ফ্লোরা মেরিকা থেকে আসছে। বাড়িতে হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিশিষ্ট শিল্পপতি চৌধুরী সাহেব তার লাল স্যুট প্যান্ট পরে অপেক্ষা করছেন। মা মরা মেয়ে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরছে। বাড়ির কেয়ারটেকার কাম জোকার হাসমত ব্যান্ড পার্টির আয়োজন করল। এর পরের দৃশ্যে ফ্লোরা গাড়ি থেকে নামল। সাথে সাথে গাড়িটার মাটির সাথে প্রায় দেবে যাওয়া চাকাগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল।
মেরিকা ফেরত ফ্লোরার ১৬তম জন্মদিন উৎসব। বিশাল ঘরের মাঝখানে একটা কাঠের বিকট দর্শন পিয়ানো রাখা। সাদা একটা ফ্রক পরে ফ্লোরা তার গোবদা গোবদা আঙুল দিয়ে পিয়ানো বাজাচ্ছে আর গান গাচ্ছে।
চৌধুরী সাহেবের বন্ধু আরেক ধনী খান সাহেব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "১২ বছর আগেও তোমার মেয়ের ১৬তম জন্মদিন করলা। এ মেয়ের বয়স কি ফিক্সড্?"
চৌধুরী সাহেব বললেন, "চেপে যাও। নায়িকা বলে কথা!"
ফ্লোরার গাড়ির জন্য একজন যুবক ড্রাইভার নিয়োগ করা হল। ছেলেটির নাম মকবুল। সে সৎ, পরিশ্রমী, ক্লাসে ফার্স্ট, গান গাইতে ও নাচতে পারে, পিটি করতে পারে, গুন্ডাদের পেটাতে জানে। তার সৎ পুলিশ অফিসার বাবাকে দেশের কুখ্যাত স্মাগলার খুন করেছে।
ফ্লোরার শুরুতে ড্রাইভারকে পছন্দ হলোনা। সে মেরিকান কাউকে ড্রাইভার হিসেবে চেয়েছিল। কারণ সে জানে এই হাবা ড্রাইভারের সাথেই তার নিয়তি লেখা আছে। গাড়ি শালবনের দিকে যাচ্ছে (কেন যাচ্ছে কেউ জানেনা)। ফ্লোরার পাশে হাসমত বসে আছে। ফ্লোরা মকবুলকে জিজ্ঞেস করল," এ্যাই তুমি ফর্মুলা ওয়ান খেলনা কেন?"
"জি না মেমসাহেব। আমরা গরীব, সৎ, মদ খাইনা। ঐ খেলায় জিতলে আনন্দে শ্যাম্পেন ছেটাতে হয়। আমি তা করতে পারিনা।"
ফ্লোরার ইগোতে লাগল, "এই হাসমত আমাকে চাবুক দাও। ওকে পেটাব। একটু পরেই আমি ছ্যাঁকা দিলে মদ খেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে গান গাইবে আর এখন ঢং করে।"
ফ্লোরা মধুপুর বনে তার সাখীদের নিয়ে ঘুরছে। এমন সময় খান সাহেবের ছেলে ডন আর তার চ্যালারা এসে তাদের উত্যক্ত করা শুরু করল। ফ্লোরা ডনকে দিল এক থাপ্পড়। এ জ্বালা সইতে না পেরে ডন আর তার ছয়জন বন্ধু কিডন্যাপের উদ্দেশ্যে ফ্লোরাকে ঠেলেঠুলে গাড়িতে ঢোকানোর চেষ্টা করল। ওজনের ভারে ন্যুজ এক চ্যালা চিঁ চিঁ করে বলল," আপা আপনে যে জিমে জিম করেন হেইডার ঠিকানা দেন...আমি নিজে গিয়া ওদের নামে মামলা করুম......যা ট্যাকা লাগব সব আমার।"
এমন সময় হাসমত মকবুলকে জানানোর সাথে সাথে কোথা থেকে যেন সাঁই করে মকবুল উড়ে এল। তারপর এক লাথি দিয়ে সাতজনকে কুপোকাত করে দিল। এরপর থেকে ফ্লোরা আর মকবুল প্রায়ই ফুল বাগানে, বন বাদাড়ে, কক্সবাজারে গান করে।
মকবুলের বাড়াবাড়ি সহ্য করতে না পেরে ডন তার মাকে আর ফ্লোরাকে কিডন্যাপ করে খান সাহেবের আস্তানায় নিয়ে বেঁধে রাখল। খান সাহেবকে দেখেই মা চিনে ফেলল এই তার স্বামীর খুনী। আবারো হাসমত মকবুলকে জানানোর সাথে সাথে সে সাঁই করে উড়ে এসে আস্তানার কাঁচের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকল। রাইফেল হাতে আস্তানার একজন পাহারাদার বলল, "ভাই কাঁচ ভাঙ্গার কি দরকার ছিল? দরজাতো খোলাই ছিল।"
পাশের জন চোখ টিপে বলল, "চেপে যাও। নায়ক বলে কথা!"
অনেক্ষন মারপিট হল। মকবুল একাই সবাইকে তুলোধুনো করতে লাগল। ফ্লোরার বাবা মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে এলেন। সেই মুহূর্তে খান সাহেব মকবুলের দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়ল। চৌধুরী সাহেব সেটা দেখে ঝাঁপ দিতে না চাইলেও পরিচালক তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ায় তিনি ঝাঁপ দিলেন। গুলিটা তার বুকে লাগল। হাসমত তখন পুলিশ নিয়ে ঢুকল। চিকনা এক পুলিশ বলল, "আইন নিজের হাতে নিলে ১৮ ঘা, আর পুলিশের হাতে দিলে ৩৬ ঘা।"
শেষ দৃশ্য:
বাহিরে অ্যাসিড রেইন হচ্ছে।
চৌধুরী সাহেব মেয়ের কোলে মাথা রেখে পড়ে আছেন। ম্যাজেন্টা কালারের রক্তে আশপাশ ভেসে গেছে। ফ্লোরা বলল, "পাপ্পা মরার আগে সব কথা কম্প্লিট করতে পারবা। নো প্রব্!"
বাবা বলল, "মকবুল তোমার হাতে আমি আমার গাড়ি বাড়ি আর মেয়েকে তুলে দিলাম। প্রতি বছরই ওর ১৬ তম জন্মদিন পালন করবা। এর যেন ব্যতিক্রম না হয়।"
হাসমত কাঁদতে কাঁদতে বলল, "স্যার সব তো ঐ ড্রাইভার পাইল। আমি কি কিছুই পামুনা?"
চৌধুরী সাহেব বললেন," একটাও নিজের জিনিস না, সেজন্য ঐ বলদটারে দিতে খারাপ লাগেনাই। মকবুলকে সব মুখ মুখে দিসি, তবে তোকে আমার উইলটা দিয়ে গেলাম"
এ কথা বলেই চৌধুরী সাহেব ইহলোক ত্যাগ করলেন। মকবুল ফ্লোরা আর মকবুলের মা একসাথে বলে উঠলো, "এইটা কি হইল?"
হাসমত হাসি দিয়ে বলল, "চেপে যাও। বাংলা সিনেমার আধুনিকায়ন বলে কথা।"