গত পর্বে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলাম, তা ছিল একটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আইন। আপনাদের বিচার বুদ্ধিও প্রমাণ করবে যে, আইনটি এমনই হওয়া উচিত। যদি আপনাদের কারোর একটি বাগান থাকে এবং তিনি একজন মালীকে তার রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত করেন, তাহলে আপনি নিজেই বলুন, তিনি ঐ মালীর নিকট সর্বাগ্রে কি আশা করবেন? মালী তার বাগানখানা নষ্ট না করে তাকে পরিপাটি করে সুসজ্জিত করবে, এছাড়া তিনি তার কাছে আর কি কামনা করতে পারেন? তিনি অবশ্যই নিজের বাগানের ক্রমোন্নতি চাইবনে। তার শ্রীবৃদ্ধি ও উন্নতি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, শোভা ও সৌন্দর্য এবং উৎপাদন বৃদ্ধিই হবে তার কাম্য। যে মালীকে তিনি দেখবেন অত্যন্ত পরিশ্রম, যোগ্যতা ও মনোযোগ সহকারে সুনিপুণভাবে বাগানের সেবা-যত্ন করছে, বাগানের সাজ-সজ্জার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখছে, তার চেষ্টা ও যত্নে ভালো দরকারী গাছগুলো বেশ সতেজ ও সুন্দর হচ্ছে, সে আগাছা, আবর্জনা ও বন-জঙ্গল পরিস্কার করছে, তার সুরুটি ও শিল্প শক্তি দিয়ে উৎকৃষ্ট ও নতুন ফলমূল ও ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। তার ওপর তিনি অবশ্যই সন্তুষ্ট হবেন। তিনি তাকে ভালবাসবেন এবং উচ্চ মার্যাদা দেবেন। এমন উপযুক্ত, কর্তব্যপরায়ন, পরিশ্রমি, অনুগত ও সুযোগ্য মালীকে তাড়িয়ে দেয়া তিনি কোনদিনই পছন্দ করবেন না। কিন্তু এ না হয়ে যদি ঠিক এর উল্টোটাই হয় অর্থাৎ যদি তিনি দেখেন যে, মালী অযোগ্য-অপদার্থ ও ফাকিঁবাজ, সে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে বাগানের ক্ষতি করছে, গোটা বাগানটা আবর্জনা ও বন-জঙ্গলে ভরে গিয়েছে, গাছের পাতা ও ডালগুলো ভেঙ্গে পড়েছে, কোথাও বিনা প্রয়োজনে পানি বয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও পানির অভাবে মাটি ও গাছপালা সব শুকিয়ে যাচ্ছে, আগাছা, বন-জঙ্গল ও আর্জনা দিন দিন বেড় যাচ্ছে ভালো ভালো গাছ গুলো মরে গিয়ে আগাছায় বাগান ভরে যাচ্ছে, তাহলে বলুন, বাগানের মালিক এমনতর মালীকে কি করে পছন্দ করতে পারে? কোন সুপারিশ, কাকুতী-মিনতী, সবিনয় নিবেদন ও প্রার্থনা এবং উত্তারধিকার ও মনগড়া অধিকারের দরুন মালিক তার বাগানের দায়িত্বভার এমন অযোগ্য মালীর ওপরই ন্যস্ত রাখবে? বড় জোড় এতটুকু হতে পারে যে, সে মালীকে শাসিয়ে দিয়ে আর একবার তাকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেবে। কিন্তু যে মালীর কোনো শাসনেরই চৈতন্য হয় না এবং ক্রমাগত বাগানের ক্ষতিই করতে থাকে, তাকে কান ধরে বের করে দিয়ে অন্য কোনো ভালো মালী নিযুক্ত করা ছাড়া মালিকের পক্ষে এ সমস্যার আর কি সামাধান হতে পারে?
যদি নিজের সামান্য বাগান পরিচালনার ব্যপারে আপনি অনুরুপ পন্থা অবলম্বন করে থাকেন, তাহলে চিন্তা করে দেখুন যে, আল্লাহ তাঁর এতবড় ভূমন্ডল এতসব উপায়-উপকরণসহ মানুষের কর্তৃত্বাধীনে রেখে দুনিয়া ও তার সমস্ত বস্তুর ওপর তাকে এতো ক্ষমতা ও অধিকার দিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে মানুষ তার দুনিয়াকে সুন্দর করে গড়ে তুলছে, না ধ্বংস করছে, এ বিষয়টা তিনি কি করে উপেক্ষা করতে পারেন? আপনি যদি তাঁর দুনিয়াকে সুন্দর করে গড়তে থাকেন তবুও তিনি আপনাকে ক্ষমতা থেকে অযথা সরিয়ে দেবেন এমনতর হওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু যদি আপনি গঠনমূলক কোন কিছু না করেন এবং আল্লাহর এ বিরাট বাগানখানাকে একেবারে উজাড় ও ধ্বংস করতেই থাকেন, তাহলে আপনার দাবীকে নিজের বুদ্ধি-বিবেক অনুযায়ী যতই জোরদার মনে করুন না কেন তিনিতো তাঁর বাগানে আপনার কোন অধিকার স্বীকার করবেন না। প্রথমে তিনি আপনাকে শাসিয়ে হুশিয়ার করে দেবেন এবং সংশোধনের দু-চারটে সুযোগ দেবেন। পরিশেষে আপনাকে পরিচালকের মর্যাদা থেকে পদর্চ্যুত করেই ছাড়বেন।
০১.০৬.২০১৬ইং