“আমার শেষ কথা;
আব্বু-আম্মু, আমাকে মাফ করে দিও। দুনিয়াতে তোমাদের থেকে আপনজন আর কেউ ছিল না। আমি তোমাদের কষ্ট দিয়েছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি আমার জীবনের কষ্টগুলোকে সহ্য করতে পারিনি তাই এ পথ বেছে নিলাম। আমার অসুস্থতার কারণে জীবনের জন্য সরে গেলাম। তোমরা কষ্ট পেও না। আল্লাহর উপর রাগ কর না। আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আমার কারও উপর কোন ক্ষোভ নেই। এমন বল না যে আমুকের কারণে বা অমুক না যাওইয়ার কারণে আমি মারা গেছি। আমাকে মাফ করে দিও। ব্যাংকে আমার ২২,০০০ টাকা আছে ও ড্রয়ারে ৯,০০০ টাকা আছে। এগুলো তোমাদের রইল। আমাকে মাফ করে দিও।
-সোহাগ ’’
আত্মহত্যার ঠিক আগে (ছবিতে ওই চিরকুটটাই দেখছেন) এ কথা গুলোই লিখে গিয়েছিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. সোহাগ হাওলাদার।
তারুণ্যের উচ্ছলতায় থাকা এক টগবগে তরুণ যখন আত্মহত্যা করে তখন বুঝে নিতে হবে, এর পেছনে কোনো গভীর কারণ আছে। হয়তো অনেক কষ্ট , হয়তো অনেক অভিমান ছিলো আমার এ ভাইটির। কারণ যাই হোক, এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না!!! আত্মহত্যা কখনো সমাধান হতে পারেনা।
**আত্মহত্যার কারনসমূহঃ
মানসিক সমস্যা, বিষণ্ণতা, হতাশা, মাদকাসক্তি, আর্থ-সামাজিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা,ঈভটিজিং, শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি।
** আত্মহত্যার পদ্ধতিঃ গলায় ফাঁস, মাত্রারিক্তি ঔষধ সেবন, বিষ সেবন, পানিতে ডুব দেয়া, ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত, চলন্ত ট্রেন বা বাসের সামনে ঝাপ দেয়া এবং শরীরে আগুন লাগানো অন্যতম।
** কয়েকটি তথ্যঃ
১) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং প্রতি মিনিটে একজন আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে বছরে ৮৭৩০০০ লোক আত্মহত্যাজনিত কারণে প্রাণ হারায়।
২) গবেষণা অনুযায়ী, যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের ৮০ ভাগই আত্মহত্যার পূর্বাভাস দিয়েছে কিন্তু যথাযথ গুরুত্ব পায়নি বলে কেউ প্রতিরোধের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি।
৩) এক রিপোর্ট অনুযায়ী, যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তার ৪৫.৬% এর বয়স ২৫ বছরের কম, ৪২.৬% এর বয়স ২৬-৩৬ বছর এবং মাত্র ১০.৮% এর বয়স ৩৬ বছরের বেশি।
** আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান নয়। বরঞ্চ, এটি বিভিন্ন ধর্মানুযায়ী, চরম ঘৃনীত ও ক্ষমার অযোগ্য একটি পাপ। আপনি কেন নিজেকে ধ্বংস করবেন?? কেন হেরে যাবেন পৃথিবীর কাছে?? আপনি জানেন কি, প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই থাকে স্বতন্ত্র প্রতিভা। আপনি কি পারেন না, আপনার ভিতরের প্রতিভাকে তুলে আনতে?? কেন যুদ্ধ শুরুর আগেই হেরে যাওয়া??? আমার মতে,
"আপনি যাকে আত্মহত্যা বলছেন, আমার কাছে তা বিনা যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেওয়া।"
আত্মহত্যা একটি সামাজিক অভিশাপ। তরুন প্রজন্ম এই রোগে আশঙ্কাজনক ভাবে আক্রান্ত। আমাদের আশে পাশের মানুষগুলোকে বাঁচাতে আমাকে- আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার এখনি সময়। নিজে সচেতন হোন, পাশের জনকে সচেতন করুন। নিজে বাঁচুন, প্রিয়জনকে বাঁচান।
''তুমি এটাকে আত্বহত্যা বল? আমি এটাকে বলি একটা যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেয়া।''
চিঠি কৃতজ্ঞতা ~ (আসিফ, রুশাদ)
সুত্র: facebook
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৩৭