এক ঝাঁক সন্দেহজনক টিক দেওয়ার ঘরে এক সারি প্রশ্নবিদ্ধ তকমা লাগানো। সাবধানে এবং সীমিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হলে এই তকমাগুলি সর্বোত্তম দরকারী বা প্রয়োজনীয় সাঁটে লেখার পদ্ধতি, অনেকটা ইশারা-সঙ্কেতের মতো। সবচেয়ে খারাপভাবে বললে এগুলো অর্থহীন এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা।
অবশ্যই কিছু সমস্যা ও ঝামেলা রয়েছে যা ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতানৈক্যের সঠিক কারণগুলির সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু একইভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক অনুপ্রেরণার বুদ্ধিমান-সৎ চিন্তাবিদও আছে।
ভিন্ন ভিন্ন ধারণা এবং আদর্শের প্রতি বিশ্বাস, এমনকি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ধারণা ও আদর্শের প্রতি বিশ্বাস ততটাই অনিবার্য, যতটা সীমিত তথ্য এবং বিতর্কিত কার্যকারণের যোগসূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসঙ্গত। অন্যদেরকে বাম বা ডান দিকে অবস্থানের কারণে নিজেদের থেকে আলাদা ভাবাটা পাগলামি বা শিশু মনের চিহ্ন হিসাবে দেখা উচিত নয়। সমানভাবে কেন্দ্রটি বাম এবং ডানের মতোই আপেক্ষিক, এটি স্থানান্তরিত হয়। আজকের কেন্দ্র যা ১৯৭০ বা একশ বছর আগে কেন্দ্র ছিল না এবং এটাই সর্বত্র সত্য। যদি কেন্দ্রটি স্থির না হয় তবে আমরা দাবি করতে পারি না যে এটি স্পষ্টতই সত্য, ভারসাম্যপূর্ণ, নৈতিক বা সদগুণ। অন্যথায় আমরা অনেকগুলি ভিন্ন মতের, যারা সকলেই এক সময় বা অন্য সময়ে কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করেছে, তুলনা করে এবং তাদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করতে পারতাম:
এই সমস্ত ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলি—যার সবগুলোই কোনো এক প্রকারে মধ্যপন্থী ধারণা—কীভাবে নৈতিক, সদাচারী, ভারসাম্যপূর্ণ, সঠিক হতে পারে আর মধ্যপন্থাকেই একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে দেখা কতটা যৌক্তিক বা যুক্তিযুক্ত?
না, আমাদের বুঝতে হবে যে, কোনো প্রদত্ত ক্ষেত্রে বা বর্ণালীতে অন্য আর যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গির মতোই সত্যতা, গুণশীলতা, শালীনতা, যুক্তিবাদিতা, যুক্তিসঙ্গততা ইত্যাদি বিষয়ে কেন্দ্র বা মধ্যমপন্থাও একক কোনো আধিপত্যের দাবিদার নয়।
এমন সব যুক্তিই রয়েছে যেসব উপস্থাপন করা যেতে পারে যা সমস্ত অতীতের মতোই এখনকার ডান, বাম বা কেন্দ্রে থাকাকে ন্যায্যতা দেয়। কেউ কতটা বস্তুনিষ্ঠভাবে নিজ নিজ মতামতকে প্রমাণ করতে পারে তা অত্যন্ত বিতর্কিত। সেই সূত্রমতে, নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলি অনেকাংশে সহজাত, অযৌক্তিক এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে—'বিশ্বাস ব্যবস্থা' না, এই অবমূল্যায়ন বা অনুমান কারোরই করা উচিত নয়। বিশ্বাস-ব্যবস্থা প্রায়শই নিজস্ব সংস্কৃতি, পটভূমি, লালন-পালন এবং ব্যক্তিগত ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। এটি এমন কিছু যা খুব সহজেই প্রমাণিত হয় আমাদের সকলের ভেতরে সম্পূর্ণরূপে ন্যায়সঙ্গত বা যুক্তিযুক্ত করা যায় না যে পবিত্র-পাঠা বা নন্দী ষাঁড় রয়েছে, সেটা দিয়ে। আর কেউ যদি অন্যথা চিন্তা করে, তবে কেবল নিজেদেরকে প্রতারণা করছে এবং নিজস্ব প্রকৃতি, মানব প্রকৃতি অনুসারে, খুব বেশি কৃতিত্ব দিয়ে। যতটা যুক্তিবাদী হিসেবে নিজেদের বিশ্বাস করতে চায় তার ধারেকাছেও না।
আমরা কতটা উদার বা কর্তৃত্ববাদী সেটার প্রকৃতিও আমাদের বিবেচনা করতে হবে এবং অবশ্যই এটি বাম ডান দৃষ্টান্তে সহজে খাপ খায় না। আমাদের বাম দিকে উদার বামপন্থী এবং কর্তৃত্ববাদীরা রয়েছে এবং এটি কেন্দ্রে ও ডানদিকে যারা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও সত্য।
এই সবকিছুতেই অবশ্য আমরা আবার সেই তকমা বা লেবেল লাগানো অথবা মার্কামারার বিনিময় দ্বারা সীমাবদ্ধ. এই কারণেই লেবেলের মাধ্যমে আপনার নিজের মতামত অন্য কারো কাছে স্থানান্তর বা পরিবহন করাটা সর্বদা একটি ভুল, কেননা তারাও নিজের মতো একই স্ব-শনাক্তকারী তকমা ব্যবহার করে। এই কারণেই প্রতিযোগিতামূলক নৈতিক মূল্যবোধ ব্যবস্থায় মতাদর্শগত দিক দিয়ে আমরা প্রত্যেকে কে কেমন সেটা নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে যখন আমরা এক একটা ঘটনা ও অনুষঙ্গের ভিত্তিতে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করি তখন রাজনৈতিক সংলাপ সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বা অন্তত আলোচনায় সভ্যতা বজায় থাকে এবং প্রভেদ বা তারতম্য খুবই সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে।