somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেয়া ও নদী

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পীচ ঢালা রাস্তা থেকে বাম দিকে যে ছোট কাঁচা রাস্তাটা চলে গেছে,সেটা উত্তর মন্নার পুর গ্রামের রাস্তা।লিখিত নাম মনোহর পুর আর কথিত নাম মন্নার পুর। এই এলাকার সম্মানিত চেয়ারম্যানের ভুড়ি যতটা মোটা গ্রামের ভিতর যাওয়ার রাস্তা খানি ততটাই চিকন। দুই ধারে ছোট বড় নতুন লাগানো কিছু বিভিন্ন জাতের গাছ রাস্তার শোভা বর্ধণ করছে। বেশ গোছানো মনে হচ্ছে চারপাশ। ভালই লাগছে খেয়ার।

আবাদি জমিন গুলো আজ মাছের কৃত্রিম প্রজনন খামার। উঠানে সবজি বাগানের জায়গায় বড় খাঁচায় বন্দি কয়েকশো সাদা মুরগী। বাড়ি বাড়ি টিভি এন্টেনা গুলো ঘরের চাল ছাড়িয়ে মনে হয় আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।একটা সচ্ছল আধুনিকায়নের গন্ধ সবখানে। খারাপ না বরং ভালই লাগছে খেয়ার। বিশ্বের সাথে পরিচিত হচ্ছে তার গ্রামের সরল মানুষেরা আর মুখ বাড়ার সাথে সাথে খাবার বাড়ানোর উপায়ও বের করে নিচ্ছে।

কয়েক বছর আগেও এমনটা ছিল না । এই ছোট রাস্তাটাই রাজ্যের আগাছায় ভরা ছিল। কোন রকমে মাঝখান দিয়ে হেটে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যেত। বাবাকে বলতে শোনেছি রাত করে বাড়ি ফেরার সময় হাতে একটা লাঠি রাখতেন সাপের ভয়ে। আর ভাইয়া বড় করে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরত। ঘরে আসলে জানতে চাইলে বলত সাপের ভয় ভুলে থাকার কৌশল নাকি হেড়ে গলায় গান গাওয়া।

উত্তর আর দক্ষিন পাড়ার মাঝখানে আর কোন ঘরবাড়ি না থাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে খোলা মাঠ। ঋতু বদলের সাথে সাথে রূপেরও বদল হয় এই প্রান্তরে। কখনো কচি ধানের চারার সবুজে বাতাসের ঢেউ, কখনো পাকা ধানের সোনায় ভরে যেত সারা মাঠ , এই সবের শেষে আধা ভাঙ্গা মাটির চাক আর অবশিষ্ট থাকা ধান গাছের গোড়ালীর উপরই শুরু হয়ে যেত শর্ষ ফলানোর উৎসব। এক সময় সারা মাঠ হলুদ।

-বড়মা খেয়া আপু আসছে.......
নদীর গলা।

ভাবনার নদী সাঁতরাতে সাঁতরাতে কখন যে রিকসাটা ঘরের দুয়ারে এসে থেমে গেছে টের পাইনি খেয়া।

- মা, চলে আসলাম তোমাদের দেখতে। ক্লাস তেমন একটা হচ্ছে না।
- তোর'না পরীক্ষা, চিঠিতে লিখলি পরীক্ষার পর আসবি। বাড়িতে আসলে নাকি পড়া হয় না। তা হঠাৎ কি মনে করে চলে আসলি।
- ভাবছি এই বার বাড়িতে বসেই পরীক্ষার পড়া শেষ করব, আর এই পেত্নীটার সাথে ঘুড়ে বেড়াব।

নদীর মুখে যেন একটা কালো ছায়া পড়ে গেল। অনেকটা চুপও হয়ে গেল। ব্যাপারটা পড়ে জানার আশায় তাৎক্ষণিক পতিক্রিয়াটা ওকে বুঝতে দিল না খেয়া। কিছুক্ষণ পর....................

- কিরে, মুখ এমন বাংলা পাঁচের মত কেনো করে ফেল্লি তখন? পেত্নী বলাতে মাইন্ড করেছিস!
-না
- তো ?
- আপু আমি এখন আর যখন তখন ঘরের বাইরে যাই না। ভয়ে..

- হা হা হা হু হু হু ভয় আর তুই !!!! সাপ, ব্যাঙ, কেঁচো, টিকটিকি এই গুলার কি দুইটা করে মাথা গজিয়েছে যে তুই ভয় পাওয়া শুরু করলি!

সত্যি সত্যি খেয়া খেয়াল করল নদীর ভিতরে একটা চাপা ভয়। যা তার মুখেও ছায়া ফেলছে। তারপর নদী যা বলল খেয়ার ধারনায় তা কখনো জায়গা পায়নি। স্কুল বন্ধের দিন বাড়ির দক্ষিণে খোলা জায়গাটায়, যেখানে কানামাছি আর গোল্লাছুট খেলতে জড়ো হত ওরা, যেখানে রাস্তায় নাকি এখন এক দল দুধ গোখরো সাপ ফনা তুলে বসে থাকে। স্কুল থেকে ফেরার পথে হাসপাতালের মোড়ের কাঁঠালচাপার ছায়ায়ও রোজ কিছু হায়নার জলজলে চোখ নজরে পড়ে। তাদের থাবার ভয়ে রানী, তুলীর স্কুল বন্ধ হয়েছে। বাড়ির দিকে ঢোকার ছোট রাস্তাটা যেখানে খেয়া আর নদীর খুনসুটি, হাসি উচ্ছলতা, দৌড়া দৌড়িতে ভরে থাকত, সেখানেও নাকি বিচ্ছুরা এখন তাদের বিষ ছড়ায় সকাল বিকাল।

-আপু........!!
নদীর কথায় বোধ ফিরল খেয়ার।
-কি এত ভাবছো যে একে বারে চুপ হয়ে গেলে।

খেয়া যা ভাবছে তা কি করে নদীকে বলবে। কি করে বলবে খেয়া আর মৌরি যেখানে হলের সামনে চটপটি খেতে যেত এখন আর যায় না। কি করে বলবে রুমে বসে পড়তে পড়তে দম বন্ধ হয়ে গেলেও খোলা আকাশের নীচে যাওয়া হয় না তাদের। কিনবা প্রিয় সেই চৌরঙ্গি মার্কেট। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, দেশ সব কিছু ঐ হায়নাদের কাছে শুধুই মাংসপিন্ডের মত। ক্ষদার্থ কুকুরের মত আমদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, দেশকে ওরা গিলে খেতে চায়। ওরাও এই সমাজের, দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিস্ঠানের মানুষ নামধারী হায়নার দল। সেখানেও ওদের ভয়ে অনেক নদীরা এখন ঘর বন্দি।প্রতিবাদে অনেক সাহসী প্রাণ চির নিদ্রায়। তাই খেয়াও ভয়ে পালিয়ে এসেছে। একটু স্বস্তির আশায়, শান্ত, সরল, তার সবুজ গ্রামে।

খেয়ার বেশ ভালো লাগছিল দেখতে তার গ্রামের মানুষ গুলোও শুধু শস্যের উপর নির্ভর করে নেই এখন। ভাবতে শিখেছে আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে। কিন্তু আধুনিকায়নের হাত ধরে ডিশের লাইনের তার বেয়ে আরো অনেক কিছুই সরল গ্রামটায় ঢুকে পড়েছে এই বোধটাই খেয়ার ভাবনার আকাশে আচমকা একরাশ কালো মেঘ এনে দিল।



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চলছে শোঅফ ব্যাবসা ........ ;)

লিখেছেন সোহানী, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৮



হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মানব মনের ছয়টি সহজাত দোষ বা ষড়রিপু হলো কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। বা সহজ ভাবে বলা যায়, কাম (lust) হলো লালসা, ক্রোধ (anger)... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার অপসারণ কি সমাধান ছিল, নাকি আরও বিপর্যয়ের শুরু?

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪

শেখ হাসিনার অপসারণ কি সমাধান ছিল, নাকি আরও বিপর্যয়ের শুরু?
দেশজুড়ে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, তখন অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন শেখ হাসিনার সরকারই সমস্ত সমস্যার মূল। বলা হয়েছিল, তিনি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির পিতাকে অস্বীকার করে, স্বাধীনতার সংগ্রাম কে অস্বীকার করে রাজাকার রা আমাদের আওয়ামী লীগ সমর্থন করাতে বাধ্য করে বারং বার।

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৩


আমরা যারা কোন দলের পদ পদবি তে নাই। এমনকি আমার কলেজের রাজনীতি জড়িত বন্ধুর সাথেও মেশা বন্ধ করেছিলাম আমরা চার জনের সার্কেল। দলীয় রাজনীতি বড়ই খারাপ জিনিস। মাইর খাওয়া মাইর... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভিন্‌গ্রহে মিলল প্রাণের অস্তিত্ব! ১২৪ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে কি প্রাণের স্পন্দন?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২



জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পৃথিবীর বাইরে কে২-১৮ বি গ্রহে জীবনের সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে দু’টি রাসায়নিকের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ : দেশের উন্নয়নের জন্য আসন বাড়ানোর বিকল্প নেই

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৮


নারী অধিকার নিয়ে কথা উঠলেই কিছু ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে যায়। রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসে—একটু যেন ‘স্মার্ট’ ভাব ধরে। সেই ভাবেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সুপারিশ করলো, সংসদের আসন সংখ্যা ৬০০ করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×