ইয়াহু !!! পরীক্ষা শে-ষ।
”আজ খাব ধোঁয়া চা
আরো খাব বুট ভাজা।
তোরা সবাই দাওয়াতে যা--
:
রাহাত পিছন হতে হিমেলের জামা টেনে বলে, এই তুই কি সব কথা বলছিস ! আমি তোর কথাগুলা কিছুই বুঝতে পারতেছি না।
হিমেল রাহাতকে রাস্তার একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে বলে, এই ব্যাটা ! তুই বুঝতে পারবি ক্যামনে। তুই তো শালা তোর ঐ ম্যাডামরেই শুধু বুঝতে পারিস। আমার কথায় এতক্ষণ যারা বোঝার সবাই বুইঝা গেছে। আমাগো বাসার ড্রইং রুমে রাতে একটা পার্টি হবে। ওখানে নাসির নামে একটা ছেলে গিটার বাজায়ে গান করবো। ব্যাটা দারুণ গায়। আমাগো এলাকায় নতুন আইছে। ব্যাটার মালপানি ভালোই আছে।
রাহাত ঘাড় নেড়ে বলে, হুমম এতক্ষণে বুঝতে পারছি।
ঠিক সময়ে আসিস কইলাম।
:
নাসির অফিসে বসে Project Proposal, Detail Implementation Plan (DIP), Program Implementation Guideline (PIG) এবং বাজেটসহ অন্যান্য বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ছে। কারণ ম্যানেজার হিসেবে তার একটা দায়িত্ব আছে। প্রথম দিকে একটি/দুটি কাজের সাথে সরাসরি নিজে যুক্ত থেকে স্টাফদেরকে দক্ষ করতে হবে। মনে মনে ভাবছে কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু যদি সাকসেস হওয়া যায় তবে এর চেয়ে ভালো কাজ আর কোনটিই হতে পারে না। জানালা এবং দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নাসির এবার তার এক বিশ্বস্ত কলিগ ইরফানকে বলে, ইরফান ভাই ! আমরা আজকে চিড়িয়াখানা রোডের একটি বাড়িতে যাব। মুখ চেপে হেসে বলে,দাওয়াত আছে। এই নেন লিখিত প্ল্যান। ওখানে আমার এবং আপনার রোল কি হবে তা এখানে লিখা আছে। চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ আমরা পিছন হতে সব সময়ই সাপোর্ট পাবো, এটাতো আপনি জানেন। আর শুনেন, কাগজটা পড়ে আমার এই গ্লাসের পানিতে ভিজিয়ে তারপর ছিড়ে ফেলবেন। সব কথা সব সময় বলা যাবে না। দেয়ালেরও কান আছে। আমাদের সকল কাজই যে চ্যালেঞ্জিং হবে এমন নয়- তবে দুই/একটাতে একটু চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। নাসির ইরফানের কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বলে, আরে ইয়াং ম্যান ! এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই জীবনের সকল মজা নিহিত। ওহ্ শোনেন ! আমার গিটারটা আপনি বহন করবেন। আর আমাদের টিমে মইন ভাই আর সাইদ ভাই আছে। তাছাড়াও এলাকা হতে কোরআন-হাদিস বিষয়ে পারদর্শী, কবিতা, গান ও গল্পের আসর জমাতে পারে পারে এমন কিছু যুবক ও মুরুব্বীকে ঠিক করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ টিম গোপনে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিবে। এই প্রশিক্ষিত টিম প্রয়োজনমত তাদের ভূমিকা পালন করবে। আমাদের কাজ যুবকদেরকে যে কোন মূল্যে তাদেরকে মাদক হতে ফিরিয়ে এনে মেইন স্ট্রিমিং করা। ব্যাস।
নাসিরের মোবাইলে রিং বেজে ওঠে। ও প্রান্ত হতে নীলার মিষ্টি কণ্ঠ শুনে নাসির বলে, আরে নীলা ! তুই কেমন আছিস?
আমি ভালো আছি নাসির ভাই। আপনি কেমন আছেন।
নাসির বলে, হুমম ভালো আছি। তোকে যে ঐ ছেলেটার ছবি দিতে বলেছিলাম। ওটার খবর কি?
জী ভাই, আমি স্কাইপিতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনি দেখেন। আর একটু স্পেশাল কেয়ার নিবেন।
নাসির রাহাতের ছবিগুলো ভালো করে দেখে। চারটি ছবিই হুন্ডাকে কেন্দ্র করে। এই ছেলে কি হুন্ডা ছাড়া কিছু বোঝে না। শান্ত, ধীরস্থির মনে হচ্ছে। মিডিয়াম লম্বা, ব্যাক ব্রাশ করা চুল। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, গায়ের রঙ উজ্জল শ্যামলা। স্বাস্থ্য মোটামুটি। চারটি ছবির দুটিতে কালো এবং নেভি ব্লু টি শার্ট পরেছে, অপর দুটিতে সাদা এবং এ্যাস কালারের ফুল হাতা শার্ট পরেছে।
নাসির ভাবতে থাকে নীলার সাথে ঐ ছেলেটার কী সম্পর্ক? কেন নীলা ওর জন্য স্পেশাল কেয়ার নিতে বললো? কি জানি! মেয়েদের মনের গহীন সমুদ্রে ডুব দিলেও তাদের মন বোঝা যায় না।
:
নাসির দেখে হিমেল ড্রইং রুমে দুটি বিছানার চাদর পেতে রেখেছে। তার একপাশে একটা বাটিতে গরুর মাংস ভুনা, আলু ভাজা, বাংলা মদ, দুটি বাটিতে বরফ, গ্লাস, জগ ভর্তি পানি, চা চামচ, ইয়াবা, গাঁজা, সিগারেট, লাইটার সব সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে। নাসির মনে মনে ভাবে মাতলামীর জন্য সব ব্যবস্থাই পাকা করে রেখেছে। নাসির এবার ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান এক বোতল ভদকা বের করে সামনে রাখে।
হিমেল বলে, সবাই নানা বাড়িতে বেড়াতে গেছে। বাড়িতে কেউ নাই। সো টেনশনও নাই, দোয়া কর যেন ঠোলা মানে পুলিশ না আসে-- হা হা হা ।
:
নাসির দেখে যে সামনে প্রায় পনের জন বসেছে। এই এলাকাতে এত বড় গ্রুপের লিস্ট তার কাছে আর নাই। বেশির ভাগেরই স্বাস্থ্য খুবই খারাপ। বাম পাশের দেয়াল ঘেষে একজনকে দেখেই নাসির চমকে ওঠে। এ যে সেই, যার জন্য ওর খালাতো বোন নীলা মোবাইলে জানিয়েছিল। ছবির চেয়ে সামনাসামনি দেখতেই বেশি সুন্দর লাগছে। কিন্তু এই ছেলে এখানে কিভাবে- ক্যামনে কি!
সবাই যে যার পছন্দমত জিনিস নিয়ে নেশার প্রস্তুতি শুরু করছে। নাসিরও গাঁজার স্টিক বানায়। সবাই যখন যে যার কাজে ব্যস্ত তখন নাসির গাজা খাওয়ার ভান করে এবং সবার অলক্ষ্যে জামার ভিতরের পকেটে চালান করে দেয়। এর পরিবর্তে একটা সিগারেট ধরায়।
হিমেলের অনুরোধে নাসির গীটারে সুরের ঝংকার তোলে, আপন মনে গাইতে থাকে --
"গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায় ও মিরাবাই
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায় ও মিরাবাই
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
:
গাঁজা খাব আঁটি আঁটি
মদ খাবো বাটি বাটি
ফেন্সি খেলে টাস্কি খেয়ে যাই ও মিরাবাই
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
:
আফিম খেলে মাথা ধরে
কোকেনে বুক ধরফড় করে
হিরু খেলে টাস্কি খেয়ে যাই ও মিরাবাই
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
:
খাবো না আর গাঁজা আমি
যদি পাশে থাকো তুমি
তোমায় পেলে নেশা ভুলে যাই ও মিরাবাই
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
:
জানি আসবে না তুমি
আঁধারে এই কানাকানি
জানি আসবে না তুমি
বাতাসে এই কথা শুনি
তোমায় ভুলে গাঁজার নৌকা বাই ও মিরাবাই
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়"।
:
রাহাতের মনে হচ্ছে, মেঠো পথ দিয়ে নীলা লাল শাড়ি পরে ধীর পদক্ষেপে তার দিকে এগিয়ে আসছে। মুখে মিষ্টি হাসি। সবুজ শ্যামলে ছাওয়া গাছপালার মধ্যে লাল শাড়িতে তাকে পরীর মত মনে হচ্ছে। লাল পরী এখন আকাশে উড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উড়ে যাচ্ছে তার নীলা। বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে-- ডাক দেয় নী- লা-- আ-পা। এমন সময় রাহাতের মোবাইল বেজে ওঠে। রাহাত কাঁপতে কাঁপতে প্যান্টের পকেট হতে মোবাইল বের করে। কল রিসিভ করতে যেয়ে পরে যায়। রাহাত ধপাস করে বসে ঝিমাতে থাকে আর বলতে থাকে আমায়-একা ফেলে -যেও -না---।
নাসির রাহাতের মোবাইলটা তুলে কল রিসিভ করে। ফিসফিস করে বলে, নীলা! তুই আর কথা বলার সময় পেলি না। এ্যাকটিভিটি অন গোয়িং মাই ডিয়ার সিস্টার। ডন্ট বি ওরিড।
চারিদিকে হালকা পাতলা মাতলামি চলছে। একজন হাসতে হাসতে অন্যজনের উপর ঢলে পড়ছে আর বলছে, ওরে দোস্ত ! আমি এখন পুরাই রাজা--আমার এখন অনেক মন্ত্রী-- আমার এখন অনেক ক্ষমতা --। আরেকজন থেমে থেমে হাসছে আর বিড়বিড় করে বলছে, তোমায় নিয়ে আকাশে ঘর বানাবো ময়ূরী--তোমায় নিয়ে আমি আকাশে ঘর বানাবো ---। নাসির মাতলামির ভঙ্গি করে ইরফানের কাছে যায়- কানে কানে ইরফানকে বলে আপনি থাকেন, আমি চলে যাচ্ছি, ওদের বিশ্বস্ততা অর্জনের আজ প্রথম ধাপ, পাশ কিন্তু আমাদের করতেই হবে। ইরফান মাথা ঝুকিয়ে উত্তর দেয়। নাসির গিটার হাতে বের হয়ে যায়।
:
রাত দুটো বাজে। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। তারা ভরা আকাশ জেগে নীলাকে যেন পাহারা দিচ্ছে। নীলা ভয়হীনভাবে ছাদে পায়চারি করছে। ভালোবাসা মানুষকে ভয়হীন করে দেয়। নীলার এক বান্ধবীর মামার বায়িং হাউজ আছে। ওখানে কথা চলছে। নীলা ভাবতে থাকে, যদি সব ঠিকঠাক হয় তো রাহাতকে আপাতত ওখানেই জয়েন করতে বলবো- পরে দেশের বাইরের চিন্তা--। নীলা নীচু গলায় গুনগুন করে গাইতে থাকে--”
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি
তোমায় দেখতে আমি পাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে---”
আজ তারা ভরা আকাশটাকে বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে। দূরের কোন গাছ হতে হুতোম পাখির ডাক ভেসে আসছে। জোনাকি তার বাতি নিয়ে যেন নীলাকেই পথ দেখাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। হালকা ঠান্ডা বাতাস নীলার ওড়নাকে দুলিয়ে দিচ্ছে। নীলা আনমনে তারা ভরা আকাশের দিকে চেয়ে রাহাতের কথাই ভাবছে। দূর মিনার হতে ফজরের আষানের মিষ্টি সুর ভেসে আসছে--আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম --
:
-- চলবে--
নোট: গাঁজার আসরের ব্যাপারে কয়েকজনের সাথে আলাপ করে তারপর লিখেছি। এখানে কোন গ্যাপ আছে কিনা অথবা আরো কিছু যোগ করার থাকলে জানাবেন প্লিজ । যে কোন ইতিবাচক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে।
আগের পর্বসমূহের লিংক:
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-৪)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-৩)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-২)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-১)
:
লায়লা
৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৪