গত ২৫শে জুন ব্লগার সৈয়দ মশিউর রহমান-এর ''ভারতীয়রা গত ১০ মাসে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার তাহলে অবৈধ পথে কত?'' একটা পোস্টে অনিকেতের মন্তব্যের সুত্র ধরে বাজে ভাষায় কিছু বাদানুবাদ হয়। যদিও অনিকেতের শেষ মন্তব্যের কথা ছিল বেশ আপত্তিকর তবুও জনাব মশিউরের তাঁকে উদ্দেশ্য করে গালমন্দের জন্য আমি তাঁর মন্তব্যের কথাগুলোকে আমলে নিইনি।
ভারতীয়রা গত ১০ মাসে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার তাহলে অবৈধ পথে কত?
এরপর ২৮শে জুন ব্লগার শ্রাবণধারা ভারতের পক্ষে কথা বললেই ভারতীয় দালাল ট্যাগ দেয়া, "ভারতের কথা কইলেই তোমরা জ্বলে উঠো কেন" এই থেকে শুরু করে গালিগালাজ করে ব্লগের পরিবেশ নোংড়া করা ও তাঁর মনকষ্ট নিয়ে একটা পোস্ট দেন। যে পোস্টের পেছনে মশিউর রহমানের সেদিনের পোস্টের অনাকাঙ্খিত আলোচনার বিষয়টা মূলত উঠে এসেছে;
বাংলা ব্লগে আচঁড় রেখে যাবেন নাকি বাহ্যে করে যাবেন?
গতকাল অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য'র পোস্ট
ধর্মের জোরের কাছে আর সব জোর ব্যর্থ
পড়ে ও তিনটে পোস্টের মন্তব্য যাচাই বাচাই করে আমার মনে হচ্ছিল ব্যাপারটা দু-একদিনের নয়। এই রেষারেষিটা দীর্ঘদিনের। তাদের আপাত ভালোমানুষি মন্তব্যের মধ্যে এমন কিছু যার জন্য পোস্টদাতা ক্ষেপে যান। মশিউর রহমানের পোস্টে ভারতীয়দের পক্ষে দু-দুবার আমিও মন্তব্য করেছিলাম কিন্তু তিনি যথেষ্ট ভদ্রতার সাথে উত্তর দিয়েছিলেন।
'' আমি অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য'র পোস্টে নীচের মন্তব্যটা করলাম;
শেরজা তপন বলেছেন: আমি ওখানে কিন্তু আমার মত করে কথা বলেছি। সেখানে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করলেও আমাকে কিন্তু ট্যাগ দিতে পারেননি।
আমার নামটি কিন্তু খুব বেশি মুসলিম ঘেঁষা নয় যে, এক কথায় বলে দিবে কেউ যে আমি মুসলমান। আমার শিক্ষালয় যারা আমাকে ডাক নামে চিনতো তারা অনেকেই ধারণা করত যে আমি সনাতন ধর্মের লোক এমনকি আমার প্রচুর হিন্দু বন্ধু ছিল। তারা কখনোই অনুযোগ করেনি যে হিন্দু বা সংখ্যালঘু বলে তাদের উপরে বিশেষ কোনো নির্যাতন হয় বা তাদেরকে মুসলমানরা অন্য চোখে দেখে। বরং আমি দেখেছি সবখানেই তারা স্পেশাল কিছু বেনিফিট নিয়ে এসেছে এবং আজও অব্দি নিচ্ছে। আমি নিজেকে কখনোই কাউকে যেচে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতাম না- আমি তো কখনই আমার সহপাঠীদের দ্বারা নিগৃহীত বা নির্যাতিত রেগিং কিংবা ট্যাগিংয়ের শিকার হইনি।
কেন যেন আপনাদের কারো কারো কথায় এমন কিছু খোঁচা থাকে যার জন্য মনে হয় বারুদ জ্বলে ওঠে! আমার এখনো দেখা যাবে গুনে গুনে জনা বিশেক হিন্দু বন্ধু আছে! কমপক্ষে ১৫ জন হিন্দু শিক্ষকের কাছে আমি পড়েছি। আমার বাড়ি এমন জায়গায় যার আশেপাশে পুজোর সময় হিন্দুদের ঢোলের শব্দে কান পাতা দায় হয়। আমার দাদা বাড়িও মূলত হিন্দু হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান এদের তুলনামূলক বিচার করলে বাংলাদেশের মতো এত ভালো অবস্থানে সংখ্যালঘুরা আর কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না।
( হ্যাঁ কিছু এলাকার উদাহরণ হয়তো আপনি দিবেন যেখানে সংখ্যালঘুরা অনেকবেশি কোণঠাসা হয়ে আছে ও নির্যাতিত হচ্ছে। তবে এর উদাহরণ খুব বেশি নেই। স্বাধীনতার পরে যত লক্ষ হিন্দু ওপারে এক ঠ্যাং দিয়ে বসে আছে বা ওপারে বসত গেড়েছে যারা তাদের এখানকার সব সম্পদ সোনা গয়না ওপারে পাচার করেছে তাদের একটা হিসাব দিয়েন তো আপনি?
সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত বাঙালিরা যত টাকা পাচার করেছে আমি ধারণা করি তার থেকে অনেক বেশি টাকা ও সম্পদ পাচার করেছে এরা ভারতে। কেন যায় তারা এ দেশ ছেড়ে ভারতে? এ প্রশ্ন করলে মানবতাবাদীরা ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষেরা হামলে পড়ে- তারা বলে; ওরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগে, সংখ্যালঘু হিসেবে এ দেশে নির্যাতিত হয় সেজন্যই। আসলেই কি তাই -উত্তরটা খোঁজেন?)
এই মন্তব্যে উনার মানবতাবাদী,ধর্মনিরপেক্ষ ভালো মানুষের মুখোশ মুহুর্তে খুলে পড়ল, প্রথমে বললেন উনি;
কোনোদিন কোনো হিন্দু নির্যাতিত হলে প্রতিবাদ করেছেন? নিদেনপক্ষে কোনো পোস্ট শেয়ার করেছেন? বাংলাদেশ থেকে অনেকে অনেক কিছু নিয়ে পগারপার হয়; এটা সত্যি। কিন্তু অনেক গরিব মানুষ গিয়ে সেখানে কতটা মানবেতর জীবনযাপন করে একবার বুঝতে চেষ্টা করছেন? সমস্যা অন্য জায়গায় মুমিনীয় স্বভাব ভুলে যাননি। এদেশে লাখ পাবলিক আছে যারা মামুনুলের কুকীর্তি জানার পরও পছন্দ করে, রাজাকার সাঈদি তাদের আদর্শ। আপনিও মনে হয় না তার বাইরে। ধর্মকর্ম করলে তো আকাম-কুকাম জায়েজ। এই আদর্শই মানেন।
জনাব মডারেটর লক্ষ্য করুন; কি ভয়ঙ্কর মানসিকতা। আমাকে প্রথমে ধর্মান্ধ ও পরে রাজাকারের আদর্শধারী বানিয়ে ফেলল। দীর্ঘ ১৬ বছরে আমার লেখালেখিতে, ব্লগে বা ব্যক্তিগত জীবনাচরণে আজ পর্যন্ত কখনোই এমন জঘন্য ট্যাগ দিতে পারেনি। ব্লগে তার দ্বিগুণ বয়সী সিনিয়র ব্লগার হিসেবে বলতে পারি, তার কত বড় স্পর্ধা ও ধৃষ্টতা যে একজন ব্লগারের ব্যক্তিগত সম্পর্কে কিছু না জেনেই তাকে রাজাকার ও ধর্মান্ধ হিসেবে তুলনা করে। আমি এর জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।।
আমি এ বিষয়ে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, বলেছিলাম সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিলে আমি রিপোর্ট করব। সে কোন উত্তর না দিতে সঙ্গে সঙ্গে আমার মন্তব্য মুছে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, তাঁর আরোও অপমানমুলক মন্তব্য ছিল '' এটা পড়ে একটা মন্তব্যই মনে এলো ল্যান্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড।'' যেটা মার হজম করতে কষ্ট হয়েছে।
এরপরে সে সাড়ে চুয়াত্তুরের একটা মন্তব্যের উত্তরে আমাকে মেনশন করে বলেছে,
উপরে দেখুন শেরজা তপনের মন্তব্য। এই লোক আর ধর্মান্ধ অর্ধশিক্ষিত মোল্লাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
আমি শিক্ষিত কি গো মুর্খ সেটা অন্য ব্যাপার কিন্তু এমন মন্তব্য যে কোন ব্লগারদের জন্য অপমানজনক! আমিও তাঁর এহেন ধারার চরম আপমানিত বোধ করেছি। গতকাল যদি সে আমার মন্তব্য না মুছে। কোন একটা সন্তোষজনক উত্তর দিত তাহলে আমি আজকে আপনার উদ্দেশ্যে ব্লগারদের সম্মুখে এই পোস্ট দিতাম না।
আমার অভিযোগ যদি সঠিক মনে হয় দয়া করে আপনি যথোপযুক্ত ব্যাবস্থাগ্রহন করিবেন। আমার বিনীত অনুরোধ, আপনি যেন এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং এ ধরনের আচরণ যাতে পুনরায় না ঘটে তা নিশ্চিত করেন।
আমি এর সাথে স্ক্রিনশট যুক্ত করে দিলাম;
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২