আমি তখন ক্লাস থ্রী তে পড়িতাম। সম্ভবত গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড গরম।পুকুরে সাঁতার কাটিতে খুব ভালো লাগিত। যে কারণে দুপুরে মায়ের চোখে ধুলো দিয়ে পুকুরে নামিয়া যাইতাম। শুধু আমি না, আমারা ছয় সাত জন সমবয়সী চাচাতো ভাই মিলিয়া এক সাথে পুকুরে নামিতাম। আগেই বলিয়া রাখি, আমারা ছিলাম একান্নবর্তী পরিবার, আমাদের পরিবার ছাড়াও আরো ৭ জন চাচার পরিবার লইয়া আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। মোট ৮ ঘর। আমাদের বাড়ি ছিল বিশাল, বাড়ির ভিতরেই শান বাঁধানো পুকুরঘাট।
যথারীতি ঘটনার দিন আমারা সকলেই পুকুরে নামি। পুকুরে নামিলে আর উঠিতে ইচ্ছা করিত না। কিছুক্ষণ গোসলের পর চোখ ধোঁয়াটে হইয়া যাইত। হঠাৎ দেখিলাম মা আমাদের সবাইকে দেখিয়া গেলেন। আমি সবাইকে বলিতে লাগিলাম, "চল উঠে পড়ি, মা দেখেছে।" আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই বলিয়া উঠিল, 'আরে না! মাত্র দেখে গেছে, আধা ঘণ্টার মধ্যে আর আসবে না।' তার কথা শুনিয়া আমারা সকলেই আশ্বস্ত হইলাম এবং পুনরায় নানাবিধ খেলায় মাতিয়া উঠিলাম। হঠাৎ দেখি বাবা আর ছোট চাচা দুজনে পুকুর ঘাটে আসিয়াছেন, তাদের দুজনের হাতেই দা। দা দেখিয়া আমাদের সকলের পিলে চমকাইয়া গেল। ছোট চাচা আমাদের দিকে তাকাইয়া ছোট একটা হাসি দিলেন। অতঃপর হাটতে হাটতে দুজনেই পুকুরের ঐ পাড়ে বাঁশঝাড়ে ঢুকিয়া বাশ কাটিতে লাগিলেন, আমারা সকলেই নিশ্চিন্ত হইলাম। ভাবিলাম এই যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেল। ছোট চাচার হাসি আমাদের আরো কিছুক্ষণ গোসল করিবার সাহস জোগাইয়া ছিল। তারপর নিশ্চিন্ত মনে সাতার কাটিতে লাগিলাম। তখনো ভাবিনাই আমাদের কপালে আজ দুঃখ রহিয়াছে।
কিছুক্ষণ পর দেখি বাবা পুকুরের এই পাড়ে, আর ছোট চাচা ঐ পাড়ে দাঁড়াইয়া আছেন। তাদের দুজনের হাতেই সদ্য কেটে আনা লিকলিকে কঞ্চি। তারপর কি ঘতিয়াছিল তাহা বলিতে কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ হইতেছে। কিন্তু পরদিন আর স্কুলের ব্রেঞ্চে বসিতে পারি নাই, স্বইচ্ছায় দাঁড়াইয়া ক্লাস করিয়াছি। ঘটনার পরদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে দেখিলাম, আমার বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই ফুরফুরে মেজাজে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। এই ব্যাপার খানা দেখিয়া আমার ভালো লাগিল না, তাই অন্য চাচাতো ভাইদের সংগে লইয়া অনুসন্ধানে নামিলাম। কিন্তু ঘটনার কোন কূল-কিনারা না পাইয়া আমার তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, কি কারনে সে অঙ্গে ব্যাথা লইয়া ফুরফুরে মেজাজে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে? তাহার নিকট হইতে কোন সদুত্তর পাইলাম না! পরিবর্তে তার চোখে মুখে নিষিদ্ধ কিছু আবিষ্কারের আনন্দ ফুটিয়া উঠিতেছিল। ইহাতে আমাদের উৎসাহ আরো বাড়িয়া গেল, ঘটনা জানার জন্যে উদগ্রীব হইয়া উঠিলাম।এবং তাহার পিছন পিছন হাটিতে লাগিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি তাহার হাফ প্যান্টের পিছন দিকটা ভিজিয়া উঠিয়াছে। আমারা সকলেই হাসিতে লাগিলাম। আমার বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই কিঞ্চিৎ লজ্জা পাইল। অতঃপর তাহার নিকটে আমারা ঘটনা জানিতে চাইলাম। সে বলিল, 'ফুলিয়া যাওয়া স্থানে মলম লাগাইয়াছি।' তাহার কথা শুনিয়া আমারা অবাক হইলাম। সবাই তাহার বুদ্ধির প্রশংসা করিলাম। তাহার পর সকলেই মলম অনুসন্ধানে ঘরের দিকে রওনা হইলাম । অনুসন্ধানে সফলও হইলাম, সকলেই মলম লইয়া একস্থানে মিলিত হইলাম। সবার হাতেই মলম, কারো হাতে নেবানল, কারো হাতে টাইগার বাম, আবার কারো হাতে শেভিং ক্রিম। সকলেই প্যান্টের মধ্যে হস্ত ঢুকাইয়া মলম লাগাইয়াছিলাম। বিপত্তি ঘটিল যখন মলম শুকাইয়া চরচর করিতে লাগিল, বিশেষ করে যাহারা শেভিং ক্রিম লাগাইয়াছে তাহাদের অবস্থা বেগতিক। বুদ্ধিমান চাচাতো ভাইয়ের পরামর্শে তাহারা হাতে কিছু পানি লইয়া ক্ষতস্থানে ঘোসিতে লাগিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই তাহাদের হাত হইয়া উঠিল ফেনাময়। ফেনা দেখিয়া আমারা সকলেই অবাক হইলাম! বাকি সবাই পানি ব্যবহার হইতে বিরত থাকিলাম। নতুন করে প্যাঁদানি খাওয়ার চিন্তায় ফেনাওয়ালাদের চোখ সিক্ত হইয়া উঠিল। হঠাৎ করিয়া বুদ্ধিমান চাচাতো ভাই দৌড়াইয়া গিয়া একটি তালের পাখা লইয়া আসিলো। এবং ফেনাওয়ালার প্যান্টের পিছন দিকে টানিয়া ধরিয়া ভিতর দিকে বাতাস করিতে লাগিলো। এবং কিছু সময় পরে ফেনা শুকাইয়া গেল। আমারা সকলেই আমাদের বুদ্ধিমান চাচাতো ভাইয়ের বুদ্ধির প্রশংসা করিলাম।
অন্দরমহলে চরচরে ভাব লইয়া একটি পূর্ণ রজনী কাটাইয়া দিলাম। পরদিন গোসল করিয়া সকল বিপত্তি হইতে মুক্ত হইলাম।
এমনি হাজারো ঘটনা আছে আমার শৈশবে। প্রচণ্ড ভয়ভীতির মাঝেও শৈশব ছিল অসম্ভব রঙ্গিন। হায় শৈশব! কোনদিন আর ফিরে পাব না তোকে!!!