আজ পরীক্ষা ছিল। গতবার তবু ল্যাপটপ বের করে কতবার কিছু লিখতে গিয়েও দেখি আমার হাত দিয়ে অনায়াসে যেখানে এলোমেলো গল্প বের হত সেখানে আমি কিছুই লিখতে পারছি না।
রিমন ভাই তোমাকে নিয়ে আমি কী লিখব? কোথা থেকে লেখা শুরু করব? আমি এক ক্ষুদ্র কথাশ্রমিক মাত্র। আমি হয়ত পারব না ভালো কিছু লিখতে। তারপর মনে হলো, তোমার সামনে সব ভালোই তুচ্ছ মনে হবে। আজ আমি শুধু আমার কিছু কথা বলতে চাই, আজ আমি শুধু তোমার কথা জানাতে চাই।
২১ তারিখ বিকেলে পড়ছি। ২৪ তারিখ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চোখ শেষ করে কান পড়া শুরু করেছি। তখন তোমার জন্য পাগল তোমার আরেক ছোটভাই সৌরভ ফোন দিল। ফোনে কেবল কান্না শব্দ শুনি। বিশ্বাস করো, এমন করে ওকে আমি কখনোই কাঁদতে দেখিনি। ও শুধু বলল, চাচা আইসিউতে। অবস্থা খুব খারাপ, মনে হয় মারা গেছে। আমি বুঝিনি তোমার কথা বলছে। তারপর যখন বুঝতে পারলাম, প্রথমেই মনে পড়ল ৫ থেকে ৭ ঘন্টা আগে তোমার সাথে কথোপকথনের কথা।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা ভাই। ঢাকায় এলে খাওয়াবেন
খাওয়বো। ভালো করে আগে পরীক্ষা দে সোনা।
সোনা, ব্যাটা এসব বলেই তো ডাকতে আমাদের। ভেঙ্গে পড়লে বুকে টেনে নিয়ে এভাবেই তো বোঝাতে আমাদের।
ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবার পর সবমিলিয়ে তোমার সাথে হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে। শেষবার যখন দেখা হল, বললে, তোদের কী এত মিস করি অথচ তোরা ঢাকায় এলে দেখাই করিস না। এজন্য কী এভাবে প্রতিশোধ নিতে হবে?
প্রচন্ড মায়াময় একটি পরিবার, অসম্ভব ভালো একজন আপু, তোমার বন্ধু লিজন, লিমন, শাওন, আসিফ, বিপ্লব? আর কেউ তোমার, লিমন আর লিজন ভাই এর ভেতরে নাম ভুল করবে না? আর ভুল করবেই না কেন? তোমরা তো সব ছিলে এক-ই আত্মার মধ্যে। তাদের উপর এটা কেমন প্রতিশোধ?
আর এখন আমি কী দেখছি? যে তোমার সাথে একবার হলেও কথা বলেছে সেই মানুষটা পর্যন্ত কাঁদছে। হোস্টেলের মনসুর ভাই, হোসেন ভাই, রাধুনী হোটেলের মানুষ থেকে শুরু করে সব্বাই। অনেকদিন বাঁচলেও এত মানুষের ভালোবাসা কেউ পায় না।
তুমি বড় সাধারণ ছিলে। এতটাই সাধারণ যা তোমাকে অসাধারণ করে তুলেছিল। তুমি এমন-ই থাকবে সারাজীবন। আমরা জুনিয়রদের কাছে গল্প করে যাবো- আমাদের একটা ভাই আছে, ভাইটাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু যখন বিপদ আসে তখন কানের কাছে একটা জাদুকরী ভারী কন্ঠ বেজে ওঠে- কীরে ব্যাটা,কী হইসে রে? কিচ্ছু হবে না।