আমি অবশ্যই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার পক্ষে, কিন্তু সেটা হতে হবে গিভ এন্ড টেকের মাধ্যমে। তবে-
১. প্রতিবেশী দেশ মাত্র ২০ কিলোমিটার ট্রানজিট দিলে নেপালের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। দেখলাম ইমন নামে বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত একজন লিখেছে, বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ান ভূমি ব্যাবহার করে অনেক আগে থেকেই নেপাল ভুটানে পণ্য যায়। কিন্তু তিনি যেটা বলে নাই তা হলো, ভারত ট্রানজিট দিয়েছে নেপাল ও ভুটানকে। বিশ্বের যেকোন দেশ হতেই ভারতের সমুদ্রবন্দর এবং ভূমি ব্যাবহার করে নেপাল এবং ভুটান পন্য আমদানি করে থাকে। ঐ একই চুক্তির আওতায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও নেপাল এবং ভুটান পন্য আমদানি করে থাকে। এখানে ভারত বাংলাদেশকে ট্রানজিট দিয়েছে, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। বিশ্বের অন্য দেশ যেমন ভারতের বর্ডারে পণ্য পৌঁছে দেয়, এবং দেশ দুটি তাদের নিজস্ব বা ভারতীয় ট্রাকে করে উক্ত পন্য দেশে আনে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশকে ভারত কোন ট্রানজিট দেয়নি।
২. প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের নদ-নদী শুকিয়ে মরুভূমির রূপ ধারন করে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষি। আবার ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর বুকে ভারতের ছেড়ে দেওয়া বর্ষার অতিরিক্ত পানি বহন করতে না পেরে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনজীবন। প্রতিবেশী দেশ যদি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে পানি ছাড়ে তবেই এ দেশ কৃষি এবং বন্যা জনিত ক্ষতি হতে রক্ষা পায়। কিন্তু তা না করে প্রতিবেশি দেশ প্রতিটা আন্ত নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে বাংলাদেশের উপর বিশাল এক অভিশাপ চাপিয়ে দিয়েছে।
৩. প্রতিবেশী দেশের বর্ডার রক্ষা বাহিনী প্রায়ই কেড়ে নিচ্ছে এ দেশের মানুষের প্রান, পিতা-মাতা হারাচ্ছে সন্তানকে, স্ত্রী হারাচ্ছে স্বামীকে, সন্তান হারাচ্ছে পিতাকে। এক্ষেত্রে অনেকেই গরু চোরাকারবারির কথা বলে থাকে। কিন্তু কথা হলো, কেউ কি বর্ডার পার হয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে গরু চুরি করে আনে? নিশ্চই না। তাহলে কাঁটাতারের ওপারে যারা গরু নিয়ে আসে তাদের প্রাণ কেন যায় না? এখানেই শেষ নয় বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশী দেশের মাছ ধরার ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। কই কখনো তো শুনলাম না মাছ চুরি করতে এসে ভারতীয় চোরেরা প্রাণ হারিয়েছে।
৪. একাত্তরে সাহায্যের কথা যে বা যারা বলে, তারা বাহাত্তরে চুরির কথা কেন বলে না? আমার পরিচিত একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তিনি একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, উনার হাত ধরেই নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন। কিন্তু একপর্যায়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্বার্থে রক্ষার চেষ্টা করায় তাকে জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিঃ) হতে অব্যাহতি নিতে হয়। যাইহোক, একদিন গল্পে গল্পে তাকে বাহাত্তরে ভারতের চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি এক কথায় জবাব দিলেন, আরেকটু হলে ভারতের সাথেইতো আমাদের যুদ্ধ বেধে যেত। বাথরুমের বেসিন পর্যন্ত ওরা বাদ দেয়নি।
জানি এই বিষয়গুলো সকলেরই জানা। তবুও বলতে হচ্ছে, কারণ দেশের শাসকগোষ্ঠী এই বিষয়গুলো আদৌও জানে বলে মনে হয় না। তাই দেশপ্রেমিক জনতাকে বারবার-বারবার করে একই বিষয় বলে যেতে হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না শাসকগোষ্ঠী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:০০