সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসুল ( সাঃ) বলেন কাল কেয়ামতে কোন ব্যাক্তির হাসর নাসর তাদের সাথেই হবে, যাদের সাথে তার সাদৃশ্য থাকবে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যারা যাকে যেভাবে অনুসরণ করে জীবন যাপন করবে, তাদের বিচার তাদের সাথেই হবে। আমরা যখন কাওকে দাড়ি টুপি অবস্থায় দেখি, ধরে নিই যে লোকটি মুসলমান, ধার্মিক। যেহেতু সে নবী (সাঃ)র সুন্নতকে নিজের শরীরে ধারণ করেছে। আবার ধুতি তিলক শাখা সিঁদুর পরিহিত যে কাওকে দেখলেই আমরা বুঝে নিই উনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কোট টাই পরা থাকলে খ্রিষ্টাণ বলে ধারণা করা যায়। যদিও এই কোট টাই এখন এতটাই সার্বজনিন পোশাকে পরিণত হয়েছে যে, এটা দিয়ে আর ধর্মের বিভাজন করা যায় না।
শুধু তাই নয়। আমরা রাস্তা ঘাটে চলতে ফিরতে প্রায়ই অপরিচিত কাওকে নিজের কোন আত্মিয় স্বজনের চেহারার সাথে বেশ মিল খুঁজে পাই। তখন আমাদের মধ্যে একটি আবেগ কাজ করে। ভালোবাসা বা বিরক্ত কাজ করে।
হযরত মূসা (আঃ) যখন আল্লাহর ইচ্ছায় নীল নদ পার হন, তখন ফেরাউন বাদশাহ পিছন পিছন তাঁকে ধাওয়া করে নীল নদে ডুবে মরে। কিন্তু ফেরাউনের যে প্রধান মন্ত্রী, সে বেঁচে যায়। আল্লাহ তাকে বাচিয়ে রাখেন বা সেই সময় মৃত্যূ তাকে ধরেনি। পরবর্তিতে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন ফেরাউনের প্রধান মন্ত্রিকে তিনি সেই সময় পাকড়াও করেননি বা কেন সে ডুবে মরলো না। । তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা (আঃ) কে জানান যে, ফেরাউনের প্রধানমন্ত্রিীর মেকাপ গেটাপ হযরত মুসা (আঃ) এঁর মেকাপ গেটাপের সাথে সাদৃশ্য হওয়ায় আল্লাহ তাকে ঐ মুহূর্তে দয়া দেখিয়েছেন। বিষয়টি হচ্ছে এমন যে, ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ দাবী করত এবং হযরত মূসা (আঃ) নিজেকে আল্লাহর নবী দাবী করতো। সেই অনুযায়ী ফেরাউনের প্রধানমন্ত্রী নিজেকেও ফেরাউনের নবী হিসাবে দাবী করতো এবং হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর নবী হিসাবে যেমন পোশাক পরিধান করতেন, সেও ঠিক সেই ভাবেই নিজেকে সেই একই রকম পোশাকে নিজেকে সজ্জিত রাখতো, দাড়ি রাখতো। সে বলতো মুসা আল্লাহর নবী আর আমি ফেরাউনের নবী। তাই মুসা যেভাবে যেভাবে যা পরবে, আমিও সেই ভাবে নিজেকে সাজিয়ে রাখবো। সুতরাং পানিতে ডুবন্ত সেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে মুসা নবীর এই পোশাকি সাদৃশ্য থাকার কারণে আল্লাহ তায়ালার তাৎক্ষনিক দয়ার উদ্রেক হয়, ফলে তিনি সেই প্রধানমন্ত্রীকে ডুবে মরা থেকে রেহাই দেন। শুধু মাত্র মুসা নবীর সাথে পোশাকি সাদৃশ্যের কারণে সেদিন আল্লাহর গজব থেকে ফেরাউনের প্রধানমন্ত্রি রক্ষা পেয়ে যায়।
উপরোক্ত এই ঘটনা থেকে আমরা এটুকু শিক্ষা অন্তত পাই যে, নাজাতের জন্য পোশাকের ক্ষেত্রেও রাসুল (সাঃ) এঁর সুন্নাতকে অনুসরণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কোট টাই পরে ওয়াজ করে বেড়ালে, মুখস্ত আয়াতের নাম্বার বলে দিলে হয়তো নিজেকে পন্ডিত বলে জাহির করা যাবে, কিন্তু তাতে রাসুলের (সাঃ) অনুসরণ করা হবে না। আর তা না হলে পরকালে নাজাত পাওয়া সত্যিই কঠিন হতে পারে।
আমরা অনেকেই এখন মসজিদে টি শার্ট বা যেমন খুশি একটা জামা পরেই নামাজে হাজির হই। অথচ সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবী দিয়ে আলমারি ভর্তি। সেগুলো অনুষ্ঠানে পরার জন্য তুলে রাখি। কিন্তু এমনটা আদৌ ঠিক না। মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ আপনাকে সুন্দর পোশাক পরিধানের তৌফিক দিয়েছেন। সেই আল্লাহর ঘরে আপনি আসছেন বিধর্মীদের মতো পোশাক পরে? লাল শার্ট, কালো টাই সহ কোট প্যান্ট পরে আল্লাহর রাসুলের কথা বলছেন?
এই বিবেক বর্জিত আচরণের জন্যে একদিন ঠিকই জবাব দিতে হবে। তখন আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৯