somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুশ্চিন্তার দুষ্টচক্র আর আপনার মন

২৭ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুতরাং চলেন প্রথমেই চিন্তা করি জঘন্য এক দুষ্টচক্রের খপ্পরে পইড়া সীমাহীন ঘুরপাক খাওয়া আমাদের “মাইন্ড” অর্থাৎ মন জিনিসটা আসলে কি। এই ব্যাপারে আমরা সবাই যেইটা জানি তা হইল ‘মন’ এর প্রধান কাজ দুশ্চিন্তা করা। মন অন্য কাজকর্মও করে। তবে মন বেশিরভাগ সময় দুশ্চিন্তা কইরাই কাটায়। আপনি চাইলেও সেইটা থামাইতে পারেন না। ধরেন আপনার ডাক্তার আপনারে বলল যে আপানকে একটা অপারেনশন করতে হবে। এবং আপনার অপারেশনের দিন তারিখ ঠিক হইয়া গেল। দেখবেন অটোমেটিক্যালি আপনিসহ আপনের আশেপাশের সবাই দুশ্চিন্তা করা শুরু কইরা দিছে। কিন্তু যেহেতু এই দুশ্চিন্তা আপনার খাওয়ার রুচি থেকে শুরু কইরা আপনার রাইতের ঘুম পর্যন্ত কাইড়া নেয়। সুতরাং বলা যায় এইটা মোটেও ভালো জিনিস না। কিন্তু আপনে দুশ্চিন্তা করা কিছুতেই বন্ধ করতে পারেন না। এবং তারপরে আপনি আরও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় পইড়া যান এইটা ভাইবা যে আপনি এখন দুশ্চিন্তা করতেছেন। এবং তারপর যেইটা পুরাপুরিই অযৌক্তিক সেইটা হইল আপনি নিজের উপর নিজে চেইতা যান কারণ আপনি দুশ্চিন্তা করতাছেন। অর্থাৎ আপনি উদ্বিগ্ন হইয়া পড়েন এই ভাইবা যে কেন আপনি দুশ্চিন্তা করতাছেন, তারপর আপনার উদ্বিগ্নতার মাত্রা আরও বাইড়া যায় এই ভাইবা যে আপনি কেন উদ্বিগ্ন হইয়া পড়লেন। এইটা একটা দুষ্টচক্র। সুতরাং এখন, আপনে কি আপনার এই মনটারে শান্ত করতে পারবেন? কাজটা কি আপনার জন্যে খুব কঠিন হইয়া পড়বে না? কারণ আপনার মনের আচার আচরণ ঠিক একটা বানরের মত — সারাক্ষণ শুধু উপরে নিচে লাফালাফি করে আর বক বক করে, কখনই থামে না। একবার যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি এই জিনিসরে থামাইতে পারবেন না এবং অসংখ্য মানুষ তাঁদের জীবনরে উৎসর্গ কইরা দেয় শুধু তাঁদের মনটারে ব্যস্ত রাখার জন্যে এবং তাঁরা নীরবতাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। যখন আপনে একা — কেউ আপনারে কিছু বলতেছেনা, আপনার করার মতও কিছু নাই। তখন অবশিষ্ট থাকে শুধু দুশ্চিন্তা, আপনে তখন অনুভব করেন এক ধরনের উম্মত্ততার অভাব। আপনার তখন মনে হয়, “আমি আমার সাথেই একলা পইড়া আছি। ভালো লাগতেছেনা। আমি আমার কাছ থেকে পালাইতে চাই। আমি সবসময়ই আমার কাছ থেকে পালাইতে চাই। এই জন্যেই আমি সিনেমা হলে যাই, এই জন্যেই আমি বিস্কুটের দোকানে যাই, এই জন্যেই আমি মেয়েদের পিছনে দৌড়াই, অথবা অন্য কিছুর পেছনে দৌড়াই, অথবা মদ খাইয়া মাতাল হই অথবা যে কোন কিছু করি। আমি শুধু আমার সাথে থাকতে চাই না। থাকলে আমার নিজেরে একঘরে মনে হয়।” আচ্ছা ঠিক আছে, তো প্রশ্ন হইল, কেন আপনে আপনার কাছ থেকে পালাইয়া বাঁচতে চান? আপনার আসল সত্ত্বাটা কি খুব খারাপ? খারাপ হইলে তা কতটা খারাপ? আপনে কেন এইটারে ভুইলা থাকতে চান? কেন সত্ত্বাটারে ভুইলা আপনে শুধু “আপনি” হইতে চান? কারণ আপনি ‘চিন্তা’য় আসক্ত। ঘোরতর আসক্ত। এই ‘চিন্তা’ হইল একটা নেশা দ্রব্য, সবচেয়ে বিপদজনক নেশা। জবরদস্তি মূলক ‘চিন্তা’ সারাক্ষণ আপনার মনের মধ্যে চলছে, চলছে, চলছে তো চলছেই। এইটা একটা স্বভাব। এই জন্যেই এই কাজটা বন্ধ করা অতীব কঠিন মনে হয়। এবং আপনাকে এই স্বভাব সত্যিই বন্ধ করতে হবে, যদি আপনে নিজের মানসিক ভারসাম্যতা রক্ষা করতে চান আর কি। কারণ ধরেন যদি আমি সবসময় কথা বলতেই থাকি, বলতেই থাকি, তখন অন্য কেউ কি বলে সেটা শোনার সময় আমি পাব না। এবং শেষ পর্যন্ত আমি আমার নিজের কথা নিয়া কথা বলা ছাড়া আর কিছুই আমার বলার থাকবে না। ঠিক একই ভাবে, যদি আমি সারাক্ষণ শুধু চিন্তাই করতে থাকি তাইলে শেষ পর্যন্ত আমার শুধু চিন্তা করা ছাড়া চিন্তা করার আর কিছুই থাকবে না। সুতরাং নতুন কোন কিছু নিয়া চিন্তা করতে হইলে, বিভিন্ন সময় আপনাকে সিম্পলি চিন্তা করা বন্ধ কইরা দিতে হবে। এখন কথা হইল, এই কাজ ক্যামনে করবেন? চিন্তা আবার বন্ধ করে ক্যামনে? প্রথম নিয়ম হইল, আপনি ‘চিন্তা’ বন্ধ করার কোন চেষ্টা করবেন না। কারণ যদি আপনে চেষ্টা করেন, তাইলে বিষয়টা হইব সেই লোকের মত যেই লোক কাপড় ঢলার ইস্ত্রি দিয়া খরস্রোতা পানিরে মসৃণ করার চেষ্টা করে। এতে শুধু জিনিসটারে আউলানো ছাড়া আর কিছুই হইব না। তাইলে আপনে কি করবেন? আপনি ছাইড়া দিবেন। ঠিক একই ভাবে যখন কোন কর্দমাক্ত উত্তাল হ্রদকে একলা ছাইড়া দিলে তা নিজেই শান্ত হইয়া যায়, আপনারেও জানতে হইব কখন আপনে আপনার মনটারে একলা ছাইড়া দিবেন। তখন সে নিজেই নিজেরে শান্ত করবে।

তর্জমা
মে ২৭। ২০১৬
মূলঃ এলান ওয়াটস, ব্রিটিশ দার্শনিক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দরখাস্ত - বরাবর: জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৩



বরাবর:
জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব
চিফ এক্সিকিউটিভ এডমিন
সামহোয়্যারইন ব্লগ

তারিখ: ১১-১১-২০২৪ইং

বিষয়: ব্লগার সোনাগাজী নিকের ব্লগিং ব্যানমুক্ত করার জন্য অনুরোধ।


জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব,
আপনাকে ও সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল ব্লগারদের প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময়ের স্রোতে ক্লান্ত এক পথিক তবু আশায় থাকি …

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৫


হালকা হাওয়ায় ভেসে আসে গত সময়ের এলবাম
মাঝে মাঝে থেমে যায়, আবার চলে তা অবিরাম
সময় তো এক নদীর মতো, বহমান অবিরত,
জল-কণা আর স্মৃতি বয়ে নেয় যত তার গত।

একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশঃ ইতিহাস কি বিজয়ীরাই লেখে?

লিখেছেন জাদিদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩২

"বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সমস্যা" -বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সঙ্গে ক্ষমতার একটা সম্পর্ক আছে। সে ক্ষমতায় যারা বিজয়ী হয়, তারাই ইতিহাস রচনা করে। পরাজিতরা ইতিহাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু নাম আর কেউ মুছতে পারবেনা।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০


২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনণের পরপরই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে আজ উড়ল বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি “এই কথা রিজভী কোন মুখে বলে ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১



অবাক হয়ে রিজভীর কথা শুনছিলাম উনি কি নিজেকে মহান প্রমান করার জন্য এই কথা বললেন নাকি উনি বলদ প্রকৃতির মানুষ সেটাই ভাবতেছি। উনি নিশ্চই জানেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×