
গতকাল ঘুরে এলাম মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত (সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার অন্তর্গত) বারিক্কা টিলা। এক চমৎকার নৌকা ভ্রমন, এক অবর্ননীয় অভিজ্ঞতা। ইঞ্জিন-নৌকা ভাড়া করে আমার অফিস সহকর্মীবৃন্দ ও আমাদের অতি প্রিয় জাহিদ ভাই ও তার সহকর্মীবৃন্দ স্বপরিবারে এই ভ্রমনে রওনা হই। সকাল ৯.৩০টায় আমরা রওনা দিই আর পৌঁছাই ২.৩০টায় (স্থানে স্থানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বেশী ঘোরা পথে যেতে হয় আমাদের)। ওখানে পৌঁছে আমরা প্রথম যাই বিডিআর ক্যাম্পে (জাহিদ ভাই ও ভাবীর পরিচয় সূত্রে)। সেখানে সবাই ফ্রেশ হই। ঐ রিমোট পরিবেশেও আমাদের চমৎকার আপ্যায়ন করেন তারা (তাদের আপ্যায়নে সত্যিই কৃতজ্ঞ আমরা)। এরপর কয়েকজন বিডিআর সদস্য আমাদের সাথে আসেন আমাদের টিলা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। ঘোরাঘুরির পাশাপাশি ওদিকে রান্নাবাড়া চলতে থাকে। রান্না শেষ হলে ৫.৩০টায় রওনা দিই আমরা। ফেরার পথে নৌকার উপর চলে আমাদের খাওয়া দাওয়া। আমাদের বাসায় পৌঁছাতে বাজে রাত ১০টা (রাতের অন্ধকারে বিস্তীর্ন করচার হাওড়ে কয়েকবার পথ ভুল হয় আমাদের, মৎস্যজীবিদের সহায়তায় আবার পথ খূঁজে পাই)।
সংক্ষেপে বারিক্কা টিলাঃ বারিক্কা টিলা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার অন্তর্গত। এখানে বাংলাদেশের সীমান্ত, ওপাশে ভারতের মেঘালয়, খাসিয়া পাহাড়। বারিক্কা টিলাটিতে রয়েছে ৪০ ঘর মত আদিবাসীদের বসবাস। ঘন সবুজে পূর্ণ টিলাটির মাঝখান দিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি পাকা রাস্তা যেটি দিয়ে মোটর সাইকেল যোগে যাওয়া যায় টেকেরঘাট। বারিক্কা টিলার পাশে রয়েছে যাদুকাটা নদী যা ভারতের খাসিয়া পাহাড় হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীর অপর পাড়ে রয়েছে লাউয়ের গড় বি.ডি.আর ক্যাম্প। বর্ষার ঢলে ভারতের পাহাড় হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বালু আর পাথর আর গাছের ডালপালা যা উত্তোলন করা হয় এই মৌসুমে। বালু-পাথর ও গাছের শাখা-প্রশাখা (স্থানীয় লোকেরা জ্বালানীর জন্য সংগ্রহ করে) তোলার জন্য শত শত নৌকা জড় হয় এখানে। দূরে পাহাড়, এক পাশে টিলা, তার পাশ দিয়ে নদী, সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এছাড়া ভারতের পাহাড়ে রয়েছে একটি তীর্থস্থান ও একটি মাজার যেখানে বছরের নির্দিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন দিনে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক জড় হয় পূণ্য স্নান ও উরসে, তখন বিডিআর ও বিএসএফের সমঝোতায় ২-১ দিনের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করা হয় (সেই সময় উভয় দেশের লোক উৎসবে জড় হয়)। সুনামগঞ্জ থেকে নৌকা(নাব্যতা যতদিন থাকে) কিংবা মোটর সাইকেলযোগে যাওয়া যায় এখানে। সময় লাগে ৩-৪ ঘন্টা মত।
ওখানকার পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। গতকাল তোলা সেরকম মনোমুগ্ধকর কিছু দৃশ্য।

একটি প্রাইমারী স্কুল ছিল এটি।

নদী থেকো তোলা বালু-পাথর ভর্তি হয় কার্গোয়, চলে যায় বিভিন্ন জেলায়।

যাদুকাটা নদী থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু, পাথর।

যাদুকাটা নদী থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু, পাথর।

বারিক্কা টিলার একাংশ, দূরে খাসিয়া পাহাড়।

কিছু অংশ আছে এখানে বীচের মত।

দূরে পাহাড়ের দিকে চলে গেছে পথটি।

বারিক্কা টিলার ওপর হতে যাদুকাটা নদী ও নৌকা

বারিক্কা টিলার ওপর হতে যাদুকাটা নদী ও নৌকা

কাজ শেষে ঘরে ফিরছে আদিবাসী নারী।

আমাদের দলের একজন ক্ষুদে পর্যটক।

ঐ যে দূরে নদী দেখা যাচ্ছে।

দূরন্ত পাহাড়ী বালক।

নদীতে মাছ ধরা নৌকা।

মৎস্য শিকারে ব্যস্ত আদিবাসী বৃদ্ধ।

মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরছে দুই যুবক।

নদীর টলটলে জলে মেঘের প্রতিচ্ছবি।

ফেরার পথে সূর্যাস্ত।

সূর্যাস্ত।

সূর্যাস্তের পর নদীর পাড়।

সূর্যাস্তের পর নদীর পাড়।

রাতের বেলা বিপরীত দিক থেকে আসা নৌকার আলো ও আমার হাতের কম্পন।

আমার গতকালের স্মৃতিটাও একসময় হয়ে যাবে নস্টালজিক

ছবি উৎসর্গ আমার ছোট্ট সোনামনি প্রজ্ঞাকে যাকে দেখার জন্য আমার বুকটা ছটফট করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:১৭