পাঠক ভাই-বোনেরা, নিচের কৌতুকটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, আর মশা-মাছির দিকে নজর রেখে প্রান খুলে হাসুন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রান-খোলা হাসি মানসিক স্বাস্থের জন্য টনিকস্বরূপ।
কৌতুক নং- ০৭
এক লোক বিয়ে করেছে, তার বৌয়ের কোন ভাই-বোন নেই অর্থাৎ বেচারার শ্বশুর বাড়িতে শালা-শালী বলতে কেউ নেই। শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সে কোন মজা পায় না। এ জন্য সে সহজে পারতপক্ষে শ্বশুরবাড়ি যায় না।
শ্বশুর-শাশুড়ী এজন্য খুব দুঃখ বোধ করেন, তাদের একমাত্র মেয়ের জামাই বেড়াতে আসেনা---তারা প্রতিবেশীদেরও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হন।
শ্বশুর মশায় ছিলেন বেশ বিচক্ষণ ও চতুর। অনেক ভেবেচিন্তে একদিন তিনি স্ত্রীকে বললেন, " আমি বাজার-সওদা করে আনছি, জামাইকে আজ দাওয়াত দেবো। আমি যেটা যেভাবে বলবো, তুমি সেভাবে করবে। জামাই এ বাড়িতে এলে আনন্দ পায় না, এবার তার আনন্দ লাগার ব্যবস্থা করছি। "
আয়োজন করা হলো, জামাইকে যথাপরিকল্পনা দাওয়াত দেয়া হলো।
জামাই মিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও এলো। কুশলাদি বিনিময়ের পর শাশুড়ী জামাইকে খেতে ডাকলেন।
খেতে এসে জামাই দেখল, বড় এক প্লেটে সব সাজিয়ে শশুর মশায় ও জামাইকে একসাথে খেতে দেওয়া হয়েছে । শশুর মশায় তার অপেক্ষায় রয়েছেন।
আপ্যায়নের নতুন রীতি দেখে একটু বিস্মিত হলেও জামাই শশুরের সাথে একত্রে খেতে বসল। খাওয়া শুরু করতেই জামাই লক্ষ্য করল, শশুর মশায় মুরগী-মাংস-মাছ সবকিছুর বাছা বাছা বড় বড় টুকরোগুলো নিজের দিকে টেনে নিয়ে গেছেন। জামাই বেচারা লজ্জ্বায় কিছু বলতে বা করতেও পারলো না, ভালোভাবে খেতেও পারলো না, একপ্রকার অভূক্তই রয়ে গেল।
খাওয়ার প্রথম পালা এভাবে শেষ হওয়ার পর শাশুড়ী সেই প্লেটেই এবার দই, চিনি, ভাত সাজিয়ে দিলেন। এতোক্ষণে জামাই মিয়া শশুরের চালাকি ও মানসিকতা কিছুটা বুঝে গেছে। তাছাড়া পেটে ক্ষুধা। এ পর্যায়ে জামাই শশুরের উদ্দেশ্য বলল, " আব্বাজান, দু'একটা বিষয় আপনাদেরকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। আপনাদের মেয়েকে আমি যদি বলি ওদিকে যাও, সে আসে এদিকে।( এ কথা বলতে গিয়ে সে ভঙ্গি টা দেখনোর ছলে প্লেটে বেশ কিছু দই-চিনি নিজের দিকে টেনে কিছু ভাত শশুরের দিকে ঠেলে দিলো। ) আর যদি তাকে বলি এদিকে আসো, সে যায় ওদিকে। ( এবারও দেখানোর ছলে আরো কিছু দই-চিনি টানলো, ভাত ঠেলে দিলো। ) চতুর শশুর মশায় জামাই বাবাজীর মতলব বুঝলেন। তিনি বললেন, " বাবা, এ হলো কলি কাল। সব সময় এভাবে মিলেমিশে থেকো। " ( বলে দেখানোর ছলে তিনি সবটুকু দই-চিনি ভাতের সাথে মেখে ফেললেন। )
জামাই বাবাজীর এরপর থেকে এভাবে শশুর-বাড়ি সম্পর্কে ধারণা পাল্টে গেল।
( কবি জসীম উদ্দিনের ' বাঙ্গালীর হাসির গল্প ' অবলম্বনে। )