somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাত্র একবারই হলো ! ( একটি গল্প )

০৭ ই মে, ২০০৮ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, গল্পটি আমি ছোটো বেলায় কোথাও পড়েছি। স্মৃতি থেকে নিজের ভাষায় পরিবেশন করলাম, আপনাদের আনন্দদানের নিমিত্তে।)
তিন ভাইয়ের যৌথ পরিবার। বড় দু'ভাই বিয়ে-থা করেছে, ছেলে-পুলেও আছে। ছোট ভাইটি উচ্চশিক্ষার পাট শেষ করে ভালো চাকুরী করছে। যথারীতি যৌথ পরিবারে দুই বৌয়ের মধ্যে প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এসবের মাঝেই বড় দু'ভাই চাইছেন ছোট ভাইটিকে বিয়ে দিতে। বাড়ি এলেই বড় ভাইয়েরা এবং ভাবীরা প্রতিবারই ছোটভাইটাকে অনুরোধ করে, সে এটা-সেটা বলে এড়িয়ে যায়। খুব চেপে ধরলে বলে, বড় দুই ভাবীই তো সারাদিন বাড়ি মাথায় তুলে রাখছে। আরেকটাকে আনলে তো বাড়িতে আর তিষ্ঠোনো যাবেনা। কাজ নেই বিয়ে করে। ভাইয়েরা বলেন, তুই তোর রুচি মতো পছন্দ কর, আমরা আপত্তি করবোনা। ভাবীরা বলেন, আমরা তো ঝগড়াটে, তুই দেখে-শুনে আমাদের চেয়ে ভালো একটাকে আন, দেখি কেমন ভালো আনতে পারিস। অনেক চাপাচাপির পর ছোটভাইটি কিছু শর্ত দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হলো। তার শর্ত হলো, সে নিজে মেয়ে ও সম্বন্ধ পছন্দ করবে, এ ব্যাপারে কারো বিন্দুমাত্র কোন আপত্তি চলবেনা। আর আরেকটি অস্বাভাবিক শর্ত হলো, সে একা যাবে বিয়ে করতে, কোন বরযাত্রী থাকবেনা। অসন্তুষ্টচিত্তে হলেও বড় ভাইয়েরা এবং ভাবীরা তার এসব শর্ত মেনে নিল। ভাবলো, তবুও সে বিয়ে করুক। কিছুদিনের মধ্যেই ছোটো পাশের গ্রামে এক মেয়েকে পছন্দ করলো, ভাইয়েরা খবর নিয়ে তো অস্থির! মেয়ের বাবা নেই, মা ঝগড়াটে মহিলা হিসেবে সারা গ্রামে প্রসিদ্ধ। এমন মায়ের মেয়ে অতি ঝগড়াটে না হয়েই যায় না। কিন্তু একরোখা ভাইটিকে কিছু বলার সাহস কেউ পেলো না। নির্ধারিত দিনে ছোটো পূর্বাহ্নে সংগ্রহকৃত এক বুড়ো ঘোড়ায় চেপে কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে সাধারণ বেশে চললো বিয়ে করতে। ভাই ও ভাবীরা হতবাক। যাক, বিয়ের পর্ব সেরেই ছোটো শাশুড়ীকে বললো, বৌ সাথে নিয়ে সে আজই বাড়ি ফিরবে। ছোটো দুর্বল বুড়ো ঘোড়াটির পিঠে পেছনে বৌকে উঠিয়ে রওনা হলো। ঘোড়াটির এতো দুর্বল অবস্থা যে নিজে হাঁটাই ওটার জন্য কষ্টকর, উপরন্তু, পিঠে দু'জন সওয়ারী। কিছুদূর গিয়েই ঘোড়াটি বরকনে সমেত হোঁচট খেয়ে পড়লো। ছোটো টেনে-হিচড়ে বৌ আর ঘোড়া, দু'জনকেই ওঠালো। তারপর ঘোড়াটির সামনে দাঁড়িয়ে বললো, একবার হলো। নতুন বৌ ভেতরে ভেতরে জ্বলছে, মুখে কথা নেই। আবার যাত্রা শুরু। কিছুদূর গিয়েই আবার পতন। একইভাবে ছোটোর চেষ্টায় বৌ এবং ঘোড়ার উত্থান এবং ঘোড়ার উদ্দেশ্যে ছোটোর উচ্চারণ, দু'বার হলো। ফের চলা। এবং স্বাভাবিকভাবে কিছুদূর না যেতেই তৃতীয়বার সম্মিলিত পতন। ছোটো নীরবে বৌকে টেনে ওঠালো, তারপর ঘোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলো, এ নিয়ে তিনবার হলো, আর না। এ বলেই ছোটো ঘোড়াটির মাথায় গুলি করলো। বৌটি, ঝগড়াটে মায়ের ঝগড়াটে মেয়ে, এ যাবত অনেক কষ্টে নীরব থাকলেও এবার আর নিশ্চুপ থাকতে পারলোনা। ঘোড়াটি অতীতে কতো সেবা দিয়েছে, দুর্বল ঘোড়াটির পিঠে সওয়ার হওয়াটা কতো অনুচিত হয়েছে, এভাবে ঘোড়াটিকে মেরে ফেলা কতো অমানবিক হয়েছে, তাবৎ বিষয়ে নববধূ এক দীর্ঘ ভাষণ দিয়ে ফেললো। ছোটো নীরবে সব শুনে ভাষণশেষে শান্তভাবে বৌয়ের উদ্দেশ্যে বললো, একবার হলো। বলেই ছোটো একবারও পিছু না ফিরে বাড়িপানে হাঁটা দিলো, বৌটি ছোটোকে অনুসরণ করে শুড়শুড় করে এসে সেই যে ছোটোর ঘরে ঢুকলো, ছোটেকে আর কখনো " দু'বার হলো " বলার সুযোগ বৌটি দেয়নি। ভাইয়েরা-ভাবীরা ভেবেই পেলো না, ছোটো এ অসাধ্য কিভাবে সাধন করলো।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×