somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

;)শৈশব! দুনিয়ার বেহেশত!! (মার খাওয়া এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অতঃপর মলম ট্রিটমেন্ট) ;)

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন ক্লাস থ্রী তে পড়িতাম। সম্ভবত গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড গরম।পুকুরে সাঁতার কাটিতে খুব ভালো লাগিত। যে কারণে দুপুরে মায়ের চোখে ধুলো দিয়ে পুকুরে নামিয়া যাইতাম। শুধু আমি না, আমারা ছয় সাত জন সমবয়সী চাচাতো ভাই মিলিয়া এক সাথে পুকুরে নামিতাম। আগেই বলিয়া রাখি, আমারা ছিলাম একান্নবর্তী পরিবার, আমাদের পরিবার ছাড়াও আরো ৭ জন চাচার পরিবার লইয়া আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। মোট ৮ ঘর। আমাদের বাড়ি ছিল বিশাল, বাড়ির ভিতরেই শান বাঁধানো পুকুরঘাট।

যথারীতি ঘটনার দিন আমারা সকলেই পুকুরে নামি। পুকুরে নামিলে আর উঠিতে ইচ্ছা করিত না। কিছুক্ষণ গোসলের পর চোখ ধোঁয়াটে হইয়া যাইত। হঠাৎ দেখিলাম মা আমাদের সবাইকে দেখিয়া গেলেন। আমি সবাইকে বলিতে লাগিলাম, "চল উঠে পড়ি, মা দেখেছে।" আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই বলিয়া উঠিল, 'আরে না! মাত্র দেখে গেছে, আধা ঘণ্টার মধ্যে আর আসবে না।' তার কথা শুনিয়া আমারা সকলেই আশ্বস্ত হইলাম এবং পুনরায় নানাবিধ খেলায় মাতিয়া উঠিলাম। হঠাৎ দেখি বাবা আর ছোট চাচা দুজনে পুকুর ঘাটে আসিয়াছেন, তাদের দুজনের হাতেই দা। দা দেখিয়া আমাদের সকলের পিলে চমকাইয়া গেল। ছোট চাচা আমাদের দিকে তাকাইয়া ছোট একটা হাসি দিলেন। অতঃপর হাটতে হাটতে দুজনেই পুকুরের ঐ পাড়ে বাঁশঝাড়ে ঢুকিয়া বাশ কাটিতে লাগিলেন, আমারা সকলেই নিশ্চিন্ত হইলাম। ভাবিলাম এই যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেল। ছোট চাচার হাসি আমাদের আরো কিছুক্ষণ গোসল করিবার সাহস জোগাইয়া ছিল। তারপর নিশ্চিন্ত মনে সাতার কাটিতে লাগিলাম। তখনো ভাবিনাই আমাদের কপালে আজ দুঃখ রহিয়াছে।:((
কিছুক্ষণ পর দেখি বাবা পুকুরের এই পাড়ে, আর ছোট চাচা ঐ পাড়ে দাঁড়াইয়া আছেন। তাদের দুজনের হাতেই সদ্য কেটে আনা লিকলিকে কঞ্চি। তারপর কি ঘতিয়াছিল তাহা বলিতে কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ হইতেছে।:(( কিন্তু পরদিন আর স্কুলের ব্রেঞ্চে বসিতে পারি নাই, স্বইচ্ছায় দাঁড়াইয়া ক্লাস করিয়াছি। ঘটনার পরদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে দেখিলাম, আমার বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই ফুরফুরে মেজাজে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। এই ব্যাপার খানা দেখিয়া আমার ভালো লাগিল না, তাই অন্য চাচাতো ভাইদের সংগে লইয়া অনুসন্ধানে নামিলাম। কিন্তু ঘটনার কোন কূল-কিনারা না পাইয়া আমার তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, কি কারনে সে অঙ্গে ব্যাথা লইয়া ফুরফুরে মেজাজে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে? তাহার নিকট হইতে কোন সদুত্তর পাইলাম না! পরিবর্তে তার চোখে মুখে নিষিদ্ধ কিছু আবিষ্কারের আনন্দ ফুটিয়া উঠিতেছিল। ইহাতে আমাদের উৎসাহ আরো বাড়িয়া গেল, ঘটনা জানার জন্যে উদগ্রীব হইয়া উঠিলাম।এবং তাহার পিছন পিছন হাটিতে লাগিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি তাহার হাফ প্যান্টের পিছন দিকটা ভিজিয়া উঠিয়াছে। আমারা সকলেই হাসিতে লাগিলাম।:) আমার বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই কিঞ্চিৎ লজ্জা পাইল।/:) অতঃপর তাহার নিকটে আমারা ঘটনা জানিতে চাইলাম। সে বলিল, 'ফুলিয়া যাওয়া স্থানে মলম লাগাইয়াছি।' তাহার কথা শুনিয়া আমারা অবাক হইলাম। সবাই তাহার বুদ্ধির প্রশংসা করিলাম। তাহার পর সকলেই মলম অনুসন্ধানে ঘরের দিকে রওনা হইলাম । অনুসন্ধানে সফলও হইলাম, সকলেই মলম লইয়া একস্থানে মিলিত হইলাম। সবার হাতেই মলম, কারো হাতে নেবানল, কারো হাতে টাইগার বাম, আবার কারো হাতে শেভিং ক্রিম। সকলেই প্যান্টের মধ্যে হস্ত ঢুকাইয়া মলম লাগাইয়াছিলাম। বিপত্তি ঘটিল যখন মলম শুকাইয়া চরচর করিতে লাগিল, বিশেষ করে যাহারা শেভিং ক্রিম লাগাইয়াছে তাহাদের অবস্থা বেগতিক। বুদ্ধিমান চাচাতো ভাইয়ের পরামর্শে তাহারা হাতে কিছু পানি লইয়া ক্ষতস্থানে ঘোসিতে লাগিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই তাহাদের হাত হইয়া উঠিল ফেনাময়। ;) ফেনা দেখিয়া আমারা সকলেই অবাক হইলাম! বাকি সবাই পানি ব্যবহার হইতে বিরত থাকিলাম। নতুন করে প্যাঁদানি খাওয়ার চিন্তায় ফেনাওয়ালাদের চোখ সিক্ত হইয়া উঠিল। হঠাৎ করিয়া বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই দৌড়াইয়া গিয়া একটি তালের পাখা লইয়া আসিলো। এবং ফেনাওয়ালার প্যান্টের পিছন দিকে টানিয়া ধরিয়া ভিতর দিকে বাতাস করিতে লাগিলো। এবং কিছু সময় পরে ফেনা শুকাইয়া গেল। আমারা সকলেই আমাদের বুদ্ধিমান চাচাতো ভাইয়ের বুদ্ধির প্রশংসা করিলাম।
অন্দরমহলে চরচরে ভাব লইয়া একটি পূর্ণ রজনী কাটাইয়া দিলাম। পরদিন গোসল করিয়া সকল বিপত্তি হইতে মুক্ত হইলাম।
এমনি হাজারো ঘটনা আছে আমার শৈশবে। প্রচণ্ড ভয়ভীতির মাঝেও শৈশব ছিল অসম্ভব রঙ্গিন। হায় শৈশব! কোনদিন আর ফিরে পাব না তোকে!!!
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×