এক রাজার শুধুমাত্র দু'টো মেয়ে। রাজার বড়ই আদরের দুলালী। এ হেন আদরের কন্যাদ্বয় বিবাহযোগ্যা হয়েছে, যোগ্যপাত্র দেখে বিয়ে দিতে রাজা খুবই উদগ্রীব। কিন্তু মেয়ে দু'টোর বেয়াড়া মনোভাবে রাজা বড়ই বিপাকে পড়েছেন। কন্যাদ্বয়ের অনড়-অটল সিদ্ধান্ত, তারা বিয়ে করবেনা, চিরকুমারী থাকবে। অনেক বোঝানোর পর তারা শর্ত-সাপেক্ষে রাজী হলো। তাদের শর্তও খুবই অস্বাভাবিক ! শর্ত হলো, বিয়ের পর প্রতিরাতে মাথায় রাজকন্যাদ্বয়ের জুতোর ৫০ টি আঘাত নিতে যে বর রাজী হবে তাদেরকেই তারা বিয়ে করবে। রাজা তো পড়েছেন মহা বেকায়দায়। কি আর করা, শাহজাদীদের ইচ্ছানুযায়ী রাজা চতুর্দিকে ঘোষণা জারি করলেন পাত্রের সন্ধানে। অমন অপমানকর শর্ত শুনে কেউ এগোয়না। শাহজাদীদ্বয় তাতেই বেজায় খুশি।
পাশের গ্রামের বেজায় গরিব দুই ভাই, অতি কষ্টে দিন কাটে অর্ধাহারে-অনাহারে। একদিন কাজ মেলে তো দু'দিন মেলে না। রাজার জারিকৃত ঘোষণা তারাও জানতে পেরে অপেক্ষাকৃত অধিকতর চালাক ছোটভাইটি বড়ভাইকে প্রস্তাব করলো, চলো ক্ষুধার কষ্টে মরার চেয়ে রাজকন্যাদের শর্ত মেনে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি, ভালো খেতে-পরতে পারবো, শাহজাদীদের দামী জুতোর আঘাত ক্ষুধার কষ্টের চেয়ে সহজে সহনীয় হবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। দু'ভাই শর্ত কবুল করে রাজকন্যাদ্বয়কে বিয়ে করে ভিন্ন দুই রাজপ্রাসাদে চলে গেলো। বেশ কিছুদিন পর বাইরে একস্থানে দু'ভাইয়ের আকস্মিক সাক্ষাত। ছোটভাই বড়ভাইয়ের মাথায় টাক দেখে বিস্মিত হয়ে কারণ শুধায়। বড়ভাই ছোটভাইয়ের চুলের বাহার দেখে ততোধিক বিস্মিত হয়ে জানতে চায়, তাকে কি জুতো খুব আস্তে মারে! ছোটভাইয়ের জবাব, কেনো তুমি বিয়ের প্রথমরাতে বেড়াল মারো নি ! বড় ব্যগ্রচিত্তে বিস্তারিত জানতে চাইলে ছোটভাই বর্ণনা দিলো, বিয়ের প্রথম রাতে বাসর ঘরে ঢোকার আগে খেতে বসেই তলোয়ারটা খাপ থেকে বের করে পাশে রেখে খাওয়া শুরু করলাম। শাহজাদীর পোষা বেড়ালটা এসে জ্বালাতন শুরু করতেই তলোয়ার তুলে এককোপে বেড়ালটা মেরে ফেলে উচ্চস্বরে বললাম, আমার মেজাজ কড়া, কোন বেয়াদবী সইতে পারি না। সামনে বসা শাহজাদী তো লা-জবাব। তারপর আর জুতো মারার কথা ভাবার সাহস শাহজাদীর হয়নি। এতোটুকু শুনেই বড়ভাই একদৌড়ে নিজের বাসস্থলে হাজির। রাতে খেতে বসে ছোটভাইয়ের অনুসরণে সেও শাহজাদীর বেড়ালের মুন্ডুপাত করলো। আর তাতেই শাহজাদী রেগে গিয়ে জুতোর আঘাতের বরাদ্দ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করে দিলো। দু'-চার দিনেই বড়ভাইয়ের কাতর দশা। অনেক খুঁজে ছোটভাইয়ের সাক্ষাত পেয়ে বড়ভাই জানালো, তোর বুদ্ধি কাজে লাগাতে গিয়ে আমার দুর্ভোগ দ্বিগুন হয়ে গেছে। ছোটভাই বললো, " ভাই, বিলি্ল মারনা হ্যায় তো শাদী কা পেহলে রাত। "
( গল্পটি আমি অনেক আগে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর একটি বইয়ে পড়েছি। )
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১:৩৮