছড়িয়ে পরে তবে বাতিল পালানোর জায়গাও পাবে না। ইনশাআল্লাহ।