আমাদের সমাজে কন্যা সন্তান হলে অনেকেই নাক সিঁটকায়। ছেলে সন্তান দশ- বারোটা হলেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু একটা কন্যাসন্তান হলেই যেন বিধিরাম। প্রকৃত পক্ষে একজন কন্যাসন্তান পিতা-মাতার জন্য যে কতটুকু রহমত স্বররূপ তা বিপদে না পড়লে মা’লুম করা যায়না। কন্যাসন্তান তার বাবা-মায়ের জন্য যে খেদমত করতে পারে তা কোনও পুত্রসন্তানের কাছে কোনও দিনই সম্ভব না। বাবা-মায়ের প্রতি কন্যাসন্তানের যে দরদ তা পুত্রসন্তানের কাছে খুবই কম পাওয়া যায়।
.
অামাদের ভাড়াটিয়া (তাসনিম হামিদ- ৩২) তাঁর দু’ই মেয়ে। বয়সে ওরা এখনও অনেক ছোট। বড়জনের বয়স ৯ বছর, ছোটজনের বয়স ৫ বছর। হঠাঁৎ তাসনিম আপু অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় কোনও কাজ করার উপায় নেই। তার অসুস্থতার কথা শুনে আমার আম্মুকে সাথে করে সেখানে চলে গেলাম। তাসনিম আপু আমার আম্মুকে দেখে ঢুকরে কেঁদে উঠলো....
.
হঠাঁৎ আপুর বড় মেয়েটা বলে উঠলো আম্মু তোমার আজ কিছুই করতে হবে না। তুমি রেস্ট নাও। অামি কাপড়-চোপর ধুয়ে দিচ্ছি। ছোটজন এসে বললো, আম্মু আমি ঘর পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
হয়তো কাপড়-চোপর পরিষ্কার করার পরিবর্তে তারা জায়গাটা নোংরা করবে আর আমার আপুর কাজ আরও বাড়বে…! কিন্তু তাতে কী…? নিজেদের অক্ষমতাকে ছাপিয়ে তারা যা বলছে এবং করার চেষ্টা করছে, সে ক্ষেত্রে যদি কোনও ছেলে হতো তবে বলতো এই কথাগুলো…? উপরন্তু আরও গোটা কয়েক বায়না ধরে বসে থাকতো…!
.
আমার এক কলীগের ওয়াইফ এর কথা বলি। তার আম্মা বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। এমন অসুস্থ যে বাসায় খুব কমই থাকতেন। বছরের অধিকাংশ সময় কাটাতেন বিভিন্ন হাসপাতালের বেডে। মায়ের এই দুরাবস্থায় তার স্ত্রী যা করেছে তা সাধারণত চোখে পড়েনা। নিজের আরাম-আয়েশ, পড়া-শোনা, চাকরী, স্বামী - সংসার সব ফেলে রেখে শ্বাশুড়ির কাছে পড়েছিলেন। তিনি তার শ্বাশুড়ি মায়ের যে খেদমত করেছেন, আল্লাহ্ তার খেদমতকে বিফলে দিতে পারেন না। খেদমতের মাধ্যমে উনার মা-বাবার যে সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন, আল্লাহ্ তার উত্তম বদলা দান করুন। আমি এমনটি খুব কমই দেখেছি।
.
সর্বশেষ কন্যাসন্তান সম্পর্কে রাসুল (সঃ) এর বাণী পেশ করছি। আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এক ভিখারীনী দুটি শিশুকন্যা সাঙ্গে করে আমার কাছে এসে কিছু চাইলো। অামার কাছে একটামাত্র খেজুর ছাড়া কিছুই ছিলোনা। আমি তাকে সে খেজুরটি দিয়ে দিলাম। সে তা নিজে না খেয়ে দুভাগ করে কন্যা দুটিকে দিয়ে দিলো। এরপর ভিখারীণী চলে গেলে নবী (সঃ) আমাদের কাছে এলেন। তাঁর কাছে ঘটনার বিবৃত করলে তিনি বলেন, যাকে এরূপ কন্যাসন্তানের ব্যপারে কোনও পরীক্ষা করা হয় তবে সে কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে দাঁড়াবে। (বুখারী)
.
রাসুল (সঃ) আরও বলেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানকে প্রাপ্তবয়ষ্কা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, কিয়ামতের দিন সে ও আমি এমন অবস্থায় আসবো; এই বলে তিনি তাঁর হাতের আঙুলগুলোকে একত্র করলেন। (মুসলীম)
.
সতরাং আমাদের সকলের উচিৎ যে, কন্যাদের অবহেলা না করা। অামারা আমাদের কন্যাদের যথার্থ স্থান দিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে… এবং প্রতিজ্ঞা করি যে, যেখানেই কন্যাসন্তানের অমূল্যায়ন দৃষ্টি গোচর হবে সেখানেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে প্রতিবাদ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
.
রচনা ও সম্পাদনায়:
মাওঃ মাহ্দী হাসান রাজ
সহ-সম্পাদক: মাসিক আলোকবর্তিকা
নিয়মিত লেখক: মাসিক আদর্শ নারী ও পাক্ষিক নবিন পথিক।
যোগাযোগ: ০১৭১৬৫২৫৩২৬, ০১৯৬৭৫৩৩০৫৩
ই-মেইল: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১৩