১. ৩ ডিসেম্বর ২০১১।
“নিজেদের ক্রেডিবিলিটি ধরে রাখতে ব্লগগুলো মনিটর করুন।”
বললেন, এলজিআরডি মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
ব্লগে পর্ন চর্চার অভিযোগ আনেন তিনি। যে অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন সেখানে উপস্থিত বিডি নিউজের একজন মুখপত্র বলেন, “আমাদের ব্লগ ও মতামত বিভাগের মন্তব্যে মডারেশন ছাড়া একটি শব্দও প্রকাশ করা হয় না।”
পুরো সংবাদের লিংক ।
২. ৬ ডিসেম্বর ২০১১।
ভারতের যোগাযোগ মন্ত্রী কপিল সিবাল অনলাইনে আপত্তিকর, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রচারের দায়ে ফেসবুক ও টুইটার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন।
এ বিষয়ে একটি খবর।
৩. ১৯ ডিসেম্বর ২০১১।
পালিত হলো তৃতীয় বাংলা ব্লগ দিবস। প্রতিপাদ্য ‘গণজাগরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সাইবার আইন’। ব্লগ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ব্লগের মডারেটর ও ব্লগাররা যৌথভাবে একটি লেখা প্রকাশ করেন প্রথম আলোতে। তাতে ব্লগের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করে ব্লগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়নের আহবান জানানো হয়।
লেখাটির লিংক।
৪. ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
মুক্তমত নিয়ন্ত্রণের জন্য আহবান জানান বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী।
সেই খবরের লিংক।
৫. ২৮ ডিসেম্বর ২০১১।
ব্লগ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পষ্ট আইন করার জন্য দাবি জানালেন বিডি নিউজ ব্লগের মডারেটর আইরিন।
তার ব্লগের লিংক।
৬.২৯ ডিসেম্বর ২০১১।
বাংলা নিউজ আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় ব্লগ সহ অনলাইন স্পেস নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পষ্ট আইন করার আহবান জানালেন বিডি নিউজের ব্লগ বিশেষজ্ঞ (ব্লবি) কৌশিক আহমেদ। ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম।
মূলত ২৯ তারিখের আগে আমি ওপরের তথ্যগুলো জেনেছি, কিন্তু এগুলোর গুরুত্ব কী, তাৎপর্য কতদূর যেতে পারে তা নিয়ে সচেতন ছিলাম না। কিন্তু গোলটেবিল আলোচনায় কৌশিকের মত শুনে ঘটনার ভয়াবহতা কিছুটা টের পেলাম। ঘটনার সারসংক্ষেপ আমার কাছে মোটামুটি এই :
সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ব্লগ নিয়ন্ত্রণের আহবান জানানোর পর বাংলা ব্লগের মডারেটর ও উদ্যোক্তারা তার ইচ্ছা পূরণের জন্য কাছা খুলে মাঠে নেমেছেন। আর এই কাছাখোলা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিডিনিউজ। ব্লগ ও মুক্ত মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের আহবান জানিয়ে বিডিনিউজ তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনকে শুধু কলঙ্কিত করেনি। তাদের দুই কর্মকর্তাকে মাঠে নামিয়েছে সরকারের ইচ্ছা পূরণে জনমত তৈরির জন্য। যদিও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ব্লগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা ছিল মিথ্যা। মুক্তমত নিয়ন্ত্রণের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি। এ নিয়ে একরামুল হক শামীম সমকালে একটি লেখা লিখেছেন । সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মত তাতে খণ্ডন করা হয়েছে।
বিডিনিউজ কীভাবে ব্লগ ও মুক্তমত নিয়ন্ত্রণের এই আয়োজনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এবং নিয়ন্ত্রণের এই মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা কী অসার যুক্তি দিচ্ছে তার বিবরণ দিয়েছেন সচলায়তনের হিমু ।
ফেসবুক টুইটার নিয়ন্ত্রণ করার আগ্রহ প্রকাশ করার পর ভারতের মন্ত্রী কপিল সিবালের কঠোর সমালোচনা হয়েছে সেখানকার অলটারনেটিভ মিডিয়া ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায়। মিডিয়াগুলো একবাক্যে কপিলের মন্তব্যকে মুক্তমত নিয়ন্ত্রণের ছলনা বলে প্রত্যাখান করেছে। তারা বলেছে, ভারত চীন নয়, এখানে মুক্তমত থাকবে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য মতপ্রকাশের গতি রুদ্ধ করা যাবে না। সেখানকার জনপ্রিয় পত্রিকা আউটলুক কপিল সিবালের একটি ক্যারিকেচার করেছে হিটলারের মতো করে। প্রায় প্রতিটি দৈনিক কপিলের মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে। গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে সেটিই স্বাভাবিক। ভারতের মিডিয়া প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে মন্ত্রীর মন্তব্যের পর ব্লগের মডারেটর ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার একটি অংশ ন্যাক্কারজনক ভূমিকা নিয়েছে।
প্রথমত, দেশের প্রধান অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজের সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠানটির ব্লগ টিম আইন প্রণয়নের জন্য যুক্তিজাল রচনা করে চলেছেন।
দ্বিতীয়, যেখানে ব্লগ কর্তৃপক্ষগুলোর উচিত ছিল মন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা। সেখানে তারা তা করেনি, উল্টো মন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তারা সরকারের চাপে প্রতিবাদ জানাতে না পারুক, অন্তত চুপ থাকতে পারতো। কিন্তু তা না করে, ব্লগ দিবসে সবাই একজোট হয়ে নিপীড়নমূলক আইনের পক্ষে স্লোগান দিয়েছে। প্রথম আলোতে লেখা প্রকাশ করেছে। গণজাগরণে সামাজিক মাধ্যমের উদাহরণ দিয়েছে বটে, কিন্তু তাদের কথার যে সার তা নিপীড়ন মূলক আইন আমদানীর পক্ষেই যায়।
আমার মতে, মতাদর্শিক দেউলিয়াত্ব, মেরুদণ্ডহীনতা, ক্ষমতাসীনদের তোষণের নীতির এর পেছনের মূল কারণ। এদের কেউ হয়তো ভয়ে মন্ত্রীর পক্ষ নিয়েছেন। কেউ ভুল করে নিয়েছেন। কিন্তু এদের একটি অংশ জেনে বুঝে অপকর্ম করছেন। মুক্ত মিডিয়া, বিকল্প মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগের স্বার্থে এদের প্রতিহত করতে হবে। নাগরিকদের কথা বলতে হবে। নইলে অনলাইনে কথা বলার স্বাধীনতা শীঘ্রই আমরা হারাবো। যেসব অপরাধ আমরা করি না, করিনি তার দায়ভার বয়ে নিয়ে মুখ বন্ধ করে বসে যেতে হবে।
আমার মতে, সেটি হ্ওয়া উচিত নয়।