তারপর আমি তাকে লিখতে বসলাম। ভাবলাম তাকে বলি আমি শেষবারের মত লিখছি। কিন্তু না। আমার ভাগের অংশটুকু সে কেড়ে নেবেনা। কেউ নেয়না। আমি পাবো। একেকবার আমার তাকে মধুবন মনে হয়। মনে হয় খুব যখন সন্ধ্যা! গায়ের পশম দেখার মত আলো থাকেনা। রোগে ধুঁকতে ধুঁকতে রোগা একটা হাত সামনে বাড়িয়ে আশ্রয় খোঁজে। আপন কিছু শুনতে চায়। তখন কেউ বলুক দেখা হবে। তখন যেন এর থেকে প্রিয় আর কিছু নেই।
ধরা যাক আমি প্রথম পক্ষ নই,দ্বিতীয় পক্ষ নই। অথবা তৃতীয় পক্ষ হতে পারি। ধরা যাক একটা দুটো বেড়াল রোজ মানুষের মত কাঁদে। কুসি কুসি হাত পা নিয়ে গরম চেতনায় বুক খোঁজে। ধরা যাক কেউ বলল তোমার সাথে অনেক কথা আছে আমার! শৈশবে কেউ বলেনা কেমন আছো তুমি?-কতদিন তোমাকে দেখিনা। একারনেই আমাদের যৌবনের অপেক্ষা! আমি তাকে লিখতে বসেছি। হাত পা ছড়িয়ে ঘরের পথ করে দিতে সরে গেছি। সে গেছে বরফ ভেঙে ভেঙে কুঠার কিনতে। বনে যাবে। কাঠ কাটবে। আগুন জ্বালাবে। বড় তাপ প্রয়োজন তার। আমি বড় তাপে সেদ্ধ হতে হতে তাকে লিখি।
ভাবি বলব এবারই শেষ চিঠি লিখছি তোমাকে। সে জানে পুনশ্চ এক চিঠি পাবে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও চিঠি থেকে সুগন্ধ বেরুবে। সাধারন খাম গুলোর ডাকটিকিক বড় সাধারন হয় ওঠাতে গেলে ছিঁড়ে খুঁড়ে যায়। আমি বেছে বেছে মানুষ আনি। তারপর তার নাক চোখ মুখ কে ডাকটিকিট করে পাঠিয়ে দিই চিঠিটা। অনেক দূরে যে নেই এখন। নদীয়া আঁতকে ওঠে। এ কেমন চিঠি!
আরেকটু বেশি আমার নয় বলে এ আক্ষেপ তাকে বিরক্ত করে। সে কঠিন গলায় বলে দেয় উত্তরের ব্যালকুনিতে সবুজ গাছ লাগিয়ে রেখেছি। দয়া করে সময় মত পানি দিও। জলের উপর বেশিক্ষন কি ওড়া যায়! তার কাঠিন্যকে ভালবেসে কারন দিতে থাকি। এই যে অনন্তকাল পেরুবে তাকে ছাড়া সে সময় টা যেন কষ্ট কম হয় আমার।
এসব ঝড় খুব টের পাওয়া যায়। সে সব বোঝে। তার ঠোঁটের কোনে হাঁসি। সে বলে ঐখানে তুমি থাকো। ঐ সাদা বাড়িটার দোতলায় রাত হলেও বাতি জ্বলে। যদি তাকে খুঁজি এক আবল তাবল চিঠির প্রাপক ভেবে, সে হারাতে থাকে। হাত নেড়ে বলতে থাকে পাহাড় পেরিয়ে এসো। দেখা হবে।
প্রাপকেরা চিঠি পায়! আর সময় গুলো হয়ে যায় ডাকঘর। চিঠি পড়ে থাকে। পিওনের খামখেয়ালি! অসহ্য! একটা নতুন চিঠি আমি পুরোনো বছর কে দিয়েছি। আর বছর শেষে গুনতে যাই, ফেরতি চিঠিতে ডাকবাক্স আমার উপচে গেছে!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৬