somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্থিক IQ এবং আর্থিক সমীকরণের প্রেক্ষিতে জীবন উপলব্ধি a+b not equal to c; একটি চিন্তা উদ্রেককারী পোষ্ট (পর্ব-১)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে নিচের পোষ্ট দুটো পড়ে নিতে পারেন:

১। পোষ্ট ১

২। পোষ্ট ২


স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই চায় তাদের জীবনকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে (ঠিক একটেলের মত)। কিন্তু আবার ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “Good is the worst enemy of the best” অর্থাৎ যতক্ষণ আমরা ‘ভাল’ থাকি ততক্ষণ আমরা ‘আরও ভাল’ হতে চাইনা। কিন্তু যখনই সেই ‘ভাল’ থেকে একটু খারাপের দিকে যাই, তখনই আমাদের মনে হয়,“ইস, কেন যে এমন হল!!! যদি আরেকটু ভাল থাকতে পারতাম.....”

এটা আমাদের ভেতর থেকেই জাগে যে আমাদের একটি নতুন গাড়ি বা একটি ভাল বাড়ি হলে মন্দ হয়না। আমার মনে হয়না এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে যাদের মধ্যে এই সুপ্ত ইচ্ছাটা মনের ভেতর উঁকি দেয় না। আমরা আমাদের পরিবারের জন্য প্রতিনিয়তই নতুন নতুন এবং ভাল ভাল জিনিস কিনতে চাই। এক কথায়, আমরা ‘আরও ভাল’ এর জন্য কেবল আশাই করতে থাকি কিন্তু একটা সরল সত্য আমরা কখনই বুঝতে চাইনা। আর যারা সেটা বুঝি, তারা কেবল বুঝেই সাধু-সন্তদের মত বসে থাকি, অনুধাবন করতে পারিনা।

সেই সত্যটি হল:

‘যদি আমাদের এমন কিছু পেতে হয় যা আমরা কখনও পাইনি, তবে আমাদের অবশ্যই এমন কিছু করতে হবে যা আমরা কখনও করিনি’


হ্যাঁ, এটাই সেই ধ্রুব সত্য। আপনি মানুন আর নাই মানুন, স্বীকার করুন আর নাই করুন, এই সত্যটা আপনার বিশ্বাস বা চিন্তা-ভাবনার কারণে কখনই মিথ্যায় পরিণত হবে না। এই সত্যটি understand করার চেয়ে realize করুন, বাজি ধরে বলতে পারি আপনি অপেক্ষাকৃত বেশি লাভবান হবেন।


এই সত্যটাকে ইংরেজিতে যদি paraphrase করা হয় তবে তা এমন দাঁড়াবে:

Doing the same thing over and over again YET expecting different results!

সরাসরি বাংলা না করে একটু ব্যাখ্যায় যাই। আপনি যদি একজন employee হন, তবে এটা আশা করা আপনার জন্য মূর্খতা হবে যে আমি যে চাকরিতে আছি, সেই চাকরিতেই চিরদিন থাকব এবং আমার বস কোন এক জাদুমন্ত্রের কারণে আমার বেতন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করতে থাকবে। বিশ্বাস করুন, যদি আপনার এই মনোভাব থাকে এবং এটাই আপনার দৃঢ় বিশ্বাস হয় তবে আপনিও সেই দলের একজন যেই দলের বাকি সদস্যরা বোকার স্বর্গে বাস করে।


আপনি আপনার বসের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করুন। একটু গভীরভাবে ভাবুন। কল্পনায় নিজেকে ঠিক বসের চেয়ারে বসিয়ে দিন। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। আপনি কি আপনার কর্মচারীর জন্য এটা করতেন যা আপনার কর্মচারী মনে মনে চাইছে? অর্থাৎ প্রতিনিয়ত তার বেতন এবং সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি করা?


যদি আপনি বস হয়ে আপনার কর্মচারীর এই মনের আশা পূরণ করতে না চান তবে জেনে রাখুন, আপনার অত্যন্ত প্রাণপ্রিয় এবং মহান বসও আপনার এই মনের আশা পূরণ করতে চাইবেনা।


আপনি কি আপনার বর্তমান কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোন কোম্পানিতে চাকরি নেবেন? হ্যাঁ, আপনি সেটা করতে পারেন। কিন্তু দয়া করে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে একটু প্রসারিত করুন। সত্যিই কি অন্য কোম্পানিতে চাকরি করলে আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান হবে? তাছাড়া আপনি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে অন্য কোম্পানিতে আপনার বস, আপনার কলিগ, আপনার ওয়ার্কপ্লেস আপনার বর্তমান কোম্পানির চেয়ে অধিকতর ভাল হবে? আপনি বলতে পারেন যে অন্য কোম্পানিতে এখনকার চেয়ে আপনি বেশি মাইনে পাবেন। বেশ ভাল কথা, কিন্তু তা সত্ত্বেও কি আপনার সকল আশা-প্রত্যাশা তাসের ঘর থেকে যাচ্ছেনা? অধিক মাইনে পাওয়া যদি আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারত তবে জেনে রাখুন এই দুনিয়ার ৯০% এর চেয়েও বেশি মানুষ তাদের জীবনের সুপ্ত প্রত্যাশাগুলোকে দিবালোকের প্রাপ্তিতে পরিণত করতে পারত।

পরবর্তী ধাপে আসি। আপনি একসাথে একাধিক চাকুরি করতে পারেন যাতে প্রতিটি চাকুরির মাইনে একত্রে মেলালে টাকার অংকটা বেশ ভারী হয়। কিন্তু আপনি কি সেই সময় পাবেন দ্বিতীয় বা তৃতীয় চাকরির জন্য? তাছাড়া আপনার শরীর ও মনে কি সেই পর্যাপ্ত স্ট্রেংথ অবশিষ্ট থাকবে যেটা আপনাকে আপনার নিজের জন্য ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু করার সুযোগ দেবে? সন্তানদের সাথে কি আপনি যতটা সময় কাটানো উচিৎ বা যতটা আপনার কাটাতে ইচ্ছে করে, ততটা পারবেন?


চাকরি আপনি যতটাই করেন না কেন, আপনার নিজের চেয়ে আপনার চাকরিদাতার লাভটাই কিন্তু বেশি হচ্ছে। হ্যাঁ, এটাই মোদ্দা কথা। আপনি আপনার সময় ও শ্রম অন্যের সম্পদ বাড়ানোর জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টা আরেকবার গভীরভাবে ভেবে দেখুন। কেন আপনার জন্য একটা নতুন গাড়ি কেনা কষ্টকর হয়ে পড়ে যখন আপনার চাকরিদাতা ইচ্ছে করলেই মাসে মাসে গাড়ির মডেল বদলাতে পারে?


বেতন বৃদ্ধি বা একই সাথে একাধিক চাকরি আপনার একটা স্থায়ী সমস্যার অস্থায়ী সমাধান দেবে, তাই নয় কি? আরেকবার ভাবুন প্লিজ। আপনার যদি দ্বিতীয় চাকরি করার কথা মনে এসে থাকে, তবে নিশ্চয় এই লেখাটিও দ্বিতীয়বার পড়ার জন্য খুব একটা কষ্ট পোহাতে হবে না।



আপনি যদি নিজের জন্য কিছু বিনিয়োগ না করেন তবে আপনার সমস্যাগুলো সমস্যাই থেকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।


আমরা চাকরি করি যেন সেই পয়সা দিয়ে আমরা বিল এবং কর পরিশোধ করতে পারি, এটাই কি আসলে চাকরির পয়সার পেছনের মূল রহস্য নয়? অফিস থেকে মাইনে পেয়ে আমাদেরকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলের লাইনে দাঁড়াতে হয় এবং সেখান থেকে বাসায় ফিরে আমরা দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলি এবং ভাবি, ইস, জীবনটা আরেকটু সহজ ও সাজানো-গোছানো হতে পারতনা?


আপনি চাকরি করছেন এবং আপনার চাকরিদাতার সম্পদ বৃদ্ধিতে নিজেকে বিকিয়ে দিচ্ছেন, সেই চাকরির পয়সা দিয়ে সরকারকে কর দিচ্ছেন এবং আনুষাঙ্গিক বিল মেটাচ্ছেন এটা বেশ ভাল কথা। কিন্তু তার বিনিময়ে কি পাচ্ছেন? অনেক কিছু? যদি এটাকেই আপনি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেন তবে আপনার সদয় বিবেচনার জন্য নিচে তিনটি প্রশ্ন:


১। কি ঘটবে যদি আপনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আগামীকাল থেকে কাজে যেতে না পারেন?


২। আপনি যদি কাজ না করেন তবে আপনার চাকরিদাতা কি আপনাকে বেশ সমাদর করবে এবং খাতির-যত্নের মাধ্যমে আপনার ঔষধপত্রের খরচ যোগাবে?


৩। বাজার থেকে চাল কিনে আনার আগেই যে সরকারকে আপনি কর এবং বিলের পয়সা মিটিয়ে দিয়েছেন আপনার কষ্টার্জিত অর্থ থেকে, সেই সরকার কি আপনার বা আপনার পরিবারের দায়িত্ব নেবে? অথবা আপনি অসুস্থ বলে আপনার বিল এবং কর মওকুফ করে দেবে?



২ ও ৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি বলেন ‘হ্যাঁ’, তবে এই পোস্ট পড়ে আপনার তেমন কোন লাভ হবে না। বরঞ্চ আপনার চাকুরিতে মন দিন। সেখান থেকে কিছু পাওয়ার চেষ্টা করুন। অযথা এখানে সময় ব্যয় করবেন না।



ছোটবেলায় একটা অ্যাপ্লিকেশন পড়েছিলাম যেটার কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছে। শিরোনাম ছিল “Prayer for remission of delay fine!!!”


সুতরাং মূল বিষয়টা হল: টাকার বিনিময়ে সময় ও শ্রম বিক্রি (Trading time and labor for money) কখনই একটি বিচক্ষণ ব্যক্তির সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এটা সেই মরীচিকার মতই যা আপনি কেবল দূর থেকে দেখেই যাবেন এবং ধরার জন্য ছুটতে থাকবেন কিন্তু কখনই তার নাগাল পাবেননা।






এটা বেশ দীর্ঘ পোস্ট। আমি এটাকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করেছি। মোট কয়টি পর্ব হবে এখনও বলতে পারছিনা। পুরোটা লিখতে পারব কিনা সেটারও নিশ্চয়তা নেই। তবে ইচ্ছে আছে। ইনশাল্লাহ, শেষ করব।



বি:দ্র: কথাগুলো আমার নয়। একটি বই পড়ছি এখন। কথাগুলো সত্য মনে হয়েছে বলেই সেটা থেকে অনুবাদের চেষ্টা করলাম।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×