আজ সাবানের প্রথম দিন। দেখতে দেখতে রমজান মাস চলে আসবে একটু টেরও পাওয়া যাবে না। সময় আপন গতিতে বয়ে চলেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللّٰهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ
নিশ্চয়ই আকামন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি...। Ñসূরা তাওবা (০৯) : ৩৬
সময়ের নেযাম আল্লাহ তখন থেকেই সৃষ্টি করেছেন। এখন যেমন দিনরাত তখনও তেমন দিনরাত ছিল। আর দিনরাত সব মানুষের ক্ষেত্রে সমান। পার্থক্য শুধু এখানে যে, কারো সময়ের মধ্যে বরকত আছে। কারো সময়ের মধ্যে বরকত নেই। এই যে আমরা বলি ‘সময় কোন দিক দিয়ে যায়’ এটা হল সময়ের বেবরকতির কারণে। আবার অনেকে বলে, ‘সময় যাচ্ছে না কেন? সময় কাটছে না কেন?’-এটা কখনো হয় পেরেশানীর হালত কিংবা দুঃখ-কষ্টের অবস্থার কারণে। সেটা ওযর। সেটা একটা স্বভাবের দুর্বলতা। এ ধরনের অবস্থা ছাড়াও কখনো মনে হয় সময় দ্রæত শেষ হয়ে গেল। কখনো মনে হয় সময় ফুরায় না। মুমিনের শান এটাও না, ওটাও না। মুমিনের শান হল সময়ের বরকত নষ্ট করে এমন কাজ থেকে বেঁচে থাকা। যাতে সময়ের বরকত লাভ করা যায়।
আর সময় কাটানোর জন্যে কোনো কাজ পাচ্ছে না এমন অবস্থা তো মুমিনের হতেই পারে না। কারণ আল্লাহ তাআলা নেক আমলের এত উপায়, ইবাদতের এত রাস্তা খুলে রেখেছেন যে, সকল পরিস্থিতিতে সর্বাবস্থায় বান্দার জন্য নেক আমলের রাস্তা খোলা। তার এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, ‘সময় কাটছে না’। আমাদের দেশের যানজট তো যাকে বলে নজিরবিহীন। যানজটের সময় রাস্তায় তাকালে আপনার মনে হবে, যেন বিশাল একটা গাড়ীর গ্যারেজ। সব একজায়গায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। এ যানজটে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। এ সময়গুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়?
ঢাকায় গেলে যানজট এমন ভাবে মাঝে মাঝে লেগে থাতে তোতে একেবারে বিরক্তি এসে যেত। পরে হঠাৎ একদিন চিন্তা করলাম এটা তো একটা বাস্তবতা। এই যানযট আমার বিরক্ত হওয়ার কারণে তো দূর হবে না। এখন থেকে বাসে উঠার পর থেকে এই সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য আমি বাসে ওঠার আগে ‘ইতেকাফে’র নিয়ত করতে পারি। যদিও এটা মসজিদের ইতিকাফ নয়। এটা হল, গাড়ীতে ওঠার আগে নিয়ত করিÑ আমি এখানে কিছু সময় কাটাবো। কিছু সময় এখানে আল্লাহবিল্লাহ করব। এ বাসটিই এখন আমার মানযিল। এজন্যে গাড়ীতেই আমি যিকরে আজকারে সময় কাটাতে পারি। এভাবে যদি সময়টাকে উপযুক্ত কাজে তথা নেকের কাজো লাগানোর চিন্তা করেন তবে আপনার ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকলেও কোনো কষ্ট হবে না। শুধু গরম লাগবে আর কিছু না। কিন্ত সময়টাতো আপনার নেকীতে পরিনত হলো।
সুতারং মুমিনের জন্যে তো রাস্তা খোলা। আপনি কেন ধরে রেখেছেন, ঐ কাজটি আমার কাজ। আরবে যে সকল জায়গায় লম্বা লাইন ধরতে হয় সেখানে কিছু দূর পর পর লেখা থাকে
دقائق الانتظار املءها بالاستغفار .
‘অপেক্ষার মুহূর্তগুলো ইস্তিগফারের মাধ্যমে পূর্ণ করুন।’ সৌদি আরবে গেলে মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পথে আপনি বড় বড় সাইন বোর্ডে লেখা দেখতে পাবেন, ‘সুবহানাল্লাহ’। কিছু দূর গিয়ে আবার দেখতে পাবেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। উচু পাহাড়ে উঠলে লেখা দেখতে পাবেন ‘আল্লাহু আকবর’ এভাবে রাস্তায় বড় বড় সাইনবোর্ডে আপনি বিভিন্ন যিকির-আযকার লেখা দেখতে পাবেন। এটা অনেক ভাল। এটাও এক প্রকার দাওয়াত। এটা দেখলে যিকরের কথা মনে হবে। আমাদের দেশে যদি এমন নিয়ম কিংবা মানুষের মাঝে সচেতনতা থাকতো তবে কতই না মঙ্গল হতো মানুষের জন্য। পুরো চব্বিশ ঘন্টাই তারা ইবাদাতে কাটিয়ে দিতে পারতো। তখন আর সময়ের অপচয় হতো না।
সম্মানীত ভাই ও বোনেরা, আমাদের সময়গুলোকে কাজে লাগানোর জন্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অনেক উপায় রেখেছেন। যদি নেক কাজের প্রকার সীমিত হত এবং এর জন্যে অনেক আয়োজন করতে হত তাহলে এটা আমাদের জন্যে অনেক বড় পেরেশানীর কারণ হত। বরং বলা ভাল, এটাই হত আমাদের সব চেয়ে বড় পেরেশানী। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নেক কাজ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। অধিকাংশ নেক কাজই দেখবেন একেবারে সহজ। কিন্তু এরপরেও মানুষকে নেক নয় বরং কষ্ট করেও পাপের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। ধরুন সিনেমা হল একটি উপজেলায় কয়টি থাকে? এক থেকে তিন-চারটির বেশি নয়। আর মসজিদ থাকে সিনেমা হলের প্রায় শতগুন বেশি। কিন্তু কোথায় মানুষের আনাগোণা বেশি হয়? আজকে মাহফিল, ইসলামী জলসা অথবা ধর্মীয় মজলিসে মানুষের উপস্থিতি নগণ্য পর্যায়ে নেমে এসেছে। আর গান, বাদ্য, নৃত্যানুষ্ঠান, যাত্রা, মেলা ইত্যাদিতে মানুষের উপস্থিতি সরব হয়ে উঠেছে।
মুসলিম হিসেবে জিবন থেকে সময়গুলি যে, অপরিকল্পিতভাবে কেটে যাচ্ছে তার কোন খবর রাখা মুসলিমরাই প্রয়োজন মনে করছে না। আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ফরিয়াদ জানাচ্ছি যে, আমরা যেন আমাদের সময়গুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তার ব্যবস্থা করে দেন। আমিন।