রোদের উষ্ণতা মরে সন্ধ্যে প্রায় হব হব।
শেষ ফাল্গুনের এ কটা দিনে সামনের মেহগনি গাছটায় নতুন পাতা দেখছি।
কদিন আগেও পাতাহীন এ গাছটায় সন্ধ্যে হলেই ফলের মত কাক বসে থাকতো।
যেন সারা গাছ ভরে শুধু কাকের ফল;
চা খাব বলে মগে দুজনের মত চা নিয়ে বসলাম।
জানিতো এমনিতে তুমি চা খেতে চাওনা একদম,
সারারাত ঘুমের জন্য ছটফট করবে বলে-
অথচ আমাকে চা খেতে দেখলে তোমার চুমুক না দিলে হয়না!
অভিমান জমেছে বেশ,কদিন ধরেই ভাবছি ভেতরে রাখা ঝগড়াগুলোর একটা গতি হওয়া দরকার। কদিনের ঝগড়া বাকি আছে। আজ তাই আর কিছু বাকি রাখবোনা ঠিক করেছি।
তুমি চায়ে চুমুক দিতে এসে একটু থমকালে,
এমন ঠান্ডা চোখ দেখেতো অভ্যস্ত নও তুমি!
হঠাৎ দু'হাত উপরে তুলে যখন নাটুকে ভঙ্গিতে বললে,''আমি স্যারেন্ডার করছি,শাস্তি যা
দেবার দাও,মাথা পেতে নিচ্ছি। শুধু তোমার চোখটাকে আমার বিকেল করে দাও, নরম রোদ্দুর করে দাও।''
মুখ নিচু করে ফেললাম আমি। চোখে খুব দ্রুত ভালবাসা জমছে।,উষ্ণ হয়ে উঠবে নিমেষে,এখন এমন সময় এ চোখ কি আর তোমাকে দেখানো যায়!
আজ তো ঝগড়া করবো ঠিক করে আছি।
তুমি পাগলামী শুরু করেছো।
তর্জনী দিয়ে এ ঠোঁটের কোন ছুঁয়ে বললে,এখানেই না মশক ভরে হাসি জমা রেখেছিলাম!
এইতো এইতো এইখানে...
দেখি দেখি...
আমি খুব বিরক্ত হবার ভান করে বললাম,ঢং করো না তো!''
তুমি হেসে গড়িয়ে পড়ছো। না তাকিয়েই বুঝছি তোমার সারা শরীর ক্ষমা চাচ্ছে।
কিন্তু আমি জানি তোমার দিকে তাকালেই আমার আর রাগ থাকবেনা।
একটা গোপন ইচ্ছে চুপি চুপি বলি,আমার কিন্তু ভীষন ইচ্ছে করছিল তখন তোমাকে দেখতে। ইনফ্যাক্ট আমার সবসময়ই ইচ্ছে করে!
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে যাচ্ছে নৈঃশব্দ হয়ে।
আজ আমি আর অভিমান পুষে রাখতে পারবোনা।
তোমাকে না বলতে বলতে, ক্ষমা করার ভান করতে করতে মরে যাচ্ছি আমি।
কেন তুমি এমন করবে!
কেন আমার সকল ইচ্ছে অবহেলায় শুকিয়ে যাবে!
কেন তোমায় যখন তখন ব্যস্ত দেখবো আমি,যেখানে তুমি বাইরে তাকালেই দেখছো বৃষ্টি হচ্ছে!
কেন আমায় নিয়ে তুমি কদম ফোটার অপেক্ষা না করেই জঘন্য সব সাংসারিক চিন্তায় মেতে থাকবে!
তোমার ফোন বিজি পেতে পেতে আমি ক্লান্ত, যে প্রজাপতিটা ভুল করে ঢুকে পড়েছিল বন পেরিয়ে নগরে,তারপর আমার দরজার হাতলে এসে বসেছিল অনেকক্ষন,
উড়তে উড়তে
সে দরজার বাইরে গেল,বেলকুনিতে অপেক্ষা করলো কিছুক্ষন,
কিছুক্ষন-
আমার পাতার টবে বসে রইলো তবু তোমাকে জানাতে পারলামনা।
দুপুর গড়িয়ে গেল,সমস্ত ক্লায়েন্ট তোমার মনোযোগ পেয়েছে,শুধু আমি ক্ষুধার্ত
থাকলাম রোজকার মত।
তোমাকে ফোন দিলেই একটা নিষ্ঠুর কন্ঠ বলে,আমি ব্যস্ত আছি!
কেন তুমি আমার কষ্ট বুঝবেনা!
কেন আমার দুপুর গড়িয়ে রাত্রী আসে পুরোনো তোমাকে পাবার অপেক্ষায়!
কেন দীর্ঘ দেহ ঘুম সেরে তুমি জাগবেনা!
ভীষন রকম অভিযোগে তোমাকে ছড়াবাজের মত বিধ্বস্ত করে তুলবো আজ।
তুমি কি দিব্যি নতুন কবিতার মত হেসে গড়িয়ে পড়ছো!
যেন আমার অভিমান সত্যিই ছেলেখেলা। এতবার রিহার্সাল দেয়া কথাগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঠিক সময়ে কথাগুলো বলতে না পারলে....
আহ! কখনোই তো পারিনা ছাই।
আজ যতই ভুলাও আমাকে,
আমি তো ঠিক করে রেখেছি সব অস্ত্র এক করে ঝগড়া করবো, করবোই-
যেন তুমি স্পর্শ করতে পারো আমার সব অভিমান!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:১৪