আমার জন্ম মধ্যবিত্ত সমাজে। একান্নভর্তি পরিবার আমার সংসার। আয়ের চেয়ে ব্যয়ের খাত বরাবরই বেশি। তাই বলে নিজের প্রয়োজন সবার সামনে তুলে ধরিনা। কারণ আয় করার জন্য যদিও বর্তমান দেখতে হয় কিন্তু ব্যায়ের ক্ষেত্রে আমার শুধু বর্তমান নয় বরং অতীত ও ভবিষ্যত নিয়েও ভাবতে হয়। জীবন সংসারের এই ছোট্ট পরিসরে বিধাতার কাছে কেবল এতটুকুই চাই যেন পেরেশানী মুক্ত হালাল রিযিক ইজ্জতের সঙ্গে পাই.....
আমি সমাজের সর্বত্তম ব্যক্তি নই, তাই বলে যে আমার অাত্মমর্যাদা বোধ নেই তা কিন্তু নয়। নিজের অবস্থানে থেকে আপন সমাজ ও পরিবারের যথেষ্ট খেয়াল নিতে হয়। যাতে করে পারিবারিক বা ব্যাক্তি কেন্দ্রীক কোনও অসম্মানী না হয়।
সচেতন সমাজে নিজের পরিচিতি তুলে ধরতেই চাকরীস্থলকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়। রোজগের রুটিন মাফিক হাজিরা দিতে হয়। অল্প মাইনে। তাই বলে না খেয়ে থাকিনা। দুবেলা নয় বরং তিনবেলে তিন মুঠো খাবার আল্লাহ্ খাওয়াচ্ছেন (আলহামদুলিল্লাহ্)। মা, বাবা, ভাই, বোন এবং দাদীমা এবং আমি! মিলেমিশে বেশ হাসি খুশিতেই দিনাতিপাত করছি।
বোনের খুনসুটি, ভাইয়ের হাসিমাখা মুখ, মা বাবার তৃপ্ততা, দাদীমায়ের সিমাহীন অাদর মাখা হাত এবং কাঁপা কণ্ঠে স্নেহর ডাক ( "এই যে আমার বড় দাদু হুজুর ভাই") বড্ড ভালোলেগে। তবুও নিজেকে পরিবারের ছত্র থেকে দূরে রাখতে হয়। কেনই বা দূরে রাখব না, আমার কাছে থাকা দূরে থাকা ; সবকিছু তো ওদের জন্যই। (তোমাদের সবাইকে যথেষ্ট মিস করছি)
নিঃসন্দেহে শিক্ষকতা সম্মানের পেশা। কিন্তু শ্রম দিতে হয় বেশ মজবুত ভাবে। মাস শেষে যখন মাইনেটা হাতে পাই! একমাসের ক্লান্তির অবসান ঘটে। বাড়িতে টাকা পাঠাই! বাড়ির সামগ্রীক ব্যবস্থাপনা শেষে হাতে দু চার দশ টাকার বোশি থাকে না। তখন গতানুগতিক ভাবেই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু যখন একটু আধটু করে পরিবারের সবার চাহিদা পুরা হয়; তখন সবার পরিতুষ্টতা আমাকে শান্তি দেয়। অবশেষে যখন পরিবারের সবাই একেক করে সবার অলক্ষ্যে আমাকে সান্তনার বাণী শুনিয়ে বলে "তোর নিজের দিকেও একটু খেয়াল রাখিস" তখন অনন্দের অতিশয্যে বুকফেটে অনন্দাশ্রু বেরুতে চায়। নিজেকে সংবরণ করে নেই.. পুরুষ মানুষ তাই সবার সামনে কাঁদতেও পারিনা। কিন্তু মায়য়ের চোখকে ফাঁকি দিতে পারিনা। সে আমার কপালে চুমু দিয়য়ে বলে "নে বাপ এবার একটা বিয়ে কর" আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ি শিক্ষাকেন্দ্রে।
আমি বিধাতার কাছে শুকরিয়া জানাই আমার পরিবার, সমাজ, মধ্যবিত্ততার জন্য। তিনি যেমন খুশি আমাকে রাখতে পারেন। তিনিই রব, তিনিই তো অল্লাহ্! তিনি যা চান তাই হয়, যখন চান তখন হয়, যেভাবে চান সেভাবে হয়, যতটুকু চান ততটুকু হয়, যার জন্য চান তার জন্য হয়। তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাপরিচালক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:২৪